হাইতিতে 'শিশু দাস'
ভূমিকম্পের অল্প ক'দিন পরই অনেকেই নিজেদের
পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে মিলিত হয়ে আনন্দে আত্মহারা হয়ে গেল। আর অন্যরা
মুখোমুখি হলো এক গভীর বেদনাময় বাস্তবতার।
ভয়াল ভূমিকম্প এদের কারও পিতা-মাতা, ভাই-বোন কিংবা নিকট আত্মীয়র জীবন কেড়ে নিয়ে ডুবিয়েছে চরম হতাশায়।
নয় বছর বয়সী মানুসকার জীবনে ঘটে আরও ব্যতিক্রম ঘটনা। মানুসকা একজন রেসটাভেগ কিংবা কাজের লোক। ছয় বছর বয়স থেকেই সে একটি পরিবারের গৃহস্থলের সকল কাজ করে আসছে। চার বছর বয়স থেকেই সে পানি বহন করা, বাজারে যাওয়া এবং কাপড় ধুয়ে দেয়া এ সকল কাজে নিজেকে নিয়োজিত রাখে। মাঝেমধ্যে তার গৃহকর্তার হাতে তাকে মার খেতে হয়েছে ছোটখাটো ভুলের কারণে। ভূমিকম্প হওয়ার পর সে তার গৃহকর্তার পরিবারের সঙ্গে একটি আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নেয়। এক ত্রাণকমর্ীকে সে অনুরোধ করে সেই ত্রাণকমর্ী যেন তাকে আশ্রয় দেয়।
১৮০৪ সালে হাইতি স্বাধীন হওয়ার পর দেশটিতে দাসপ্রথা নিষিদ্ধ করা হয়। কৌশলগতভাবে রেসটাভেগ বা অনাথ শিশুরা দাস নয়। কিন্তু বাসত্মবিক অর্থে এই অনাথ শিশুদের ব্যবহার করা হয় দাস হিসেবেই। আনুমানিক দুই লাখ শিশু চুক্তিবদ্ধ হয়ে কাজ করছে কালো অধু্যষিত এই প্রজাতন্ত্রটিতে। দাস প্রথার শিকল মুক্ত হয়ে দেশটির অধিকাংশ শিশু আজ বন্দী নব্য দাসরীতির। ভূমিকম্পের পরও এই রীতি এখনও বিদ্যমান দেশটিতে।
রেসটাভেগ প্রথার শুরম্ন কিছুটা ভিন্ন কারণে। ক্যারিয়ান সংস্কৃতিতে এই রীতি অনেক পুরনো। ঘনিষ্ঠ আত্মীয়রা একটি সময় নিজেদের মধ্যে নানাবিধ কারণে সনত্মান আদান-প্রদান করত। মূলত অসুস্থ কোন আত্মীয়ের পরিচর্যা কিংবা গৃহস্থালি কাজের সাহায্য করার লৰ্যে তাদের এই রীতির প্রচলন। এই রীতি কিংবা প্রচলন সময়ের আবর্তনে পরিবর্তিত হতে থাকে। বর্তমানে গ্রামগঞ্জে বাস করা বেশিরভাগ দরিদ্র পিতা-মাতা নিজেদের সনত্মান লালন-পালন করতে অসমর্থ হলেই শহরের কোন ধনী পরিবারে নিজেদের সনত্মানদের পাঠিয়ে দেয়।
গৃহস্থালি কাজের সাহায্যের বিনিময়ে দরিদ্র শিশুর ভাগ্যে জোটে বাসস্থান, খাদ্য, বস্ত্র, চিকিৎসা এবং শিৰা। তবে অর্ধেকেরও বেশি শিশুর ৰেত্রে এর ব্যত্যয় ঘটে। অভাগা এই শিশুদের বলা হয় রেসটাভেগ। শব্দটি ফ্রেঞ্চ যার অর্থ হলো 'সাথে থাকা'। অনেক ৰেত্রে দেখা যায়, অনাথ এ সকল শিশু পর্যাপ্ত খাদ্য, শিৰা, অন্যান্য সুযোগসুবিধা থেকে বঞ্চিত এবং অবহেলিত। সামাজিকভাবেও তাদের চরম হেয় প্রতিপন্ন করা হয়। ভূমিকম্পের পূর্বে এক জরিপের ফলাফলে জানা যায়, আনুমানিক ২২ শতাংশ হাইতি পরিবারে একজন অবহেলিত শিশুর বাস। রেসটাভেগ রাখা কৌশলগত কারণে নিষিদ্ধ, তবে শিশু দেয়া-নেয়ার এই প্রক্রিয়া এখন চলছে দেশটিতে। সরকারের ভ্রানত্মনীতিতে এখন বলা মুশকিল ঠিক কি পরিমাণ শিশু প্রতিনিয়ত শিকার হচ্ছে এই নিপীড়িত ব্যবস্থায়। এই করম্নণ পরিণতি দেখা দেয় অপেৰাকৃত দরিদ্র পরিবারগুলোতে। শহরে বাস করা বেশিরভাগ দরিদ্র পরিবারের আশ্রিত শিশুরা শিৰার সুযোগ থেকে বঞ্চিত। সাইট সলিল বসত্মির আনুমানিক ৪৪ শতাংশ পরিবারে একজন রেসটাভেগ শিশুর বাস।
বর্তমানে ভূমিকম্পের ফলে পরিবারগুলো এখন সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন। দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা এই সামাজিক রীতি এখন ভেঙ্গে পড়েছে। যে সকল পরিবারের মাথাগোঁজার ঠাঁই নেই, খাদ্যের নিশ্চয়তা নেই তাদের কাছে বাড়তি একটি ছেলে মানেই হলো বোঝা।
বিশিষ্ট নৃতত্ত্ববিদ গিল স্মাকার দীর্ঘদিন ধরে হাইতি নিয়ে গবেষণা করছেন। তিনি জানান, ২০০৪ এবং ২০০৮ সালের বন্যা এবং হারিকেনের পর ঠিক একই পরিস্থিতির শিকার হয় এই হতদরিদ্র শিশুরা। যখনই প্রাকৃতিক কোন বিপর্যয় ঘটে তখনই দেখা যায় এই হতদরিদ্র শিশুরা গৃহহীন হয়ে রাসত্মায় বের হয়ে পড়ে। প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে বিধ্বসত্ম তাদের পরিবারগুলোর পৰে সম্ভব হয় না তাদের পাশে এসে দাঁড়ানোর। পিতা-মাতাহীন সনত্মানের মতো তারা পথে পথে ঘুরে বেড়ায়। আর সবচেয়ে বেশি দুর্ভাগ্যের শিকার হয় মেয়েরা।
রেসটাভেগ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান জীন ক্যাডেট জানান, এখন বেশিরভাগ পরিবার শহর ছেড়ে গ্রামে আশ্রয় নেবে। নিজেদের পরিবার নিয়ে এরা এত বেশি উদ্বিগ্ন এবং শঙ্কার মুখোমুখি রেসটাভেগ শিশু নিয়ে চিনত্মা করার সময় এখন তাদের নেই। কিছু দিনের মধ্যে দেখা যাবে, শহরের রাসত্মাঘাট এসব অনাথ শিশুদের ভিড়ে পরিপূর্ণ হয়ে উঠবে।
এবারের ভূমিকম্পের বিপর্যয় হাইতির অবকাঠামোকে আমূল বদলে দিয়েছে। কিন্তু এই ব্যাপারে আশা করা ভুল হাইতির জনগণ তাদের দীর্ঘদিনের সামাজিক রীতি নীতির ত্রম্নটিসমূহ এখনই পাল্টে দেবে। তাই এখন পরিস্থিতি নির্ভর করবে তাদের জনগণের ওপর_ কিভাবে এই পরিস্থিতির পরিবর্তন তারা ঘটাবে।
নিউজউইক অবলম্বনে
নয় বছর বয়সী মানুসকার জীবনে ঘটে আরও ব্যতিক্রম ঘটনা। মানুসকা একজন রেসটাভেগ কিংবা কাজের লোক। ছয় বছর বয়স থেকেই সে একটি পরিবারের গৃহস্থলের সকল কাজ করে আসছে। চার বছর বয়স থেকেই সে পানি বহন করা, বাজারে যাওয়া এবং কাপড় ধুয়ে দেয়া এ সকল কাজে নিজেকে নিয়োজিত রাখে। মাঝেমধ্যে তার গৃহকর্তার হাতে তাকে মার খেতে হয়েছে ছোটখাটো ভুলের কারণে। ভূমিকম্প হওয়ার পর সে তার গৃহকর্তার পরিবারের সঙ্গে একটি আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নেয়। এক ত্রাণকমর্ীকে সে অনুরোধ করে সেই ত্রাণকমর্ী যেন তাকে আশ্রয় দেয়।
১৮০৪ সালে হাইতি স্বাধীন হওয়ার পর দেশটিতে দাসপ্রথা নিষিদ্ধ করা হয়। কৌশলগতভাবে রেসটাভেগ বা অনাথ শিশুরা দাস নয়। কিন্তু বাসত্মবিক অর্থে এই অনাথ শিশুদের ব্যবহার করা হয় দাস হিসেবেই। আনুমানিক দুই লাখ শিশু চুক্তিবদ্ধ হয়ে কাজ করছে কালো অধু্যষিত এই প্রজাতন্ত্রটিতে। দাস প্রথার শিকল মুক্ত হয়ে দেশটির অধিকাংশ শিশু আজ বন্দী নব্য দাসরীতির। ভূমিকম্পের পরও এই রীতি এখনও বিদ্যমান দেশটিতে।
রেসটাভেগ প্রথার শুরম্ন কিছুটা ভিন্ন কারণে। ক্যারিয়ান সংস্কৃতিতে এই রীতি অনেক পুরনো। ঘনিষ্ঠ আত্মীয়রা একটি সময় নিজেদের মধ্যে নানাবিধ কারণে সনত্মান আদান-প্রদান করত। মূলত অসুস্থ কোন আত্মীয়ের পরিচর্যা কিংবা গৃহস্থালি কাজের সাহায্য করার লৰ্যে তাদের এই রীতির প্রচলন। এই রীতি কিংবা প্রচলন সময়ের আবর্তনে পরিবর্তিত হতে থাকে। বর্তমানে গ্রামগঞ্জে বাস করা বেশিরভাগ দরিদ্র পিতা-মাতা নিজেদের সনত্মান লালন-পালন করতে অসমর্থ হলেই শহরের কোন ধনী পরিবারে নিজেদের সনত্মানদের পাঠিয়ে দেয়।
গৃহস্থালি কাজের সাহায্যের বিনিময়ে দরিদ্র শিশুর ভাগ্যে জোটে বাসস্থান, খাদ্য, বস্ত্র, চিকিৎসা এবং শিৰা। তবে অর্ধেকেরও বেশি শিশুর ৰেত্রে এর ব্যত্যয় ঘটে। অভাগা এই শিশুদের বলা হয় রেসটাভেগ। শব্দটি ফ্রেঞ্চ যার অর্থ হলো 'সাথে থাকা'। অনেক ৰেত্রে দেখা যায়, অনাথ এ সকল শিশু পর্যাপ্ত খাদ্য, শিৰা, অন্যান্য সুযোগসুবিধা থেকে বঞ্চিত এবং অবহেলিত। সামাজিকভাবেও তাদের চরম হেয় প্রতিপন্ন করা হয়। ভূমিকম্পের পূর্বে এক জরিপের ফলাফলে জানা যায়, আনুমানিক ২২ শতাংশ হাইতি পরিবারে একজন অবহেলিত শিশুর বাস। রেসটাভেগ রাখা কৌশলগত কারণে নিষিদ্ধ, তবে শিশু দেয়া-নেয়ার এই প্রক্রিয়া এখন চলছে দেশটিতে। সরকারের ভ্রানত্মনীতিতে এখন বলা মুশকিল ঠিক কি পরিমাণ শিশু প্রতিনিয়ত শিকার হচ্ছে এই নিপীড়িত ব্যবস্থায়। এই করম্নণ পরিণতি দেখা দেয় অপেৰাকৃত দরিদ্র পরিবারগুলোতে। শহরে বাস করা বেশিরভাগ দরিদ্র পরিবারের আশ্রিত শিশুরা শিৰার সুযোগ থেকে বঞ্চিত। সাইট সলিল বসত্মির আনুমানিক ৪৪ শতাংশ পরিবারে একজন রেসটাভেগ শিশুর বাস।
বর্তমানে ভূমিকম্পের ফলে পরিবারগুলো এখন সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন। দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা এই সামাজিক রীতি এখন ভেঙ্গে পড়েছে। যে সকল পরিবারের মাথাগোঁজার ঠাঁই নেই, খাদ্যের নিশ্চয়তা নেই তাদের কাছে বাড়তি একটি ছেলে মানেই হলো বোঝা।
বিশিষ্ট নৃতত্ত্ববিদ গিল স্মাকার দীর্ঘদিন ধরে হাইতি নিয়ে গবেষণা করছেন। তিনি জানান, ২০০৪ এবং ২০০৮ সালের বন্যা এবং হারিকেনের পর ঠিক একই পরিস্থিতির শিকার হয় এই হতদরিদ্র শিশুরা। যখনই প্রাকৃতিক কোন বিপর্যয় ঘটে তখনই দেখা যায় এই হতদরিদ্র শিশুরা গৃহহীন হয়ে রাসত্মায় বের হয়ে পড়ে। প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে বিধ্বসত্ম তাদের পরিবারগুলোর পৰে সম্ভব হয় না তাদের পাশে এসে দাঁড়ানোর। পিতা-মাতাহীন সনত্মানের মতো তারা পথে পথে ঘুরে বেড়ায়। আর সবচেয়ে বেশি দুর্ভাগ্যের শিকার হয় মেয়েরা।
রেসটাভেগ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান জীন ক্যাডেট জানান, এখন বেশিরভাগ পরিবার শহর ছেড়ে গ্রামে আশ্রয় নেবে। নিজেদের পরিবার নিয়ে এরা এত বেশি উদ্বিগ্ন এবং শঙ্কার মুখোমুখি রেসটাভেগ শিশু নিয়ে চিনত্মা করার সময় এখন তাদের নেই। কিছু দিনের মধ্যে দেখা যাবে, শহরের রাসত্মাঘাট এসব অনাথ শিশুদের ভিড়ে পরিপূর্ণ হয়ে উঠবে।
এবারের ভূমিকম্পের বিপর্যয় হাইতির অবকাঠামোকে আমূল বদলে দিয়েছে। কিন্তু এই ব্যাপারে আশা করা ভুল হাইতির জনগণ তাদের দীর্ঘদিনের সামাজিক রীতি নীতির ত্রম্নটিসমূহ এখনই পাল্টে দেবে। তাই এখন পরিস্থিতি নির্ভর করবে তাদের জনগণের ওপর_ কিভাবে এই পরিস্থিতির পরিবর্তন তারা ঘটাবে।
নিউজউইক অবলম্বনে
No comments