অন্তর্বতীকালীন তিস্তা পানি চুক্তির আশা নিয়ে কাল বৈঠক by সোহেল রহমান

 গঙ্গা চুক্তির মডেল অনুসরণ করে ভারতের সঙ্গে তিসত্মার পানি বন্টন চুক্তি স্বাৰর করতে চায় বাংলাদেশ। দীর্ঘমেয়াদী না হলেও আপাতত অন্তবর্তীকালীন একটি চুক্তিতে উপনীত হওয়ার আশা নিয়ে জেআরসি বৈঠকে যোগ দিতে আজ বুধবার সকালে ভারত যাচ্ছে বাংলাদেশী প্রতিনিধি দল।
কাল বৃহস্পতিবার থেকে প্রায় পাঁচ বছর পর বাংলাদেশ-ভারত যৌথ নদী কমিশন (জেআরসি) মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক শুরু হচ্ছে। নয়াদিলস্নীতে অনুষ্ঠিত তিন দিনব্যাপী বৈঠকে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেবেন পানি সম্পদমন্ত্রী রমেশ চন্দ্র সেন। অন্যদিকে ভারতীয় প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেবেন দেশটির পানি সম্পদমন্ত্রী পবন কুমার বানসাল। চূড়ান্ত বৈঠক শুরুর আগে আজ বুধবার দু'দেশের পানি সম্পদ সচিব পর্যায়ের বৈঠকের কথা রয়েছে। পানি সম্পদ সচিব শেখ ওয়াহিদউজ্জামান মঙ্গলবার জনকণ্ঠকে বলেছেন, বৈঠকে তিস্তার পানি বন্টনে দীর্ঘমেয়াদী না হলেও একটি অন্তবর্তীকালীন চুক্তি স্বাৰরের ব্যাপারে আমরা খুবই আশাবাদী। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের মধ্য দিয়ে দু'দেশের মধ্যে সহযোগিতা যে নতুন দিগন্ত তৈরি হয়েছে, তার আলোকে আমরা তিস্তার পানি বন্টন নিয়ে একটি চুক্তিতে উপনীত হতে পারব। সূত্র জানায়, বৈঠকে দু'দেশের অভিন্ন নদীর পানি বন্টনসহ নানা ইসু্য স্থান পেলেও বাংলাদেশের পৰ থেকে তিস্তার পানি বন্টন চুক্তির বিষয়টি অগ্রাধিকার দেয়া হবে। গত জানুয়ারিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের সময় তিস্তার পানি বন্টন নিয়ে জেআরসি বৈঠকের ব্যাপারে একমত হয় দু'দেশ। সে সময় দুই প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে স্বাৰরিত ৫০ দফা যৌথ ইশতেহারেও তিস্তার পানি বন্টনের বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছিল। এর আগে তিস্তা ইসু্যতে জানুয়ারির শুরুতে ঢাকায় দু'দেশের সচিব পর্যায়ের এবং ডিসেম্বরের শেষ দিকে জেআরসি কারিগরি কমিটির বৈঠক হয়েছিল। এই বৈঠকে বাংলাদেশের পৰ থেকে তিস্তার পানি বন্টন চুক্তির একটি খসড়া ভারতের কাছে হস্তান্তর করা হয়। খসড়ায় ২০ শতাংশ পানি নদীর স্বাভাবিক প্রবাহের জন্য রেখে অবশিষ্ট ৮০ শতাংশ পানি দু'দেশের মধ্যে সমহারে ভাগ করার কথা বলা হয়। এৰেত্রে ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত নদীর পানি প্রবাহে দু'দেশ পরস্পরের কাছে যে তথ্য-উপাত্ত হস্তান্তর করেছে, তার ভিত্তিতেই আপতত চুক্তি হতে পারে। তিস্তার উজানে গজলডোবা নামক স্থানে ভারত বাধ নির্মাণ করায় নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ বিঘ্নিত হয়। এরপর নদীর পানি প্রবাহ নিয়ে আর কোন তথ্য আদান প্রদান হয়নি। তবে বাংলাদেশের খসড়ার সঙ্গে একমত না হয়ে ভারত চূড়ান্ত চুক্তির আগে নদীর হাইড্রোলিক সার্ভের দাবি জানায়। তাদের দাবি বর্তমানে কি পরিমাণ পানি নদী থেকে আসছে, কোন্ কোন্ পয়েন্টে নদীর পানি পরিমাপ করা হবে, নদী অববাহিকায় দু'দেশের জনসংখ্যার পরিমাণ এবং নদীর পানির ওপর তাদের নির্ভরশীলতা এসব বিষয় যাচাই করার পর চুক্তি স্বাৰর করতে হবে। তবে ঢাকার দাবি, হাইড্রোলজিক্যাল সার্ভের জন্য যে সময়ের প্রয়োজন ততদিন অপেৰা করলে চুক্তির গোটা বিষয়টি অনিশ্চিত হয়ে পড়বে। একটি সূত্র জানিয়েছে, তিস্তার পানি বন্টনের বিষয়ে ভারতীয় কেন্দ্রীয় সরকারের ইতিবাচক মনোভাব থাকলেও পশ্চিমবঙ্গ সরকার এই মুহূর্তে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকার মনে করছে, বাংলাদেশর দাবি অনুযায়ী তিস্তার পানি বন্টন চুক্তি স্বাৰরের আগে বিষয়টি নিয়ে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সঙ্গে আলোচনা করা উচিত। আর বিধানসভার নির্বাচনকে সামনে রেখে অনেকটা সিদ্ধান্তহীনতায় রয়েছে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য পশ্চিমবঙ্গের বামফ্রন্ট সরকার। ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে গঙ্গার ঐতিহাসিক পানি বন্টন চুক্তি স্বাৰরের পর থেকে তিস্তার পানি বন্টরে চুক্তির লৰ্যে তৎপরতা শুরু করে বাংলাদেশ। ২০০৯ সালের শুরুতে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ৰমতা গ্রহণের পর থেকে তিস্তার পানি বন্টন চুক্তিতে উপনীত হতে নয়াদিল্লীর ওপর ধারাবাহিক কূটনৈতিক চাপ দিয়ে আসছে ঢাকা। ১৯৯৬ সালে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের ৩০ বছর মেয়াদী পানি চুক্তি স্বাৰরিত হয়েছিল। গঙ্গা চুক্তিতে নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ বজায় রাখতে নির্দিষ্ট পরিমাণ পানি রেখে অবশিষ্ট পানি ভাগাভাগির বিধান রাখা হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.