আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে অপর্যাপ্ত সাজা-আপিল করতে আইন সংশোধনের উদ্যোগ? by আশরাফ-উল-আলম ও এম বদি-উজ-জামান
একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের কোনো
মামলায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দেওয়া সাজা সরকারের কাছে
অপর্যাপ্ত মনে হলে তার বিরুদ্ধে আপিল করার সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট
আইন সংশোধন করা হতে পারে। এ নিয়ে সরকারের বিভিন্ন মহলে আলোচনা চলছে বলে
জানা গেছে।
গুরুতর সব অপরাধের অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে
প্রমাণিত হওয়ার পরও জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের
মোল্লাকে মৃত্যুদণ্ড না দিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়ার পর থেকে এর
প্রতিবাদে সারা দেশে গণজাগরণ সৃষ্টি হওয়ায় সরকারের টনক নড়েছে এবং
আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) আইন সংশোধনের কথা ভাবছে সরকার। কাদের
মোল্লার ফাঁসির ঘোষণা না আসা পর্যন্ত রাজপথে নেমে আসা সর্বস্তরের মানুষ ঘরে
ফিরবে না বলে শপথ করায় পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য এমন সিদ্ধান্ত আসতে পারে
বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।
আইন সংশোধন করে অপর্যাপ্ত সাজার বিরুদ্ধে সরকারের আপিল করার সুযোগ রাখার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে আলাপ-আলোচনা চলছে বলে জানা গেলেও বিষয়টি স্বীকার করেননি আইন প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম। গতকাল বৃহস্পতিবার এ ব্যাপারে তাঁর কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি প্রশ্ন করেন, 'আপনি জানলেন কোত্থেকে?' পরে তিনি বলেন, 'আইনমন্ত্রী মহোদয় দেশে নেই। তিনি দেশে না থাকলে আলোচনা হয় কিভাবে? তাই এ বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। তিনি দেশে ফেরার পর দেখা যাক কী হয়।' অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমের কাছে জানতে চাইলে তিনি এ বিষয়ে কথা বলতে চাননি। তবে তিনি বলেন, কাদের মোল্লার মামলার রায়ের বিরুদ্ধে সরকার আপিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
অন্যদিকে দেশের বিশিষ্ট আইনজীবীরা বলছেন, আইন সংশোধন করে ট্রাইব্যুনালের দেওয়া অপর্যাপ্ত সাজার বিরুদ্ধে আপিলের বিধান করা যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে আইন কোনো বাধা হবে না। অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল ও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন টিমের সমন্বয়কারী এম কে রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, ট্রাইব্যুনাল আইনে যেকোনো সাজার বিরুদ্ধে আসামিপক্ষের আপিল করার সুযোগ আছে, কিন্তু সরকারের নেই। এখানেই আইনের অসম্পূর্ণতা রয়েছে। এই অসম্পূর্ণতা দূর করার জন্য আইন সংশোধন করার সুযোগ আছে। এ মুহূর্তে আইন সংশোধন করা হবে কি না সেটা সরকারের সিদ্ধান্তের বিষয়।
আইন বিশ্লেষকদের মতে, মাত্র একটি বা দুটি শব্দ বর্তমানে বলবৎ আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) আইনের দুটি ধারার সঙ্গে যুক্ত করলেই সাজার বিরুদ্ধে আপিল করতে কোনো আইনি বাধা থাকবে না। শুধু তা-ই না, এভাবে আইনটি সংশোধন করলে কাদের মোল্লার বিপক্ষে দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধেও সরকার আপিল করার সুযোগ নিতে পারবে। ১৯৭৩ সালের আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) আইনে বলা হয়েছে, ট্রাইব্যুনাল সব সাক্ষীর সাক্ষ্য, প্রমাণ, দলিল ও নথি বিচার-বিশ্লেষণ করে রায় দেবেন। রায়ে দণ্ড দেওয়া বা না দেওয়ার কারণ লিপিবদ্ধ করবেন বিচারক। এ আইনের ২১ (১) ধারায় বলা হয়েছে, মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে যদি কেউ দোষী সাব্যস্ত হন ও তাঁকে যদি শাস্তি দেওয়া হয়, তবে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে আপিলের অধিকার তাঁর রয়েছে। ২১(২) ধারায় বলা হয়েছে, ট্রাইব্যুনালের কোনো খালাস আদেশের বিরুদ্ধে সরকার আপিল করতে পারবে। একই আইনের ২১(৩) ধারায় বলা হয়েছে, দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তি বা সরকার আপিল করলে ৩০ দিনের মধ্যে আপিল করতে হবে। তবে ২১(২) ধারায় যা বলা হয়েছে তার বাইরে অন্য কোনোভাবে আপিল করা যাবে না।
২১ (২) ও (৩) ধারার সঙ্গে কোনো খালাস আদেশের সঙ্গে 'বা অপর্যাপ্ত সাজার বিরুদ্ধে' সংযুক্ত করে আইন সংশোধন করলেই আর আপিল দায়েরে সরকারের কোনো সমস্যা থাকবে না। জানা গেছে, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে এ ধরনের একটি সংশোধনীর খসড়া নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। তবে কেউ এ বিষয়ে কথা বলেননি। কেউ সত্যতা স্বীকার করেননি। বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, আইন সংশোধনের উদ্দেশ্য ও কারণ-সংবলিত বিবৃতি যে রকম হবে তা হচ্ছে- আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক প্রদত্ত দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে সাজাপ্রাপ্ত অপরাধীর আপিল করার সুযোগ রয়েছে; কিন্তু রাষ্ট্রপক্ষের নিকট ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক দেওয়া অনুরূপ কোনো দণ্ডাদেশ অপর্যাপ্ত হয়েছে মর্মে প্রতীয়মান হলে তার বিরুদ্ধে আপিলের সুযোগ আইনের ২১ ধারায় নেই। আসামিপক্ষের যে সুযোগ রয়েছে, রাষ্ট্রপক্ষেরও তেমন সুযোগ থাকা উচিত, যা আইনসংগত।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন, ১৯৭৩ বাংলাদেশের সংবিধানের ৪৭ ও ৪৭(ক) অনুচ্ছেদের অধীন সুরক্ষাপ্রাপ্ত আইন বিধায় রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষের আপিলের ক্ষেত্রে একই রকম সুযোগ প্রদান করা জনস্বার্থে প্রয়োজন রয়েছে বলেও মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
সংবিধান বিশেষজ্ঞ ব্যারিস্টার রফিক-উল হক কালের কণ্ঠকে বলেন, যেকোনো সময়ই সরকার যেকোনো আইনের সংশোধন করতে পারে। আইনেই সে সুযোগ সরকারের রয়েছে। যেকোনো মেয়াদের সাজার বিরুদ্ধে আপিল করার সুযোগ সৃষ্টি করে সরকার আইন সংশোধন করতে পারে কি না প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সরকারও সে সুযোগ সৃষ্টি করলে তা অবৈধ হবে না। ভুতাপেক্ষ কার্যকর (পেছনের তারিখ থেকে কার্যকর) দেখানোর কোনো সুযোগ আছে কি না প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ভুতাপেক্ষ কার্যকর দেখালেও তা অবৈধ হবে না।
বিশিষ্ট আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক কালের কণ্ঠকে বলেন, যেকোনো সময়ই সরকার আইন সংশোধন করতে পারে। ভুতাপেক্ষ অনুমোদন দেওয়ার সুযোগ আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, এতে আইনি বাধা নেই। তবে ভুতাপেক্ষ কার্যকর দেখালে তা বিচক্ষণতার পরিচায়ক হবে না। এ জন্য সরকারকে আরেকটি সমালোচনার মুখে পড়তে হতে পারে।
আইন সংশোধন করে অপর্যাপ্ত সাজার বিরুদ্ধে সরকারের আপিল করার সুযোগ রাখার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে আলাপ-আলোচনা চলছে বলে জানা গেলেও বিষয়টি স্বীকার করেননি আইন প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম। গতকাল বৃহস্পতিবার এ ব্যাপারে তাঁর কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি প্রশ্ন করেন, 'আপনি জানলেন কোত্থেকে?' পরে তিনি বলেন, 'আইনমন্ত্রী মহোদয় দেশে নেই। তিনি দেশে না থাকলে আলোচনা হয় কিভাবে? তাই এ বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। তিনি দেশে ফেরার পর দেখা যাক কী হয়।' অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমের কাছে জানতে চাইলে তিনি এ বিষয়ে কথা বলতে চাননি। তবে তিনি বলেন, কাদের মোল্লার মামলার রায়ের বিরুদ্ধে সরকার আপিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
অন্যদিকে দেশের বিশিষ্ট আইনজীবীরা বলছেন, আইন সংশোধন করে ট্রাইব্যুনালের দেওয়া অপর্যাপ্ত সাজার বিরুদ্ধে আপিলের বিধান করা যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে আইন কোনো বাধা হবে না। অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল ও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন টিমের সমন্বয়কারী এম কে রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, ট্রাইব্যুনাল আইনে যেকোনো সাজার বিরুদ্ধে আসামিপক্ষের আপিল করার সুযোগ আছে, কিন্তু সরকারের নেই। এখানেই আইনের অসম্পূর্ণতা রয়েছে। এই অসম্পূর্ণতা দূর করার জন্য আইন সংশোধন করার সুযোগ আছে। এ মুহূর্তে আইন সংশোধন করা হবে কি না সেটা সরকারের সিদ্ধান্তের বিষয়।
আইন বিশ্লেষকদের মতে, মাত্র একটি বা দুটি শব্দ বর্তমানে বলবৎ আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) আইনের দুটি ধারার সঙ্গে যুক্ত করলেই সাজার বিরুদ্ধে আপিল করতে কোনো আইনি বাধা থাকবে না। শুধু তা-ই না, এভাবে আইনটি সংশোধন করলে কাদের মোল্লার বিপক্ষে দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধেও সরকার আপিল করার সুযোগ নিতে পারবে। ১৯৭৩ সালের আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) আইনে বলা হয়েছে, ট্রাইব্যুনাল সব সাক্ষীর সাক্ষ্য, প্রমাণ, দলিল ও নথি বিচার-বিশ্লেষণ করে রায় দেবেন। রায়ে দণ্ড দেওয়া বা না দেওয়ার কারণ লিপিবদ্ধ করবেন বিচারক। এ আইনের ২১ (১) ধারায় বলা হয়েছে, মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে যদি কেউ দোষী সাব্যস্ত হন ও তাঁকে যদি শাস্তি দেওয়া হয়, তবে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে আপিলের অধিকার তাঁর রয়েছে। ২১(২) ধারায় বলা হয়েছে, ট্রাইব্যুনালের কোনো খালাস আদেশের বিরুদ্ধে সরকার আপিল করতে পারবে। একই আইনের ২১(৩) ধারায় বলা হয়েছে, দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তি বা সরকার আপিল করলে ৩০ দিনের মধ্যে আপিল করতে হবে। তবে ২১(২) ধারায় যা বলা হয়েছে তার বাইরে অন্য কোনোভাবে আপিল করা যাবে না।
২১ (২) ও (৩) ধারার সঙ্গে কোনো খালাস আদেশের সঙ্গে 'বা অপর্যাপ্ত সাজার বিরুদ্ধে' সংযুক্ত করে আইন সংশোধন করলেই আর আপিল দায়েরে সরকারের কোনো সমস্যা থাকবে না। জানা গেছে, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে এ ধরনের একটি সংশোধনীর খসড়া নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। তবে কেউ এ বিষয়ে কথা বলেননি। কেউ সত্যতা স্বীকার করেননি। বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, আইন সংশোধনের উদ্দেশ্য ও কারণ-সংবলিত বিবৃতি যে রকম হবে তা হচ্ছে- আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক প্রদত্ত দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে সাজাপ্রাপ্ত অপরাধীর আপিল করার সুযোগ রয়েছে; কিন্তু রাষ্ট্রপক্ষের নিকট ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক দেওয়া অনুরূপ কোনো দণ্ডাদেশ অপর্যাপ্ত হয়েছে মর্মে প্রতীয়মান হলে তার বিরুদ্ধে আপিলের সুযোগ আইনের ২১ ধারায় নেই। আসামিপক্ষের যে সুযোগ রয়েছে, রাষ্ট্রপক্ষেরও তেমন সুযোগ থাকা উচিত, যা আইনসংগত।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন, ১৯৭৩ বাংলাদেশের সংবিধানের ৪৭ ও ৪৭(ক) অনুচ্ছেদের অধীন সুরক্ষাপ্রাপ্ত আইন বিধায় রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষের আপিলের ক্ষেত্রে একই রকম সুযোগ প্রদান করা জনস্বার্থে প্রয়োজন রয়েছে বলেও মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
সংবিধান বিশেষজ্ঞ ব্যারিস্টার রফিক-উল হক কালের কণ্ঠকে বলেন, যেকোনো সময়ই সরকার যেকোনো আইনের সংশোধন করতে পারে। আইনেই সে সুযোগ সরকারের রয়েছে। যেকোনো মেয়াদের সাজার বিরুদ্ধে আপিল করার সুযোগ সৃষ্টি করে সরকার আইন সংশোধন করতে পারে কি না প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সরকারও সে সুযোগ সৃষ্টি করলে তা অবৈধ হবে না। ভুতাপেক্ষ কার্যকর (পেছনের তারিখ থেকে কার্যকর) দেখানোর কোনো সুযোগ আছে কি না প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ভুতাপেক্ষ কার্যকর দেখালেও তা অবৈধ হবে না।
বিশিষ্ট আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক কালের কণ্ঠকে বলেন, যেকোনো সময়ই সরকার আইন সংশোধন করতে পারে। ভুতাপেক্ষ অনুমোদন দেওয়ার সুযোগ আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, এতে আইনি বাধা নেই। তবে ভুতাপেক্ষ কার্যকর দেখালে তা বিচক্ষণতার পরিচায়ক হবে না। এ জন্য সরকারকে আরেকটি সমালোচনার মুখে পড়তে হতে পারে।
No comments