আহমাদিনেজাদের দাবি-ইরান পরমাণু শক্তিধর দেশ-যুক্তরাষ্ট্রের আলোচনার প্রস্তাব খামেনির প্রত্যাখ্যান

ইরানকে পরমাণু শক্তিধর দেশ বলে দাবি করেছেন প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আহমাদিনেজাদ। মিসরের আল-আহরাম পত্রিকায় দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, ইরান পরমাণু অস্ত্র তৈরির সক্ষমতা অর্জন করেছে। তবে ইসরায়েলে হামলা চালানোর পরিকল্পনা তাদের নেই।
মিসরের সংবাদমাধ্যমগুলোতে গত বুধবার এ খবর প্রকাশিত হয়।
এদিকে ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি পরমাণু কর্মসূচির ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের সরাসরি আলোচনার প্রস্তাব নাকচ করে দিয়েছেন। আগামী ২৬ ফেব্রুয়ারি ছয় জাতির সঙ্গে ইরানের আলোচনার সপ্তাহখানেক বাকি থাকতে এ কথা বললেন তিনি।
ইসলামী সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) সম্মেলনে যোগ দিতে গত মঙ্গলবার প্রেসিডেন্ট আহমাদিনেজাদ মিসর পেঁৗছেন। ১৯৭৯ সালে ইরানে ইসলামী বিপ্লবের পর প্রথম প্রেসিডেন্ট হিসেবে তিনি মিসর সফর করেন। এ সময় আল-আহরাম পত্রিকাকে একটি দীর্ঘ সাক্ষাৎকার দেন তিনি। সাক্ষাৎকারে ইরানকে পরমাণু শক্তিধর দেশ হিসেবে দাবি করেন আহমাদিনেজাদ। ইরান অস্ত্র তৈরির উদ্দেশ্যে পরমাণু কর্মসূচি চালাচ্ছে_পশ্চিমাদের এ ধরনের অভিযোগ দীর্ঘদিন ধরে অস্বীকার করে আসছিল ইরান। আহমাদিনেজাদ বলেন, 'ইরানের এই শক্তি প্রতিরক্ষামূলক। আমরা দখলদারিত্ব, বৈষম্য ও মানুষের ওপর নাশকতায় বিশ্বাস করি না। ইসরায়েল বিশ্বকে ধোঁকা দেওয়ার বিশেষ ভূমিকা পালন করছে। তারা ভালো করেই জানে, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে তারা কী করছে। বিশ্বকে ধোঁকা দিয়ে তারা বিভিন্ন দেশের সম্পদ, অর্থ ও রাজনীতি নিজেদের দখলে নিচ্ছে। সংস্কৃতি, অর্থনীতি ধ্বংস ও যুদ্ধের মধ্য দিয়ে তারা সব খাতে নিজেদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার চেষ্টা চালাচ্ছে।'
এদিকে মিসরের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা এমইএনএ গত বুধবার আহমাদিনেজাদের বরাত দিয়ে জানায়, ইরানে হামলা চালানো হলে ইসরায়েলকে বিশ্ব থেকে মুছে ফেলতে প্রস্তুত আছে ইরানের জনগণ। 'ইসরায়েল ইরানে আক্রমণ ও আগ্রাসন চালাতে চায়। কিন্তু ইরানের প্রত্যুত্তর ও আক্রমণের প্রতিক্রিয়া নিয়ে তারা আতঙ্কে আছে। ইরানে হামলা হলে ইসরায়েলকে বিশ্ব থেকে মুছে ফেলতে জনগণ প্রস্তুত রয়েছে। যেকোনো আগ্রাসনের জবাব দিতে আমাদের প্রতিরক্ষা বাহিনীগুলোও তৈরি আছে।'
যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সম্প্রতি পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে ইরানের সঙ্গে সরাসরি আলোচনার প্রস্তাব দেন; যদিও আগামী ২৬ ফেব্রুয়ারি কাজাখস্তানে নিরাপত্তা পরিষদের পাঁচ সদস্য ও জার্মানির সঙ্গে ইরানের আলোচনার কথা রয়েছে। বাইডেনের প্রস্তাব বাতিল করে দিয়ে আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি গতকাল বৃহস্পতিবার বলেন, 'ইরানের দিকে বন্দুক তাক করে আপনারা (যুক্তরাষ্ট্র) আলোচনার প্রস্তাব দিচ্ছেন। ইরান এসব পদক্ষেপে ভয় পাবে না। আলোচনায় কোনো কিছুরই সমাধান হবে না।' তিনি আরো বলেন, 'মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের নীতি ব্যর্থ হয়েছে। এখন তাদের সাহায্যের হাত দরকার। এ কারণেই ইরান আলোচনার টেবিলে যাচ্ছে।'
এদিকে ইরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরো এক দফা বাড়িয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে অর্থনৈতিক ছাড় পাওয়া ৯টি দেশের কাছে ইরান তেল বিক্রি করতে পারছে। নতুন অবরোধ অনুযায়ী, তেল বিক্রি করে পাওয়া অর্থ ইরান দেশে নিতে পারবে না। ওই সব দেশ থেকে পণ্য কেনার কাজেই কেবল ব্যয় করতে পারবে। ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমগুলোর ওপরও নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। সূত্র : এএফপি, জিনিউজ।

No comments

Powered by Blogger.