একের পর এক ট্রেনযাত্রী খুনঃ সরদার আলম গ্রেফতার- গামছাই ওদের হাতিয়ার by আবু সালেহ আকন

কমলাপুর থেকে ময়মনসিংহ। মাঝে মধ্যে অন্যান্য রুটেও তাদের হানা। উদ্দেশ্য ট্রেনযাত্রীদের মালামাল কেড়ে নেয়া। আগ্নেয়াস্ত্র বা ধারালো কোনো অস্ত্রও বহন করে না তারা।
সাথে থাকে শুধু একটি করে গামছা। কেউ বাধা দিলে আর রক্ষা নেই। সাথে সাথে গলায় গামছা পেঁচিয়ে হত্যা। এ রকম শতাধিক অভিযোগ রয়েছে আলম ওরফে থাপ্পা আলমের বিরুদ্ধে। অবশেষ পুলিশ তাকে গ্রেফতার করেছে। গ্রেফতারের পর সে বলেছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, রেলের নিরাপত্তাকর্মী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অনেকেই তাকে চেনেন। তাদের অনেককে নিয়মিত মাসোয়ারা দিয়েই তারা ট্রেনে ছিনতাই-ডাকাতি করে আসছে। কয়েকটি খুনের সাথে জড়িত থাকার ব্যাপারেও প্রাথমিকভাবে স্বীকার করেছে আলম।

সূত্র জানায়, ময়মনসিংহ থেকে কমলাপুর পর্যন্ত ট্রেনযাত্রী হত্যার ঘটনা ঘটছে প্রায়ই। অনেক দিন থেকেই এ রুটে গামছা পার্টির দৌরাত্ম্যের বিষয়টি প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট মহলগুলো অবগত। মাঝে মধ্যে ছিঁচকে কিছু সন্ত্রাসী গ্রেফতারও হয়েছে পুলিশ-র‌্যাবের হাতে। কিন্তু খুনের ঘটনা কমছে না। সম্প্রতি আরো বেশ কয়েকটি খুনের ঘটনা ঘটে। দুর্বৃত্তরা ট্রেনের ভেতর যাত্রীদের খুন করে বাইরে ফেলে দেয়। রেললাইনের পাশ থেকে এ রকম লাশ প্রায়ই উদ্ধার হচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এ গামছা পার্টির সদস্যদের সরদার হচ্ছে আলম। গত বুধবার এসআই আলমগীর হোসেন বিমানবন্দর রেলস্টেশনে অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করে। এ সময় তার সহযোগীরা পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে কৌশলে পালিয়ে যায়। জিআরপি থানা সূত্রে জানা যায়, ময়মনসিংহ থেকে কমলাপুর পর্যন্ত রেলের পাঁচ-ছয়টি সক্রিয় গামছা ফাঁস ও পকেটমার গ্রুপের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছেন যাত্রীরা। এ নিয়ে গামছা ফাঁস ও পকেটমারদের হাতে প্রাণ হারান শতাধিক রেলযাত্রী। এ পর্যন্ত যাত্রী হত্যার কোনো মামলারই কূল-কিনারা করতে পারেনি জিআরপি থানা পুলিশ। এই সক্রিয় গামছা ফাঁস ও পকেটমার পার্টির মূল হোতা ও র‌্যাব-১-এর কথিত সোর্স মো: আলমকে অবশেষে বিমানবন্দর রেলস্টেশন থেকে গত বুধবার বেলা ১১টায় আটক করে কমলাপুর থানায় নিয়ে যাওয়া হয়।

জিআরপি কমলাপুর থানার ওসি আবদুল মজিদ জানান, আলমের বিরুদ্ধে শতাধিক অভিযোগ রয়েছে। মহিলা রেল যাত্রী শাহনাজের (শানু) ছিনতাই মামলায় ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি থাকায় আলমকে বিমানবন্দর থেকে আটক করা হয়েছে। এ ছাড়া রেলের বেশ কিছু পকেটমার দলের সরদার হিসেবেও তার বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ রয়েছে। বিমানবন্দর এলাকার কয়েকজন ব্যবসায়ী বলেছেন, আলমকে গ্রেফতার করার পর আনন্দে এলাকায় মিষ্টি বিতরণ করেন সাধারণ ব্যবসায়ীরা। তার অত্যাচারে অতিষ্ঠ ছিলেন তারা।

অভিযোগ উঠছে, আলমকে আটক করার পর তাকে ছাড়িয়ে নিতে বিমানবন্দর জিআরপি ফাঁড়ির ইনচার্জ নজরুল ইসলামও ব্যাপক তদবির করছেন। এমন অনেক কর্মকর্তাই রয়েছেন যারা নিয়মিত আলমের কাছ থেকে বখরা নিয়ে থাকেন।
       

No comments

Powered by Blogger.