ভাষা আন্দোলনের উৎসপুরুষ ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ

১৯৪৭ সালে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার প্রস্তুতিলগ্নে জুলাই মাসে আলীগড় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ড. জিয়াউদ্দীন আহমদ হিন্দিকে ভারতের রাষ্ট্রভাষা হিসেবে গ্রহণের অনুরূপ পদক্ষেপ হিসেবে উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করার প্রস্তাব দেন।
তার এই প্রস্তাবের প্রতিবাদে জ্ঞানতাপস ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ ‘পাকিস্তানের ভাষাসমস্যা’ শীর্ষক একটি নিবন্ধ রচনা করেন। এতে তিনি বাংলা ভাষাকে বাদ দিয়ে উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করা হলে তা রাজনৈতিক পরাধীনতার নামান্তর হবে বলে মত প্রকাশ করেন। বিষয়টিকে তিনি প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসন ও আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকারের নীতিবহির্গত বলেও অভিমত প্রকাশ করেন। ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহর এ বক্তব্যে তৎকালীন বাঙালি সমাজ উদ্দীপ্ত হয়। উপমহাদেশের সমকালীন শিক্ষিত সমাজকে উদ্বুদ্ধ করার জন্য তিনি এ নিবন্ধটি ভারতের ইংরেজি সাপ্তাহিক কমরেড পত্রিকায় প্রকাশেরও ব্যবস্থা করেন। কমরেড পত্রিকায় ‘দি ল্যাংগুয়েজ প্রবলেমস অব পাকিস্তান’ নামে ১৯৪৭ সালের ৩ আগস্ট প্রবন্ধটি প্রকাশিত হয়। এভাবে ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহসহ অন্য আরো কারো কারো লেখনী পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার প্রক্কালে বাংলাকে বাদ দিয়ে উর্দুকে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা করার কুফল সম্পর্কে শিক্ষিত সমাজের একটি গ্রুপকে উদ্বেলিত করে তোলে।

পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার বিষয়টি যখন চূড়ান্ত পরিণতির দিকে সে সময়ই সরকারি সব কাজকর্ম ইংরেজি এবং উর্দুতে শুরু হয়ে যায়। সংখ্যাগরিষ্ঠের মাতৃভাষা বাংলাকে অবজ্ঞা উপেক্ষা করা হয়। ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহর মতো দূরদর্শী শিক্ষিত সমাজ এটি শুরুতেই উপলব্ধি করেন এবং এর প্রতিবাদে এগিয়ে আসেন সবার আগে।

No comments

Powered by Blogger.