শাহবাগে শিবিরের নাশকতার চেষ্টা-পেট্রল ককটেলসহ ১৩ কর্মী গ্রেপ্তার

মিরপুর সড়কে পাইকপাড়ার সামনে বসানো একটি চেকপোস্টের পুলিশ সদস্যরা গতকাল বৃহস্পতিবার যানবাহনের দিকে সতর্ক নজর রাখছিলেন। মিরপুর ১ নম্বর থেকে টেকনিক্যাল মোড়ের দিকে আসা একটি হিউম্যান হলারের দিকে চোখ পড়ায় তাঁরা সেটি থামানোর প্রস্তুতি নেন।
হঠাৎ হলারটির ভেতর থেকে জয় বাংলা স্লোগান দেওয়া শুরু হয়। এতে পুলিশের সন্দেহ আরো বাড়ে। গাড়িটি থামিয়ে গাদাগাদি করে বসে থাকা ১২ জন জয় বাংলা স্লোগানধারীকে গন্তব্য জিজ্ঞেস করা হলে তারা জানায়, শাহবাগ মোড়ে যাচ্ছে। পুলিশ সবাইকে নামিয়ে হিউম্যান হলারে তল্লাশি চালায়। পাওয়া যায় দুটি ককটেল, পেট্রলভর্তি জেরিক্যান ও পাঁচটি লোহার রড। গ্রেপ্তার করার পর তারা শিবিরকর্মী বলে স্বীকার করে।
পুলিশ ধারণা করছে, শাহবাগে যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে জনতার স্রোতে নাশকতা চালাতে যাচ্ছিল তারা। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এ ব্যাপারে তথ্যও মিলেছে। এ ব্যাপারে গত রাত সাড়ে ১২টায় মিরপুর মডেল থানায় ১২ জনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেছে পুলিশ। আসামি শিবিরকর্মীরা হলো নূর মোহাম্মদ, আক্তার হোসেন, মামুন খান, ঈমাম হোসেন, বিল্লাল, আমিনুল ইসলাম, রুবেল, রবিউল, শামিম, উজ্জ্বল, সোহাগ ও নাঈম।
ঢাকা মহানগর পুলিশের মিরপুর বিভাগের উপকমিশনার ইমতিয়াজ আহমেদ কালের কণ্ঠকে জানান, দুপুর আড়াইটার দিকে মিরপুর এলাকা থেকে ১২ শিবিরকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়। প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, গ্রেপ্তারকৃতরা একটি হিউম্যান হলারে করে শাহবাগে সমাবেশস্থলে যাওয়ার জন্যই রওনা দিয়েছিল। এ সময় তারা আওয়ামী লীগের স্লোগান দিয়ে নিজেদের পরিচয় গোপন করার চেষ্টা চালায়। বিষয়টি উপস্থিত টহল পুলিশের সন্দেহ হওয়ায় তারা তল্লাশি চালিয়ে পেট্রল, ককটেল ও বিস্ফোরকসহ লোহার আধুনিক লাঠি উদ্ধার করেছে। এসব সরঞ্জাম সমাবেশের লোকজনের ওপর ব্যবহার করা হতো বলে ধারণা করা হচ্ছে। মিরপুর থানার ওসি সালাহউদ্দিন আহমেদ কালের কণ্ঠকে জানান, দুপুর সোয়া ২টার দিকে মিরপুর পাইকপাড়া বশির উদ্দিন স্কুলের সামনে একটি হিউম্যান হলারের ভেতর থেকে জয় বাংলা স্লোগান ভেসে আসে। তৎক্ষণাৎ টহল পুলিশ ওই গাড়ি থামিয়ে সন্দেহভাজন হিসেবে ১২ জনকে আটক করে। তারা প্রথমে নিজেদের আওয়ামী লীগের কর্মী বলে পরিচয় দেয়। কিন্তু তাদের কথাবার্তায় সন্দেহ দেখা দেয়। এক পর্যায়ে গাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে চার লিটার পেট্রল, দুটি ককটেল ও পাঁচটি লোহার লাঠি পাওয়া যায়। পরে জানা যায় তারা শিবিরকর্মী। তাদের উদ্দেশ্য ছিল শাহবাগ সমাবেশস্থল।
ওসি সালাহউদ্দিন বলেন, ধারণা করা হচ্ছে তারা শাহবাগের আন্দোলনস্থলে বড় ধরনের নাশকতা সৃষ্টির জন্যই যাচ্ছিল। তবে বিষয়টি নিশ্চিত হতে গ্রেপ্তারকৃতদের আরো জিজ্ঞাসাবাদের প্রয়োজন রয়েছে।
গ্রেপ্তারের নেতৃত্ব দেওয়া মিরপুর থানার উপপরিদর্শক রফিকুল ইসলাম বলেন, 'গ্রেপ্তারকৃতদের কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জেনেছি, শুধু মিরপুরেই নয়, নাশকতা চালানোর জন্য রাজধানীর কয়েকটি স্থানের পাশাপাশি কেরানীগঞ্জেও তাদের লোকবল রয়েছে। জানা গেছে, তারা শাহবাগে নাশকতা চালানোর জন্য আসতে প্রস্তুত ছিল। এরই মধ্যে তাদের ধরতে আমরা অভিযান চালাই।'
গোয়েন্দা সূত্র জানায়, শাহবাগের সমাবেশ ঘিরে নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। সমাবেশস্থলের চারপাশে রয়েছে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা। আরো রয়েছে আধুনিক সরঞ্জাম। চারপাশের উঁচু ভবনগুলো থেকে সব কিছুর ওপর কড়া নজরদারি চলছে। নাশকতাসহ যেকোনো ধরনের হামলা ঠেকাতেই এমন ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
র‌্যাবের গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান লে. কর্নেল জিয়াউল আহসান বলেন, শাহবাগের সমাবেশ ঘিরে র‌্যাব নিবিড় পর্যবেক্ষণে রয়েছে। সাদা পোশাকে র‌্যাবের টহল টিম রয়েছে সেখানে।
সমাবেশস্থল থেকে ইমাম আটক : এদিকে গতকাল দুপুরে শাহবাগের সমাবেশস্থল থেকে সাখাওয়াত হোসেন (২৫) নামে মসজিদের এক ইমামকে আটক করেছে শাহবাগ থানা পুলিশ। আচরণ সন্দেহজনক হওয়ায় থানায় নিয়ে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
শাহবাগ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আবদুল জলিল বলেন, গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে শাহবাগে সমাবেশের আশপাশে নজরদারি চলছিল। এ সময় এক ব্যক্তিকে সমাবেশের ছবি তুলতে দেখা যায়। কথাবার্তা সন্দেহজনক মনে হওয়ায় তাঁকে আটক করা হয়। তিনি নিজেকে মিরপুরের রূপনগরের বায়তুল মামুর মসজিদের ইমাম পরিচয় দিয়েছেন।
তবে আটক সাখাওয়াত পুলিশকে জানান, তিনি সকালে বারডেম হাসপাতালে ডায়াবেটিস পরীক্ষা করাতে আসেন। পরে সমাবেশস্থলে যান।

No comments

Powered by Blogger.