প্রয়োজন ধৈর্যের বটিকা সেবন by উৎপল শুভ্র

দ্বিতীয় দিন শেষে দেখা গেল, হিসাবটা খুব সহজ করে দিয়েছেন বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা। স্কোরবোর্ডে ১৬৪ রান। করতেও হবে আর ঠিক ১৬৪। ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রথম ইনিংস ৪ উইকেটে ৫২৭—এটা জানা থাকলে এই ‘১৬৪’-এর চক্কর গোলমেলে লাগতে পারে।


আর ১৬৪ রান করলে কী এমন হাতিঘোড়া হবে! উত্তরটা কিন্তু ওই ৫২৭ রানেই লুকিয়ে।
প্রতিপক্ষ পাঁচ শ-টাচ শ করে ফেললে যেকোনো দলের জন্যই প্রাথমিক লক্ষ্য থাকে ফলোঅনের লক্ষণরেখাটা পেরোনো। ইনিংস পরাজয়ের সঙ্গে সবচেয়ে বেশি চেনাশোনা থাকা বাংলাদেশ দলের জন্য তো আরও। আরও ১৬৪ রান করলে অন্তত সেটি এড়ানো যাবে।
ম্যাচ বাঁচানো কঠিন, সেটি তো বলাই বাহুল্য। উইকেট ব্যাটিং-স্বর্গ, যেটিতে কাছাকাছি শক্তির দুই দল খেললে নিশ্চিন্তে ড্র বলে দেওয়া যেত। তবে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে উইকেটে খুব একটা ইতরবিশেষ হয় না।
একেবারেই যে হয় না, তা অবশ্য ঠিক নয়। উইকেট ব্যাটিং-বান্ধব হলে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের ব্যাট থেকে স্ট্রোক প্লের ফুলঝুরি ছোটে। ৩৬ ওভার বয়সী প্রথম ইনিংসেই যার প্রভূত প্রমাণ।
শুরুটা অঙ্কের হিসাব দিয়ে হয়েছিল। এবার আরেকটা অঙ্ক—ওয়েস্ট ইন্ডিজের এক বাঁহাতি ব্যাটসম্যান ২০৩ রানে অপরাজিত থাকলেন ৩৭২ বল খেলে। উইকেটে থাকলেন ৪৫৭ মিনিট।
বাংলাদেশের এক বাঁহাতি ৭১ বলে করলেন ৭২, উইকেটে স্থায়িত্বকাল ১০৪ মিনিট।
প্রথমজনের নাম শিবনারায়ণ চন্দরপল। দ্বিতীয়জনের তামিম ইকবাল। তুলনাটা প্রাসঙ্গিক। আবার অন্যায়ও বটে। দুজন দুই ধরনের ব্যাটসম্যান। তামিমকে মেলালে মেলানো উচিত তাঁর মতোই আরেক বাঁহাতি ওপেনারের সঙ্গে, যিনি তামিমের চেয়ে ৪০ বেশি (১৪১.১৭) স্ট্রাইক রেটে টেস্টের প্রথম দিন সকালে ২৪ রান করে গেছেন। ভদ্রলোকের নাম ক্রিস গেইল।
হোটেল রুমের জানালা দিয়ে পড়ে মর্মান্তিক ও রহস্যজনক মৃত্যুর শিকার পিটার রোবাকের ইট টেকস অল শর্টস নামের একটা বই আছে। ‘নামকরণের সার্থকতা প্রমাণ করো’ জাতীয় প্রশ্ন হলে উত্তর হলো, লেখক বলতে চেয়েছেন, ক্রিকেটে সব ধরনের চরিত্রেরই জায়গা আছে। আসলেও তা-ই। ক্রিকেট যেমন শিবনারায়ণ চন্দরপলদের, তেমনি গেইল-তামিমদেরও। চন্দরপল ডাবল সেঞ্চুরি করবেন, কিন্তু সেই ইনিংসের ২২টি চারের একটিও মনে থাকবে না। আবার তামিম ইকবাল ৭২ রান করবেন, যে ইনিংসের ১০টি চার ও দুটি ছয়ের প্রায় সব কটিই নেচে বেড়াবে চোখের সামনে। টিনো বেস্টের এক ওভারে চারটি চারের মধ্যে কোনটির চেয়ে কোনটি বেশি চোখ জুড়ানো, সেই ধন্দে পড়ে যেতে হবে। সুনীল নারাইনের তিন বলে মারা দুটি ছক্কা এসে অনুযোগ করতে শুরু করবে, কী ব্যাপার, দিনের সেরা শট হিসেবে আমরা কোথায় পিছিয়ে!
স্ট্রাইক রেটের দিক থেকে তামিমের প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে গেলেন শাহরিয়ার নাফীস। তাতে ‘জিতলেনও’। ওয়েস্ট ইন্ডিজের ইনিংসেও এমন প্রতিদ্বন্দ্বিতার গল্প আছে। চন্দরপলের সঙ্গে দিনেশ রামদিনের। তবে পার্থক্য হলো, সেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা স্ট্রাইক রেটের নয়, ধৈর্যের। টেস্ট ক্রিকেটে শেষ পর্যন্ত ধৈর্যেরই জয় হয়। যে কারণে রামদিনের নামের পাশে অপরাজিত ১২৬ লেখা থাকে। শাহরিয়ার নাফীসের থাকে মাত্র ৩১।
এই টেস্ট বাঁচানোর কথা বাদ দিন, এটিকে পঞ্চম দিনে নেওয়ার ওষুধও একটাই—বাংলাদেশের বাকি ব্যাটসম্যানদের ধৈর্যের বটিকা সেবন। সমস্যা হলো, সেটি ফার্মেসিতে পাওয়া যায় না। দীর্ঘদিনের অভ্যাসে তৈরি হয়।
দ্বিতীয় দিন শেষে
ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১ম ইনিংস: ৫২৭/৪ ডি.
বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: ১৬৪/৩

No comments

Powered by Blogger.