পবিত্র কোরআনের আলো-হিজরত-পূর্ববর্তীকালে কাফেরদের সঙ্গে মোকাবিলায় যাওয়ার সামর্থ্য ও অনুমতি ছিল না

১০৭। ওয়াইঁয়্যাম্ছাছ্কা ল্লা-হু বিদ্বুর্রিন ফালা- কা-শিফা লাহু ইল্লা- হুওয়া; ওয়াইঁয়্যুরিদ্কা বিখাইরিন ফালা- রা-দ্দা লিফাদ্বলিহী; ইউছ্বীবু বিহী মাইঁয়্যাশা-উ মিন ই'বা-দিহী; ওয়াহুওয়াল গাফুরুর রাহিম।


১০৮। ক্বুল ইয়া-আইয়্যুহা ন্না-ছু ক্বাদ জা-আকুমুল হাক্ক্বু মির্ রাবি্বকুম; ফামানিহ্তাদ- ফাইন্নামা- ইয়াহ্তাদী লিনাফ্ছিহী; ওয়ামান দ্বাল্লা ফাইন্নামা- ইয়াহ্তাদী লিনাফ্ছিহা-; ওয়ামা- আনা আ'লাইকুম বিওয়াকীলিন।
১০৯। ওয়াত্তাবি' মা- ইঊহ্বা- ইলাইকা ওয়াছ্ববির্ হাত্তা- ইয়াহ্কুমা ল্লা-হু; ওয়াহুওয়া খাইরুল হা-কিমীন। [সুরা : ইউনুস, আয়াত : ১০৭-১০৯]
অনুবাদ : ১০৭. আল্লাহ যদি তোমাকে কোনো কষ্টের মধ্যে নিপতিত করেন, তবে তিনি ছাড়া এমন কেউ নেই যে তা দূর করতে পারে। আর তিনি যদি তোমার কোনো মঙ্গল করার ইচ্ছা করেন, তবে এমন কেউ নেই যে তার অনুগ্রহ রদ করবে। তিনি তাঁর বান্দাদের মধ্যে যাকে ইচ্ছা (নিজ কৃতকর্মের প্রতিদানস্বরূপ) সৌভাগ্য দান করেন। তিনি অতি ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু।
১০৮. (হে নবী) আপনি বলে দিন। হে মানব জাতি, তোমাদের কাছে তোমাদের প্রভুর পক্ষ থেকে সত্য (বার্তা) এসে গেছে। সুতরাং যে ব্যক্তি সত্যের পথ অবলম্বন করবে, সে তা অবলম্বন করবে নিজের মঙ্গলের জন্য আর যে ব্যক্তি (সত্যের পথ অবলম্বন না করে) বিপথগামী হবে, তার বিপথগামিতার ফল নিজেকেই ভোগ করতে হবে। আমি তোমাদের কাজকর্মের জিম্মাদার নই।
১০৯. আপনার কাছে যে ওহি পাঠানো হচ্ছে তা আপনি অনুসরণ করবেন এবং ধৈর্যধারণ করবেন যে পর্যন্ত না আল্লাহ মীমাংসা করে দেন। আর তিনিই তো শ্রেষ্ঠ মীমাংসাকারী।
ব্যাখ্যা : ১০৮ নম্বর আয়াতে মানুষের স্বাধীনতার ফলটা খুব স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে। রাসুল (সা.)-এর আগমন এবং তাঁর কোরআন নাজিল মানব জাতির সত্যের পথ উন্মোচিত করে দিয়েছে। যারা সত্যের পথ বেছে নিয়ে তা অনুসরণ করবে, তারা তা করবে নিজের মঙ্গলের জন্য। আর যারা তা না করে ভ্রান্ত পথ অনুসরণ করবে, তাদের নিজেদের কর্মফল ভোগ করতেই হবে। স্বাধীনতা মানে দায়িত্ব। এ কথাটি এখানে খুব স্পষ্ট করে বলে দেওয়া হয়েছে। আর নবী (সা.)-কে পাঠানো হয়েছে মানুষকে সত্যের পথ দেখানোর জন্য। রাসুল (সা.)-কে পাঠানো হয়েছে মানুষকে সত্যের পথ দেখানোর জন্য। যেকোনোভাবে মানুষকে সত্যের পথে নিয়ে আসার চেষ্টা করা তাঁর দায়িত্ব নয়। এতে মানুষের স্বাধীনতাও স্বীকৃত হয় না। রাসুল (সা.)-কে আল্লাহ তায়ালা মানুষের কাজকর্মের জিম্মাদার করে পাঠাননি। প্রত্যেক মানুষ তার নিজের জিম্মাদার, নিজের কাজকর্মের জবাবদিহি তাকে করতেই হবে। ১০৯ নম্বর আয়াতটিতে হিজরত-পূর্ববর্তীকালের রণকৌশল-সংক্রান্ত নিদর্শন স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়েছে এবং অদূর-ভবিষ্যতে মুসলমানদের জন্য যে বিজয় রয়েছে, সে বিষয়েও ইঙ্গিত করা হয়েছে আল্লাহ 'মীমাংসা' করে দেবেন বলে। হিজরত-পূর্ববর্তীকালে কাফের কোরাইশদের শক্তিতে মোকাবিলা করার মতো শক্তি ও সামর্থ্য মুসলমানদের ছিল না। সুতরাং ধৈর্য ধারণ করাই ছিল একমাত্র কর্তব্য। আল্লাহর নির্দেশ ছিল তাই। আল্লাহ এর ফয়সালা দেবেন_এটাই বলা হয়েছিল। আল্লাহর সে ফয়সালা চূড়ান্তরূপে এসেছিল মক্কা বিজয়ের মাধ্যমে।
গ্রন্থনা : মাওলানা হোসেন আলী

No comments

Powered by Blogger.