মন্ত্রীর গাড়িবহরে হামলা-অস্থিতিশীলতা চায় জামায়াত
মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে আবারও জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা সহিংস তাণ্ডব চালাল রাজপথে। রাজধানীর সবচেয়ে জনবহুল ও গুরুত্বপূর্ণ ভিআইপি সড়কেই তারা আইনমন্ত্রীর গাড়িবহরে মঙ্গলবার প্রকাশ্য দিবালোকে দুঃসাহসিক হামলা চালিয়েছে।
মন্ত্রী কোনোমতে প্রাণে রক্ষা পেলেও মারাত্মক বিপর্যয়ের আশঙ্কা ছিল। কারণ, তার নিরাপত্তায় নিয়োজিত পুলিশের প্রটোকল কারসহ পেছনের গাড়িগুলো আক্রান্ত হয়েছে। আহত হয়েছেন তিন পুলিশ ও তার এপিএস। ওরা গাড়ির কাচ ভেঙে দিয়েছে ইট মেরে, মাথা ফাটিয়ে দিয়েছে এক পুলিশ সার্জেন্টের, পুড়িয়ে দিয়েছে তার মোটরসাইকেল। এককথায় ১৩ নভেম্বর বিকেলে ইসলামী ছাত্রশিবির ও জামায়াতের কর্মীরা পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী যে সংঘবদ্ধ হামলা চালিয়েছে হোটেল সোনারগাঁও সংলগ্ন সার্ক ফোয়ারা মোড়ে, শুধু দুঃসাহসী নয়, অবিশ্বাস্যও। তাদের এই আতঙ্ক ছড়ানো নৃশংসতা একাত্তরের আলবদরদের কথাই স্মরণ করিয়ে দেয়। কারণ, ওরা তো সেই পথেরই পথিক। মঙ্গলবার শিবির ঝটিকা মিছিল নিয়ে ফার্মগেট, কারওয়ান বাজারের দিক থেকে সার্ক ফোয়ারার দিকে এসে এই তাণ্ডব চালায়। অথচ পেছনেই ছিল পুলিশ। সংখ্যায় মিছিলকারীরা বেশি বলেই কি পুলিশ এমন নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করবে! এই বিস্ময় জড়ানো প্রশ্ন রাতেই সংবাদমাধ্যমে উত্থাপিত হয়েছে। গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর ব্যর্থতাও গুরুতর। আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদও সমকালকে বলেছেন, তাকে লক্ষ্য করেই হামলা চালিয়েছে জামায়াত-শিবিরকর্মীরা। আরও বলেছেন, তদন্তে বেরিয়ে আসবে পুলিশের ভূমিকা। আমাদের প্রশ্ন হচ্ছে, তদন্ত তো হবেই কিন্তু জামায়াত-শিবির যে দিনের পর দিন চোরাগোপ্তা হামলা চালিয়ে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চায়, তা কি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী জানে না? কিছুদিন আগেই তো গোয়েন্দাদের বরাত দিয়ে সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে যে, জামায়াত-শিবির চোরাগোপ্তা হামলা চালিয়ে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীসহ অনেককেই আক্রান্ত করার আশঙ্কা আছে। আশঙ্কা প্রকাশের কয়েকদিনের মধ্যেই গত ৫ নভেম্বর ঘোষণা দিয়ে তারা বিক্ষোভ সমাবেশের নামে মতিঝিল-ফকিরাপুল এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত করে। তাদের তাণ্ডবে ভস্মীভূত হয়েছে যানবাহন। পুলিশসহ শতাধিক মানুষ আহত হয়েছে। শুধু মতিঝিল-ফকিরাপুল-বিজয়নগর নয়, সারাদেশেই ৫ নভেম্বর জামায়াত-শিবির চোরাগোপ্তা হামলা চালিয়ে তাণ্ডব সৃষ্টি করেছে। এর এক সপ্তাহ যেতেই আবার ঢাকায় এই আকস্মিক হামলা আর পুলিশের নীরব দর্শকের ভূমিকা নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। যদিও গতকাল হামলায় ১১ পুলিশ আহত হয়েছে। এক যুবলীগ নেতাকেও চাপাতি দিয়ে কুপিয়েছে শিবির ক্যাডাররা। শিবির-সন্ত্রাসীদের ভয়ে পুলিশ কি ভীত? নাকি পুলিশের ভেতরেই রয়েছে স্যাবোটাজ করার মতো চক্র! আইনমন্ত্রীর গাড়ি যে ওই সময় হোটেল থেকে বের হচ্ছে তা শিবিরকর্মীরা জানল কী করে। একটা ভিআইপি সড়ক, যেখানে মন্ত্রীর গাড়ি অতিক্রম করার আগেই গোয়েন্দারা খবর পেয়ে যান ওয়্যারলেসে, তারপরও কী করে এ হামলা চালানো সম্ভব? পূর্বনির্ধারিত গণসংযোগ কর্মসূচির শেষ দিনে জামায়াত-শিবিরের এই 'মরণ ছোবল' কিন্তু অনেক অশুভ ইঙ্গিত বয়ে আনছে। একাত্তরে মানবতার বিরুদ্ধে যারা অপরাধের দায়ে অভিযুক্ত, যাদের বিচার চলছে, তাদের বিচার করা যাবে না_ এমন ধৃষ্টতাপূর্ণ দাবি নিয়ে তাদের মুক্তি চায় জামায়াত-শিবির। এই আন্দোলন একটা ছুতো। আসলে দেশে কী ঘটতে যাচ্ছে! সারাদেশে পুলিশের ওপর হামলা, মন্ত্রীর গাড়িবহরে হামলার পরও পুলিশসহ সমগ্র আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীতে কি শুদ্ধি অভিযান চালানোর কথা ভাববে না সরকার? শর্ষের মধ্যেই যেন আবার ভূত না থাকে! সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে জামায়াত-শিবিরের এই সহিংসতা রোধে এখনই প্রতিরোধ গড়ে তোলা না গেলে ওরা একাত্তরের অবস্থানে ফিরতে চেষ্টা করবেই। তাতে দেশে অস্থিতিশীলতা অনিবার্য।
No comments