শিক্ষা- জেএসসি-জেডিসি পরীক্ষা ও কিছু কথা by নুরুল ইসলাম নাহিদ
অষ্টম শ্রেণীর পাঠ সমাপ্তির পর জাতীয় ভিত্তিতে অভিন্ন প্রশ্নপত্রে জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) ও জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট (জেডিসি) পরীক্ষা শুরু হয়েছে। ২১ নভেম্বর থেকে শুরু হবে পঞ্চম শ্রেণীর সমাপনী পরীক্ষা।
জেএসসি-জেডিসি পরীক্ষার অন্যতম উদ্দেশ্যই হলো ঝরে পড়া কমিয়ে আনা এবং একসময় বন্ধ করা। ঝরে পড়া এখন প্রতিবছরই কমছে, শিক্ষার্থীও বাড়ছে। তা ছাড়া এই পরীক্ষা শিক্ষার মান বৃদ্ধি, সারা দেশে সমমান অর্জন, আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠাসহ নতুন প্রজন্মকে শিক্ষাজীবন অব্যাহত রাখতে উৎসাহিত করছে।
এসব পরীক্ষায় বিভিন্ন তথ্য বুঝে না বুঝে অসম্পূর্ণ এবং অসত্যভাবে প্রচারিত হচ্ছে। কিন্তু সঠিক তথ্য ও বাস্তব অবস্থা জনগণকে অবহিত করা আমাদের কর্তব্য। আমাদের দেশ, সমাজ ও দরিদ্র পরিবারগুলোর বাস্তবতা বিবেচনা করার জন্য সবার প্রতি অনুরোধ জানাচ্ছি। চার বছর আগে এসব পরীক্ষা ছিলই না। ছিল না কোনো ঝরে পড়ার তথ্য। এ ধরনের উদ্যোগ ও চেষ্টা তো করাই হয়নি।
আসল সত্যটি এখানে সবার অবগতির জন্য সংক্ষেপে তুলে ধরার চেষ্টা করছি। এ বছর জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষায় মোট পরীক্ষার্থী সংখ্যা ১৯,০৮,৩৬৫ জন। এর মধ্যে জেএসসি ১৫,৫৩,৫৭৫, জেডিসি ৩,৫৪,৭৯০ জন। সব মিলিয়ে ছাত্র ৪৭ শতাংশ এবং ছাত্রী ৫৩ শতাংশ। অর্থাৎ জেএসসি-জেডিসি মিলে ছাত্রসংখ্যা ৮,৯৬,৮৬২ এবং ছাত্রী ১০,১১,৫০৩ জন। ছাত্রের চেয়ে ছাত্রীর সংখ্যা ১,১৪,৬৪১ জন বেশি। এই পরীক্ষা চালুর পর ২০১০ সাল থেকে এবার ২০১২ সালে তিন বছরে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে ৪,১৫,৫৬৩ জন। শিক্ষার্থী ও পরীক্ষার্থীর
সংখ্যা যে কমছে না, বৃদ্ধি পাচ্ছে তা এই তথ্যই প্রমাণ করে।
পরীক্ষার্থীরা যাতে ঝরে না পড়ে এবং শিক্ষাজীবন অব্যাহত থাকে, সে জন্য আমরা যথাসাধ্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছি। এর মধ্যে অন্যতম হলো, যারা পরীক্ষায় ফেল করে বা অন্য কারণে শিক্ষাজীবন অব্যাহত রাখতে পারে না, তাদের পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করানোর জন্য আমরা আগ্রহী করে তুলি, তাদের সমস্যা যথাসাধ্য দূর করে আবার পরীক্ষায় অংশগ্রহণে নিয়ে আসি। এদের বলা হয় ‘অনিয়মিত পরীক্ষার্থী’। এবার অনিয়মিত পরীক্ষার্থীর সংখ্যা হলো ১,৭২,৬৮৪ জন। এরা আগে ফেল করেছে অথবা ঝরে পড়েছিল। তাদের এবার পরীক্ষায় নিয়ে আসা হয়েছে।
দ্বিতীয় বিষয় হলো, গত বছর যারা পরীক্ষা দিয়েছে তাদের মধ্যে অনেকে এক, দুই বা তিন বিষয়ে ফেল করেছে। ফেল করার কারণে তারা যাতে কোনোভাবে ঝরে না পড়ে এবং শিক্ষাজীবন অব্যাহত রাখে, সে জন্য আমরা তাদের নবম শ্রেণীতে ভর্তির সুযোগ দিয়েছি। এ বছরের পরীক্ষায় তারা নিজ নিজ ফেল করা (এক, দুই, তিন) বিষয়ে পরীক্ষা দিয়ে পাস করলেই চলবে। এ রকম পরীক্ষার্থীর নাম দেওয়া হয়েছে ‘বিশেষ পরীক্ষার্থী’। এ রকম বিশেষ পরীক্ষার্থী এবার পরীক্ষা দিচ্ছে ১,৫৭,০১২ জন। সবাই বুঝতে পারছেন এদের পরীক্ষা প্রতিদিন থাকবে না। কারও এক দিন, কারও দুই, কারও তিন দিন। তাই এই ১,৫৭,০১২ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে শুধু তাদের ফেল করা স্ব স্ব বিষয়েই পরীক্ষা দেবে, অন্য দিনগুলোতে পরীক্ষায় অনুপস্থিত থাকবে।
আরেকটি বিষয় লক্ষ করলে দেখতে পাবেন, প্রথম দিন যে সংখ্যা অনুপস্থিত ছিল অর্থাৎ ৬৮,১৫৫ জন, পরের দিন সে সংখ্যা কমে এসে দাঁড়িয়েছে ৪৬,৩৪০ জনে। অর্থাৎ প্রথম দিনে যারা অনুপস্থিত ছিল, দ্বিতীয় দিন তাদের মধ্য থেকে ২১,৮১৫ জন উপস্থিত হয়েছিল। এভাবে তৃতীয় দিন, চতুর্থ দিন প্রথম দিনের চেয়ে ২০ হাজারের বেশি উপস্থিতি বৃদ্ধি পেয়েছে। সুতরাং, প্রথম দিনের পরীক্ষায় যারা অনুপস্থিত ছিল, তারা একেবারেই লেখাপড়া ছেড়ে চলে গেল অথবা ঝরে পড়ে গেল এ রকম সিদ্ধান্তে পৌঁছানো যুক্তিযুক্ত নয়।
তাই ‘বিশেষ পরীক্ষার্থীর’ মধ্য থেকে অর্থাৎ ১,৫৭,০১২ জন পরীক্ষার্থী সর্বোচ্চ তিন দিন ছাড়া অন্যান্য দিন অনুপস্থিত থাকবেই। কেউ এক দিনই পরীক্ষা দেবে, বাকি সব পরীক্ষার দিন তারা অনুপস্থিত থাকবে। তাই অনুপস্থিতির সংখ্যা দেখে ঢালাও অনুপস্থিত বলা যুক্তিযুক্ত হবে না। এমন যাঁরা ‘ঝরে পড়ে গেছে’ বলে চিত্র তুলে ধরেছেন, তাঁরাও সুবিচার করবেন না।
তা ছাড়া যারা অনিয়মিত পরীক্ষার্থী ১,৭২,৬৮৪ জন, তারাও বিভিন্ন পরিস্থিতির মধ্যে আবার পরীক্ষা দিতে এসেছে, তাদেরও কারও কারও বাস্তব কারণে অনুপস্থিত থাকার আশঙ্কা থাকতে পারে। এমনকি নিয়মিত ছাত্রদের মধ্যেও অনুপস্থিত থাকতে পারে। যেকোনো পরীক্ষায়ই কিছু পরীক্ষার্থী অনুপস্থিত থাকে। আমাদের দেশের বাস্তবতায় আমরা সব শিশুকে স্কুলে নিয়ে আসছি, ধরে রাখা বা ঝরে পড়া ক্রমান্বয়ে কমিয়ে আনার জন্য বিভিন্ন ব্যবস্থা নিচ্ছি। তিন বছর আগে যেখানে পঞ্চম শ্রেণীর আগেই ৪৮ শতাংশ, মাধ্যমিকে ৪২ শতাংশ ঝরে পড়ত (ভর্তিও হতো অনেক কম), আজ সেখানে তা অর্ধেকের বেশি কমে এসেছে।
ঝরে পড়া নতুন বিষয় নয় বা শুধু বাংলাদেশের বিষয় নয়। অতীতে ভর্তি, ঝরে পড়া, পরীক্ষা, ফলাফল এসবের তো কোনো খবরই রাখা হতো না। এখন এসব ক্ষেত্রে আমরা বিরাট পরিবর্তন এনেছি। তার পরেও অনেক বড় বড় কাজ বাকি আছে। আপনারা আমাদের ভুলত্রুটি ধরিয়ে দেবেন। সঠিক তথ্য দিয়ে সমালোচনা করে গঠনমূলক প্রস্তাব দেবেন, আমরা সব সময়ই তা সাদরে গ্রহণ করছি এবং করব। আমাদের ভুলত্রুটি ও ব্যর্থতার জন্য আমাকে শাস্তি দিন, কিন্তু আমাদের সন্তানদের (শিক্ষার্থীদের) নিরুৎসাহিত ও হতাশ করবেন না। সবার কাছে এ আমার বিনীত অনুরোধ। আমরা সবার সাহায্যপ্রার্থী।
নুরুল ইসলাম নাহিদ: শিক্ষামন্ত্রী, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার।
এসব পরীক্ষায় বিভিন্ন তথ্য বুঝে না বুঝে অসম্পূর্ণ এবং অসত্যভাবে প্রচারিত হচ্ছে। কিন্তু সঠিক তথ্য ও বাস্তব অবস্থা জনগণকে অবহিত করা আমাদের কর্তব্য। আমাদের দেশ, সমাজ ও দরিদ্র পরিবারগুলোর বাস্তবতা বিবেচনা করার জন্য সবার প্রতি অনুরোধ জানাচ্ছি। চার বছর আগে এসব পরীক্ষা ছিলই না। ছিল না কোনো ঝরে পড়ার তথ্য। এ ধরনের উদ্যোগ ও চেষ্টা তো করাই হয়নি।
আসল সত্যটি এখানে সবার অবগতির জন্য সংক্ষেপে তুলে ধরার চেষ্টা করছি। এ বছর জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষায় মোট পরীক্ষার্থী সংখ্যা ১৯,০৮,৩৬৫ জন। এর মধ্যে জেএসসি ১৫,৫৩,৫৭৫, জেডিসি ৩,৫৪,৭৯০ জন। সব মিলিয়ে ছাত্র ৪৭ শতাংশ এবং ছাত্রী ৫৩ শতাংশ। অর্থাৎ জেএসসি-জেডিসি মিলে ছাত্রসংখ্যা ৮,৯৬,৮৬২ এবং ছাত্রী ১০,১১,৫০৩ জন। ছাত্রের চেয়ে ছাত্রীর সংখ্যা ১,১৪,৬৪১ জন বেশি। এই পরীক্ষা চালুর পর ২০১০ সাল থেকে এবার ২০১২ সালে তিন বছরে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে ৪,১৫,৫৬৩ জন। শিক্ষার্থী ও পরীক্ষার্থীর
সংখ্যা যে কমছে না, বৃদ্ধি পাচ্ছে তা এই তথ্যই প্রমাণ করে।
পরীক্ষার্থীরা যাতে ঝরে না পড়ে এবং শিক্ষাজীবন অব্যাহত থাকে, সে জন্য আমরা যথাসাধ্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছি। এর মধ্যে অন্যতম হলো, যারা পরীক্ষায় ফেল করে বা অন্য কারণে শিক্ষাজীবন অব্যাহত রাখতে পারে না, তাদের পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করানোর জন্য আমরা আগ্রহী করে তুলি, তাদের সমস্যা যথাসাধ্য দূর করে আবার পরীক্ষায় অংশগ্রহণে নিয়ে আসি। এদের বলা হয় ‘অনিয়মিত পরীক্ষার্থী’। এবার অনিয়মিত পরীক্ষার্থীর সংখ্যা হলো ১,৭২,৬৮৪ জন। এরা আগে ফেল করেছে অথবা ঝরে পড়েছিল। তাদের এবার পরীক্ষায় নিয়ে আসা হয়েছে।
দ্বিতীয় বিষয় হলো, গত বছর যারা পরীক্ষা দিয়েছে তাদের মধ্যে অনেকে এক, দুই বা তিন বিষয়ে ফেল করেছে। ফেল করার কারণে তারা যাতে কোনোভাবে ঝরে না পড়ে এবং শিক্ষাজীবন অব্যাহত রাখে, সে জন্য আমরা তাদের নবম শ্রেণীতে ভর্তির সুযোগ দিয়েছি। এ বছরের পরীক্ষায় তারা নিজ নিজ ফেল করা (এক, দুই, তিন) বিষয়ে পরীক্ষা দিয়ে পাস করলেই চলবে। এ রকম পরীক্ষার্থীর নাম দেওয়া হয়েছে ‘বিশেষ পরীক্ষার্থী’। এ রকম বিশেষ পরীক্ষার্থী এবার পরীক্ষা দিচ্ছে ১,৫৭,০১২ জন। সবাই বুঝতে পারছেন এদের পরীক্ষা প্রতিদিন থাকবে না। কারও এক দিন, কারও দুই, কারও তিন দিন। তাই এই ১,৫৭,০১২ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে শুধু তাদের ফেল করা স্ব স্ব বিষয়েই পরীক্ষা দেবে, অন্য দিনগুলোতে পরীক্ষায় অনুপস্থিত থাকবে।
আরেকটি বিষয় লক্ষ করলে দেখতে পাবেন, প্রথম দিন যে সংখ্যা অনুপস্থিত ছিল অর্থাৎ ৬৮,১৫৫ জন, পরের দিন সে সংখ্যা কমে এসে দাঁড়িয়েছে ৪৬,৩৪০ জনে। অর্থাৎ প্রথম দিনে যারা অনুপস্থিত ছিল, দ্বিতীয় দিন তাদের মধ্য থেকে ২১,৮১৫ জন উপস্থিত হয়েছিল। এভাবে তৃতীয় দিন, চতুর্থ দিন প্রথম দিনের চেয়ে ২০ হাজারের বেশি উপস্থিতি বৃদ্ধি পেয়েছে। সুতরাং, প্রথম দিনের পরীক্ষায় যারা অনুপস্থিত ছিল, তারা একেবারেই লেখাপড়া ছেড়ে চলে গেল অথবা ঝরে পড়ে গেল এ রকম সিদ্ধান্তে পৌঁছানো যুক্তিযুক্ত নয়।
তাই ‘বিশেষ পরীক্ষার্থীর’ মধ্য থেকে অর্থাৎ ১,৫৭,০১২ জন পরীক্ষার্থী সর্বোচ্চ তিন দিন ছাড়া অন্যান্য দিন অনুপস্থিত থাকবেই। কেউ এক দিনই পরীক্ষা দেবে, বাকি সব পরীক্ষার দিন তারা অনুপস্থিত থাকবে। তাই অনুপস্থিতির সংখ্যা দেখে ঢালাও অনুপস্থিত বলা যুক্তিযুক্ত হবে না। এমন যাঁরা ‘ঝরে পড়ে গেছে’ বলে চিত্র তুলে ধরেছেন, তাঁরাও সুবিচার করবেন না।
তা ছাড়া যারা অনিয়মিত পরীক্ষার্থী ১,৭২,৬৮৪ জন, তারাও বিভিন্ন পরিস্থিতির মধ্যে আবার পরীক্ষা দিতে এসেছে, তাদেরও কারও কারও বাস্তব কারণে অনুপস্থিত থাকার আশঙ্কা থাকতে পারে। এমনকি নিয়মিত ছাত্রদের মধ্যেও অনুপস্থিত থাকতে পারে। যেকোনো পরীক্ষায়ই কিছু পরীক্ষার্থী অনুপস্থিত থাকে। আমাদের দেশের বাস্তবতায় আমরা সব শিশুকে স্কুলে নিয়ে আসছি, ধরে রাখা বা ঝরে পড়া ক্রমান্বয়ে কমিয়ে আনার জন্য বিভিন্ন ব্যবস্থা নিচ্ছি। তিন বছর আগে যেখানে পঞ্চম শ্রেণীর আগেই ৪৮ শতাংশ, মাধ্যমিকে ৪২ শতাংশ ঝরে পড়ত (ভর্তিও হতো অনেক কম), আজ সেখানে তা অর্ধেকের বেশি কমে এসেছে।
ঝরে পড়া নতুন বিষয় নয় বা শুধু বাংলাদেশের বিষয় নয়। অতীতে ভর্তি, ঝরে পড়া, পরীক্ষা, ফলাফল এসবের তো কোনো খবরই রাখা হতো না। এখন এসব ক্ষেত্রে আমরা বিরাট পরিবর্তন এনেছি। তার পরেও অনেক বড় বড় কাজ বাকি আছে। আপনারা আমাদের ভুলত্রুটি ধরিয়ে দেবেন। সঠিক তথ্য দিয়ে সমালোচনা করে গঠনমূলক প্রস্তাব দেবেন, আমরা সব সময়ই তা সাদরে গ্রহণ করছি এবং করব। আমাদের ভুলত্রুটি ও ব্যর্থতার জন্য আমাকে শাস্তি দিন, কিন্তু আমাদের সন্তানদের (শিক্ষার্থীদের) নিরুৎসাহিত ও হতাশ করবেন না। সবার কাছে এ আমার বিনীত অনুরোধ। আমরা সবার সাহায্যপ্রার্থী।
নুরুল ইসলাম নাহিদ: শিক্ষামন্ত্রী, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার।
No comments