মনমোহনের সঙ্গে সু চির সাক্ষাৎ-মিয়ানমারের সংস্কারসহ সম্পর্ক জোরদারে গুরুত্বারোপ

মিয়ানমারের বিরোধীদলীয় নেত্রী অং সান সু চি গতকাল বুধবার ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। নয়াদিল্লিতে মনমোহনের সরকারি বাসভবনে তাঁদের একান্ত আলোচনায় উঠে এসেছে মিয়ানমারের রাজনৈতিক সংস্কারসহ দুই দেশের সম্পর্ক জোরদারের বিভিন্ন বিষয়।


মনমোহনের কার্যালয় সূত্র এ কথা জানিয়েছে। সু চি এ দিন নয়াদিল্লিতে তাঁর স্মৃতিবিজড়িত জায়গাগুলোও পরিদর্শন করেন।
গত মঙ্গলবার সপ্তাহব্যাপী ভারত সফর শুরু করেন সু চি। গত ২৫ বছরে সু চির প্রথম ভারত সফর এটা। সু চির মা দও খিন ই ষাটের দশকে ভারতে বার্মার (বর্তমানে মিয়ানমার) রাষ্ট্রদূত ছিলেন। সেই সুবাদে সু চি সে সময় নয়াদিল্লিতে পড়াশোনা করেন। দিল্লির লেডি শ্রী রাম কলেজের ছাত্রী ছিলেন তিনি। পরে ১৯৮৭ সালে তিনি শিমলায়ও কিছুদিন কাটান ইনস্টিটিউট অব অ্যাডভান্স স্টাডিজে ফেলোশিপ নেওয়ার জন্য।
সম্প্রতি ভারতের সঙ্গে মিয়ানমারের সম্পর্কের বেশ উন্নয়ন ঘটেছে। গত বছর অক্টোবরে মিয়ানমারের প্রেসিডেন্টের ভারত সফর ও পরে চলতি বছরের মে মাসে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের মিয়ানমার সফরের মধ্য দিয়ে সেই সম্পর্ক আরো ঘনিষ্ঠ হয়। এরই ধারাবাহিকতায় সু চির এই সফর বলে মনে করা হচ্ছে।
সু চি গতকাল দিন শুরু করেন রাজঘাটে মহাত্মা গান্ধীর সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদনের মাধ্যমে। পরে তিনি প্রয়াত নেতা জওয়া হেরলাল নেহরুর শান্তিবানের সমাধিতে গিয়ে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানান। গতকাল ছিল নেহরুর ১২৩তম জন্মবার্ষিকী। বিকেলে সু চি এক অনুষ্ঠানে নেহেরু স্মারক বক্তৃতা করেন। সু চি গৃহবন্দি থাকাকালে ১৯৯২ সালে ভারত সরকার তাঁকে জওয়া হেরলাল নেহরু পুরস্কারে সম্মানিত করে।
মনমোহনের সঙ্গে সু চির প্রায় আধঘণ্টা আলোচনা হয়। এ সময় মনমোহন বলেন, 'আপনার প্রতি এবং গণতন্ত্রের জন্য আপনার সংগ্রামের প্রতি সবসময়ই আমাদের শুভাশিষ ছিল। আপনি যে অনমনীয় সাহস দেখিয়েছেন তাঁকে সাধুবাদ জানাই।' প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় সূত্র জানায়, 'মিয়ানমারে রাজনৈতিক সংস্কারের উদ্যোগ ও এর আলোকে গণতন্ত্রের ধারা অব্যাহত রাখাসহ বিভিন্ন বিষয়ে দুই নেতা কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী মিয়ানমারের প্রেসিডেন্ট থেইন সেইন ও সু চির উদ্যোগকে স্বাগত জানান এ সময়।' আলোচনায় দুই নেতা দুই দেশের পার্লামেন্ট ও বিচারব্যবস্থার মধ্যে সহযোগিতামূলক সম্পর্ক সৃষ্টির বিষয় নিয়েও কথা বলেন।
পরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে সু চি জানান, দুই দেশের পারস্পরিক সম্পর্ক জোরদার করাই তাঁর এই সফরের লক্ষ্য।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'লোকে আমাকে সব সময়ই জিজ্ঞেস করে এই সফরে আমি কী প্রত্যাশা করছি। আমার মনে হয়, এই প্রশ্নের ভেতর এক ধরনের স্বার্থপরতা জড়িত রয়েছে। কেউ শুধু চাইতেই আসে না। তারা আসে বন্ধুত্বের তাগিদে এবং দুই দেশের সম্পর্ক উন্নয়নের প্রত্যাশায়।'
সফরকালে সু চির ভারতের উপরাষ্ট্রপতি হামিদ আনসারি, লোকসভার স্পিকার মিরা কুমার ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী সালমান খুরশিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করার কথা রয়েছে। সূত্র : এএফপি, জিনিউজ।

No comments

Powered by Blogger.