সফলদের স্বপ্নগাথা- চাকরি নয়, নিজেই হও উদ্যোক্তা by রিড হফম্যান
ব্যবসাভিত্তিক অনলাইন সোশ্যাল নেটওয়ার্ক ‘লিঙ্কড ইন’-এর সহপ্রতিষ্ঠাতা রিড হফম্যানের জন্ম ১৯৬৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রে। তিনি স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএসসি এবং অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স সম্পন্ন করেন। ২০০৩ সালে প্রতিষ্ঠিত লিঙ্কড ইনের ব্যবহারকারীর সংখ্যা এখন সারাবিশ্বে এক কোটি ৭৫ লাখ ছাড়িয়ে গেছে।
আজ আমি বক্তৃতা শুরু করব ড. মুহাম্মদ ইউনূসের একটি উদ্ধৃতি দিয়ে। তিনি বলেছেন, ‘সব মানুষই আসলে উদ্যোক্তা হয়ে জন্ম নেয়। মানুষ যখন গুহায় বাস করত, তখন তারা সবাই ছিল এক অর্থে উদ্যোক্তা। তারা নিজেরাই খাবার সংগ্রহ করত, নিজেদের কাজের সংস্থানও করত। এভাবে আত্মকর্মসংস্থানের মাধ্যমেই মানব ইতিহাসের সূচনা হয়েছে। সভ্যতার সূচনালগ্নে বেকার বলে কোনো শব্দ ছিল না। কিন্তু সময় যত পেরিয়েছে, আমরা আমাদের সহজাত উদ্যোক্তাসুলভ মনোভাবকে তত দমিয়ে ফেলেছি। আমরা উদ্যোক্তা থেকে পরিণত হয়েছি শ্রমিকে। আমাদের মগজে পাকাপাকিভাবে এই ধারণা ঢুকে গিয়েছে যে আমাদের চাকরি করতে হবে।’
আমি এই উক্তিটি বিশেষভাবে উল্লেখ করলাম, কারণ উদ্যোক্তারা সত্যিই গুরুত্বপূর্ণ। আজ যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী জনগণের অধিকাংশই অভিবাসী কিংবা অভিবাসীদের বংশধর। তাদের পূর্বপ্রজন্ম মহাসাগরের ওপার থেকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে একদিন এই নতুন ভূখণ্ডে এসেছিল। আজকে অনেক বড় বড় কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা একদিন অভিবাসী হয়ে যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে পা ফেলেছিলেন, তাঁদের স্বপ্নের প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে। যুক্তরাষ্ট্রের স্বপ্ন বলতে আজ এটিই বোঝায়, কঠোর পরিশ্রম, অধ্যবসায় আর মেধার সমন্বয়ে নিজের ভাগ্য ও ভবিষ্যৎকে নিজের হাতে গড়ে তোলা। উদ্যোক্তারা হলো সেসব হাতেগোনা মানুষ যারা সমাজের প্রচলিত ধারার বাইরে গিয়ে নিজেদের পথ নিজেরাই সৃষ্টি করে নেয়। তাঁরা নতুন প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন এবং অন্যদের জন্য কাজের সুযোগ সৃষ্টি করেন। এর সবকিছুই সমাজকে এগিয়ে নিতে অপরিহার্য। এখন বেকারত্বের হার কত একটু ভেবে দেখো। আজ যদি আমাদের মধ্যে আরও অনেক উদ্যোক্তা থাকতেন, আরও নতুন নতুন ব্যবসা গড়ে উঠত! তা হলে বেকারত্ব দূর করা কোনো ব্যাপারই ছিল না। এই আধুনিক সমাজে ব্যবসায় উদ্যোগ শুধু প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা আর মানুষের কর্মসংস্থানের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। উদ্যোগী মনোভাব ও চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য আজ প্রায় সব পেশাতেই দরকার। নিঃসন্দেহে এটি একটি নতুন ব্যাপার। পৃথিবী এখন বিশ্বায়ন আর প্রযুক্তির কল্যাণে যত দ্রুত বদলে যাচ্ছে, তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার জন্য এই পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়ার কোনো বিকল্প নেই। গত দশকে একজন শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনা শেষ করে ধাপে ধাপে তার ক্যারিয়ার গড়ে তুলত। কর্মক্ষেত্রে তার কাজের একটি নির্দিষ্ট বিভাগ থাকত, ক্যারিয়ারের পথ ছিল সুনির্দিষ্ট ছকে বাঁধা। যে কোম্পানিতেই কাজ করুক না কেন, সে সেই ছকের ভেতরে থেকেই একটি নির্দিষ্ট বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করে সামনের দিকে এগিয়ে যেত। পরিশ্রম এবং কিছুটা ভাগ্যের সহায়তা পেলে ক্যারিয়ার নিয়ে চিন্তার কোনো কারণ ছিল না। কিন্তু বিশ্বায়ন যেখানে প্রতিমুহূর্তে পৃথিবীকে বদলে দিচ্ছে, সেখানে তোমাদের মতো তরুণদের ক্যারিয়ার-ভাবনাও বদলে ফেলতে হবে। আগে ক্যারিয়ার ছিল একটি সোজা ওপরে উঠে যাওয়া সিঁড়ি, এখন তা পরিণত হয়েছে গোলকধাঁধার মতো এক পাহাড়ি এলাকায়। এখানে ওপরে উঠে যেতে হলে তোমাকে কখনো নিচেও নামতে হতে পারে, অনেক চড়াই-উতরাই পাশ কাটিয়ে যেতে হতে পারে বুদ্ধি করে, কখনো কখনো ঝুঁকি নিয়ে লাফ দিতেও হতে পারে। আবার সময়ের প্রয়োজনে হয়তো তোমাকে পাহাড়ের পাদদেশে নেমেও আসতে হতে পারে। হয়তো দেখা যাবে পাহাড়ের গা ঘেঁষে তুমি সুন্দর একটা খেলার জায়গা বানিয়ে ফেলেছ! কিছুই আসলে একরকম থাকবে না, কখনো থাকে না। যা আছে তা বদলায়, কখনো বদলে গিয়ে সম্পূর্ণ নতুন কিছু তৈরি হয়, কখনো আগে যা ছিল তা সম্পূর্ণ বিলুপ্ত হয়ে যায়। আধুনিক ক্যারিয়ার, যা তোমাদের জন্য অপেক্ষা করছে, তার এভাবেই প্রতিনিয়ত পরিবর্তিত হচ্ছে। এই পরিবর্তনকেই তোমাদের একমাত্র স্থায়ী ব্যাপার বলে ধরে নিতে হবে। আশপাশের সবকিছুই বদলে যাবে, তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে তোমার দক্ষতা ও সামর্থ্যকেও দ্রুত বদলে ফেলতে হবে। বর্তমান সময়ে টিকে থাকতে হলে প্রয়োজন কৌশল। আর সেই কৌশলটি হলো, উদ্যোক্তাদের মতো চিন্তা করা। বসে বসে দীর্ঘ পরিকল্পনা করে জীবন পার করে দিলে চলবে না, কাজে নেমে পড়তে হবে। নিজের কাজ, নিজের ক্যারিয়ার নিজেকেই সৃষ্টি করে নিতে হবে। তোমাদের মধ্যে খুব কমই নিজের ব্যবসা বা প্রতিষ্ঠান শুরু করবে, কিন্তু তার পরও প্রত্যেকেরই উদ্যোক্তাদের মতো চিন্তা করা উচিত। কীভাবে নিজেকে উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তুলবে বা নিজের ভেতরে উদ্যোগী-ভাবনা জাগিয়ে তুলবে, তা নিয়ে নানা জনের নানা মত আছে। কিন্তু আমার কাছে যদি একটিমাত্র পরামর্শ চাওয়া হয় এ ব্যাপারে তা হলে আমি বলব, নিজের ‘নেটওয়ার্ক’ তৈরি করো। তোমার পরিচিতজনেরাই তোমাকে পথ খুঁজে পেতে সাহায্য করবে। তোমার নেটওয়ার্ক যত শক্তিশালী হবে, তুমি তত বেশি তথ্য পাবে, ব্যবহারিক জ্ঞান পাবে। তোমার বন্ধু ও শুভাকাঙ্ক্ষীরাই তোমাকে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে এমনভাবে সাহায্য করবে, যা তুমি হয়তো চিন্তাও করতে পারবে না। মানুষের সঙ্গে তোমার সম্পর্ক কেমন, সেটা তোমার সফল হওয়ার পেছনে অসম্ভব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তোমার নেটওয়ার্ক থেকে তুমি যেমন মূল্যবান তথ্য আর প্রয়োজনীয় সহায়তা পেতে পারো, তেমনি আপাতদৃষ্টিতে অসম্ভব কঠিন চ্যালেঞ্জ, যা তোমার একার পক্ষে কখনোই মোকাবিলা করা সম্ভব ছিল না, তাও তুমি সামাল দিতে পারো। অনেক অবশ্যম্ভাবী ব্যর্থতা আর দুর্যোগকে তুমি এড়িয়ে যেতে পারো, অনেক নতুন সম্ভাবনাও খুঁজে বের করতে পারো, শুধু তোমাকে একটি শক্তিশালী নেটওয়ার্ক গড়ে তুলতে হবে। আজ যেখানে তোমরা সমাবর্তনের জন্য হাজির হয়েছ, এখানেও তোমাদের নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার অসীম সম্ভাবনা রয়েছে। আমাকে প্রথম চাকরি দিয়েছিল আমার এক বন্ধুর রুমমেট, আমি তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। আমি ‘পেপাল’-এর প্রতিষ্ঠাতা বোর্ড মেম্বার, সেটিও হয়েছিল আমার এক কাছের বন্ধুর মাধ্যমে যে কোম্পানিটির সহপ্রতিষ্ঠাতা। আসলে একটি শক্তিশালী নেটওয়ার্ক শুধু যারা তোমার পরিচিত তাদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে না, একটা মাকড়সার জালের মতো ছড়িয়ে পড়ে। যাদের সঙ্গে তোমার সুসম্পর্ক তারা, তাদের পরিচিত মানুষেরা, এমনকি সেই মানুষদেরও পরিচিত মানুষেরা—সবাই এক অদৃশ্য সুতায় জড়িয়ে আছে। জীবন একটি দলগত খেলা, যেখানে একাকী তোমার কোনো অস্তিত্ব নেই। তোমার আশপাশের সবকিছু, তোমার দলের সবাইকে নিয়েই ‘তুমি’। উদ্যোক্তাদের অদম্য মনোভাব থেকে যেকোনো পেশার মানুষই তাদের ক্যারিয়ার গড়ে তোলার দিকনির্দেশনা নিতে পারে। আজকের পৃথিবী খুব দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে, তাই পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাইয়ে চলা আর নতুন কিছু আবিষ্কার করার তাগিদও দিন দিন বাড়ছে। এই পৃথিবীর নেতৃত্ব দিতে হলে উদ্যোক্তাদের মতো ভাবতে হবে, তারাই নেতৃত্বের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। আমাদের প্রতিটি ক্ষেত্রে এমন নেতৃত্ব প্রয়োজন, আমাদের উদ্যোক্তা প্রয়োজন।
২০১২ ব্যাচের শিক্ষার্থীরা, ভুলে যেয়ো না তোমরাই আমাদের নেতা, তোমরাই জাতির ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে। তোমাদের মধ্যে থেকেই নতুন উদ্যোক্তা সৃষ্টি হবে, তোমরাই সমাজকে বদলে দেবে। তোমরা শুধু নিজেরা উদ্যোক্তা হয়েই থেমে যেয়ো না। তোমাদের মতো আরও অসংখ্য উদ্যোক্তা যাতে সৃষ্টি হতে পারে, বিকাশ লাভ করতে পারে, এ সমাজে তার উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করতে এগিয়ে এসো। জেনে রেখো, একজন মানুষ পরিবর্তনের সূচনা করতে পারে ঠিকই, কিন্তু সেই পরিবর্তন ফলপ্রসূ হয় তখনই যখন আরও অসংখ্য মানুষ এর সঙ্গে যুক্ত হয়। আজ থেকে তোমরা এক নতুন পথে পা বাড়ালে, এখনই সময় নতুন কিছু করে দেখানোর। তোমাদের জন্য শুভকামনা।
সূত্র: ওয়েবসাইট
ইংরেজি থেকে অনুবাদ: অঞ্জলি সরকার
আমি এই উক্তিটি বিশেষভাবে উল্লেখ করলাম, কারণ উদ্যোক্তারা সত্যিই গুরুত্বপূর্ণ। আজ যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী জনগণের অধিকাংশই অভিবাসী কিংবা অভিবাসীদের বংশধর। তাদের পূর্বপ্রজন্ম মহাসাগরের ওপার থেকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে একদিন এই নতুন ভূখণ্ডে এসেছিল। আজকে অনেক বড় বড় কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা একদিন অভিবাসী হয়ে যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে পা ফেলেছিলেন, তাঁদের স্বপ্নের প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে। যুক্তরাষ্ট্রের স্বপ্ন বলতে আজ এটিই বোঝায়, কঠোর পরিশ্রম, অধ্যবসায় আর মেধার সমন্বয়ে নিজের ভাগ্য ও ভবিষ্যৎকে নিজের হাতে গড়ে তোলা। উদ্যোক্তারা হলো সেসব হাতেগোনা মানুষ যারা সমাজের প্রচলিত ধারার বাইরে গিয়ে নিজেদের পথ নিজেরাই সৃষ্টি করে নেয়। তাঁরা নতুন প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন এবং অন্যদের জন্য কাজের সুযোগ সৃষ্টি করেন। এর সবকিছুই সমাজকে এগিয়ে নিতে অপরিহার্য। এখন বেকারত্বের হার কত একটু ভেবে দেখো। আজ যদি আমাদের মধ্যে আরও অনেক উদ্যোক্তা থাকতেন, আরও নতুন নতুন ব্যবসা গড়ে উঠত! তা হলে বেকারত্ব দূর করা কোনো ব্যাপারই ছিল না। এই আধুনিক সমাজে ব্যবসায় উদ্যোগ শুধু প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা আর মানুষের কর্মসংস্থানের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। উদ্যোগী মনোভাব ও চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য আজ প্রায় সব পেশাতেই দরকার। নিঃসন্দেহে এটি একটি নতুন ব্যাপার। পৃথিবী এখন বিশ্বায়ন আর প্রযুক্তির কল্যাণে যত দ্রুত বদলে যাচ্ছে, তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার জন্য এই পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়ার কোনো বিকল্প নেই। গত দশকে একজন শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনা শেষ করে ধাপে ধাপে তার ক্যারিয়ার গড়ে তুলত। কর্মক্ষেত্রে তার কাজের একটি নির্দিষ্ট বিভাগ থাকত, ক্যারিয়ারের পথ ছিল সুনির্দিষ্ট ছকে বাঁধা। যে কোম্পানিতেই কাজ করুক না কেন, সে সেই ছকের ভেতরে থেকেই একটি নির্দিষ্ট বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করে সামনের দিকে এগিয়ে যেত। পরিশ্রম এবং কিছুটা ভাগ্যের সহায়তা পেলে ক্যারিয়ার নিয়ে চিন্তার কোনো কারণ ছিল না। কিন্তু বিশ্বায়ন যেখানে প্রতিমুহূর্তে পৃথিবীকে বদলে দিচ্ছে, সেখানে তোমাদের মতো তরুণদের ক্যারিয়ার-ভাবনাও বদলে ফেলতে হবে। আগে ক্যারিয়ার ছিল একটি সোজা ওপরে উঠে যাওয়া সিঁড়ি, এখন তা পরিণত হয়েছে গোলকধাঁধার মতো এক পাহাড়ি এলাকায়। এখানে ওপরে উঠে যেতে হলে তোমাকে কখনো নিচেও নামতে হতে পারে, অনেক চড়াই-উতরাই পাশ কাটিয়ে যেতে হতে পারে বুদ্ধি করে, কখনো কখনো ঝুঁকি নিয়ে লাফ দিতেও হতে পারে। আবার সময়ের প্রয়োজনে হয়তো তোমাকে পাহাড়ের পাদদেশে নেমেও আসতে হতে পারে। হয়তো দেখা যাবে পাহাড়ের গা ঘেঁষে তুমি সুন্দর একটা খেলার জায়গা বানিয়ে ফেলেছ! কিছুই আসলে একরকম থাকবে না, কখনো থাকে না। যা আছে তা বদলায়, কখনো বদলে গিয়ে সম্পূর্ণ নতুন কিছু তৈরি হয়, কখনো আগে যা ছিল তা সম্পূর্ণ বিলুপ্ত হয়ে যায়। আধুনিক ক্যারিয়ার, যা তোমাদের জন্য অপেক্ষা করছে, তার এভাবেই প্রতিনিয়ত পরিবর্তিত হচ্ছে। এই পরিবর্তনকেই তোমাদের একমাত্র স্থায়ী ব্যাপার বলে ধরে নিতে হবে। আশপাশের সবকিছুই বদলে যাবে, তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে তোমার দক্ষতা ও সামর্থ্যকেও দ্রুত বদলে ফেলতে হবে। বর্তমান সময়ে টিকে থাকতে হলে প্রয়োজন কৌশল। আর সেই কৌশলটি হলো, উদ্যোক্তাদের মতো চিন্তা করা। বসে বসে দীর্ঘ পরিকল্পনা করে জীবন পার করে দিলে চলবে না, কাজে নেমে পড়তে হবে। নিজের কাজ, নিজের ক্যারিয়ার নিজেকেই সৃষ্টি করে নিতে হবে। তোমাদের মধ্যে খুব কমই নিজের ব্যবসা বা প্রতিষ্ঠান শুরু করবে, কিন্তু তার পরও প্রত্যেকেরই উদ্যোক্তাদের মতো চিন্তা করা উচিত। কীভাবে নিজেকে উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তুলবে বা নিজের ভেতরে উদ্যোগী-ভাবনা জাগিয়ে তুলবে, তা নিয়ে নানা জনের নানা মত আছে। কিন্তু আমার কাছে যদি একটিমাত্র পরামর্শ চাওয়া হয় এ ব্যাপারে তা হলে আমি বলব, নিজের ‘নেটওয়ার্ক’ তৈরি করো। তোমার পরিচিতজনেরাই তোমাকে পথ খুঁজে পেতে সাহায্য করবে। তোমার নেটওয়ার্ক যত শক্তিশালী হবে, তুমি তত বেশি তথ্য পাবে, ব্যবহারিক জ্ঞান পাবে। তোমার বন্ধু ও শুভাকাঙ্ক্ষীরাই তোমাকে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে এমনভাবে সাহায্য করবে, যা তুমি হয়তো চিন্তাও করতে পারবে না। মানুষের সঙ্গে তোমার সম্পর্ক কেমন, সেটা তোমার সফল হওয়ার পেছনে অসম্ভব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তোমার নেটওয়ার্ক থেকে তুমি যেমন মূল্যবান তথ্য আর প্রয়োজনীয় সহায়তা পেতে পারো, তেমনি আপাতদৃষ্টিতে অসম্ভব কঠিন চ্যালেঞ্জ, যা তোমার একার পক্ষে কখনোই মোকাবিলা করা সম্ভব ছিল না, তাও তুমি সামাল দিতে পারো। অনেক অবশ্যম্ভাবী ব্যর্থতা আর দুর্যোগকে তুমি এড়িয়ে যেতে পারো, অনেক নতুন সম্ভাবনাও খুঁজে বের করতে পারো, শুধু তোমাকে একটি শক্তিশালী নেটওয়ার্ক গড়ে তুলতে হবে। আজ যেখানে তোমরা সমাবর্তনের জন্য হাজির হয়েছ, এখানেও তোমাদের নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার অসীম সম্ভাবনা রয়েছে। আমাকে প্রথম চাকরি দিয়েছিল আমার এক বন্ধুর রুমমেট, আমি তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। আমি ‘পেপাল’-এর প্রতিষ্ঠাতা বোর্ড মেম্বার, সেটিও হয়েছিল আমার এক কাছের বন্ধুর মাধ্যমে যে কোম্পানিটির সহপ্রতিষ্ঠাতা। আসলে একটি শক্তিশালী নেটওয়ার্ক শুধু যারা তোমার পরিচিত তাদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে না, একটা মাকড়সার জালের মতো ছড়িয়ে পড়ে। যাদের সঙ্গে তোমার সুসম্পর্ক তারা, তাদের পরিচিত মানুষেরা, এমনকি সেই মানুষদেরও পরিচিত মানুষেরা—সবাই এক অদৃশ্য সুতায় জড়িয়ে আছে। জীবন একটি দলগত খেলা, যেখানে একাকী তোমার কোনো অস্তিত্ব নেই। তোমার আশপাশের সবকিছু, তোমার দলের সবাইকে নিয়েই ‘তুমি’। উদ্যোক্তাদের অদম্য মনোভাব থেকে যেকোনো পেশার মানুষই তাদের ক্যারিয়ার গড়ে তোলার দিকনির্দেশনা নিতে পারে। আজকের পৃথিবী খুব দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে, তাই পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাইয়ে চলা আর নতুন কিছু আবিষ্কার করার তাগিদও দিন দিন বাড়ছে। এই পৃথিবীর নেতৃত্ব দিতে হলে উদ্যোক্তাদের মতো ভাবতে হবে, তারাই নেতৃত্বের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। আমাদের প্রতিটি ক্ষেত্রে এমন নেতৃত্ব প্রয়োজন, আমাদের উদ্যোক্তা প্রয়োজন।
২০১২ ব্যাচের শিক্ষার্থীরা, ভুলে যেয়ো না তোমরাই আমাদের নেতা, তোমরাই জাতির ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে। তোমাদের মধ্যে থেকেই নতুন উদ্যোক্তা সৃষ্টি হবে, তোমরাই সমাজকে বদলে দেবে। তোমরা শুধু নিজেরা উদ্যোক্তা হয়েই থেমে যেয়ো না। তোমাদের মতো আরও অসংখ্য উদ্যোক্তা যাতে সৃষ্টি হতে পারে, বিকাশ লাভ করতে পারে, এ সমাজে তার উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করতে এগিয়ে এসো। জেনে রেখো, একজন মানুষ পরিবর্তনের সূচনা করতে পারে ঠিকই, কিন্তু সেই পরিবর্তন ফলপ্রসূ হয় তখনই যখন আরও অসংখ্য মানুষ এর সঙ্গে যুক্ত হয়। আজ থেকে তোমরা এক নতুন পথে পা বাড়ালে, এখনই সময় নতুন কিছু করে দেখানোর। তোমাদের জন্য শুভকামনা।
সূত্র: ওয়েবসাইট
ইংরেজি থেকে অনুবাদ: অঞ্জলি সরকার
No comments