শেষ পরিচয় শুধু একটি নম্বর by এস এম আজাদ
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গের বারান্দায় ভিড়। বরাবরের লাশের গন্ধ ছাপিয়ে গেছে পোড়া লাশের উৎকট গন্ধ। এরই মধ্যে বডিব্যাগে রাখা অঙ্গার হওয়া লাশগুলো দেখতে এগিয়ে যাচ্ছিলেন কয়েকজন। এক নারীর হাত ধরে কেঁদে ফিরছিল এক শিশু। হাতে নিখোঁজ স্বজনদের ছবি।
শিশুটির চোখের পানি ঝরে পড়ছিল লাশের ব্যাগে। 'মা, বাবা, ভাইয়া...'- কান্নার ফাঁকে বলছিল শিশুটি। তার সঙ্গে থাকা স্বজনরাও কাঁদছিলেন।
শিশুটির সঙ্গে থাকা খালা রেহানা বেগম বললেন, 'লিয়ন (১১) নামের এই শিশু আশুলিয়ার নিশ্চিন্তপুরে মর্মান্তিক অগ্নিকাণ্ডে হারিয়েছে ওর মা, বাবা, বড় ভাই ও ভাবিকে। পোলাডা বাসায় কান্নাকাডি করতাছিল। তাই নিয়া আসছি। কিন্তু ওদের আর খুঁজে পাওয়া গেল না।' নিশ্চিন্তপুর স্কুল মাঠে লাশ দেখে শনাক্ত করতে পারেননি। তাই শেষবারের মতো এসেছেন দেখতে, যদি কোনোভাবে বোঝা যায়। লিয়নের চাচা বেলাল জানান, লিয়নের বাবা নজরুল ইসলাম (৪৮) ছিলেন তাজরীন ফ্যাশনস গার্মেন্টের মেশিনম্যান। মা আমেনা বেগম (৩৫) ও ভাই নয়ন (২৩) ছিল অপারেটর। আর নয়নের স্ত্রী মনিরা আক্তার (১৯) ছিলেন হেলপার। তাদের ধারণা, 'সর্বনাশা এই আগুনে ওরা সবাই মারা গেছে।' বেলাল বলেন, 'প্রয়োজনে ডিএনএ পরীক্ষার জন্য নমুনা দেব।'
রংপুরের মিঠাপুকুরে বড়বাড়ী গ্রামের বাড়িতে থাকত লিয়ন। তিন ভাই ও এক বোনের মধ্যে দ্বিতীয় লিয়ন পঞ্চম শ্রেণীতে পড়ে। মর্গ থেকে ফেরার পথে লিয়নের প্রশ্ন, 'হামার মা-বাবা কই, তাকি হামারা জানতে পারুম?'
গতকাল মঙ্গলবার এমন প্রশ্ন নিয়ে কেঁদে ফিরেছেন অনেক স্বজন। কাছের মানুষের লাশটি পেয়ে অন্তত মনের সান্ত্বনা নিয়ে ফিরেছে চারটি পরিবার। বলেছে, 'পুড়ে অঙ্গার হোক, লাশ তো পাওয়া গেছে। কেউ তো আর বেওয়ারিশ বলবে না।'
গতকাল ব্যক্তিগত পর্যায়ে অনেক চিহ্ন ও অলংকার মিলিয়ে দেখে স্বজনকে চেনার চেষ্টা করেছেন অনেকে। কিন্তু বেশির ভাগই ব্যর্থ হয়েছেন। বেলা আড়াইটার দিকে সর্বশেষ শনাক্ত হয় মরিয়ম খাতুন (২৫) নামের এক শ্রমিকের লাশ। পাবনার ফরিদপুরের বাবুল মিয়ার স্ত্রী মরিয়ম কারখানার পঞ্চম তলার অপারেটর ছিলেন। বাবুল কালের কণ্ঠকে বলেন, 'ওর ছোট ছোট দাঁত আর হাতের চুড়ি দেখে চিনেছি। মনরে বুঝাচ্ছি, অনেকে তো লাশও পায় নাই। আমি অন্তত লাশটা পাইলাম...।'
এ ছাড়া দুপুর ২টার দিকে জাহেদা খাতুন (৩০) নামের আরেকজনকে নাকফুল দেখে শনাক্ত করেন স্বামী ইকরামুল হক। রংপুরের মিঠাপুকুরের কাসিমপুরের বাসিন্দা ইকরামুল জানান, তাঁর স্ত্রী ছিলেন কারখানার পঞ্চম তলার হেলপার। ছয় বছর আগে বিয়ের সময় স্ত্রীকে দেওয়া শাপলা চিহ্নের নাকফুলের মধ্যে পাথর দেখে তিনি চিনেছেন। ইকরামুল বলেন, 'পোলাডারে তবু কইতে পারুম। এটা তোমার মার কবর।'
পরিচয় হারানো ৫৩ শ্রমিক সমাহিত : মর্মান্তিক অগ্নিকাণ্ডে সরকারিভাবে সংরক্ষণ করা ১১১ লাশের মধ্যে গতকাল পর্যন্ত ৫৮টি লাশ শনাক্ত হওয়ার পর স্বজনদের বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। শনাক্ত হয়নি ৫৩টি লাশ। আগুন প্রাণটি কেড়ে নেওয়ার পাশাপাশি ওদের পরিচয়টুকুও নিয়ে গেছে। ডিএনএ নমুনা সংরক্ষণের পর গতকাল বিকেলে আঞ্জমান মফিদুল ইসলাম জুরাইন কবরস্থানে পরিচয়হীন এসব লাশ দাফন করে।
আঞ্জুমান মফিদুল ইসলামের সহকারী পরিচালক আবদুল হালিম জানান, গতকাল বিকেল ৩টার দিকে পাঁচটি গাড়ি করে ৫২ জনের লাশ নিয়ে যাওয়া হয় জুরাইন কবরস্থানে। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে আরেকটি লাশও নিয়ে যাওয়া হয়। পরে সেগুলো দাফন করা হয়। ডিএনএ পরীক্ষার ক্রমিক নম্বরগুলো কবরের ওপর লিখে দাফন সম্পন্ন করা হয়েছে।
ঢাকার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক আবুল ফজল মীর জানান, সিআইডির সহায়তায় ডিএনএ পরীক্ষার জন্য আলামত সংগ্রহ করা হয়। সোমবার কয়েকটি লাশের পরিচয় শনাক্ত হওয়ার কারণে গতকাল সকাল ১০টা পর্যন্ত ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ মর্গে লাশগুলো রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। পরে দুপুর পর্যন্ত রাখা হয়। তিনি জানান, সমাহিত লাশের মধ্যে ৪৩ জন নারী, ছয়জন পুরুষ এবং বাকি চারজনের লিঙ্গ শনাক্ত করা যায়নি।
জানা গেছে, গতকাল বেলা আড়াইটার দিকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ মর্গের সামনে ৫২ জনের প্রথম নামাজে জানাজা হয়। জুরাইনে আরেক দফা জানাজা হয়। মর্গের সামনে জানাজায় অংশ নেন শ্রমমন্ত্রী রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজু। সেখানে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, 'ঘটনার তদন্ত হচ্ছে। এটি নাশকতা হলে দায়ীদের অবশ্যই বিচার হবে।'
শিশুটির সঙ্গে থাকা খালা রেহানা বেগম বললেন, 'লিয়ন (১১) নামের এই শিশু আশুলিয়ার নিশ্চিন্তপুরে মর্মান্তিক অগ্নিকাণ্ডে হারিয়েছে ওর মা, বাবা, বড় ভাই ও ভাবিকে। পোলাডা বাসায় কান্নাকাডি করতাছিল। তাই নিয়া আসছি। কিন্তু ওদের আর খুঁজে পাওয়া গেল না।' নিশ্চিন্তপুর স্কুল মাঠে লাশ দেখে শনাক্ত করতে পারেননি। তাই শেষবারের মতো এসেছেন দেখতে, যদি কোনোভাবে বোঝা যায়। লিয়নের চাচা বেলাল জানান, লিয়নের বাবা নজরুল ইসলাম (৪৮) ছিলেন তাজরীন ফ্যাশনস গার্মেন্টের মেশিনম্যান। মা আমেনা বেগম (৩৫) ও ভাই নয়ন (২৩) ছিল অপারেটর। আর নয়নের স্ত্রী মনিরা আক্তার (১৯) ছিলেন হেলপার। তাদের ধারণা, 'সর্বনাশা এই আগুনে ওরা সবাই মারা গেছে।' বেলাল বলেন, 'প্রয়োজনে ডিএনএ পরীক্ষার জন্য নমুনা দেব।'
রংপুরের মিঠাপুকুরে বড়বাড়ী গ্রামের বাড়িতে থাকত লিয়ন। তিন ভাই ও এক বোনের মধ্যে দ্বিতীয় লিয়ন পঞ্চম শ্রেণীতে পড়ে। মর্গ থেকে ফেরার পথে লিয়নের প্রশ্ন, 'হামার মা-বাবা কই, তাকি হামারা জানতে পারুম?'
গতকাল মঙ্গলবার এমন প্রশ্ন নিয়ে কেঁদে ফিরেছেন অনেক স্বজন। কাছের মানুষের লাশটি পেয়ে অন্তত মনের সান্ত্বনা নিয়ে ফিরেছে চারটি পরিবার। বলেছে, 'পুড়ে অঙ্গার হোক, লাশ তো পাওয়া গেছে। কেউ তো আর বেওয়ারিশ বলবে না।'
গতকাল ব্যক্তিগত পর্যায়ে অনেক চিহ্ন ও অলংকার মিলিয়ে দেখে স্বজনকে চেনার চেষ্টা করেছেন অনেকে। কিন্তু বেশির ভাগই ব্যর্থ হয়েছেন। বেলা আড়াইটার দিকে সর্বশেষ শনাক্ত হয় মরিয়ম খাতুন (২৫) নামের এক শ্রমিকের লাশ। পাবনার ফরিদপুরের বাবুল মিয়ার স্ত্রী মরিয়ম কারখানার পঞ্চম তলার অপারেটর ছিলেন। বাবুল কালের কণ্ঠকে বলেন, 'ওর ছোট ছোট দাঁত আর হাতের চুড়ি দেখে চিনেছি। মনরে বুঝাচ্ছি, অনেকে তো লাশও পায় নাই। আমি অন্তত লাশটা পাইলাম...।'
এ ছাড়া দুপুর ২টার দিকে জাহেদা খাতুন (৩০) নামের আরেকজনকে নাকফুল দেখে শনাক্ত করেন স্বামী ইকরামুল হক। রংপুরের মিঠাপুকুরের কাসিমপুরের বাসিন্দা ইকরামুল জানান, তাঁর স্ত্রী ছিলেন কারখানার পঞ্চম তলার হেলপার। ছয় বছর আগে বিয়ের সময় স্ত্রীকে দেওয়া শাপলা চিহ্নের নাকফুলের মধ্যে পাথর দেখে তিনি চিনেছেন। ইকরামুল বলেন, 'পোলাডারে তবু কইতে পারুম। এটা তোমার মার কবর।'
পরিচয় হারানো ৫৩ শ্রমিক সমাহিত : মর্মান্তিক অগ্নিকাণ্ডে সরকারিভাবে সংরক্ষণ করা ১১১ লাশের মধ্যে গতকাল পর্যন্ত ৫৮টি লাশ শনাক্ত হওয়ার পর স্বজনদের বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। শনাক্ত হয়নি ৫৩টি লাশ। আগুন প্রাণটি কেড়ে নেওয়ার পাশাপাশি ওদের পরিচয়টুকুও নিয়ে গেছে। ডিএনএ নমুনা সংরক্ষণের পর গতকাল বিকেলে আঞ্জমান মফিদুল ইসলাম জুরাইন কবরস্থানে পরিচয়হীন এসব লাশ দাফন করে।
আঞ্জুমান মফিদুল ইসলামের সহকারী পরিচালক আবদুল হালিম জানান, গতকাল বিকেল ৩টার দিকে পাঁচটি গাড়ি করে ৫২ জনের লাশ নিয়ে যাওয়া হয় জুরাইন কবরস্থানে। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে আরেকটি লাশও নিয়ে যাওয়া হয়। পরে সেগুলো দাফন করা হয়। ডিএনএ পরীক্ষার ক্রমিক নম্বরগুলো কবরের ওপর লিখে দাফন সম্পন্ন করা হয়েছে।
ঢাকার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক আবুল ফজল মীর জানান, সিআইডির সহায়তায় ডিএনএ পরীক্ষার জন্য আলামত সংগ্রহ করা হয়। সোমবার কয়েকটি লাশের পরিচয় শনাক্ত হওয়ার কারণে গতকাল সকাল ১০টা পর্যন্ত ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ মর্গে লাশগুলো রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। পরে দুপুর পর্যন্ত রাখা হয়। তিনি জানান, সমাহিত লাশের মধ্যে ৪৩ জন নারী, ছয়জন পুরুষ এবং বাকি চারজনের লিঙ্গ শনাক্ত করা যায়নি।
জানা গেছে, গতকাল বেলা আড়াইটার দিকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ মর্গের সামনে ৫২ জনের প্রথম নামাজে জানাজা হয়। জুরাইনে আরেক দফা জানাজা হয়। মর্গের সামনে জানাজায় অংশ নেন শ্রমমন্ত্রী রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজু। সেখানে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, 'ঘটনার তদন্ত হচ্ছে। এটি নাশকতা হলে দায়ীদের অবশ্যই বিচার হবে।'
No comments