প্রতিক্রিয়া-ইইউয়ের শোক মজিনার উদ্বেগ বিব্রত ওয়ালমার্ট
আশুলিয়ার নিশ্চিন্তপুরের তাজরীন ফ্যাশনসের কারখানায় আগুন লেগে ১১১ জন শ্রমিকের প্রাণহানির ঘটনায় বিব্রত ওয়ালমার্ট, সিঅ্যান্ডএসহ বাংলাদেশের গার্মেন্ট শিল্পের বিদেশি ক্রেতারা। গভীর শোক প্রকাশ করেছে এ খাতের সবচেয়ে বড় বাজার ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)।
অন্যদিকে এ দুর্ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত ড্যান ডাব্লিউ মজিনা। গতকাল মঙ্গলবার বাংলাদেশ এমপ্লয়ার্স ফেডারেশনের (বিইএফ) সঙ্গে সভা শেষে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, এ ঘটনা থেকে শিক্ষা নেওয়ার অনেক কিছু আছে।গত সোমবার নিজস্ব ওয়েবসাইটে দেওয়া এক বিবৃতিতে অনুমোদন না নিয়ে বাংলাদেশের তাজরীন ফ্যাশনসকে পোশাক তৈরি করতে দেওয়া সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ব্যবসায়িক সম্পর্ক ছিন্ন করার ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক খ্যাতনামা খুচরা পণ্য বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান ওয়ালমার্ট। অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে তাদের বিবৃতিতে আরো বলা হয়, ওয়ালমার্টের জন্য তৈরি পোশাক সরবরাহ করার কোনো অধিকার তাজরীন ফ্যাশনসের নেই। সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান কোনো অনুমোদন ছাড়াই তাজরীন ফ্যাশনসকে পোশাক তৈরির এ কাজ দিয়েছে, যা ওয়ালমার্টের নীতিমালার সরাসরি লঙ্ঘন। তাই ওই সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আজ থেকে সব ধরনের সম্পর্ক ছিন্ন করা হলো।
এর আগে হংকংভিত্তিক লি অ্যান্ড ফাং জানায়, তাজরীন ফ্যাশনসে তাদের অর্ডার ছিল। তারা নিজেরা আগুনের কারণ অনুসন্ধান করবে। নিহত ব্যক্তিদের পরিবারের জন্য প্রায় এক লাখ টাকা করে সহায়তার ঘোষণাও দিয়েছে তারা। পোশাক খাতের আরেক বড় ক্রেতা সিঅ্যান্ডএ বলেছে, ব্রাজিলে তাদের দোকানগুলোর জন্য দুই লাখ ২২ হাজার সোয়েট শার্ট আগামী তিন মাসে সরবরাহের কথা ছিল তাজরীন ফ্যাশনসের। ওই কম্পানির মুখপাত্র জানান, সাধারণত কারো সঙ্গে ব্যবসায়িক সম্পর্ক স্থাপনের আগে সিঅ্যান্ডএ ওই কম্পানি বা কারখানার নিরীক্ষা করিয়ে নেয়। তাজরীন ফ্যাশনসের ক্ষেত্রে তা করা হয়নি।
অন্যদিকে আশুলিয়ার ঘটনায় শোক প্রকাশ করেছে গার্মেন্ট শিল্পের বড় বাজার ইইউ। তাদের এক বিবৃতিতে বলা হয়, 'আমরা জানি, বাংলাদেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে তৈরি পোশাক শিল্প। এ-ও জানি যে এ দেশের তৈরি পোশাক শিল্পের সবচেয়ে বড় বাজার ইইউ। সে কারণেই ইইউ সব সময় এ খাতে কাজের মান উন্নয়ন ও শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ব্যাপারে জোর দিয়ে এসেছে।' ইইউ এবং তাদের পার্টনাররা সুনির্দিষ্ট কর্মপ্রক্রিয়ার মাধ্যমে কাজের মানোন্নয়ন এবং শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সব ধরনের প্রচেষ্টায় সমর্থন দিচ্ছে বলেও জানানো হয় বিবৃতিতে।
এদিকে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা রোধে প্রশিক্ষণ বাড়ানোর তাগিদ দেওয়া হয় এমপ্লয়ার্স ফেডারেশনের সভায়। ফেডারেশনের সভাপতি ফজলুল হক তাজরীন গার্মেন্টের ঘটনার পর এ ধরনের ঘটনা ঠেকাতে করণীয় ঠিক করতে মালিক, ক্রেতা, শ্রমিকসহ সবাইকে নিয়ে একটি সভা ডাকার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত ড্যান মজিনা সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় ১৯১১ সালের ২৫ মার্চ যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্ক শহরে ট্রায়াঙ্গল শার্টওয়েস্ট ফ্যাক্টরি নামের একটি পোশাক কারখানার অগ্নিকাণ্ডের কথা উল্লেখ করেন। ওই দুর্ঘটনায় ১৪৬ জন মারা যায়। ঘটনাটি যুক্তরাষ্ট্রকে সচেতনতা ও নিরাপত্তার দিক দিয়ে পাল্টে দিয়েছিল বলে মনে করেন ড্যান ডাব্লিউ মজিনা। তিনি বলেন, 'এমনই একটি ঘটনা হয়তো বাংলাদেশে ঘটেছে।' তিনি আরো বলেন, 'যাঁরা ভেতরে আটকা পড়ে মারা গেছেন, তাঁদের দুঃসহ অবস্থার কথা চিন্তাও করা যায় না।'
তাজরীন ফ্যাশনসে আগুনে পুড়ে শতাধিক শ্রমিকের মৃত্যুর ঘটনায় এ দেশের তৈরি পোশাক শিল্পে কোনো ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়বে কি না জানতে চাইলে রাষ্ট্রদূত কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তিনি বলেন, 'এখনই এ বিষয়ে বলার মতো সময় আসেনি।'
বাংলাদেশ এমপ্লয়ার্স ফেডারেশনের সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি মাহবুবুর রহমান ও মেট্রোপলিটন চেম্বারের মহাসচিব ফারুক আহমেদ।
No comments