শিক্ষার্থীদের নাট্যোৎসব- এক ডজন নাট্যজন by আলতাফ শাহনেওয়াজ
২৫ নভেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রে (টিএসসি) তখন চলছে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগের শিক্ষার্থী-নির্দেশক নাফিসা পারভীনের নাট্য-নির্মাণ মাই ইডিপাস কমপ্লেক্স-এর মহড়া। আর কিছুক্ষণ পর এখানেই কেন্দ্রীয় বার্ষিক নাট্যোৎসবে মঞ্চস্থ হবে নাটকটি।
নাফিসা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক সম্মান শ্রেণীর শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী। মিলনায়তনে সে সময় মাই ইডিপাস কমপ্লেক্স-এর শেষ মুহূর্তের মহড়ায় দর্শক সারিতে উপস্থিত আরও ১১ জন—ক্যামেলিয়া মৌসুমী খান, তানভির নাহিদ খান, সিলভিয়া নওরীন, নওরিন সাজ্জাদ, মাসুদ রানা, নাভেদ রহমান, সঞ্জীব কুমার দে, সুমাইয়া বিনতে রায়হান, মেহেরউন নিসা, জিয়াউর রহমান ও শেখ জাহিদ আজিম—ওঁরাও স্নাতক সম্মান শ্রেণী পড়ুয়া, শিক্ষার্থী নির্দেশক। আজ বাকিরা এসেছেন সহপাঠীর প্রযোজনার শেষ মুহূর্তের খুঁটিনাটি দেখতে। হাজার হোক তাঁরা তো আগামী দিনের নাট্যজন। বাংলাদেশের নাটককে নতুন দিনের বন্দরে পৌঁছে দেবেন তাঁরা—সেই প্রত্যয়ে যেন চিকচিক করছে প্রত্যেকের চোখমুখ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র মিলনায়তনে এখন প্রতিদিন সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টা থেকে চলছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সপ্তম কেন্দ্রীয় বার্ষিক নাট্যোৎসব। ২৩ নভেম্বর শুরু হওয়া এই উৎসব চলবে ৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত। উৎসবের ১৭টি নাটকের মধ্যে ১২টিই এই শিক্ষার্থী নির্দেশকদের। এ ছাড়া ইতালির মুস্তামেন্তি থিয়েটার কোম্পানি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় নাট্যকলা বিভাগ এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগও নাটক মঞ্চায়ন করবে। তাই এই নাট্যোৎসব যেনবা পরিণত হয়েছে প্রাতিষ্ঠানিক নাট্য শিক্ষার্থীদের মিলনমেলায়। কেননা, বাংলাদেশের যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ে নাটক বিষয়ে পড়ানো হয়, তার মধ্যে প্রায় সব কটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অংশ নিচ্ছে এই উৎসবে।
এ উৎসবের মূল আকর্ষণ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১২ জন শিক্ষার্থী নির্দেশকের নাটক। এই শিক্ষার্থী নির্দেশকেরা প্রত্যেকেই স্নাতক সম্মান শেষ করতে চলেছেন। এ সব প্রযোজনা তাঁদের নির্দেশনা (ব্যবহারিক) পরীক্ষার অংশ। পরীক্ষার অংশ হিসেবে তাঁরা এ নাটকগুলো নির্মাণ করেছেন। প্রাতিষ্ঠানিকভাবে নাট্যকলায় শিক্ষিত হয়ে কতটা শিখেছেন তাঁরা, সেটি দেখানোর জন্যও তুমুল উত্তেজনা এখন তাঁদের মধ্যে। তাই তো বন্ধু নাফিসা পারভীনের নাটক মঞ্চে ওঠার আগে এই মিলনায়তনে হাজির হয়েছেন সবাই। তাঁদের কথাতেও পাওয়া গেল তার আঁচ, ‘আমরা চাই নাফিসার নাটকটি নিখুঁত হোক। তাই ওকে উৎসাহ দিতে এখানে এসেছি’—নাফিসার সহপাঠী শেখ জাহিদ আজিম যখন এ কথা বললেন, তাতে সায় দিয়ে মাথা নড়ে উঠল তখন সবার। এর মধ্যে জাহিদ আবার জানালেন, ‘শিক্ষার্থী-নির্দেশক হিসেবে কাজ করতে গিয়ে বিভিন্ন পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়ে প্রতি মুহূর্তেই নতুন কিছু শিখছি। তত্ত্বীয় পড়ালেখার সঙ্গে ব্যবহারিক জ্ঞানকে মিলিয়ে দেখার চেষ্টা করছি। সব ব্যাপারেই সহযোগিতা করছেন আমাদের শিক্ষকেরা।’
জাহিদের এই কথার পরই জানা গেল তাঁর অন্য প্রতিভার খবর—নাটক লেখেন তিনি। এ বছর একটি অভিসন্দর্ভ ও তিনটি দ্যাশাল নাটক শিরোনামে তাঁর একটি বইও বেরিয়েছে।
জাহিদ যখন এ খবর জানাচ্ছেন আমাদের, ততক্ষণে মুখ খুলেছেন আরেক শিক্ষার্থী নির্দেশক নওরিন সাজ্জাদ, ‘এই উৎসবে আমি নির্দেশনা দিচ্ছি বিবর নামে আমার নিজের লেখা নাটক। শুধু নাট্যনির্দেশনার কাজের এই সময়ে নয়, নাট্যকলা বিভাগে ভর্তির পর থেকেই নতুন নতুন বিভিন্ন বিষয় শিখছি আমি। সবচেয়ে বড় ব্যাপার হলো নাট্যকলা বিভাগ আমাকে শিখিয়েছে নানা পরিস্থিতিতে নিজেকে কীভাবে উপস্থাপন করতে হয়’—নওরিনের স্পষ্ট কথা।
অথচ একদিন শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার মোহেই নাট্যকলা বিভাগে ভর্তি হয়েছিলেন নওরিন। তখন নাটকের ‘ন’ও জানতেন না তিনি। কিন্তু শিক্ষাজীবনের শেষ পর্যায়ে তাঁর কণ্ঠে শোনা গেল অন্য কথা, ‘নাটকে পড়াশোনা আমাকে আত্মবিশ্বাসী করে তুলেছে। জীবনের কোনো পর্যায়ে হেরে যাব না আমি।’ নওরিনের সঙ্গে গলা মিলিয়ে একই রকম কথা সুমাইয়া বিনতে রায়হান ও মেহেরউন নিসারও।
অন্যদিকে সঞ্জীব কুমার দে বললেন, ‘নাট্যকলায় পড়ে আমি কী পেয়েছি, এ প্রশ্নের উত্তরে বলা যায়, এখানে শিখেছি নিয়মানুবর্তিতা। একটি দল হিসেবে কী করে সুন্দরভাবে কাজ করা যায়, পেয়েছি সেই শিক্ষা। আমাদের নাটকগুলোতেও বিষয়টি দেখা যাবে।’
এতক্ষণ বন্ধুদের কথা শুনছিলেন সিলভিয়া নওরীন ও তানভির নাহিদ খান। এবার তাঁদের কথার পালা। বললেন, ‘নাটকের পড়াশোনা কেবল তত্ত্বীয় নয়। এর সঙ্গে আছে ব্যবহারিক বিষয়ও। এত দিন শিক্ষকেরা আমাদের এই দুটি বিষয়ের মধ্যে আন্তসমন্বয় হাতে-কলমে শিখিয়েছেন। এখন এই উৎসবের মাধ্যমে পেয়েছি নিজেদের অর্জিত শিক্ষাকে সবার সামনে মেলে ধরার সুযোগ।’
তানভির ও সিলভিয়ার কথার ভেতর দীপ্তির আভা। তাঁদের কথা শুনতে শুনতে অন্য নির্দেশক বন্ধুদের মুখেও একই আভা দেখা গেল। আর সেই মুখগুলো দেখে মনে হলো, তাঁদের নির্দেশিত নাটকের মধ্যেও বোধ করি পাওয়া যাবে এই আভার আবহ।
নাট্যকলা স্নাতক সম্মান (৮ম সেমিস্টার) পরীক্ষা কমিটির চেয়ারপারসন অধ্যাপক ইসরাফিল শাহীন বলেন, ‘এরা নাটক বিষয়ে পদ্ধতিগতভাবে পড়ালেখা করেছে। কীভাবে একটি চিত্রনাট্য দর্শকদের সামনে উপস্থাপন করতে হয়, কীভাবে তা দৃশ্যকাব্য হয়ে ওঠে, তা তারা চার বছর ধরে শিখেছে। এবার উৎসবের মাধ্যমে তাই তারা দর্শকের সামনে উপস্থাপন করছে। এ প্রক্রিয়ায় ভবিষ্যতে অনেক দক্ষ নির্দেশক ও অভিনেতা বেরিয়ে আসবে বলে আশা করি।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র মিলনায়তনে এখন প্রতিদিন সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টা থেকে চলছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সপ্তম কেন্দ্রীয় বার্ষিক নাট্যোৎসব। ২৩ নভেম্বর শুরু হওয়া এই উৎসব চলবে ৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত। উৎসবের ১৭টি নাটকের মধ্যে ১২টিই এই শিক্ষার্থী নির্দেশকদের। এ ছাড়া ইতালির মুস্তামেন্তি থিয়েটার কোম্পানি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় নাট্যকলা বিভাগ এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগও নাটক মঞ্চায়ন করবে। তাই এই নাট্যোৎসব যেনবা পরিণত হয়েছে প্রাতিষ্ঠানিক নাট্য শিক্ষার্থীদের মিলনমেলায়। কেননা, বাংলাদেশের যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ে নাটক বিষয়ে পড়ানো হয়, তার মধ্যে প্রায় সব কটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অংশ নিচ্ছে এই উৎসবে।
এ উৎসবের মূল আকর্ষণ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১২ জন শিক্ষার্থী নির্দেশকের নাটক। এই শিক্ষার্থী নির্দেশকেরা প্রত্যেকেই স্নাতক সম্মান শেষ করতে চলেছেন। এ সব প্রযোজনা তাঁদের নির্দেশনা (ব্যবহারিক) পরীক্ষার অংশ। পরীক্ষার অংশ হিসেবে তাঁরা এ নাটকগুলো নির্মাণ করেছেন। প্রাতিষ্ঠানিকভাবে নাট্যকলায় শিক্ষিত হয়ে কতটা শিখেছেন তাঁরা, সেটি দেখানোর জন্যও তুমুল উত্তেজনা এখন তাঁদের মধ্যে। তাই তো বন্ধু নাফিসা পারভীনের নাটক মঞ্চে ওঠার আগে এই মিলনায়তনে হাজির হয়েছেন সবাই। তাঁদের কথাতেও পাওয়া গেল তার আঁচ, ‘আমরা চাই নাফিসার নাটকটি নিখুঁত হোক। তাই ওকে উৎসাহ দিতে এখানে এসেছি’—নাফিসার সহপাঠী শেখ জাহিদ আজিম যখন এ কথা বললেন, তাতে সায় দিয়ে মাথা নড়ে উঠল তখন সবার। এর মধ্যে জাহিদ আবার জানালেন, ‘শিক্ষার্থী-নির্দেশক হিসেবে কাজ করতে গিয়ে বিভিন্ন পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়ে প্রতি মুহূর্তেই নতুন কিছু শিখছি। তত্ত্বীয় পড়ালেখার সঙ্গে ব্যবহারিক জ্ঞানকে মিলিয়ে দেখার চেষ্টা করছি। সব ব্যাপারেই সহযোগিতা করছেন আমাদের শিক্ষকেরা।’
জাহিদের এই কথার পরই জানা গেল তাঁর অন্য প্রতিভার খবর—নাটক লেখেন তিনি। এ বছর একটি অভিসন্দর্ভ ও তিনটি দ্যাশাল নাটক শিরোনামে তাঁর একটি বইও বেরিয়েছে।
জাহিদ যখন এ খবর জানাচ্ছেন আমাদের, ততক্ষণে মুখ খুলেছেন আরেক শিক্ষার্থী নির্দেশক নওরিন সাজ্জাদ, ‘এই উৎসবে আমি নির্দেশনা দিচ্ছি বিবর নামে আমার নিজের লেখা নাটক। শুধু নাট্যনির্দেশনার কাজের এই সময়ে নয়, নাট্যকলা বিভাগে ভর্তির পর থেকেই নতুন নতুন বিভিন্ন বিষয় শিখছি আমি। সবচেয়ে বড় ব্যাপার হলো নাট্যকলা বিভাগ আমাকে শিখিয়েছে নানা পরিস্থিতিতে নিজেকে কীভাবে উপস্থাপন করতে হয়’—নওরিনের স্পষ্ট কথা।
অথচ একদিন শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার মোহেই নাট্যকলা বিভাগে ভর্তি হয়েছিলেন নওরিন। তখন নাটকের ‘ন’ও জানতেন না তিনি। কিন্তু শিক্ষাজীবনের শেষ পর্যায়ে তাঁর কণ্ঠে শোনা গেল অন্য কথা, ‘নাটকে পড়াশোনা আমাকে আত্মবিশ্বাসী করে তুলেছে। জীবনের কোনো পর্যায়ে হেরে যাব না আমি।’ নওরিনের সঙ্গে গলা মিলিয়ে একই রকম কথা সুমাইয়া বিনতে রায়হান ও মেহেরউন নিসারও।
অন্যদিকে সঞ্জীব কুমার দে বললেন, ‘নাট্যকলায় পড়ে আমি কী পেয়েছি, এ প্রশ্নের উত্তরে বলা যায়, এখানে শিখেছি নিয়মানুবর্তিতা। একটি দল হিসেবে কী করে সুন্দরভাবে কাজ করা যায়, পেয়েছি সেই শিক্ষা। আমাদের নাটকগুলোতেও বিষয়টি দেখা যাবে।’
এতক্ষণ বন্ধুদের কথা শুনছিলেন সিলভিয়া নওরীন ও তানভির নাহিদ খান। এবার তাঁদের কথার পালা। বললেন, ‘নাটকের পড়াশোনা কেবল তত্ত্বীয় নয়। এর সঙ্গে আছে ব্যবহারিক বিষয়ও। এত দিন শিক্ষকেরা আমাদের এই দুটি বিষয়ের মধ্যে আন্তসমন্বয় হাতে-কলমে শিখিয়েছেন। এখন এই উৎসবের মাধ্যমে পেয়েছি নিজেদের অর্জিত শিক্ষাকে সবার সামনে মেলে ধরার সুযোগ।’
তানভির ও সিলভিয়ার কথার ভেতর দীপ্তির আভা। তাঁদের কথা শুনতে শুনতে অন্য নির্দেশক বন্ধুদের মুখেও একই আভা দেখা গেল। আর সেই মুখগুলো দেখে মনে হলো, তাঁদের নির্দেশিত নাটকের মধ্যেও বোধ করি পাওয়া যাবে এই আভার আবহ।
নাট্যকলা স্নাতক সম্মান (৮ম সেমিস্টার) পরীক্ষা কমিটির চেয়ারপারসন অধ্যাপক ইসরাফিল শাহীন বলেন, ‘এরা নাটক বিষয়ে পদ্ধতিগতভাবে পড়ালেখা করেছে। কীভাবে একটি চিত্রনাট্য দর্শকদের সামনে উপস্থাপন করতে হয়, কীভাবে তা দৃশ্যকাব্য হয়ে ওঠে, তা তারা চার বছর ধরে শিখেছে। এবার উৎসবের মাধ্যমে তাই তারা দর্শকের সামনে উপস্থাপন করছে। এ প্রক্রিয়ায় ভবিষ্যতে অনেক দক্ষ নির্দেশক ও অভিনেতা বেরিয়ে আসবে বলে আশা করি।’
No comments