হৃদয়ে বাবা by শামা বিজয়া মিলন
বাইশ বছর আগে বাবাকে হারিয়েছি। এমন এক সময় বাবা ডা. শামসুল আলম খান মিলন আমাদের ছেড়ে চিরকালের জন্য হারিয়ে গেলেন, যখন আমার জন্মের দু'বছর পূর্ণ হতে সপ্তাহখানেক বাকি। স্বাভাবিকভাবেই বাবার বেঁচে থাকার সময়কার কোনো স্মৃতি আমার নেই।
সে এক নিদারুণ অব্যক্ত বেদনার অনুভূতি। এ রকম ভাগ্য কোনো সন্তানকে যেন বরণ করতে না হয়।
আমি বাবার ব্যক্তিগত ও বিভিন্ন কর্মের প্রশংসা শুনতে শুনতেই বড় হয়ে উঠেছি। তিনি কেবল একজন বাবাই ছিলেন না; স্বামী, ভাই, পুত্র, বন্ধু, ডাক্তার, কর্মী, শিল্পী, খেলোয়াড়, কবি, দেশপ্রেমিক কিংবা অন্য কোনো অভিধা তার পরিচয়ের ক্ষেত্রে জুড়ে দেওয়া যাবে। এসব পরিচয় প্রত্যেকটিই স্বতন্ত্রভাবে সমুজ্জ্বল। তবে তার সম্পর্কে ভাবতে গেলে সবকিছু ছাপিয়ে একজন দরদি মানুষের ছবিই ভেসে ওঠে। তিনি কেবল তার দেশকে নয়, দেশের মানুষকেও ভালোবাসতেন। তার পরিবার, ভবিষ্যৎ চিন্তা এবং সর্বোপরি তার আত্মত্যাগ পুরোটাই বাংলাদেশের মানুষের জন্য।
আমাদের অনেক আপনজনের কাছে শুনেছি কতটা ভালো কাজ বাবা করেছেন, কতটা দয়ালু ছিলেন তিনি। তিনি গরিব মানুষকে বিনামূল্যে সেবা দিতেন। বাবার চিন্তা-চেতনা পুরোটাই ছিল মানুষের কল্যাণে। আমার তো মনে হয় এ জন্যই বাবা চিকিৎসক হয়েছিলেন। মানুষের সেবায় তিনি ছিলেন সবকিছু উজাড় করে দেওয়া একজন দরদি মানুষ। এটা তার জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত অক্ষুণ্ন ছিল বলে শুনেছি এবং এখনও তার প্রমাণ মেলে।
একজন চিকিৎসকের দায়িত্ব তো কেবল রোগীর অসুখ সারিয়ে তোলাই নয়। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন বাংলাদেশের ধনী-গরিব, সুস্থ-অসুস্থ নির্বিশেষে সব মানুষকে সাহায্য করতে হলে, গোটা ব্যবস্থার পরিবর্তন করতে হবে। বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের যুগ্ম সম্পাদক হিসেবে এবং ঘটনাক্রমে একজন রাজনৈতিক নেতা হিসেবে প্রত্যেকের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে তিনি একটি গণতান্ত্রিক দেশের স্বপ্নকে নিবিড়ভাবেই লালন করেছিলেন।
সেটা কেবল একটি স্বাস্থ্যনীতি দিলেই সম্পন্ন করা যাবে না, এর জন্য যে আরও অনেক কিছু করতে হবে, সেটা তিনি যথার্থভাবেই অনুধাবন করতে পেরেছিলেন। এ জন্যই স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে তিনি একজন অকুতোভয় সৈনিক ছিলেন। তার মতো শহীদের রক্তের সিঁড়ি বেয়েই বাংলাদেশে গণতন্ত্রের দ্বীপশিখা প্রজ্বলিত হয়েছে।
তবে যেদিন বাবা শহীদ হলেন সেই ১৯৯০ সালের ২৭ নভেম্বর আমার স্মৃতিতে কষ্টের-বেদনার দিন। শত্রুর অভেদ্য একটি গুলি বাবার বুককে ক্ষত-বিক্ষত করে। তৎক্ষণাৎ তিনি মারা যান। সেদিন নিশ্চয়ই ঢাকার আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে উঠেছিল। যদিও সে বুলেট তার বুককে ক্ষত-বিক্ষত করেছে কিন্তু তার আত্মাকে, তার স্বপ্নকে মারতে পারেনি। সেটি আছে আমার অনুভবে এবং অনেক মানুষের চৈতন্যে। কেবল আমরাই নই, প্রতি বছর গণতন্ত্র-অন্তপ্রাণ সব মানুষ বাবাকে স্মরণ করে। তার কীর্তির স্মৃতিচারণ করে। তাদের সবাইকে আমার অন্তরের অন্তস্তল থেকে ধন্যবাদ জানাই। আমার অনুরোধ, দয়া করে তার স্বপ্নকে জিইয়ে রাখবেন। তার দর্শন বাস্তবায়নে এগিয়ে আসুন এবং সত্যিকার গণতান্ত্রিক ও শোষণমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার সংগ্রাম অব্যাহত রাখুন।
শামা বিজয়া মিলন : ডা. শামসুল আলম খান মিলনের একমাত্র কন্যা। শামা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বাস করেন। ২০১১ সালের মে মাসে তিনি ডিউক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্র্যাজুয়েশন করেন
আমি বাবার ব্যক্তিগত ও বিভিন্ন কর্মের প্রশংসা শুনতে শুনতেই বড় হয়ে উঠেছি। তিনি কেবল একজন বাবাই ছিলেন না; স্বামী, ভাই, পুত্র, বন্ধু, ডাক্তার, কর্মী, শিল্পী, খেলোয়াড়, কবি, দেশপ্রেমিক কিংবা অন্য কোনো অভিধা তার পরিচয়ের ক্ষেত্রে জুড়ে দেওয়া যাবে। এসব পরিচয় প্রত্যেকটিই স্বতন্ত্রভাবে সমুজ্জ্বল। তবে তার সম্পর্কে ভাবতে গেলে সবকিছু ছাপিয়ে একজন দরদি মানুষের ছবিই ভেসে ওঠে। তিনি কেবল তার দেশকে নয়, দেশের মানুষকেও ভালোবাসতেন। তার পরিবার, ভবিষ্যৎ চিন্তা এবং সর্বোপরি তার আত্মত্যাগ পুরোটাই বাংলাদেশের মানুষের জন্য।
আমাদের অনেক আপনজনের কাছে শুনেছি কতটা ভালো কাজ বাবা করেছেন, কতটা দয়ালু ছিলেন তিনি। তিনি গরিব মানুষকে বিনামূল্যে সেবা দিতেন। বাবার চিন্তা-চেতনা পুরোটাই ছিল মানুষের কল্যাণে। আমার তো মনে হয় এ জন্যই বাবা চিকিৎসক হয়েছিলেন। মানুষের সেবায় তিনি ছিলেন সবকিছু উজাড় করে দেওয়া একজন দরদি মানুষ। এটা তার জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত অক্ষুণ্ন ছিল বলে শুনেছি এবং এখনও তার প্রমাণ মেলে।
একজন চিকিৎসকের দায়িত্ব তো কেবল রোগীর অসুখ সারিয়ে তোলাই নয়। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন বাংলাদেশের ধনী-গরিব, সুস্থ-অসুস্থ নির্বিশেষে সব মানুষকে সাহায্য করতে হলে, গোটা ব্যবস্থার পরিবর্তন করতে হবে। বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের যুগ্ম সম্পাদক হিসেবে এবং ঘটনাক্রমে একজন রাজনৈতিক নেতা হিসেবে প্রত্যেকের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে তিনি একটি গণতান্ত্রিক দেশের স্বপ্নকে নিবিড়ভাবেই লালন করেছিলেন।
সেটা কেবল একটি স্বাস্থ্যনীতি দিলেই সম্পন্ন করা যাবে না, এর জন্য যে আরও অনেক কিছু করতে হবে, সেটা তিনি যথার্থভাবেই অনুধাবন করতে পেরেছিলেন। এ জন্যই স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে তিনি একজন অকুতোভয় সৈনিক ছিলেন। তার মতো শহীদের রক্তের সিঁড়ি বেয়েই বাংলাদেশে গণতন্ত্রের দ্বীপশিখা প্রজ্বলিত হয়েছে।
তবে যেদিন বাবা শহীদ হলেন সেই ১৯৯০ সালের ২৭ নভেম্বর আমার স্মৃতিতে কষ্টের-বেদনার দিন। শত্রুর অভেদ্য একটি গুলি বাবার বুককে ক্ষত-বিক্ষত করে। তৎক্ষণাৎ তিনি মারা যান। সেদিন নিশ্চয়ই ঢাকার আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে উঠেছিল। যদিও সে বুলেট তার বুককে ক্ষত-বিক্ষত করেছে কিন্তু তার আত্মাকে, তার স্বপ্নকে মারতে পারেনি। সেটি আছে আমার অনুভবে এবং অনেক মানুষের চৈতন্যে। কেবল আমরাই নই, প্রতি বছর গণতন্ত্র-অন্তপ্রাণ সব মানুষ বাবাকে স্মরণ করে। তার কীর্তির স্মৃতিচারণ করে। তাদের সবাইকে আমার অন্তরের অন্তস্তল থেকে ধন্যবাদ জানাই। আমার অনুরোধ, দয়া করে তার স্বপ্নকে জিইয়ে রাখবেন। তার দর্শন বাস্তবায়নে এগিয়ে আসুন এবং সত্যিকার গণতান্ত্রিক ও শোষণমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার সংগ্রাম অব্যাহত রাখুন।
শামা বিজয়া মিলন : ডা. শামসুল আলম খান মিলনের একমাত্র কন্যা। শামা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বাস করেন। ২০১১ সালের মে মাসে তিনি ডিউক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্র্যাজুয়েশন করেন
No comments