এয়ারটেল রাইজিং স্টারস- শেষ হলো ওদের স্বপ্ন ভ্রমণ by বদিউজ্জামান
অন্ধকার হলঘরে পিনপতন নীরবতা। এক পাশে রাখা প্রজেক্টর। পর্দায় ভেসে উঠল একদল উচ্ছল তরুণের ফুটবল নিয়ে দুরন্তপনার কিছু দৃশ্য। এই কিশোরদেরই কয়েকজন ফরিদপুরের রিপন, নারায়ণগঞ্জের মিঠু, কিশোরগঞ্জের সুজয়।
ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড সকার স্কুল থেকে এক সপ্তাহের প্রশিক্ষণ শেষে পরশু সবাই ফিরেছে ঢাকায়।এয়ারটেল রাইজিং স্টারস কর্মসূচির আওতায় সেরা ১২ খুদে ফুটবলারের স্বপ্নের ভ্রমণ শেষে ওরা ঢাকায় ফিরেছে গত সোমবার। রাজধানীর একটি অভিজাত হোটেলে গতকাল মঙ্গলবার তাদের হাতে তুলে দেওয়া হয় সকার স্কুলের সনদ।
সারা দেশ থেকে বাছাই করা ১২ জন প্রতিভাবান ফুটবলারের স্বপ্নের পরিভ্রমণ শুরু হয়েছিল ১৭ নভেম্বর। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে পৌঁছেই পরদিন ছিল বিশ্রাম। এরপর টানা পাঁচ দিন চলে হাতে-কলমে ফুটবল শেখা। এর পাশাপাশি ছিল বিভিন্ন রকমের অনুশীলন। সঙ্গে ফুটবল বিষয়ে পড়াশোনা। ফাঁকে বিভিন্ন কর্মশালায়ও অংশ নিয়েছে তারা।
২৪ নভেম্বর ছিল ১২ ফুটবলারের জন্য স্বপ্নের দিন। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের সঙ্গে কুইন্স পার্ক রেঞ্জার্সের ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের ম্যাচটি ওরা উপভোগ করে ওল্ড ট্রাফোর্ডের গ্যালারিতে বসে। খুব কাছ থেকে দেখেছে ইউনাইটেড কোচ অ্যালেক্স ফার্গুসনকে; দেখেছে বল নিয়ে কীভাবে এক টানে গোলপোস্টের দিকে ছুটে চলেছেন ওয়েইন রুনি, ফন ফার্সিরা। দেখে এসেছে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের ফুটবল জাদুঘরটিও।
ম্যানচেস্টার সকার স্কুলে এমন একটা সুযোগ করে দেওয়ার জন্য গতকাল অনুষ্ঠানের শুরুতেই এয়ারটেলকে ধন্যবাদ জানায় বিকেএসপির কিশোর মাশহুদ। চট্টগ্রামে সুগন্ধার সোসাইটি মাঠে শৈশব থেকে ফুটবল খেলে অভ্যস্ত মাশহুদ। বিকেএসপিতে পেয়েছে আরও একটু উন্নত মানের মাঠ। কিন্তু ম্যানচেস্টারের সকার স্কুলের মাঠ দেখে বিস্ময়ে অভিভূত চট্টগ্রামের ওই কিশোর।
মাশহুদের প্রতিক্রিয়া ছিল, ‘আমরা তো খানাখন্দের মাঠে খেলি। কিন্তু ওখানকার মাঠ মসৃণ হওয়ায় খেলতে গেলে এমনিতেই আত্মবিশ্বাস বেড়ে যায়। সহজেই বল পাস করা যায়, মিস হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না।’
খুব কাছ থেকে ওরা দেখেছে রাফায়েল, ফার্ডিনান্ডদের। কী শিখেছ ওদের কাছে?—এমন প্রশ্নের জবাবে মিঠু জানায়, ‘সব সময় মাথা ঠান্ডা রেখে খেলতে হবে। পায়ে বল আসার আগে আশপাশে কে কোথায় আছে, সেটা দেখে নিতে হবে। ফুটবল যে বুদ্ধি দিয়ে খেলতে হয়, সেই ধারণাটি পেয়েছি আমরা।’
কক্সবাজারের ফুটবলার মুন্না আরও একধাপ বাড়িয়ে বলল, ‘শুধু মাঠে নয়, মাঠের বাইরেও কীভাবে একজন পরিপূর্ণ খেলোয়াড় হয়ে উঠতে হবে, সেটাও শিখেছি আমরা।’
রাজীব হোসেনের বাবা চট্টগ্রামের হাটে লুঙ্গি বিক্রি করেন। তবু ছেলেকে নিয়ে তাঁর স্বপ্নের শেষ নেই। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ঘুরে আসার পর রাজীবের কথা, ‘বাবাকে কথা দিয়েছিলাম বড় ফুটবলার হব। এখন মনে হচ্ছে সেই সিঁড়ির প্রথম ধাপে যেন পা রেখেছি।’
শেরপুরের ছেলে মাহমুদুল হাসান বুঝতে পারছে, সবে পথ চলা শুরু হলো, এখনো অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে। তার মতে, ‘শুরুটা ভালো হলে আশা করা যায় যে শেষটাও ভালো হবে। আমরা যেটা শিখে এসেছি, তা ভবিষ্যতে জাতীয় দলে জায়গা করে নেওয়ার ক্ষেত্রে সহায়ক হতে পারে।’
এয়ারটেল রাইজিং স্টারসদের এমন সফর শেষে উচ্ছ্বসিত এয়ারটেল বাংলাদেশ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস টবিট বলেন, ‘এই প্রতিভাবান কিশোরদের হাসিমুখ দেখে আমার খুব ভালো লাগছে। আমি জানি, এ দেশে ফুটবল সবার প্রিয়। আমরা বাংলাদেশের প্রতিটি অঞ্চলে গিয়েছি এবং সম্ভাবনাময় প্রতিভাবানদের খুঁজে বের করে তাদের স্বপ্ন পূরণ করেছি।’
গত ২১ জুন ফুটবলার বাছাইয়ের প্রাথমিক পর্ব য়ে খুদে তারকাদের ভ্রমণ শুরু হয়েছিল। গতকাল সবাই ঘরে ফিরেছে। ওদের ১২ জোড়া চোখে স্বপ্নের দ্যুতি ছড়িয়ে দিয়েছে এয়ারটেল। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডকে দেখে যা শিখেছে, তা ওদের আত্মবিশ্বাস বাড়িয়েছে। এখন ওরা প্রস্তুত হবে ফুটবলের আসল লড়াইয়ের জন্য।
No comments