সংবাদ বিশ্লেষণ- প্রাণের বিনিময়ে মুনাফা নয় by শওকত হোসেন
তাজরীন ফ্যাশনসের মালিকের নাম দেলোয়ার হোসেন। কানাডার দ্য গ্লোব অ্যান্ড মেইল নামের একটি পত্রিকা বলেছে, এই দেলোয়ার হোসেন কানাডার নাগরিক। বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ও ভয়াবহ দুর্ঘটনার পরও তাঁর চেহারা দেখা যায়নি।
পরিস্থিতি একটু ঠান্ডা হলে হয়তো সুযোগ বুঝে একদিন তিনি চলেও যাবেন কানাডায়।
জানা গেল, তৈরি পোশাকমালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর পরামর্শে দেলোয়ার হোসেন আড়ালে থাকছেন।
কথা বলতে নিষেধ করেছেন বিজিএমইএর নেতারা। এটা বিজিএমইএর পুরোনো কৌশল। যেকোনো ঘটনা ঘটনার পর তাঁদের প্রথম কাজই হয় মালিককে রক্ষা করা। নানা কৌশল করে বিজিএমইএ সব সময়ই অত্যন্ত সাফল্যের সঙ্গে বড় বড় ঘটনার দায়দায়িত্ব এড়িয়ে থেকেছে। এ কারণে এখন পর্যন্ত আগুন লেগে, পায়ের নিচে চাপা পড়ে এবং কারখানা ধসে সাত শর মতো শ্রমিক মারা গেলেও একজনেরও শাস্তি হয়নি।
এ কাজে আবার বিজিএমইএকে সর্বাত্মক সহায়তা দিয়ে আসছে সরকার। সরকার কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। লোক দেখানো তদন্ত কমিটি হয়। কমিটির প্রতিবেদন কবে জমা দেওয়া হয়, কেউ জানতেও পারে না। মামলাও হয়। কিন্তু আজ পর্যন্ত সরকার কাউকে শাস্তির আওতায় এনেছে বলে শোনা যায়নি।
বাংলাদেশে যেকোনো বড় ঘটনা থেকে দায়দায়িত্ব এড়াতে বা ধামাচাপা দিতে দুটি কাজ করতে হয়। একটি হচ্ছে তদন্ত কমিটি গঠন, আরেকটি হচ্ছে নাশকতা ও ষড়যন্ত্রতত্ত্ব প্রচার। দুটি কাজই করা হলো এবার। বিজিএমইএর হিসাবে এর আগে আগুনে পুড়ে ও চাপা পড়ে মারা গেছে সব মিলিয়ে ২৭৫ জন পোশাকশ্রমিক। তবে বেসরকারি হিসাবে সব মিলিয়ে এর পরিমাণ সাত শ। আর তাজরীনের ঘটনাই এখন পর্যন্ত সবচেয়ে ভয়াবহ। তাজরীন হত্যাযজ্ঞের পর সরকার একাধিক তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। এই তদন্ত কমিটি তাদের প্রতিবেদন দেওয়ার আগেই সরকার ও বিজিএমইএ নাশকতা ও ষড়যন্ত্রের কথা বলা শুরু করে দিয়েছে। এর ফলে শ্রমিকদের প্রতি মালিকের অবহেলা ও অযত্ন এরই মধ্যে অনেকখানি ঢাকা পড়ে গেছে।
শুরু হয়েছিল সেই ১৯৯০ সালে সারাকা গার্মেন্টস থেকে। ওই বছরের ১৭ ডিসেম্বরের আগুনে মারা গিয়েছিলেন ৩০ জন পোশাকশ্রমিক। এর পর থেকে নিয়মিত বিরতিতে একের পর এক কারখানায় আগুন লেগেছে। ২০১০ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি গাজীপুরে গরীব অ্যান্ড গরীব সোয়েটার ফ্যাক্টরিতে আগুনে মারা যান ২১ শ্রমিক এবং ২৪ ডিসেম্বর আশুলিয়ায় হা-মীম গ্রুপের একটি কারখানায় আগুনে মারা যান ৩০ শ্রমিক। একটি ঘটনারও বিচার হয়নি। আর সব কটি ঘটনার ক্ষেত্রেই নাশকতার অভিযোগ তোলা হয়। আবার সেই নাশকতা বা ষড়যন্ত্র কারা করেছে, তারও কোনো প্রমাণ সরকার একবারও দিতে পারেনি।
প্রধানমন্ত্রী সংসদে বলেছেন, তাজরীন ঘটনা পরিকল্পিত। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ঘটনাস্থলে গিয়ে বলেছেন নাশকতার কথা। বিজিএমইএ সংবাদ সম্মেলন করেও ষড়যন্ত্রের কথা বলেছে। এসব কথাবার্তায় নিশ্চয়ই খানিকটা স্বস্তিতে আছেন তুবা গ্রুপের তাজরীন ফ্যাশনসের মালিক কানাডার নাগরিক দেলোয়ার হোসেন। ১১১ জন শ্রমিকের মৃত্যুর দায় আর তাঁকে নিতে হচ্ছে না। কারণ, নাশকতা করে আগুন লাগানো হলে তাঁর তো কিছু করার থাকে না। তাঁর কোম্পানির একটি ওয়েবসাইট ছিল, সেখানে তাজরীন ফ্যাশনসের নিরাপত্তার মান নিয়ে ক্রেতার সতর্কবাণীর কথাও লেখা ছিল। আগুন লাগার পর সেই ওয়েবসাইটটি বন্ধ করে দিয়েছেন দেলোয়ার হোসেন। কারণ, ১১১ জন শ্রমিকের মৃত্যুর দায় তিনি নিতে চাননি।
দায় এড়ানোর আরেকটি ভালো রাস্তা আছে বিজিএমইএর জন্য। আর সেটি হচ্ছে, দেশের ক্ষতি। প্রায় দুই হাজার কোটি ডলারের রপ্তানি আয় করে তৈরি পোশাক খাত। সামনে রয়েছে অসীম সম্ভাবনা, আরও বড় সুযোগের হাতছানি। ক্রেতারা কাপড় কেনার জন্য চীনের পাশাপাশি আরেকটি বড় দেশ খুঁজছে। সেই দেশটি হতে পারে বাংলাদেশ। এ রকম এক সময়ে ১১১ জন শ্রমিক আগুনে পুড়ে মারা গেলেও তা নিয়ে বেশি কথা বলা যাবে না। মালিক বা বিজিএমইএর গাফিলতির কথা বললে এই খাতটি নাকি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এর চেয়ে নাশকতার কথা বলা হলে সব কুল রক্ষা হয়।
শ্রমিকেরাই পোশাক খাতের প্রাণ। শ্রমিকদের কারণেই টিকে আছে পোশাক খাত। চীনে বেতন-ভাতা বাড়ছে। কিন্তু বাংলাদেশ এখনো অন্যান্য দেশের তুলনায় কম বেতন-ভাতা দিচ্ছে। আর এই মূল্য-সুবিধার কারণেই ক্রেতাদের আগ্রহ বাংলাদেশের প্রতি। অথচ সেই শ্রমিকদের প্রাণের বিনিময়েই যেন মুনাফা করছেন মালিকেরা। প্রতিটি দুর্ঘটনার পরই দেখা যাচ্ছে, কর্তৃপক্ষের অবহেলা ছিল, অযত্নও ছিল। সুতরাং শ্রমিকদের প্রাণের বিনিময়ে মুনাফা নয়, বরং মালিকেরা শ্রমিকদের প্রতি একটু যত্ন, আরেকটু সংবেদনশীলতা দেখাবেন, এটাই প্রত্যাশা।
জানা গেল, তৈরি পোশাকমালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর পরামর্শে দেলোয়ার হোসেন আড়ালে থাকছেন।
কথা বলতে নিষেধ করেছেন বিজিএমইএর নেতারা। এটা বিজিএমইএর পুরোনো কৌশল। যেকোনো ঘটনা ঘটনার পর তাঁদের প্রথম কাজই হয় মালিককে রক্ষা করা। নানা কৌশল করে বিজিএমইএ সব সময়ই অত্যন্ত সাফল্যের সঙ্গে বড় বড় ঘটনার দায়দায়িত্ব এড়িয়ে থেকেছে। এ কারণে এখন পর্যন্ত আগুন লেগে, পায়ের নিচে চাপা পড়ে এবং কারখানা ধসে সাত শর মতো শ্রমিক মারা গেলেও একজনেরও শাস্তি হয়নি।
এ কাজে আবার বিজিএমইএকে সর্বাত্মক সহায়তা দিয়ে আসছে সরকার। সরকার কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। লোক দেখানো তদন্ত কমিটি হয়। কমিটির প্রতিবেদন কবে জমা দেওয়া হয়, কেউ জানতেও পারে না। মামলাও হয়। কিন্তু আজ পর্যন্ত সরকার কাউকে শাস্তির আওতায় এনেছে বলে শোনা যায়নি।
বাংলাদেশে যেকোনো বড় ঘটনা থেকে দায়দায়িত্ব এড়াতে বা ধামাচাপা দিতে দুটি কাজ করতে হয়। একটি হচ্ছে তদন্ত কমিটি গঠন, আরেকটি হচ্ছে নাশকতা ও ষড়যন্ত্রতত্ত্ব প্রচার। দুটি কাজই করা হলো এবার। বিজিএমইএর হিসাবে এর আগে আগুনে পুড়ে ও চাপা পড়ে মারা গেছে সব মিলিয়ে ২৭৫ জন পোশাকশ্রমিক। তবে বেসরকারি হিসাবে সব মিলিয়ে এর পরিমাণ সাত শ। আর তাজরীনের ঘটনাই এখন পর্যন্ত সবচেয়ে ভয়াবহ। তাজরীন হত্যাযজ্ঞের পর সরকার একাধিক তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। এই তদন্ত কমিটি তাদের প্রতিবেদন দেওয়ার আগেই সরকার ও বিজিএমইএ নাশকতা ও ষড়যন্ত্রের কথা বলা শুরু করে দিয়েছে। এর ফলে শ্রমিকদের প্রতি মালিকের অবহেলা ও অযত্ন এরই মধ্যে অনেকখানি ঢাকা পড়ে গেছে।
শুরু হয়েছিল সেই ১৯৯০ সালে সারাকা গার্মেন্টস থেকে। ওই বছরের ১৭ ডিসেম্বরের আগুনে মারা গিয়েছিলেন ৩০ জন পোশাকশ্রমিক। এর পর থেকে নিয়মিত বিরতিতে একের পর এক কারখানায় আগুন লেগেছে। ২০১০ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি গাজীপুরে গরীব অ্যান্ড গরীব সোয়েটার ফ্যাক্টরিতে আগুনে মারা যান ২১ শ্রমিক এবং ২৪ ডিসেম্বর আশুলিয়ায় হা-মীম গ্রুপের একটি কারখানায় আগুনে মারা যান ৩০ শ্রমিক। একটি ঘটনারও বিচার হয়নি। আর সব কটি ঘটনার ক্ষেত্রেই নাশকতার অভিযোগ তোলা হয়। আবার সেই নাশকতা বা ষড়যন্ত্র কারা করেছে, তারও কোনো প্রমাণ সরকার একবারও দিতে পারেনি।
প্রধানমন্ত্রী সংসদে বলেছেন, তাজরীন ঘটনা পরিকল্পিত। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ঘটনাস্থলে গিয়ে বলেছেন নাশকতার কথা। বিজিএমইএ সংবাদ সম্মেলন করেও ষড়যন্ত্রের কথা বলেছে। এসব কথাবার্তায় নিশ্চয়ই খানিকটা স্বস্তিতে আছেন তুবা গ্রুপের তাজরীন ফ্যাশনসের মালিক কানাডার নাগরিক দেলোয়ার হোসেন। ১১১ জন শ্রমিকের মৃত্যুর দায় আর তাঁকে নিতে হচ্ছে না। কারণ, নাশকতা করে আগুন লাগানো হলে তাঁর তো কিছু করার থাকে না। তাঁর কোম্পানির একটি ওয়েবসাইট ছিল, সেখানে তাজরীন ফ্যাশনসের নিরাপত্তার মান নিয়ে ক্রেতার সতর্কবাণীর কথাও লেখা ছিল। আগুন লাগার পর সেই ওয়েবসাইটটি বন্ধ করে দিয়েছেন দেলোয়ার হোসেন। কারণ, ১১১ জন শ্রমিকের মৃত্যুর দায় তিনি নিতে চাননি।
দায় এড়ানোর আরেকটি ভালো রাস্তা আছে বিজিএমইএর জন্য। আর সেটি হচ্ছে, দেশের ক্ষতি। প্রায় দুই হাজার কোটি ডলারের রপ্তানি আয় করে তৈরি পোশাক খাত। সামনে রয়েছে অসীম সম্ভাবনা, আরও বড় সুযোগের হাতছানি। ক্রেতারা কাপড় কেনার জন্য চীনের পাশাপাশি আরেকটি বড় দেশ খুঁজছে। সেই দেশটি হতে পারে বাংলাদেশ। এ রকম এক সময়ে ১১১ জন শ্রমিক আগুনে পুড়ে মারা গেলেও তা নিয়ে বেশি কথা বলা যাবে না। মালিক বা বিজিএমইএর গাফিলতির কথা বললে এই খাতটি নাকি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এর চেয়ে নাশকতার কথা বলা হলে সব কুল রক্ষা হয়।
শ্রমিকেরাই পোশাক খাতের প্রাণ। শ্রমিকদের কারণেই টিকে আছে পোশাক খাত। চীনে বেতন-ভাতা বাড়ছে। কিন্তু বাংলাদেশ এখনো অন্যান্য দেশের তুলনায় কম বেতন-ভাতা দিচ্ছে। আর এই মূল্য-সুবিধার কারণেই ক্রেতাদের আগ্রহ বাংলাদেশের প্রতি। অথচ সেই শ্রমিকদের প্রাণের বিনিময়েই যেন মুনাফা করছেন মালিকেরা। প্রতিটি দুর্ঘটনার পরই দেখা যাচ্ছে, কর্তৃপক্ষের অবহেলা ছিল, অযত্নও ছিল। সুতরাং শ্রমিকদের প্রাণের বিনিময়ে মুনাফা নয়, বরং মালিকেরা শ্রমিকদের প্রতি একটু যত্ন, আরেকটু সংবেদনশীলতা দেখাবেন, এটাই প্রত্যাশা।
No comments