শ্রমবাজারে সবুজ সংকেত-এ সুযোগ কাজে লাগাতে হবে
অনেক প্রতীক্ষার পর অবশেষে বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার মধ্যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হলো। এ স্মারকের আওতায় বাংলাদেশ থেকে সরকারি ব্যবস্থাপনায় শ্রমিক নেবে মালয়েশিয়া। চার বছর বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক গ্রহণ বন্ধ থাকার পর এ সমঝোতা সত্যিকার অর্থেই বাংলাদেশের শ্রমবাজারের জন্য স্বস্তি বয়ে এনেছে।
বাংলাদেশের জন্য বরাবরই মালয়েশিয়া একটি সম্ভাবনাময় শ্রমবাজার হিসেবে বিবেচিত। এশিয়ার এ দেশটির প্রতি আমাদের শ্রমিকদের দুর্নিবার আকর্ষণ। নিজের ও পরিবারের ভাগ্য উন্নয়নের জন্য তাই বহু বছর ধরে শ্রমিকরা মালয়েশিয়ার পথে পাড়ি জমিয়েছে। এতে অনেকের ভাগ্য ফিরেছে এবং মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার সম্পর্কে ইতিবাচক নানা খবর দেশের শ্রমিকদের সে দেশের প্রতি আরও আকৃষ্ট করে তুলেছে। শ্রমিকদের এই উৎসাহকেই কাজে লাগিয়েছে দেশের কিছু অসাধু জনশক্তি রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান ও মালয়েশিয়ার কিছু আউটসোর্সিং কোম্পানি। অতিমুনাফার লোভ থেকে এরা অভিবাসন ব্যয় বাড়িয়ে দিয়েছে। এদের যোগসাজশে অনেক অর্থ ব্যয় করে শ্রমিকরা বৈধ ও অবৈধ পথে মালয়েশিয়ায় পাড়ি জমিয়েছেন। কিন্তু কাজ করে নিজের ও পরিবারের ভাগ্য ফেরানো দূরের কথা, নির্দিষ্ট সময়ের ওয়ার্ক পারমিটে অভিবাসন ব্যয়ই উঠে আসেনি। এ কারণে মরিয়া শ্রমিকরা বাড়তি সময় অবৈধভাবে বসবাসে প্রলুব্ধ হয়েছেন। অবৈধভাবে শ্রমবাজারে প্রবেশ এবং বৈধভাবে প্রবেশ করেও পরে অবৈধ শ্রমিক হিসেবে আত্মপ্রকাশের ঘটনাগুলো মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি শ্রমবাজার সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা সৃষ্টি করে। বন্ধুভাবাপন্ন দেশ হলেও বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক আমদানি বন্ধ করে দেয় দেশটি। ফলে বাংলাদেশি শ্রমিকদের সম্ভাবনাময় একটি বাজার কার্যত রুদ্ধ হয়ে যায়। এ শ্রমবাজার উন্মুক্ত করার জন্য সরকারের নানামুখী তৎপরতা অব্যাহত ছিল। অবশেষে এসব তৎপরতার ফল মিলল। শ্রমিকদের জন্য মালয়েশিয়ার বাজারে যে সুযোগ উন্মুক্ত হলো একে সতর্কতার সঙ্গে কাজে লাগাতে হবে। এ কথা সত্য যে, বেসরকারি উদ্যোগে শ্রমিক পাঠানোর ক্ষেত্রে মুনাফালোভীদের যে তৎপরতা থাকে, সরকারিভাবে পাঠালে তেমন ঘটনা ঘটবে না। কিন্তু মুনাফার চাপ না থাকলেও যে দুর্নীতি, উৎকোচসহ নানাবিধ সমস্যা থাকবে না, তা নিশ্চিত করে বলা যায় না। ফলে শ্রমিক পাঠানোর প্রতিটি পর্যায়ে যথাযথ স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে। মালয়েশিয়া গমনেচ্ছু শ্রমিকদের কাছে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করে শ্রমিকের জীবনকে দুর্বিষহ করার উদাহরণ যেন আবার তৈরি না হয়। কেননা যে কোনো মূল্যে মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশের শ্রমবাজার রক্ষা করার দিকে আমাদের নজর দিতে হবে। নতুন শ্রমবাজার তৈরি করার দিকেও মনোযোগ দিতে হবে। আর এ ক্ষেত্রে আমাদের সম্পদ দুটি। একটি অবশ্যই দক্ষ ও প্রশিক্ষিত শ্রমিক। আর দ্বিতীয়টি বাংলাদেশ ও এ দেশের শ্রমিকদের সুনাম। এ সুনাম অক্ষুণ্ন থাকলে দেশের শ্রমিকদের চাহিদা বাড়তে থাকবে, রেমিট্যান্সে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতির ধারা অব্যাহত থাকবে। শ্রমিক নেওয়া সংক্রান্ত সমঝোতা চুক্তির পাশাপাশি অপরাধ দমন নিয়েও একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। এতে আন্তঃরাষ্ট্রীয় অপরাধ দমনের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি, মানব পাচার ও হয়রানি বন্ধ করার অঙ্গীকার রয়েছে। আমরা আশা করব, বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়া চুক্তিগুলো যথাযথভাবে অনুসরণ করবে। প্রাথমিক এ উত্তরণের জন্য সরকারের তৎপরতা সাধুবাদযোগ্য। কিন্তু শ্রমবাজারে বিদ্যমান সমস্যা থেকে সার্বিকভাবে বেরিয়ে আসতে হলে আরও তৎপরতা দরকার। সকলের আন্তরিকতা, সহযোগিতা, সকল কাজের জবাবদিহি ও স্বচ্ছতাই পারে শ্রমবাজারে আরও সবুজ সংকেতের সম্ভাবনা তৈরি করতে।
No comments