ইয়াবার চালান আটক-উৎস সন্ধান করে কঠোর ব্যবস্থা নিন

মাদকের আগ্রাসন এই সমাজদেহে যে বিষ ছড়িয়েছে, এর অপচ্ছায়া উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার দাগ ক্রমেই মোটা করে চলেছে। মাদকের তালিকায় যুক্ত হচ্ছে নতুন নতুন নাম এবং ব্যাপকভাবে এর বিস্তারও ঘটছে। ইয়াবা এমনই এক মরণনেশা ট্যাবলেট, যার অনুপ্রবেশ বাংলাদেশে ঘটেছে সাম্প্রতিককালে।


১৯ মে কালের কণ্ঠসহ দেশের সব কটি জাতীয় পত্রিকায় চট্টগ্রামে পৌনে তিন লাখ ইয়াবা আটকের সংবাদটি ছাপা হয়েছে সংগত কারণেই গুরুত্বসহকারে। চট্টগ্রাম শহরের আসাদগঞ্জ এলাকার একটি গুদাম থেকে ইয়াবার সর্ববৃহৎ চালানটি আটক করা হয়, যার বাজারমূল্য প্রায় ১২ কোটি টাকা। র‌্যাব-১ ও র‌্যাব-৭-এর সদস্যরা এই চালানটি আটক করেন। ইয়াবা গডফাদার হিসেবে খ্যাত আবদুর রশিদ খুলুসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গতকাল এ-সংক্রান্ত আরো দুটি পার্শ্বপ্রতিবেদন কালের কণ্ঠে প্রকাশিত হয়েছে। ওই প্রতিবেদনগুলোতে প্রকাশ, দেশে মাদকাসক্তদের মধ্যে বড় একটি অংশ ফেনসিডিল বাদ দিয়ে এখন মরণনেশা ইয়াবার দিকে ঝুঁকে পড়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে ফেনসিডিলের চেয়ে ইয়াবা বেশি আটক হচ্ছে। এসব ইয়াবা মিয়ানমার থেকে কক্সবাজারের সীমান্ত দিয়ে দেশে ঢুকে হাতবদল হয়ে পৌঁছে যাচ্ছে ঢাকাসহ বিভিন্ন অঞ্চলে। ইয়াবা গডফাদার আবদুর রশিদ খুলুর নাম স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তৈরি মাদকদ্রব্য চোরাচালান কারবারিদের তালিকায় নেই। অথচ পুলিশ ও র‌্যাব কর্মকর্তাদের ভাষ্য, খুলুর হাত দিয়েই বাংলাদেশে ইয়াবা চোরাচালানের সূচনা। সে কয়েক বছর ধরে এই অপকর্মে যুক্ত। গ্রেপ্তার হওয়ার আগ পর্যন্ত খুলু আরো কয়েকটি বড় চালান ঢাকায় পৌঁছে দেয়- এমন তথ্যও মিলেছে। বিদ্যমান বাস্তবতা প্রমাণ করে, খুলুদের সংখ্যা কম নয়; এবং তাদের পৃষ্ঠপোষকদের হাত অনেক লম্বা। আর্থিকভাবেও তারা বলবান, আটক ইয়াবা চালানের পর এ বিষয়টিও স্পষ্ট হয়ে গেছে। মাদক ব্যবসায়ীদের টার্গেট এখন উচ্চমধ্যবিত্ত এবং উচ্চবিত্তের যুবক-যুবতীরা। মাদকাসক্তদের সংখ্যা এ দুই শ্রেণীতেই পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। যে বিষ সমাজে ছড়িয়ে পড়েছে, এর উৎপাটনে দু-একটা অভিযানই যথেষ্ট নয়। এর জন্য প্রয়োজন ধারাবাহিক সাঁড়াশি অভিযান, যূথবদ্ধভাবে সামাজিক আন্দোলন বেগবান করা, সীমান্তপথে নজরদারি কঠোর করার পাশাপাশি সীমান্তরক্ষীদের জবাবদিহি-দায়বদ্ধতার পাঠ পোক্ত করার ব্যবস্থা করা এবং আইনের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করা। মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর থেকে প্রায়ই বলতে শোনা যায়, তাদের নাকি জনবল সংকট রয়েছে। কিন্তু এ অজুহাত আর কত দিন। দেশের ভবিষ্যৎ যেখানে মাদকের ছোবলে ছিন্নভিন্ন, সেখানে সরকারের ভূমিকা কতটা শক্তিশালী ও সর্বব্যাপী- এ প্রশ্নও আছে।
মাদকের ছোবল থেকে সমাজকে মুক্ত করার লক্ষ্যে সেমিনার-সিম্পোজিয়াম, আলোচনা-পর্যালোচনা, সিদ্ধান্ত গ্রহণ ইত্যাদি কোনো কিছুই এ পর্যন্ত কম হয়নি। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে কাজের কাজ যে কিছুই হয়নি, বিদ্যমান বাস্তবতা এরই সাক্ষ্যবহ। পরিবার, সমাজ- সর্বত্র সবার জেগে ওঠার সময় বয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে সামনে চরম ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে। মাদক প্রতিরোধের জন্য দরকার বিজ্ঞানসম্মত ব্যবস্থাও। সে ক্ষেত্রে যুবসমাজের হতাশা দূর করার জন্য সচেতনতামূলক ব্যবস্থাও গ্রহণ করতে হবে। প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের মধ্যে এর নেতিবাচক দিক সম্পর্কে পরিপূর্ণ জ্ঞান দেওয়াও প্রয়োজন। তবে সব কিছুর আগে জরুরি আইনি সংস্থাগুলোর তরফে সাঁড়াশি অভিযান চালিয়ে মাদক চোরাচালানের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের পাকড়াও করে দণ্ড নিশ্চিত করা। উৎস সন্ধান করে শিকড় উৎপাটন ভিন্ন এ অভিশাপ থেকে মুক্তির পথ বের করা যাবে না।

No comments

Powered by Blogger.