নির্বাচনী খাওয়া-দাওয়া by জাহিরুল ইসলাম
ফ্রি পেলে বাঙালি আলকাতরা খায়_ গ্রামবাংলায় প্রচলিত কথা। কথাটা অনেকাংশেই সত্য। কারণ, ফ্রি পেলে বাঙালি সরাসরি আলকাতরা না খেলেও অনেক নিম্নমানের খাবার খায়। এজন্য ক্ষুধা বা দারিদ্র্য যতটা না দায়ী তার চেয়ে বেশি দায়ী বদভ্যাসের। ফ্রি খাওয়ার অনুষঙ্গ বাঙালি জীবনে অনেক আছে।
জিয়াফত, বিয়ে, কুলখানি, কাঙালিভোজ এসব অনুষ্ঠানে লোকজনকে দাওয়াত দিয়ে খাওয়ানো হয়। তারপর কী হয়? খাওয়ার পর লোকজন রান্না নিয়ে কিছুক্ষণ আলোচনা এবং আয়োজনকারীর সুনাম করে তৃপ্তির ঢেঁকুর তোলে। এ পর্যন্তই শেষ। তবুও এসব অনুষ্ঠান আজও টিকে আছে হাজার বছরের বাঙালি সংস্কৃতির অংশ হয়ে।
ফ্রি খাওয়ার বিপত্তিও কম নয়। এসব অনুষ্ঠানে গিয়ে খাওয়ার পর অসুস্থ হওয়ার খবর পত্রিকায় মাঝে মধ্যেই চোখে পড়ে। তবুও কালের বিবর্তনে তৈরি হচ্ছে ফ্রি খাওয়ার নতুন উপলক্ষ। উপলক্ষগুলোর মধ্যে হাল আমলে যোগ হয়েছে ভোটের সময় ভোটারদের খাওয়ানো। এটা এখন আমাদের দেশে একরকম রেওয়াজে পরিণত হয়েছে। সব রকম নির্বাচনে প্রার্থীরা ভোটারদের খাওয়ায়। খাওয়ার মেন্যুতে রয়েছে চা, পান, বিড়ি, সিগারেট, বিরিয়ানি। সাম্প্রতিককালে ভোটারদের কোমল পানীয় পান করানোর বিষয়টিও লক্ষণীয়। নির্বাচনের আগে কোমল পানীয় উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলো বিশেষ প্যাকেজ ঘোষণা করে, ছাড় দেয়। নতুন বিজ্ঞাপন বানায়। গণমাধ্যমগুলোতে সেসব বিজ্ঞাপন দেখে ভোটাররাও হুমড়ি খেয়ে পড়ে।
এক্ষেত্রে একটা বিষয় লক্ষণীয়, খাওয়ার জন্য সব প্রার্থীর দরজা থাকে উন্মুক্ত। কিন্তু ভোট তো দিতে হয় একজনকেই। তাই ভোটাররা সবার কাছ থেকে খেলেও ভোট শেষ পর্যন্ত দেয় তার পছন্দের প্রার্থীকেই। এটা করতে গিয়ে কী হয়? ভোটারদের পেটে কিছু বাড়তি খাবার পড়লেও সময় অপচয় হয় অনেক। প্রার্থীরও বাড়তি কিছু টাকা খরচ হয়। ভোটারদের ফ্রি খাওয়ানোর জন্য প্রার্থীর পক্ষ থেকে দোকান কিংবা রেস্টুরেন্ট বরাদ্দ থাকে। এজন্য দোকানদাররাও বিশেষ প্যাকেজের মেন্যু তৈরি করে। বিশেষ প্যাকেজের জন্য তৈরি পণ্যের গুণগত মান যে ঠিক থাকে না তা উলেল্গখ করা নিষ্প্রয়োজন। সেটা হোক চা, বিড়ি, সিগারেট কিংবা কোমল পানীয়। তাই এসব নিম্নমানের খাবার খাওয়ার পর শরীরে নানা রকম বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়।
ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন উপলক্ষে গ্রামগঞ্জে এখন পড়েছে ফ্রি খাওয়ার ধুম। এর বিপত্তিও দেখা যাচ্ছে। কয়েক দিন আগে লালমনিরহাটের সদর উপজেলায় 'নির্বাচনী খাবার' খেয়ে ৪০ জন অসুস্থ হয়ে পড়ে। অসুস্থদের সবাই দিনমজুর। তাদের অসুস্থ হওয়ার কারণ খাদ্যে বিষক্রিয়া। ওই এলাকায় ভোটারদের খাওয়ানোর জন্য যে হোটেল বরাদ্দ করা হয়েছিল সেই হোটেলের মালিক পরোটা সুস্বাদু করা এবং ফোলানোর জন্য এক ধরনের বিশেষ ওষুধ ব্যবহার করত। সেই পরোটা খেয়েই এই বিপত্তি। একের পর এক এসব ঘটনা ঘটছে। কিন্তু এসব ব্যাপারে দেখার কেউ নেই।
অনেকেই মনে করেন, ভোটার হিসেবে প্রার্থীদের কাছে খাওয়াটা তাদের পাওনা। এসব কর্মকাণ্ড যে নির্বাচনী আচরণবিধির লঙ্ঘন তা তাদের অজানা। ভোট যে তার নাগরিক অধিকার সেই বোধ তাদের মধ্যে অনুপস্থিত। পরোটা, পান, বিড়ি কিংবা সিগারেটের মতো তুচ্ছ কিছুর বিনিময়ে কাউকে ভোট দেওয়াটাও যে ভোট বিক্রি করার শামিল সেই সচেতনতাও নেই। এর দায় যেমন জনগণের তেমনি সরকারেরও। এটা প্রতিকারের একমাত্র উপায় কঠোরভাবে নির্বাচনী আচরণবিধির বাস্তবায়ন এবং জনসচেতনতা তৈরি। সংশিল্গষ্টরা এ ব্যাপারে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন কি?
zahirul.du@gmail.com
ফ্রি খাওয়ার বিপত্তিও কম নয়। এসব অনুষ্ঠানে গিয়ে খাওয়ার পর অসুস্থ হওয়ার খবর পত্রিকায় মাঝে মধ্যেই চোখে পড়ে। তবুও কালের বিবর্তনে তৈরি হচ্ছে ফ্রি খাওয়ার নতুন উপলক্ষ। উপলক্ষগুলোর মধ্যে হাল আমলে যোগ হয়েছে ভোটের সময় ভোটারদের খাওয়ানো। এটা এখন আমাদের দেশে একরকম রেওয়াজে পরিণত হয়েছে। সব রকম নির্বাচনে প্রার্থীরা ভোটারদের খাওয়ায়। খাওয়ার মেন্যুতে রয়েছে চা, পান, বিড়ি, সিগারেট, বিরিয়ানি। সাম্প্রতিককালে ভোটারদের কোমল পানীয় পান করানোর বিষয়টিও লক্ষণীয়। নির্বাচনের আগে কোমল পানীয় উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলো বিশেষ প্যাকেজ ঘোষণা করে, ছাড় দেয়। নতুন বিজ্ঞাপন বানায়। গণমাধ্যমগুলোতে সেসব বিজ্ঞাপন দেখে ভোটাররাও হুমড়ি খেয়ে পড়ে।
এক্ষেত্রে একটা বিষয় লক্ষণীয়, খাওয়ার জন্য সব প্রার্থীর দরজা থাকে উন্মুক্ত। কিন্তু ভোট তো দিতে হয় একজনকেই। তাই ভোটাররা সবার কাছ থেকে খেলেও ভোট শেষ পর্যন্ত দেয় তার পছন্দের প্রার্থীকেই। এটা করতে গিয়ে কী হয়? ভোটারদের পেটে কিছু বাড়তি খাবার পড়লেও সময় অপচয় হয় অনেক। প্রার্থীরও বাড়তি কিছু টাকা খরচ হয়। ভোটারদের ফ্রি খাওয়ানোর জন্য প্রার্থীর পক্ষ থেকে দোকান কিংবা রেস্টুরেন্ট বরাদ্দ থাকে। এজন্য দোকানদাররাও বিশেষ প্যাকেজের মেন্যু তৈরি করে। বিশেষ প্যাকেজের জন্য তৈরি পণ্যের গুণগত মান যে ঠিক থাকে না তা উলেল্গখ করা নিষ্প্রয়োজন। সেটা হোক চা, বিড়ি, সিগারেট কিংবা কোমল পানীয়। তাই এসব নিম্নমানের খাবার খাওয়ার পর শরীরে নানা রকম বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়।
ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন উপলক্ষে গ্রামগঞ্জে এখন পড়েছে ফ্রি খাওয়ার ধুম। এর বিপত্তিও দেখা যাচ্ছে। কয়েক দিন আগে লালমনিরহাটের সদর উপজেলায় 'নির্বাচনী খাবার' খেয়ে ৪০ জন অসুস্থ হয়ে পড়ে। অসুস্থদের সবাই দিনমজুর। তাদের অসুস্থ হওয়ার কারণ খাদ্যে বিষক্রিয়া। ওই এলাকায় ভোটারদের খাওয়ানোর জন্য যে হোটেল বরাদ্দ করা হয়েছিল সেই হোটেলের মালিক পরোটা সুস্বাদু করা এবং ফোলানোর জন্য এক ধরনের বিশেষ ওষুধ ব্যবহার করত। সেই পরোটা খেয়েই এই বিপত্তি। একের পর এক এসব ঘটনা ঘটছে। কিন্তু এসব ব্যাপারে দেখার কেউ নেই।
অনেকেই মনে করেন, ভোটার হিসেবে প্রার্থীদের কাছে খাওয়াটা তাদের পাওনা। এসব কর্মকাণ্ড যে নির্বাচনী আচরণবিধির লঙ্ঘন তা তাদের অজানা। ভোট যে তার নাগরিক অধিকার সেই বোধ তাদের মধ্যে অনুপস্থিত। পরোটা, পান, বিড়ি কিংবা সিগারেটের মতো তুচ্ছ কিছুর বিনিময়ে কাউকে ভোট দেওয়াটাও যে ভোট বিক্রি করার শামিল সেই সচেতনতাও নেই। এর দায় যেমন জনগণের তেমনি সরকারেরও। এটা প্রতিকারের একমাত্র উপায় কঠোরভাবে নির্বাচনী আচরণবিধির বাস্তবায়ন এবং জনসচেতনতা তৈরি। সংশিল্গষ্টরা এ ব্যাপারে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন কি?
zahirul.du@gmail.com
No comments