সরকারপক্ষের আরও সংযত হওয়া উচিত ছিল-ভোলায় উপনির্বাচন

ভোলা-৩ আসনের উপনির্বাচনে সরকারদলীয় প্রার্থী নূরনবী চৌধুরীর বিজয়ের খবরটি অনেকাংশে চাপা পড়ে গেছে সেখানে বিচ্ছিন্ন কিছু সহিংসতার ঘটনায়। বিএনপির সমর্থক-অধ্যুষিত এলাকায় ভোটদাতাদের পথে পথে বাধা দেওয়া, কোথাও মারপিট, পাল্টাপাল্টি ধাওয়া, বিএনপির নির্বাচনী এজেন্টদের কেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়া—এ রকম বেশ কিছু অভিযোগের কারণে সরকারি দলের আচরণ প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে।


তবে এটাও ঠিক যে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ছিল, কোথাও গোলাগুলির মতো ঘটনা ঘটেনি। সব অভিযোগ নিজস্ব কর্মকর্তাদের মাধ্যমে তদন্ত করে নির্বাচন কমিশন মোট ৮৬টি ভোটকেন্দ্রের মধ্যে মাত্র নয়টি কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ স্থগিত করেছে। এতে বোঝা যায়, বলপ্রয়োগের ঘটনা সীমিত ছিল। ব্যাপক সহিংসতা হলে প্রায় ৬৭ শতাংশ ভোট পড়ার সুযোগ ছিল না। স্মরণ করা যেতে পারে, বিগত সাধারণ নির্বাচনে এই আসনে ভোট পড়েছিল প্রায় ৮৫ শতাংশ। উপনির্বাচনে ভোট দেওয়ার হার কিছু কমে যাওয়া অস্বাভাবিক নয়। যদি বিগত নির্বাচন শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ও সুষ্ঠুভাবে হয়েছে বলে স্বীকৃতি পেয়ে থাকে, তাহলে এই উপনির্বাচন মোটামুটি গ্রহণযোগ্য বলে ধরে নেওয়া যায়।
কিন্তু ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের আরও সংযত আচরণ কাম্য ছিল। কারণ তাদের সামান্য মারামারির ঘটনা বড় অন্যায় বলে প্রতিভাত হয়, যেহেতু তারা ক্ষমতায়। প্রাথমিক হিসাবে দেখা যায়, বিগত সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর প্রাপ্ত ভোটের প্রায় কাছাকাছি ভোটই পেয়েছেন তাদের এবারের প্রার্থী। কিন্তু বিগত নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী হাফিজউদ্দিন আহমেদের ভোট প্রায় অর্ধেক হয়ে গেছে। স্থগিত নয়টি কেন্দ্রের মোট ভোট প্রায় ৩২ হাজার। এর বড় অংশ যদি বিএনপির প্রার্থীর প্রাপ্য হয়, তাহলেও বিগত নির্বাচনের তুলনায় এবার তিনি ২৫-৩০ হাজার ভোট কম পেয়েছেন। কেন এত কমল? এর একটি কারণ হতে পারে ভোটদাতাদের সরল মনস্তত্ত্ব, যার অর্থ হলো সরকারদলীয় প্রার্থী জিতলে এলাকার উন্নয়নের সুবিধা। তবে বিএনপি সে রকম মনে করে না। ভয়ভীতি ও কারচুপির মাধ্যমে তাদের প্রার্থীকে হারানোর অভিযোগ সত্য হলে বলতে হয়, ৩০-৩৫ হাজার ভোট জালিয়াতি করা হয়েছে। এ রকম গুরুতর অভিযোগের ভিত্তি আছে কি না, তা তদন্তের দাবি রাখে। নির্বাচন কমিশনকে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
এটা অনস্বীকার্য যে নির্বাচন কমিশন স্বাধীনভাবে কাজ করেছে। যখন কোনো অভিযোগ এসেছে, তদন্ত করে কমিশন অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের বদলি করেছে। মন্ত্রী ও কেন্দ্রীয় নেতাদের এলাকায় যাওয়া নিষিদ্ধ করে নির্বাচনে বাইরের হস্তক্ষেপ নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেছে। সিইসি বলেছেন, শতভাগ না হলেও উপনির্বাচন সফল হয়েছে। আপাতদৃষ্টিতে দেখা যায়, নির্বাচনী এলাকায় বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা ছাড়া পরিস্থিতি শান্ত ছিল। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকেও বিজয় মিছিল বা এমন কোনো কর্মসূচি না নিতে বলা হয়েছে, যেন পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে না ওঠে।
লক্ষণীয় বিষয় হলো, বিএনপির চেয়ারপারসন নির্বাচন নিয়ে তাত্ক্ষণিক কোনো মন্তব্য করেননি। আওয়ামী লীগের সভানেত্রীও এ ব্যাপারে মৌনব্রত পালন করেছেন। কিছু বলার আগে পুরো বিষয়টি নিয়ে চিন্তাভাবনা করার জন্য সময় নেওয়ার এই অনুশীলন গণতন্ত্রের জন্য শুভ। এই ধারাটি বিকশিত হোক।

No comments

Powered by Blogger.