এখন বিচার্য, কোন ‘হায়দার’ আসল হায়দার-পুলিশের কাজ পুলিশ করেছে, র‌্যাবের কাজ র‌্যাব

পুলিশের কর্মকর্তা গৌতম কুমার রায় হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশ ও র‌্যাব পৃথক অভিযানে হায়দার নামের দুই ব্যক্তিকে গ্রেপ্তারের পর প্রশ্ন উঠেছে, প্রকৃত অভিযুক্ত কে, আর কে-ই বা আসল আসামি। খুন হয়েছেন একজন পুলিশ কর্মকর্তা, কিন্তু অবস্থাদৃষ্টে দেখা যাচ্ছে, ঘটনায় জড়িত সন্দেহে ধরে আনা হয়েছে একই নামের দুজনকে।


অভিযুক্ত দুজনই স্বীকার করছেন, তাঁরা খুনের ঘটনায় জড়িত এবং তাঁদের দুজনেই বলেছেন, ঘটনায় জড়িত মোট আসামি তিনজন। কিন্তু পুলিশ ও র‌্যাবের সন্দেহ ঠিক হলে আসামির সংখ্যা দাঁড়ায় চারজনে। তাহলে তো তিন আর চারের চালে মামলাই বরবাদ হয়ে যাবে।
আর যদি আসামির সংখ্যা তিনে ঠিক রাখতে হয়, তাহলে ঠিক করতে হবে আসল ‘হায়দার’ কে। পুলিশ যাঁকে গ্রেপ্তার করেছে তিনিই কি আসল? তাহলে র‌্যাব যাঁকে গ্রেপ্তার করেছে তাঁর দাবি কেন মাঠে মারা যাবে? তিনিও তো হলফ করে বলছেন যে ঘটনার সময় তিনি সেখানে ছিলেন এবং জাকিরকে (কাইল্লা জাকির) গুলি ছুড়তে দেখেছেন নিজ চোখে।
একবার এক গ্রামে খুনের অভিযোগে ‘পাঁচআনি’ নামের এক আসামিকে ধরে আনার জন্য পুলিশ পাঠানো হলে দুই অবোধ শিশুকে ধরে আনা হয়। দারোগা সাহেব ওই বাচ্চাদের ধরার কারণ জানতে চাইলে পুলিশ বলে, গ্রামে পাঁচআনি নামের কোনো ব্যক্তিকে পাওয়া যায়নি, তবে দুই বাচ্চার একজনের নাম ‘দুআনি’ ও অপর জনের নাম ‘তিনআনি’। সুতরাং ওদের নামের যোগফল যেহেতু ‘পাঁচআনি’, তাই অগত্যা একজনের পরিবর্তে দুই আসামি ধরে আনা হয়েছে। বলা বাহুল্য, এটা ব্রিটিশ আমলের একটি কৌতুকসর্বস্ব গল্প। সে যুগে র‌্যাবও ছিল না, আর বর্তমানের পুলিশের সঙ্গে তাদের কর্মপদ্ধতি গুলিয়ে ফেলারও কোনো অবকাশ নেই।
কিন্তু একই খুনের ঘটনায় গ্রেপ্তার করে আনা হায়দার নামের দুই ব্যক্তিই কীভাবে ‘স্বেচ্ছায়’ স্বীকার করেন যে ওই খুনের ঘটনায় যে হায়দার জড়িত, সেটা তিনি নিজেই? মজার ব্যাপার হলো, প্রথম হায়দার ২৩ এপ্রিল গ্রেপ্তার হন এবং তাঁর স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি পত্রপত্রিকায় প্রচারিতও হয়। তাহলে কি দ্বিতীয় হায়দার সজ্ঞানে নিজের পায়ে নিজে কুড়াল মেরেছেন? এখানেই মূল প্রশ্নটি ওঠে, বিভিন্ন ঘটনায় গ্রেপ্তার করে আনা ব্যক্তিরা যে আদালতে বা পুলিশের কাছে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়, তা কতটা স্বেচ্ছাপ্রণোদিত?
যা হোক, দুই হায়দারের বিবাদভঞ্জন পুলিশ ও র‌্যাবকেই করতে হবে। আসল হায়দার ও আসল খুনিরা গ্রেপ্তার হোক। তাদের বিচারের সম্মুখীন করা হোক। নইলে তো খুনের শিকার গৌতমের আত্মা শান্তি পাবে না।

No comments

Powered by Blogger.