তুয়ারেগ, আফ্রিকার নীল মানুষ by কাজী জহিরুল ইসলাম
পেছনে অবারিত মরুভূমি, ঢেউয়ের দোলায় দুলতে দুলতে ছুটে গেছে দিগন্তের ধূসর রেখার দিকে। তারই প্রান্তে ধীরে ধীরে হামাগুড়ি দিয়ে নেমে যাচ্ছে দিবসের শেষ আলো। গোধুলিকে পেছনে রেখে উটের পিঠ থেকে নেমে মুসা ঢোকে ওর তাঁবুর ঘরে।
মুসার সারা গায়ে আকাশি রঙের জোব্বা, মাথায় পেঁচানো কালো পাগড়ির একাংশ দিয়ে ঢাকা মুখমণ্ডল, তারই ফাঁকে ধারালো বল্লমের মতো দুটি রাত জাগা চোখ। তুয়ারেগ সম্প্রদায়ের ভাষা তামাশেক; তামাশেক ভাষায় জোব্বা ধরনের এ পোশাকের নাম তুরকুদি। মুসার বউ, পেটানো শরীরের দীর্ঘাঙ্গিনী কালো নারী, আমেনা ঝাঁপিয়ে পড়ে স্বামীর বুকে। দু’হাতে দলা-মুচড়া করতে থাকে তুরকুদির শরীর। না, স্বামীর সোহাগ পাওয়ার জন্য নয়, আজ তিন দিন পর কী খাবার এনেছে মুসা তা কেড়ে নেয়ার জন্য। গত তিন দিনে জোটেনি দুটো খেজুর, এক বাটি দুধ অথবা এক টুকরো উটের গোশত।
আফ্রিকার ‘নীল মানুষ’ খ্যাত তুয়ারেগ সম্প্রদায়ের এই দম্পতির মতো মরুদেশ নিজারের প্রায় প্রতিটি পরিবারই চরম দারিদ্র্যের শিকার। বিশাল এক দেশ নিজার। যার রাজধানী শহরের নাম নিয়ামি। ১২ লাখ ৭০ হাজার বর্গকিলোমিটার আয়তন হলেও এর ৮০ শতাংশই ভয়ঙ্কর মরুভূমি সাহারার পেটে। পশ্চিম আফ্রিকার এই দেশটির সীমান্তবর্তী দেশগুলো হচ্ছে দক্ষিণে নাইজেরিয়া ও বেনিন, পশ্চিমে বুরকিনা ফাসো ও মালি, উত্তরে আলজেরিয়া ও লিবিয়া এবং পূর্বে শাদ। নিজারের মোট জনসংখ্যা দেড় কোটি, যার ৯৭ শতাংশ মুসলমান। হতদরিদ্র এই মুসলিম মরুদেশটি ১৯৬০ সালের ৩ আগস্ট ঔপনিবেশিক প্রভু ফরাসিদের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভ করে। এরপর থেকে জগদ্দল পাথরের মতো এর বুকে বারবার চেপে বসেছে সেনাশাসন। গত ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১০ আবারও এক অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে দেশের প্রেসিডেন্ট মামাদু তানজাকে ক্ষমতাচ্যুত করে রাষ্ট্রক্ষমতা হাতে তুলে নেয় নতুন সামরিক জান্তা মেজর সালু জিবো। মজার বিষয় হলো নিজারের বর্তমান শাসনকর্তা সালু জিবো এই তো সেদিন ২০০৪ সালে, এখানে এই আইভরিকোস্টেই একজন শান্তিরক্ষী সেনা কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করে গেছেন। হয়তো আমার সঙ্গে দেখাও হয়েছে। হয়তো কোনো প্রয়োজনে আমার অফিসেও এসেছেন। তখন সালু ছিলেন নিজেরীয় সেনাবাহিনীর এক তরুণ ক্যাপ্টেন। সালু জিবো ১৯৯৫ সালে আইভরিকোস্টের বিদ্রোহী গ্রুপের দখলে থাকা উত্তরাংশের রাজধানী বুআকে শহরেই সামরিক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন এবং ১৯৯৬ সালে সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট হিসেবে কমিশনপ্রাপ্ত হন। মাঝে মাঝে ভাবি, আমার ছয় বছরের কর্মস্থল এই আইভরিকোস্ট কত ঘটনা-দুর্ঘটনার সঙ্গে জড়িত। গত বছর ঢাকার পিলখানায় যে মর্মান্তিক ট্র্যাজেডি তৈরি হলো, সেই ট্র্যাজেডির নায়ক ডিএডি তৌহিদও এখানে কাজ করে গেছেন। যেসব অফিসার সেদিন ঘাতকের হাতে প্রাণ দিয়েছেন তাদেরও অনেককেই আমি চিনি, এখানেই ছিলেন। এমনকি আজ যিনি বিডিআরের মহাপরিচালক জেনারেল মইনুল, তিনিও তো আমাদের মইনুল ভাই, কত কাছের মানুষ, আইভরোকোস্টে ছিলেন এক বছর, দালোআর সেক্টর কমান্ডার হিসেবে কাজ করে গেছেন। বলছিলাম নিজারের কথা। শুনে হয়তো অবাক হবেন, নিজারের জনগণ কিন্তু সামরিক জান্তা সালু জিবোকে প্রাণঢালা অভিনন্দন জানিয়েছে। কারণ প্রেসিডেন্ট মামাদু তার মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পরও রেফারেন্ডামের মাধ্যমে জনমত নিয়ে ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করার চেষ্টা করেছিলেন। পৃথিবীর অনেক দেশের রাষ্ট্রনায়কই ক্ষমতা চিরস্থায়ী করতে গিয়ে এভাবে ক্ষমতাচ্যুত হয়েছেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো, এ ইতিহাসটির এতবার পুনরাবৃত্তি হওয়া সত্ত্বেও কেউ এই পুরনো ইতিহাস থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে না।
বারবার গণতন্ত্র ব্যাহত হওয়ার কারণে তৃতীয় বিশ্বের অনেক দেশের মতো নিজারেও তৈরি হয়েছে স্থায়ী রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা। যার ফলে দেশটিতে গড়ে ওঠেনি সুদৃঢ় অবকাঠামো। অথচ নিজারের অধিবাসীদের রয়েছে তিন হাজার বছরের প্রাচীন ইতিহাস। আজ থেকে প্রায় ৬ লাখ বছর আগে এখানে মানুষের বসতি ছিল বলে জানা যায়। তুয়ারেগ সম্প্রদায় তাদেরই একাংশ। এ ছাড়া নিজারের মেজরিটি মানুষ হাউসা সম্প্রদায়ভুক্ত। হাউসা সভ্যতা আফ্রিকার একটি প্রাচীন সভ্যতা। ওদের নিজস্ব স্ক্রিপ্ট আছে, বইপত্র আছে। নিজারের বর্তমান অর্থনীতি কৃষি এবং ইউরেনিয়াম নির্ভর হলেও এখানে রয়েছে প্রচুর সোনা এবং তেলসম্পদ। নিজারের সামিরা পাহাড়ে অবস্থিত স্বর্ণখনিতে মজুদের পরিমাণ ধারণা করা হচ্ছে প্রায় ১ কোটি টন। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো, এই খনির মালিক ৪০ শতাংশ মরক্কো, ৪০ শতাংশ কানাডা ও ২০ শতাংশ নিজার। ডিফা অঞ্চলে রয়েছে তরল সোনা পেট্রলিয়াম। এ ছাড়া রয়েছে প্রচুর ইউরেনিয়াম। কিন্তু অদক্ষ ব্যবস্থাপনা আর অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে সঠিকভাবে খনিজ সম্পদ উত্তোলন কার্যক্রম শুরু করা যাচ্ছে না বলে আজ নিজার এক চরম দরিদ্র মরুদেশ। নিজার একটি ল্যান্ডলকড কান্ট্রি হওয়াতে বহির্বাণিজ্যের জন্য নির্ভর করতে হয় নাইজেরিয়া অথবা বেনিনের ওপর। একমাত্র জলের উত্স নিজার নদী, যার নামানুসারে দেশটির নাম হয়েছে নিজার, ক্রমে নাব্য শুকিয়ে যাচ্ছে। প্রায়ই খরার করাল গ্রাসে পড়ে ভয়ঙ্কর দুর্ভিক্ষের কবলে নিপতিত হয় নিজার, দিনের পর দিন না খেয়ে থাকে লাখ লাখ নিজেরীয় অধিবাসী।
যে সাহারা নিজেরীয়দের কাছে এক ভয়ানক অভিশাপ, সেই সাহারাই মরক্কানদের কাছে আশীর্বাদ। ওরা সাহারাকে করে তুলেছে এক অন্যতম পর্যটক আকর্ষণ। প্রতি বছর লাখ লাখ পর্যটক সারা দুনিয়া থেকে আসে মরক্কোর সাহারা সফর করতে। দুবাইয়ের ডেজার্ট সাফারি আজ বিশ্বনন্দিত এক ট্যুরিস্ট আকর্ষণ। পাহাড়, সমুদ্র, মরু কিংবা তুষারপাত এর কোনোটাই অভিশাপ নয়, কোনটাই দায় নয় বরং এগুলোই হয়ে উঠতে পারে অন্যতম সম্পদ, আয়ের অন্যতম প্রধান উত্স; যদি উপস্থিত থাকে রাষ্ট্রীয় সততা এবং দক্ষ ব্যবস্থাপনা।
নিজারের এক সেনা কর্মকর্তা এখন আমার ঘরে, ক্যাপ্টেন সালিয়ু। আমার সঙ্গে দীর্ঘ আলাপচারিতার এ পর্যায়ে ওর দুই চোখ অশ্রুসজল। ‘জনাব কাজী, নিজেরীয়রা আর গণতন্ত্র চায় না। প্রেসিডেন্ট মামাদু তানজাকেতোকে মানুষ ভোট দিয়েই নির্বাচিত করেছিল। বিপুল ভোটে বিজয়ী এক প্রেসিডেন্ট। এগার বছর ক্ষমতায় ছিলেন তিনি। কী পেয়েছে দেশের ভুখা-নাঙ্গা মানুষ? স্বর্ণসম্পদে সমৃদ্ধ নিজারের স্বর্ণ কোথায় গেছে এগার বছর, এর কোনো হিসাব নেই, দেশের মানুষ এর কিছুই জানে না। উপরন্তু তিনি সংবিধান সংশোধন করে ক্ষমতাকে প্রলম্বিত করার ব্যবস্থা করেছিলেন। এই যদি হয় গণতান্ত্রিক শাসক, তাহলে আমরা সেই গণতন্ত্র চাই না।’ ভাবছি সালিয়ুর কথাগুলো কতখানি ঠিক। তৃতীয় বিশ্বের অনেক দেশের গণতন্ত্রই তো লোভ, প্রতিহিংসা আর দুর্নীতির কাফনে আবৃত।
লেখক : কবি, জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক কর্মকর্তা
আফ্রিকার ‘নীল মানুষ’ খ্যাত তুয়ারেগ সম্প্রদায়ের এই দম্পতির মতো মরুদেশ নিজারের প্রায় প্রতিটি পরিবারই চরম দারিদ্র্যের শিকার। বিশাল এক দেশ নিজার। যার রাজধানী শহরের নাম নিয়ামি। ১২ লাখ ৭০ হাজার বর্গকিলোমিটার আয়তন হলেও এর ৮০ শতাংশই ভয়ঙ্কর মরুভূমি সাহারার পেটে। পশ্চিম আফ্রিকার এই দেশটির সীমান্তবর্তী দেশগুলো হচ্ছে দক্ষিণে নাইজেরিয়া ও বেনিন, পশ্চিমে বুরকিনা ফাসো ও মালি, উত্তরে আলজেরিয়া ও লিবিয়া এবং পূর্বে শাদ। নিজারের মোট জনসংখ্যা দেড় কোটি, যার ৯৭ শতাংশ মুসলমান। হতদরিদ্র এই মুসলিম মরুদেশটি ১৯৬০ সালের ৩ আগস্ট ঔপনিবেশিক প্রভু ফরাসিদের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভ করে। এরপর থেকে জগদ্দল পাথরের মতো এর বুকে বারবার চেপে বসেছে সেনাশাসন। গত ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১০ আবারও এক অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে দেশের প্রেসিডেন্ট মামাদু তানজাকে ক্ষমতাচ্যুত করে রাষ্ট্রক্ষমতা হাতে তুলে নেয় নতুন সামরিক জান্তা মেজর সালু জিবো। মজার বিষয় হলো নিজারের বর্তমান শাসনকর্তা সালু জিবো এই তো সেদিন ২০০৪ সালে, এখানে এই আইভরিকোস্টেই একজন শান্তিরক্ষী সেনা কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করে গেছেন। হয়তো আমার সঙ্গে দেখাও হয়েছে। হয়তো কোনো প্রয়োজনে আমার অফিসেও এসেছেন। তখন সালু ছিলেন নিজেরীয় সেনাবাহিনীর এক তরুণ ক্যাপ্টেন। সালু জিবো ১৯৯৫ সালে আইভরিকোস্টের বিদ্রোহী গ্রুপের দখলে থাকা উত্তরাংশের রাজধানী বুআকে শহরেই সামরিক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন এবং ১৯৯৬ সালে সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট হিসেবে কমিশনপ্রাপ্ত হন। মাঝে মাঝে ভাবি, আমার ছয় বছরের কর্মস্থল এই আইভরিকোস্ট কত ঘটনা-দুর্ঘটনার সঙ্গে জড়িত। গত বছর ঢাকার পিলখানায় যে মর্মান্তিক ট্র্যাজেডি তৈরি হলো, সেই ট্র্যাজেডির নায়ক ডিএডি তৌহিদও এখানে কাজ করে গেছেন। যেসব অফিসার সেদিন ঘাতকের হাতে প্রাণ দিয়েছেন তাদেরও অনেককেই আমি চিনি, এখানেই ছিলেন। এমনকি আজ যিনি বিডিআরের মহাপরিচালক জেনারেল মইনুল, তিনিও তো আমাদের মইনুল ভাই, কত কাছের মানুষ, আইভরোকোস্টে ছিলেন এক বছর, দালোআর সেক্টর কমান্ডার হিসেবে কাজ করে গেছেন। বলছিলাম নিজারের কথা। শুনে হয়তো অবাক হবেন, নিজারের জনগণ কিন্তু সামরিক জান্তা সালু জিবোকে প্রাণঢালা অভিনন্দন জানিয়েছে। কারণ প্রেসিডেন্ট মামাদু তার মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পরও রেফারেন্ডামের মাধ্যমে জনমত নিয়ে ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করার চেষ্টা করেছিলেন। পৃথিবীর অনেক দেশের রাষ্ট্রনায়কই ক্ষমতা চিরস্থায়ী করতে গিয়ে এভাবে ক্ষমতাচ্যুত হয়েছেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো, এ ইতিহাসটির এতবার পুনরাবৃত্তি হওয়া সত্ত্বেও কেউ এই পুরনো ইতিহাস থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে না।
বারবার গণতন্ত্র ব্যাহত হওয়ার কারণে তৃতীয় বিশ্বের অনেক দেশের মতো নিজারেও তৈরি হয়েছে স্থায়ী রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা। যার ফলে দেশটিতে গড়ে ওঠেনি সুদৃঢ় অবকাঠামো। অথচ নিজারের অধিবাসীদের রয়েছে তিন হাজার বছরের প্রাচীন ইতিহাস। আজ থেকে প্রায় ৬ লাখ বছর আগে এখানে মানুষের বসতি ছিল বলে জানা যায়। তুয়ারেগ সম্প্রদায় তাদেরই একাংশ। এ ছাড়া নিজারের মেজরিটি মানুষ হাউসা সম্প্রদায়ভুক্ত। হাউসা সভ্যতা আফ্রিকার একটি প্রাচীন সভ্যতা। ওদের নিজস্ব স্ক্রিপ্ট আছে, বইপত্র আছে। নিজারের বর্তমান অর্থনীতি কৃষি এবং ইউরেনিয়াম নির্ভর হলেও এখানে রয়েছে প্রচুর সোনা এবং তেলসম্পদ। নিজারের সামিরা পাহাড়ে অবস্থিত স্বর্ণখনিতে মজুদের পরিমাণ ধারণা করা হচ্ছে প্রায় ১ কোটি টন। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো, এই খনির মালিক ৪০ শতাংশ মরক্কো, ৪০ শতাংশ কানাডা ও ২০ শতাংশ নিজার। ডিফা অঞ্চলে রয়েছে তরল সোনা পেট্রলিয়াম। এ ছাড়া রয়েছে প্রচুর ইউরেনিয়াম। কিন্তু অদক্ষ ব্যবস্থাপনা আর অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে সঠিকভাবে খনিজ সম্পদ উত্তোলন কার্যক্রম শুরু করা যাচ্ছে না বলে আজ নিজার এক চরম দরিদ্র মরুদেশ। নিজার একটি ল্যান্ডলকড কান্ট্রি হওয়াতে বহির্বাণিজ্যের জন্য নির্ভর করতে হয় নাইজেরিয়া অথবা বেনিনের ওপর। একমাত্র জলের উত্স নিজার নদী, যার নামানুসারে দেশটির নাম হয়েছে নিজার, ক্রমে নাব্য শুকিয়ে যাচ্ছে। প্রায়ই খরার করাল গ্রাসে পড়ে ভয়ঙ্কর দুর্ভিক্ষের কবলে নিপতিত হয় নিজার, দিনের পর দিন না খেয়ে থাকে লাখ লাখ নিজেরীয় অধিবাসী।
যে সাহারা নিজেরীয়দের কাছে এক ভয়ানক অভিশাপ, সেই সাহারাই মরক্কানদের কাছে আশীর্বাদ। ওরা সাহারাকে করে তুলেছে এক অন্যতম পর্যটক আকর্ষণ। প্রতি বছর লাখ লাখ পর্যটক সারা দুনিয়া থেকে আসে মরক্কোর সাহারা সফর করতে। দুবাইয়ের ডেজার্ট সাফারি আজ বিশ্বনন্দিত এক ট্যুরিস্ট আকর্ষণ। পাহাড়, সমুদ্র, মরু কিংবা তুষারপাত এর কোনোটাই অভিশাপ নয়, কোনটাই দায় নয় বরং এগুলোই হয়ে উঠতে পারে অন্যতম সম্পদ, আয়ের অন্যতম প্রধান উত্স; যদি উপস্থিত থাকে রাষ্ট্রীয় সততা এবং দক্ষ ব্যবস্থাপনা।
নিজারের এক সেনা কর্মকর্তা এখন আমার ঘরে, ক্যাপ্টেন সালিয়ু। আমার সঙ্গে দীর্ঘ আলাপচারিতার এ পর্যায়ে ওর দুই চোখ অশ্রুসজল। ‘জনাব কাজী, নিজেরীয়রা আর গণতন্ত্র চায় না। প্রেসিডেন্ট মামাদু তানজাকেতোকে মানুষ ভোট দিয়েই নির্বাচিত করেছিল। বিপুল ভোটে বিজয়ী এক প্রেসিডেন্ট। এগার বছর ক্ষমতায় ছিলেন তিনি। কী পেয়েছে দেশের ভুখা-নাঙ্গা মানুষ? স্বর্ণসম্পদে সমৃদ্ধ নিজারের স্বর্ণ কোথায় গেছে এগার বছর, এর কোনো হিসাব নেই, দেশের মানুষ এর কিছুই জানে না। উপরন্তু তিনি সংবিধান সংশোধন করে ক্ষমতাকে প্রলম্বিত করার ব্যবস্থা করেছিলেন। এই যদি হয় গণতান্ত্রিক শাসক, তাহলে আমরা সেই গণতন্ত্র চাই না।’ ভাবছি সালিয়ুর কথাগুলো কতখানি ঠিক। তৃতীয় বিশ্বের অনেক দেশের গণতন্ত্রই তো লোভ, প্রতিহিংসা আর দুর্নীতির কাফনে আবৃত।
লেখক : কবি, জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক কর্মকর্তা
No comments