ছয় পরিবারের পাশে বসুন্ধরা গ্রুপ-অর্থসহায়তার চেক হস্তান্তর

মা-বাবা হারানো অনাথ অবুঝ শিশু মাহীর সরওয়ার মেঘ। চোখ দুটি বুদ্ধিদীপ্ত। মুখ হাস্যোজ্জ্বল। তবে সেই চোখে-মুখেই ক্ষণে ক্ষণে ভর করছিল রাজ্যের বিহ্বলতা, বিষণ্নতা। চাঁদমুখ ঢেকে যাচ্ছিল বিষাদের কালো ছায়ায়। ক্যামেরার ফ্ল্যাশে মুখ আলোকিত হলেও একটু পরপরই বিরক্তি প্রকাশ করছিল মেঘ।


ভিড়ের মধ্যেও সে প্রিয়জনের বুকে মুখ লুকিয়ে খুঁজছিল নির্ভরতা। মাত্র ছয় বছর বয়সে মা-বাবাকে হারিয়ে নিঃস্ব হওয়া এই শিশুর জন্য আজ যে নিরাপত্তা আর নির্ভরতা বড় দরকার। সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনির নির্মম হত্যাকাণ্ডের পর তাঁদের একমাত্র সন্তান মেঘের নির্ভরতা দিতে, পড়াশোনাসহ তার সুন্দর স্বাভাবিক জীবনের জন্য সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে বসুন্ধরা গ্রুপ। গতকাল শনিবার দুপুরে বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যানের পক্ষ থেকে মেঘের জন্য দেওয়া হয়েছে ১৫ লাখ টাকার চেক। শুধু মেঘ নয়, সম্প্রতি সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত দুই সাংবাদিক বিভাষ চন্দ্র সাহা ও শহীদুজ্জামান টিটুর পরিবারের হাতে দুই লাখ করে টাকার চেক এবং দুই কিডনি নষ্ট হয়ে যাওয়া জাতীয় প্রেসক্লাবের কর্মচারী সোহেলের হাতে এক লাখ টাকার চেক তুলে দেওয়া হয়েছে।
বারিধারার বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া হাউসের দোতলার কনফারেন্স রুমে এক অনুষ্ঠানে এ চেক হস্তান্তর করা হয়। বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান গত সোমবার এক বৈঠকে অসহায় ছয়টি পরিবারের জন্য বিভিন্ন অঙ্কের অনুদান ঘোষণা করেন।
এ ছাড়া বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যানের সহযোগিতা পাবে অন্য দুটি পরিবার হলো, ছিনতাইকারীদের কবল থেকে এক নারীকে রক্ষা করতে গিয়ে নিহত একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা হযরত আলী ও খিলগাঁওয়ে বাসের মধ্যে ঘুমন্ত অবস্থায় দুর্বৃত্তদের আগুনে পুড়ে মারা যাওয়া বাসচালক বদর আলীর পরিবার। তাদের হাতে শিগগিরই সহায়তার অর্থ তুলে দেওয়া হবে।
গতকাল দুপুরে চেক হস্তান্তর অনুষ্ঠানে ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপের চেয়ারম্যান মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীনের সভাপতিত্বে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান এ কে আজাদ চৌধুরী, কালের কণ্ঠ সম্পাদক ইমদাদুল হক মিলন, বাংলানিউজটোয়েন্টিফোরডটকমের এডিটর-ইন-চিফ আলমগীর হোসেন, বাংলাদেশ প্রতিদিনের সম্পাদক নঈম নিজাম, ডেইলি সানের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক জামিলুর রহমান, বসুন্ধরা গ্রুপের মিডিয়া উপদেষ্টা মোহাম্মদ আবু তৈয়ব, সময় টিভির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আহমেদ জুবায়ের, জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি কামাল উদ্দিন সবুজ, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন বাদশাহ, সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ আলম খান তপু, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের মহাসচিব আবদুল জলিল ভুঁইয়া, কালের কণ্ঠের যুগ্ম সম্পাদক চৌধুরী আফতাবুল ইসলাম ও তৌহিদুর রহমান, প্রধান প্রতিবেদক আব্দুল্লাহ আল ফারুক, বাংলাদেশ প্রতিদিনের নির্বাহী সম্পাদক পীর হাবিবুর রহমান প্রমুখ।
ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর হাতে বসুন্ধরা গ্রুপের পক্ষে চেক তুলে দেন ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপের চেয়ারম্যান মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ও অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি এ কে আজাদ চৌধুরী।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কে আজাদ চৌধুরী বলেন, 'এটি অনুদান নয়, এটি বসুন্ধরা গ্রুপের সামাজিক দায়বদ্ধতা। আমাদের সমাজে বিত্তের অভাব নেই, অভাব শুধু চিত্তের। বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহানের চিত্ত অনেক বড়। তাই তিনি দায়িত্ব মনে করে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে ক্ষতিগ্রস্ত সাংবাদিক পরিবারসহ আর্তমানবতার সেবায় এগিয়ে এসেছেন।' তিনি বসুন্ধরা গ্রুপের এমন মহতী উদ্যোগকে স্বাগত জানান এবং এ ধারা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানান। এ ছাড়া বিপন্ন মানুষের জন্য বসুন্ধরা গ্রুপের হাত সব সময় প্রসারিত থাকবে বলেও তিনি প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন।
সভাপতির বক্তব্যে ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপের চেয়ারম্যান মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন বলেন, 'আজকের এ অনুষ্ঠানে সবাইকে ভারাক্রান্ত মন নিয়ে উপস্থিত হতে হয়েছে। আমি বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যানের পক্ষ থেকে প্রতিনিধিত্ব করছি। যাঁরা তাঁদের স্বজনদের হারিয়েছেন, তাঁদের প্রতি আমি সমবেদনা জানাই।' এটাকে তিনি শোকসভা হিসেবেও উল্লেখ করেন।
অনুষ্ঠানে বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যানের উপস্থিত থাকার কথা থাকলেও তিনি বিশেষ কাজে ব্যস্ত থাকায় তাঁর পক্ষ থেকে প্রতিনিধিত্ব করেন মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন। তিনি মেঘসহ চার পরিবারের উদ্দেশে বলেন, 'আপনাদের ব্যথা কিঞ্চিৎ পরিমাণ হলেও আমরা অনুভব করছি।' বসুন্ধরা গ্রুপের অনেক সামাজিক উদ্যোগের মধ্যে এটি একটি উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, মৃত্যু এমন এক বিরাট ক্ষতি, যা কোনো সাহায্য বা অনুদান দিয়ে পূরণ করা সম্ভব নয়। তিনি বলেন, দেশের সাংবাদিকরা যাতে কর্মসংস্থানের মাধ্যমে ভালো থাকতে পারেন, সে উদ্যোগ নেবে বসুন্ধরা। প্রশিক্ষণ দিয়ে তাঁদের আরো দক্ষ করে তোলার জন্য ইনস্টিটিউট তৈরি করা হবে।
কালের কণ্ঠ সম্পাদক বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক ইমদাদুল হক মিলন বলেন, দেশ ও মানুষের কল্যাণে নিবেদিত বসুন্ধরা গ্রুপ শুরু থেকেই নিয়োজিত আর্তমানবতার সেবায়। মানবসেবার এ মহান দায়িত্ব পালন করছেন বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান। তিনি এমন এক রত্ন, যাঁর আলোয় আলোকিত হচ্ছে গোটা বাংলাদেশ।
এর আগে প্রয়াত সাংবাদিক পথিক সাহা, দীনেশ দাস ও নেওয়াজুল বারীর পরিবারের পাশে দাঁড়ায় বসুন্ধরা গ্রুপ। সড়ক দুর্ঘটনায় আহত সাংবাদিক নিখিল ভদ্রের চিকিৎসার সার্বিক দায়িত্বও নেয় প্রতিষ্ঠানটি।
বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান এর আগে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত সাংবাদিক দীনেশ দাসের পরিবারকে ১০ লাখ ও প্রয়াত সাংবাদিক পথিক সাহার পরিবারকে ১০ লাখ টাকা সহায়তা দেন। এ ছাড়া সড়ক দুর্ঘটনায় আহত সাংবাদিক নিখিল ভদ্রকে বিদেশে পাঠিয়ে চিকিৎসা বাবদ ৩৫ লাখ টাকা দিয়েছেন। আর প্রয়াত নেওয়াজুল বারীর পরিবারকে ১০ বছর পর্যন্ত তাঁর বেতনের সমপরিমাণ টাকা দেওয়ার ঘোষণাও আছে। সেই টাকা নিয়মিত পাচ্ছে পরিবারটি।

No comments

Powered by Blogger.