শোষণমুক্ত সমাজ ও কবি নজরুল by গাউসুর রহমান
কাজী নজরুল ইসলাম ইসলামী চেতনাকে যেমন ধারণ করেছেন তার কবিতা, গান ও অন্যান্য রচনায়; তেমনি ধারণ করেছেন শোষণমুক্ত প্রতিষ্ঠার প্রত্যয়। কারণ ইসলামী সাম্যবাদের সঙ্গে মানবিক সাম্যবাদের সমন্বয় করেছেন তিনি তার কবিতায়।
তিনি অন্যায়, অত্যাচার, অসত্যের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেছেন; ইসলাম ও মানুষকে অন্যায়, অত্যাচার, অসত্যের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করার নির্দেশ দিয়েছেন। ন্যায়, সত্য, মানবতার সুমহান মুক্তিই ইসলামের শিক্ষা। ন্যায়ভিত্তিক সমাজ, সত্যনিষ্ঠ জীবনযাপন এবং মানুষ ও মানবতার শিক্ষা যেমন ইসলাম দেয়, নজরুলের কবিতা, গানও আমাদের সেই শিক্ষাই দেয়। শুধু কবিতা, গানের কথাইবা বলি কেন, তার প্রবন্ধ, গল্প, উপন্যাস, ভাষণেও ন্যায় এবং সত্য প্রতিষ্ঠা, মানবতার মুক্তির বাণী সঞ্চারিত হয়েছে। ইসলাম শান্তির ধর্ম, শান্তির কথা বলে। নজরুলও অশান্তির বিরুদ্ধে শান্তি প্রতিষ্ঠায় তার সদিচ্ছা, অঙ্গীকার, প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন; বিদ্রোহ ঘোষণা করেছেন অশান্তির বিরুদ্ধে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য।
নজরুলের সাহিত্যে আত্মশক্তির মহিমা ও বিজয় ঘোষণা প্রকৃত পক্ষে আল্লাহতায়ালার প্রদত্ত ইসলামী অনুশাসনের অনুকূলে প্রবাহিত। বৃহত্তর ও মহত্তর মহিমা যে ইসলামের আছে; সেই মহিমাকেই সঞ্চারিত করেছেন নজরুল তার সাহিত্যে। নজরুলের বিদ্রোহী রূপের প্রকৃত তাৎপর্য হচ্ছে_ আল্লাহতায়ালা প্রদত্ত মানুষের শক্তি ও বীর্যবত্তা, সাহস, অঙ্গীকার ও প্রত্যয়কে মানবকল্যাণে, মানবমুক্তির পথে চালিত করা। নজরুল মানুষের মর্যাদা, মানবতা ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য জনমূল সম্পৃক্ত কবি হয়েছিলেন; সেই মানুষের মর্যাদা, মানবতা ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার কথা ইসলামও বলে। নজরুল মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য জাতির স্বাধীন সত্তাকে পুনর্বাসিত করেছিলেন কবিতা, গান, গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ ও ভাষণে। এর পেছনে কাজ করেছে দেশপ্রেমের প্রেরণা, মনুষ্যত্ব ও মানবতা প্রতিষ্ঠার চেতনা। যে চেতনার কথা ইসলামও বলে।
মুক্তির প্রদীপ্ত মহালগ্নে নজরুলের সাহিত্য বীরের বন্দনায় মুখরিত। এই বীরত্ব, অন্যায়ের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের শিক্ষা ইসলামেরও শিক্ষা। নজরুলের কবিতায় অন্যায়, দুঃশাসনের বিরুদ্ধে যে যুদ্ধের আবেগ ও গৌরবময় রূপ ফুটে উঠেছে, এর সঙ্গে ইসলামী চেতনার কোনো বিরোধ নেই, বরং একই খাতে প্রবাহিত। নজরুল তার 'রণভেরী', 'আনোয়ার', 'কোরবানী', 'মোহররম', 'শাত্-ইল-আরব' কবিতায় ইসলামী সমাজের গৌরব, সাফল্যের, কৃতিত্বের বিপরীতে যে ভীরুতা, দৈন্য ও ব্যর্থতাকে তুলে ধরেছেন, তা তার নিজ সমাজের স্বদেশের চেতনার সঙ্গে একাত্ম হয়ে গেছে। নজরুল মুসলিম হিসেবে ইসলামের বীরত্ব, মহত্ত্ব ও কল্যাণচেতনার সঙ্গে নিজের দেশের পরাধীনতার বিরুদ্ধে স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা ও প্রত্যয়, ঐতিহ্যপ্রীতিকে এক ও একার করে ভেবেছেন। স্বাধীনতা-স্বাধিকার চেতনা, ন্যায়ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার ও মানবাধিকারের চেতনা একই উৎস ও উৎসান্তরে ঠিকানা খুঁজে পেয়েছে। স্বাধীনতা ও ন্যায়ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা, মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্যই তার সত্তার একটি বিস্তৃত অংশজুড়ে ছিল বিদ্রোহের অগি্ন ও জল।
নজরুলের অবস্থান ছিল সব ধরনের শাসন-শোষণ, নিপীড়ন-নির্যাতন, অত্যাচার আর অনাচারের বিরুদ্ধে। ইসলামের চেতনার সঙ্গে নজরুলের এ চেতনা এক এবং একাত্ম। নজরুলের মানবিক সাম্যবাদ ও ইসলামের সাম্যবাদী চেতনা একই ধারায় প্রবাহিত। তার অন্তর্মুখী ভাগাবেগের ওজস্বিতা এবং অকৃত্রিমতা ইসলামের বীরগাথা, বীরত্ব, শৌর্য-বীর্যের চেতনা তার সাহিত্যে একই প্রেক্ষিত নিয়ে হাজির হয়েছে। নজরুলের কবিতা, গান, গল্প, উপন্যাস, নাটক, প্রবন্ধ ও ভাষণে অধ্যাত্মবাদ এবং ইসলামী সাম্য সূচিত হয়েছে মানবিকতায়। তার ইসলামী কবিতা মানবাত্মার বিকাশ ও মানবিকতার উদ্বোধন। আধ্যাত্মিক শক্তি তার আপন আত্মার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে।
কাজী নজরুল ইসলাম যেমন শোষিত মানুষের কবি, বিদ্রোহের কবি, মানবিকতার কবি; তেমনি ইসলামী আকিদা এবং ইসলামী সাম্যবাদেরও কবি। ইসলামকে কবি মনেপ্রাণে গ্রহণ করেছেন। 'আবির্ভাব' ও 'তিরোভাব'_ এ দুটি কবিতার সমন্বয়ে তিনি রচনা করেছেন 'ফাতেহা-ই-দোয়াজ দহম' কবিতাটি। ইসলামের জোশ সঞ্জীবিত রাখার ক্ষেত্রে নজরুল তার কবিতা ও অন্যান্য রচনার মাধ্যমে অভাবনীয় ভূমিকা রেখেছেন। ইসলামের ঝাণ্ডাকে নজরুল সবার ঊধর্ে্ব ঠাঁই দিয়েছেন। আন্তরিক উচ্চারণে তিনি ছিলেন আল্লাহর রাহে নিবেদিত। নজরুল তাই উচ্চারণ করেন : 'হাসানের মত পিব-পিয়ালা সে জহরের,/হোসেনের মত নিব বুকে কহরের/আসগর সম দিব বাচ্চারে কোরবান/জালিমের দাদ নেবো, দেবো আজ গোর জান।'
gausurrahman2011@yahoo.com
নজরুলের সাহিত্যে আত্মশক্তির মহিমা ও বিজয় ঘোষণা প্রকৃত পক্ষে আল্লাহতায়ালার প্রদত্ত ইসলামী অনুশাসনের অনুকূলে প্রবাহিত। বৃহত্তর ও মহত্তর মহিমা যে ইসলামের আছে; সেই মহিমাকেই সঞ্চারিত করেছেন নজরুল তার সাহিত্যে। নজরুলের বিদ্রোহী রূপের প্রকৃত তাৎপর্য হচ্ছে_ আল্লাহতায়ালা প্রদত্ত মানুষের শক্তি ও বীর্যবত্তা, সাহস, অঙ্গীকার ও প্রত্যয়কে মানবকল্যাণে, মানবমুক্তির পথে চালিত করা। নজরুল মানুষের মর্যাদা, মানবতা ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য জনমূল সম্পৃক্ত কবি হয়েছিলেন; সেই মানুষের মর্যাদা, মানবতা ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার কথা ইসলামও বলে। নজরুল মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য জাতির স্বাধীন সত্তাকে পুনর্বাসিত করেছিলেন কবিতা, গান, গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ ও ভাষণে। এর পেছনে কাজ করেছে দেশপ্রেমের প্রেরণা, মনুষ্যত্ব ও মানবতা প্রতিষ্ঠার চেতনা। যে চেতনার কথা ইসলামও বলে।
মুক্তির প্রদীপ্ত মহালগ্নে নজরুলের সাহিত্য বীরের বন্দনায় মুখরিত। এই বীরত্ব, অন্যায়ের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের শিক্ষা ইসলামেরও শিক্ষা। নজরুলের কবিতায় অন্যায়, দুঃশাসনের বিরুদ্ধে যে যুদ্ধের আবেগ ও গৌরবময় রূপ ফুটে উঠেছে, এর সঙ্গে ইসলামী চেতনার কোনো বিরোধ নেই, বরং একই খাতে প্রবাহিত। নজরুল তার 'রণভেরী', 'আনোয়ার', 'কোরবানী', 'মোহররম', 'শাত্-ইল-আরব' কবিতায় ইসলামী সমাজের গৌরব, সাফল্যের, কৃতিত্বের বিপরীতে যে ভীরুতা, দৈন্য ও ব্যর্থতাকে তুলে ধরেছেন, তা তার নিজ সমাজের স্বদেশের চেতনার সঙ্গে একাত্ম হয়ে গেছে। নজরুল মুসলিম হিসেবে ইসলামের বীরত্ব, মহত্ত্ব ও কল্যাণচেতনার সঙ্গে নিজের দেশের পরাধীনতার বিরুদ্ধে স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা ও প্রত্যয়, ঐতিহ্যপ্রীতিকে এক ও একার করে ভেবেছেন। স্বাধীনতা-স্বাধিকার চেতনা, ন্যায়ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার ও মানবাধিকারের চেতনা একই উৎস ও উৎসান্তরে ঠিকানা খুঁজে পেয়েছে। স্বাধীনতা ও ন্যায়ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা, মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্যই তার সত্তার একটি বিস্তৃত অংশজুড়ে ছিল বিদ্রোহের অগি্ন ও জল।
নজরুলের অবস্থান ছিল সব ধরনের শাসন-শোষণ, নিপীড়ন-নির্যাতন, অত্যাচার আর অনাচারের বিরুদ্ধে। ইসলামের চেতনার সঙ্গে নজরুলের এ চেতনা এক এবং একাত্ম। নজরুলের মানবিক সাম্যবাদ ও ইসলামের সাম্যবাদী চেতনা একই ধারায় প্রবাহিত। তার অন্তর্মুখী ভাগাবেগের ওজস্বিতা এবং অকৃত্রিমতা ইসলামের বীরগাথা, বীরত্ব, শৌর্য-বীর্যের চেতনা তার সাহিত্যে একই প্রেক্ষিত নিয়ে হাজির হয়েছে। নজরুলের কবিতা, গান, গল্প, উপন্যাস, নাটক, প্রবন্ধ ও ভাষণে অধ্যাত্মবাদ এবং ইসলামী সাম্য সূচিত হয়েছে মানবিকতায়। তার ইসলামী কবিতা মানবাত্মার বিকাশ ও মানবিকতার উদ্বোধন। আধ্যাত্মিক শক্তি তার আপন আত্মার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে।
কাজী নজরুল ইসলাম যেমন শোষিত মানুষের কবি, বিদ্রোহের কবি, মানবিকতার কবি; তেমনি ইসলামী আকিদা এবং ইসলামী সাম্যবাদেরও কবি। ইসলামকে কবি মনেপ্রাণে গ্রহণ করেছেন। 'আবির্ভাব' ও 'তিরোভাব'_ এ দুটি কবিতার সমন্বয়ে তিনি রচনা করেছেন 'ফাতেহা-ই-দোয়াজ দহম' কবিতাটি। ইসলামের জোশ সঞ্জীবিত রাখার ক্ষেত্রে নজরুল তার কবিতা ও অন্যান্য রচনার মাধ্যমে অভাবনীয় ভূমিকা রেখেছেন। ইসলামের ঝাণ্ডাকে নজরুল সবার ঊধর্ে্ব ঠাঁই দিয়েছেন। আন্তরিক উচ্চারণে তিনি ছিলেন আল্লাহর রাহে নিবেদিত। নজরুল তাই উচ্চারণ করেন : 'হাসানের মত পিব-পিয়ালা সে জহরের,/হোসেনের মত নিব বুকে কহরের/আসগর সম দিব বাচ্চারে কোরবান/জালিমের দাদ নেবো, দেবো আজ গোর জান।'
gausurrahman2011@yahoo.com
No comments