সাশ্রয়ী ও পরিবেশবান্ধব নির্মাণসামগ্রী by আসাদুজ্জামান খান
সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে নির্মাণ, বাড়ছে কংক্রিটের চাহিদা। ধারণা করা হচ্ছে, সারা বিশ্বে বার্ষিক কংক্রিটের চাহিদা মেটাতে ২০৫০ সাল নাগাদ প্রায় পাঁচ বিলিয়ন টন সিমেন্ট দরকার হবে। আর এই সিমেন্ট উৎপাদনে নির্গত হবে পাঁচ বিলিয়ন টন কার্বন ডাই-অক্সাইড, যা কিনা মোট গ্রিনহাউস গ্যাসের সাত শতাংশ।
এতে বাড়বে বৈশ্বিক উষ্ণতা।
তাই পরিবেশ দূষণ ও নির্মাণব্যয় কমাতে সিমেন্টের কিছু অংশের পরিবর্তে ধাতুমল বা স্ল্যাগ ব্যবহার করে কংক্রিটের শক্তি নিয়ে গবেষণা করেছেন চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট) থেকে পাস করা প্রকৌশলী মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম ও অমৃতা দাস। জানা যায়, স্ল্যাগ স্টিল কারখানায় উপজাত হিসেবে তৈরি হয়। এর বাজারমূল্য খুবই কম।
গবেষণায় দেখা যায়, সিমেন্টের কিছু অংশের পরিবর্তে স্ল্যাগ ব্যবহার করলে কার্বন ডাই-অক্সাইড কম নিঃসরণ হবে। অপরদিকে স্ল্যাগ পরিবেশে ত্যাগ করার ফলে দূষিত হচ্ছে পরিবেশ। ফলে সিমেন্টের সঙ্গে স্ল্যাগ ব্যবহার হবে সাশ্রয়ী ও পরিবেশবান্ধব নির্মাণ সহায়ক।
গবেষকেরা জানান, তাঁরা ১০০: ০, ৮৫: ১৫, ৭০: ৩০, ৫৫: ৪৫—এই চারটি অনুপাতের সিমেন্ট ও স্ল্যাগের মিশ্রণ ব্যবহার করে তৈরি করা কংক্রিট ঘনককে মিঠাপানি ও ভিন্ন ঘনমাত্রার লবণাক্ত পানিতে পর্যায়ক্রমে এক, তিন, ছয় ও বারো মাস রেখে পর্যবেক্ষণ করেন।
এতে দেখা যায়, ৭০: ৩০ অনুপাতের সিমেন্ট ও স্ল্যাগের মিশ্রণটি সবচেয়ে ভালো ফল প্রদর্শন করে।
গবেষণায় দেখা যায়, ৩০ শতাংশ পর্যন্ত সিমেন্ট অপসারণ করে স্ল্যাগ ব্যবহার করলে লবণাক্ত পরিবেশে অধিক টেকসই ও শক্তিসম্পন্ন কংক্রিট পাওয়া যায়। তাই সামুদ্রিক পরিবেশে বিভিন্ন নির্মাণে স্ল্যাগ মিশ্রিত সিমেন্ট ব্যবহার বেশি উপযোগী বলেও মনে করেন গবেষকেরা। এ ছাড়া ৭০: ৩০ অনুপাতে ধাতুমল মিশ্রিত সিমেন্ট থেকে তৈরি করা কংক্রিট প্রায় তিন শতাংশ বেশি আলট্রাসনিক পালস ভেলোসিটি (অর্থাৎ, কংক্রিটের ঘণত্ব অধিক সুষম) বিশিষ্ট এবং চার শতাংশ বেশি ক্ষয়রোধী।
এই গবেষণার তত্ত্বাবধানে ছিলেন চুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক মো. সাইফুল ইসলাম ও সহযোগী অধ্যাপক মঈনুল ইসলাম।
মঈনুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘সিমেন্ট উৎপাদনে প্রচুর পরিমাণ গ্রিনহাউস গ্যাস উৎপন্ন হয়। সিমেন্টের ৩০ শতাংশ পর্যন্ত স্ল্যাগ দ্বারা অপসারণ করলে কম খরচে গ্রহণযোগ্য শক্তির কংক্রিট তৈরির পাশাপাশি পরিবেশ দূষণও কমানো সম্ভব বলে আমি মনে করি।’
No comments