হঠাৎ ডেঙ্গু, ১৫ দিনে আক্রান্ত দুই শতাধিক by ফরিদ উদ্দিন আহমেদ
হঠাৎ
করে রাজধানীতে ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়ে গেছে। প্রতিদিনই আক্রান্তের সংখ্যা
বেড়ে চলছে। ঘণ্টায় ঘণ্টায় ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগী আসছে হাসপাতালে। গত
২৪ ঘণ্টায় ২৪ জন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে রাজধানীর হাসপাতালগুলোতে ভর্তি
হয়েছেন। আর চলতি মাসে গড়ে প্রতিদিন ১৬ জন করে ডেঙ্গু রোগী হাসপাতাল ও
ক্লিনিকে ভর্তি হয়েছেন। জুন মাসে এই পর্যন্ত ২২৩ জন ডেঙ্গু রোগী চিহ্নিত
হয়েছেন। মে মাসেই ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১৫১ জন
রোগী। এবছর মারা গেছেন ২ জন।
চলতি বছরের এই পর্যন্ত ৪৮৬ ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়েছে বলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ন্যাশনাল ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম সূত্র জানিয়েছে। বর্তমানে ৬৭ জন রোগী বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি আছেন।
গত বছরের তুলনায় এবার আগেই ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী আসছেন হাসপাতালে। কারণ হিসেবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চলতি বছর হঠাৎ হঠাৎ বৃষ্টি হওয়ায় ডেঙ্গু বাড়ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জুন-জুলাই-আগস্ট মাসে ডেঙ্গুর মশার উপদ্রব বাড়ে। কিন্তু এবার যেহেতু আগেই বৃষ্টি হয়েছে তাই মশার উপদ্রব আগ থেকেই দেখা গেছে। থেমে থেমে বৃষ্টির কারণে বিভিন্ন স্থানে পানি জমে থাকে। জমে থাকা বৃষ্টির পানি থাকলে মশার প্রজনন বাড়ে। তাই বাড়ি বা বাড়ির আঙিনার কোথাও যেন পরিষ্কার পানি জমে না থাকে সে ব্যাপারে সচেতনও সতর্ক দৃষ্টি রাখার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, ডেঙ্গু আক্রান্তদের সম্পূর্ণ ভালো না হওয়া পর্যন্ত বিশ্রামে থাকতে হবে। এ ছাড়া যথেষ্ট পরিমাণে পানি, শরবত ও অন্যান্য তরল খাবার খেতে হবে। জ্বর কমানোর জন্য শুধু প্যারাসিটামল জাতীয় ব্যথার ওষুধ খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তারা। তবে অ্যাসপিরিন বা ডাইক্লোফেনাক জাতীয় ব্যথার ওষুধ খাওয়া যাবে না। এতে রক্তক্ষরণের ঝুঁকি তৈরি হতে পারে। ৪ থেকে ৫ দিন জ্বর থাকলে ঘরে বসে না থেকে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
রাজধানীর হাসপাতালগুলোতে বিশেষ করে বেসরকারি হাসপাতালে প্রচুর ডেঙ্গু রোগী আসছেন। রাজধানীর ধানমন্ডি সেন্ট্রাল হাসপাতালে ৮ জন, ইবনে সিনা হাসপাতালে ৪জন, মিটফোর্ড হাসপাতালে ১জন, হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট হাসপাতালে ৮ জন ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। কন্ট্রোল রুম সূত্র জানা গেছে, জানুয়ারিতে ৩৬ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। ফের্রুয়ারিতে এই সংখ্যা ছিল ১৭ জন, মার্চে ১৩ জন, এপ্রিলে ৪৫ জন, মে মাসে ১৫১ জন এবং ১৪ই জুন পর্যন্ত ২২৩ জন ডেঙ্গু রোগেআক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তবে ৬৭ জন ছাড়া অন্যরা রোগীরা সুস্থ হয়ে বাড়ি চলে গেছেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ডেঙ্গু অথবা চিকুনগুনিয়া জ্বরই হোক তা নিয়ন্ত্রণ করতে হলে মশার বিস্তার কমাতে হবে। এডিস মশার দুইটি প্রজাতি এডিস ইজিপ্টাই ও এডিস অ্যালবুপিকপকটাসের মাধ্যমে মানুষের মধ্যে ছড়াচ্ছেন আবার মানুষ থেকে মশার মাধ্যমে আসছে। পরে মশা থেকে আবার মানুষকে সংক্রমিত করছে। একবার ডেঙ্গু আক্রান্ত হলে বার বার ডেঙ্গু হওয়ার আশঙ্কা থাকে। অন্যান্য মশা ময়লা নোংরা পানিতে বংশ বিস্তার করলেও এডিস মশা এর ব্যতিক্রম, পরিষ্কার পানিতে ডিম ছাড়ে। সহজে চোখে পড়ে না এমন জায়গার পরিষ্কার পানিতে এ মশারা ডিম ছাড়ে। ফলে শহরে বিশেষ করে অভিজাত এলাকায় এডিস মশা বেশি দেখা যায়।
ডেঙ্গুর চিকিৎসা সম্বন্ধে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিনের অধ্যাপক খান আবুল কালাম আজাদ জানিয়েছেন, ডেঙ্গুজ্বর হলে প্রচুর পানি পান করতে হবে ও পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে হবে। জ্বর বাড়লে প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ অথবা আরো বেশি জ্বর হলে তা কমিয়ে রাখার জন্য সাপোজিটরি ব্যবহার করতে হবে। ডেঙ্গুর চিকিৎসা বাড়িতে রেখেও হতে পারে। বেশি দুর্বল বা শরীর পানিশূন্য হয়ে পড়লে, নাক ও দাঁত দিয়ে রক্ত ঝরতে থাকলে হাসপাতালে নেয়াই ভালো। ডেঙ্গুজ্বর সাধারণত ১০ দিনের মধ্যে সেরে যায়। কিন্তু দুর্বলতা আরো কিছু দিন থেকে যেতে পারে। ভাইরাসজনিত জ্বর বলে এর কোনো চিকিৎসা নেই। কেবল লক্ষ্মণ বুঝেই চিকিৎসা দিতে হবে।
এ বিষয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) মেডিসিন অনুষদের সাবেক ডিন অধ্যাপক ডা. এ বি এম আব্দুলাহ বলেন, মে জুন থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত ডেঙ্গু জ্বর হয়ে থাকে। শীতের সময়ে কমে আসবে। তিনি বলেন, এই সময়ে জ্বর বা গায়ে ব্যথা হলে ডেঙ্গুর কথা মাথায় রাখতে হবে। সাধারণ ডেঙ্গু জ্বর তেমন মারাত্মক রোগ নয়। ডেঙ্গু জ্বরের রোগীর যখন বাহ্যিক বা অভ্যন্তরীণ রক্তপাতের প্রমাণ মেলে (যেমন মাড়ি বা নাক থেকে রক্তক্ষরণ, মলের সঙ্গে রক্তক্ষরণ ইত্যাদি) তখন একে ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভার বলা হয়। অধিক রক্তক্ষরণের ফলে শরীরের জলীয় উপাদান কমে যায়। ডেঙ্গু জ্বর হলে প্রচুর পানি পান করতে হবে ও পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে হবে। জ্বর বাড়লে প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ অথবা আরো বেশি জ্বর হলে তা কমিয়ে রাখার জন্য সাপোজিটরি ব্যবহার করতে হবে।
ডেঙ্গু জ্বরের উৎস ও কারণ: চিকিৎসকরা জানান, ডেঙ্গু জ্বর একটি মশাবাহী রোগ। এই রোগের উৎস এডিস মশা। বছরের একটি নির্দিষ্ট সময়ে প্রধানত বর্ষার শুরুতে কিংবা শেষের দিকে এই রোগের প্রাদুর্ভাব বেশি ঘটে। এডিস ইজিপটাই ও এলবোপিকটাস নামক দুই প্রজাতির স্ত্রী মশা ডেঙ্গু জ্বরের বাহক। ডেঙ্গু ভাইরাসবাহী মশাটি যে সুস্থ মানুষকে কামড়াবে তার শরীরে ডেঙ্গু ভাইরাস সংক্রমিত হবে এবং ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হবেন ।
ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ ও করণীয়: জ্বর ১০৪ থেকে ১০৫ ডিগ্রি, মাথা ব্যথা, চোখের পিছনে ও হাড়ে প্রচণ্ড ব্যথা, চামড়ায় লালচে ছোয়া থাকে। রোগীকে প্রচুর পরিমাণে তরল খাবার খাওয়াতে হবে এবং মশারীর ভিতরে বিশ্রাম নিতে হবে। জ্বরে শুধুমাত্র প্যারাসিটামল ব্যবহার করা যেতে পারে। কোনো অবস্থাই এসপিরিন, এনএসএআইডি জাতীয় ওষুধ সেবন করা যাবে না। হেমোরেজিক ডেঙ্গু জ্বর ও ডেঙ্গু শক্সিনড্রোম হলে দাঁতের মাড়ি, নাক, মুখ ও পায়খানার রাস্তা দিয়ে রক্তপাত হতে পারে। সেক্ষেত্রে রোগীকে দ্রুত নিকটস্থ হাসপাতালে নিতে হবে।
এডিস মশার বিশেষ বৈশিষ্ট্য: এডিস মশা সাধারণত বাড়ির ভিতরে ফুলের টব, এসি ও ফ্রিজের তলায় ও আশে পাশে পরিত্যক্ত টায়ার, ডাবের খোসা, জমাকৃত পানিতে ডিম পাড়ে। এ মশা সাধারণত দিনের বেলায় সূর্যোদরের পর এবং সূর্যাস্তের পূর্বে কামড়ায়।
প্রতিরোধ: মশার বিস্তার রোধে ফুলের টব, পরিত্যক্ত টায়ার, ডাবের খোসা, এসি ও ফ্রিজের তলায় ইত্যাদিতে পানি জমি থাকতে দেয়া যাবে না। বাড়ির আঙিনা, নির্মাণাধীন ভবনে পানির চৌবাচ্চা নিয়মিত পরিষ্কার রাখতে হবে। দিনেও ঘুমানোর সময় মশারী ব্যবহার করতে হবে। রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট( আইইডিসিআর) এই সেচতন বার্তা দিয়েছে।
স্থাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ২০১৮ সালে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছিল ১০ হাজার ১৪৮ জন। মারা গেছে ২৬জন। ২০১৭ সালে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন ২ হাজার ৭৬৯ জন। মারা গেছেন ৮ জন। ২০১৬ সালে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন ৬০৬০ জন, মারা গেছে ১৪ জন। ২০১৫ সালে আক্রান্ত হয়েছেন ৩ হাজার ১৬২জন, মারা গেছে ছয়জন। ২০১৪ সালে ডেঙ্গতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৩৭৩ জন। কেউ মারে যাননি। ২০১৩ সালে ১৪৭৮ জন, ২০১২ সালে ১২৮৬ জন ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। ২০১১ সালে ১৩৬২ জন আক্রান্ত হয়েছেন। ২০১০ সালে ৪০৯ জন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হন। এই সালে ছয়জন রোগীর মৃত্যু হয়েছে। ২০০৯ সালে ৪৭৪ জন, ২০০৮ সালে ১১৫৩ জন ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত রোগী হাসপাতলে আসেন।
চলতি বছরের এই পর্যন্ত ৪৮৬ ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়েছে বলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ন্যাশনাল ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম সূত্র জানিয়েছে। বর্তমানে ৬৭ জন রোগী বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি আছেন।
গত বছরের তুলনায় এবার আগেই ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী আসছেন হাসপাতালে। কারণ হিসেবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চলতি বছর হঠাৎ হঠাৎ বৃষ্টি হওয়ায় ডেঙ্গু বাড়ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জুন-জুলাই-আগস্ট মাসে ডেঙ্গুর মশার উপদ্রব বাড়ে। কিন্তু এবার যেহেতু আগেই বৃষ্টি হয়েছে তাই মশার উপদ্রব আগ থেকেই দেখা গেছে। থেমে থেমে বৃষ্টির কারণে বিভিন্ন স্থানে পানি জমে থাকে। জমে থাকা বৃষ্টির পানি থাকলে মশার প্রজনন বাড়ে। তাই বাড়ি বা বাড়ির আঙিনার কোথাও যেন পরিষ্কার পানি জমে না থাকে সে ব্যাপারে সচেতনও সতর্ক দৃষ্টি রাখার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, ডেঙ্গু আক্রান্তদের সম্পূর্ণ ভালো না হওয়া পর্যন্ত বিশ্রামে থাকতে হবে। এ ছাড়া যথেষ্ট পরিমাণে পানি, শরবত ও অন্যান্য তরল খাবার খেতে হবে। জ্বর কমানোর জন্য শুধু প্যারাসিটামল জাতীয় ব্যথার ওষুধ খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তারা। তবে অ্যাসপিরিন বা ডাইক্লোফেনাক জাতীয় ব্যথার ওষুধ খাওয়া যাবে না। এতে রক্তক্ষরণের ঝুঁকি তৈরি হতে পারে। ৪ থেকে ৫ দিন জ্বর থাকলে ঘরে বসে না থেকে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
রাজধানীর হাসপাতালগুলোতে বিশেষ করে বেসরকারি হাসপাতালে প্রচুর ডেঙ্গু রোগী আসছেন। রাজধানীর ধানমন্ডি সেন্ট্রাল হাসপাতালে ৮ জন, ইবনে সিনা হাসপাতালে ৪জন, মিটফোর্ড হাসপাতালে ১জন, হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট হাসপাতালে ৮ জন ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। কন্ট্রোল রুম সূত্র জানা গেছে, জানুয়ারিতে ৩৬ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। ফের্রুয়ারিতে এই সংখ্যা ছিল ১৭ জন, মার্চে ১৩ জন, এপ্রিলে ৪৫ জন, মে মাসে ১৫১ জন এবং ১৪ই জুন পর্যন্ত ২২৩ জন ডেঙ্গু রোগেআক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তবে ৬৭ জন ছাড়া অন্যরা রোগীরা সুস্থ হয়ে বাড়ি চলে গেছেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ডেঙ্গু অথবা চিকুনগুনিয়া জ্বরই হোক তা নিয়ন্ত্রণ করতে হলে মশার বিস্তার কমাতে হবে। এডিস মশার দুইটি প্রজাতি এডিস ইজিপ্টাই ও এডিস অ্যালবুপিকপকটাসের মাধ্যমে মানুষের মধ্যে ছড়াচ্ছেন আবার মানুষ থেকে মশার মাধ্যমে আসছে। পরে মশা থেকে আবার মানুষকে সংক্রমিত করছে। একবার ডেঙ্গু আক্রান্ত হলে বার বার ডেঙ্গু হওয়ার আশঙ্কা থাকে। অন্যান্য মশা ময়লা নোংরা পানিতে বংশ বিস্তার করলেও এডিস মশা এর ব্যতিক্রম, পরিষ্কার পানিতে ডিম ছাড়ে। সহজে চোখে পড়ে না এমন জায়গার পরিষ্কার পানিতে এ মশারা ডিম ছাড়ে। ফলে শহরে বিশেষ করে অভিজাত এলাকায় এডিস মশা বেশি দেখা যায়।
ডেঙ্গুর চিকিৎসা সম্বন্ধে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিনের অধ্যাপক খান আবুল কালাম আজাদ জানিয়েছেন, ডেঙ্গুজ্বর হলে প্রচুর পানি পান করতে হবে ও পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে হবে। জ্বর বাড়লে প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ অথবা আরো বেশি জ্বর হলে তা কমিয়ে রাখার জন্য সাপোজিটরি ব্যবহার করতে হবে। ডেঙ্গুর চিকিৎসা বাড়িতে রেখেও হতে পারে। বেশি দুর্বল বা শরীর পানিশূন্য হয়ে পড়লে, নাক ও দাঁত দিয়ে রক্ত ঝরতে থাকলে হাসপাতালে নেয়াই ভালো। ডেঙ্গুজ্বর সাধারণত ১০ দিনের মধ্যে সেরে যায়। কিন্তু দুর্বলতা আরো কিছু দিন থেকে যেতে পারে। ভাইরাসজনিত জ্বর বলে এর কোনো চিকিৎসা নেই। কেবল লক্ষ্মণ বুঝেই চিকিৎসা দিতে হবে।
এ বিষয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) মেডিসিন অনুষদের সাবেক ডিন অধ্যাপক ডা. এ বি এম আব্দুলাহ বলেন, মে জুন থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত ডেঙ্গু জ্বর হয়ে থাকে। শীতের সময়ে কমে আসবে। তিনি বলেন, এই সময়ে জ্বর বা গায়ে ব্যথা হলে ডেঙ্গুর কথা মাথায় রাখতে হবে। সাধারণ ডেঙ্গু জ্বর তেমন মারাত্মক রোগ নয়। ডেঙ্গু জ্বরের রোগীর যখন বাহ্যিক বা অভ্যন্তরীণ রক্তপাতের প্রমাণ মেলে (যেমন মাড়ি বা নাক থেকে রক্তক্ষরণ, মলের সঙ্গে রক্তক্ষরণ ইত্যাদি) তখন একে ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভার বলা হয়। অধিক রক্তক্ষরণের ফলে শরীরের জলীয় উপাদান কমে যায়। ডেঙ্গু জ্বর হলে প্রচুর পানি পান করতে হবে ও পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে হবে। জ্বর বাড়লে প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ অথবা আরো বেশি জ্বর হলে তা কমিয়ে রাখার জন্য সাপোজিটরি ব্যবহার করতে হবে।
ডেঙ্গু জ্বরের উৎস ও কারণ: চিকিৎসকরা জানান, ডেঙ্গু জ্বর একটি মশাবাহী রোগ। এই রোগের উৎস এডিস মশা। বছরের একটি নির্দিষ্ট সময়ে প্রধানত বর্ষার শুরুতে কিংবা শেষের দিকে এই রোগের প্রাদুর্ভাব বেশি ঘটে। এডিস ইজিপটাই ও এলবোপিকটাস নামক দুই প্রজাতির স্ত্রী মশা ডেঙ্গু জ্বরের বাহক। ডেঙ্গু ভাইরাসবাহী মশাটি যে সুস্থ মানুষকে কামড়াবে তার শরীরে ডেঙ্গু ভাইরাস সংক্রমিত হবে এবং ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হবেন ।
ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ ও করণীয়: জ্বর ১০৪ থেকে ১০৫ ডিগ্রি, মাথা ব্যথা, চোখের পিছনে ও হাড়ে প্রচণ্ড ব্যথা, চামড়ায় লালচে ছোয়া থাকে। রোগীকে প্রচুর পরিমাণে তরল খাবার খাওয়াতে হবে এবং মশারীর ভিতরে বিশ্রাম নিতে হবে। জ্বরে শুধুমাত্র প্যারাসিটামল ব্যবহার করা যেতে পারে। কোনো অবস্থাই এসপিরিন, এনএসএআইডি জাতীয় ওষুধ সেবন করা যাবে না। হেমোরেজিক ডেঙ্গু জ্বর ও ডেঙ্গু শক্সিনড্রোম হলে দাঁতের মাড়ি, নাক, মুখ ও পায়খানার রাস্তা দিয়ে রক্তপাত হতে পারে। সেক্ষেত্রে রোগীকে দ্রুত নিকটস্থ হাসপাতালে নিতে হবে।
এডিস মশার বিশেষ বৈশিষ্ট্য: এডিস মশা সাধারণত বাড়ির ভিতরে ফুলের টব, এসি ও ফ্রিজের তলায় ও আশে পাশে পরিত্যক্ত টায়ার, ডাবের খোসা, জমাকৃত পানিতে ডিম পাড়ে। এ মশা সাধারণত দিনের বেলায় সূর্যোদরের পর এবং সূর্যাস্তের পূর্বে কামড়ায়।
প্রতিরোধ: মশার বিস্তার রোধে ফুলের টব, পরিত্যক্ত টায়ার, ডাবের খোসা, এসি ও ফ্রিজের তলায় ইত্যাদিতে পানি জমি থাকতে দেয়া যাবে না। বাড়ির আঙিনা, নির্মাণাধীন ভবনে পানির চৌবাচ্চা নিয়মিত পরিষ্কার রাখতে হবে। দিনেও ঘুমানোর সময় মশারী ব্যবহার করতে হবে। রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট( আইইডিসিআর) এই সেচতন বার্তা দিয়েছে।
স্থাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ২০১৮ সালে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছিল ১০ হাজার ১৪৮ জন। মারা গেছে ২৬জন। ২০১৭ সালে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন ২ হাজার ৭৬৯ জন। মারা গেছেন ৮ জন। ২০১৬ সালে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন ৬০৬০ জন, মারা গেছে ১৪ জন। ২০১৫ সালে আক্রান্ত হয়েছেন ৩ হাজার ১৬২জন, মারা গেছে ছয়জন। ২০১৪ সালে ডেঙ্গতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৩৭৩ জন। কেউ মারে যাননি। ২০১৩ সালে ১৪৭৮ জন, ২০১২ সালে ১২৮৬ জন ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। ২০১১ সালে ১৩৬২ জন আক্রান্ত হয়েছেন। ২০১০ সালে ৪০৯ জন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হন। এই সালে ছয়জন রোগীর মৃত্যু হয়েছে। ২০০৯ সালে ৪৭৪ জন, ২০০৮ সালে ১১৫৩ জন ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত রোগী হাসপাতলে আসেন।
No comments