ভারতে চাপের মুখে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা by অরিত্রী দাস
ভারতের
বৃহত্তম রাজ্য উত্তর প্রদেশে একটি টুইট ও একটি গল্পের জন্য পুলিশ চার
সাংবাদিককে গ্রেফতার করেছে। সংবাদ সংস্থা ও অন্য সমালোচকেরা একে ভারতের কথা
বলার স্বাধীনতার প্রতি ক্রমবর্ধমান হুমকি হিসেবে মনে করছেন। কথা বলার
স্বাধীনতা একটি সাংবিধানিক অধিকার হলেও ভারতজুড়েই ভিন্নমত ও ভিন্ন মতামতের
প্রতি সরকারের ক্রমবর্ধমান অসহিষ্ণুতা দেখা যাচ্ছে।
উত্তর প্রদেশ পুলিশ ৮ জানুয়ারি ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক প্রশান্ত কানোজিয়া; নয়ডাভিত্তি নিউজ চ্যানেল ন্যাশন লাইভের প্রধান ইশিকা সিং; ও চ্যানেলটির অন্যতম সম্পাদক অনুজ শুক্লাকে গ্রেফতার করে। ১০ জানুয়ারি পুলিশ নিউজ চ্যানেলটির আরেক সম্পাদক অনুশুল কৌশিককে গ্রেফতার করে। চারজনের বিরুদ্ধেই তারা একটি ‘আপত্তিকর বিষয়’ তথা এক বিতর্কিত নারীর ভিডিও প্রকাশ করেছেন। ওই নারী দাবি করেছেন, তিনি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী অজয় সিং বিস্তের কাছে (যোগী অদিত্যনাথ নামে পরিচিত) বিবাহের প্রস্তাব পাঠিয়েছেন।
স্থানীয় আদালত সিং ও শুক্লার জামিন দিতে অস্বীকার করলেও মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্ট উত্তর প্রদেশের পুলিশকে কানোজিয়াকে মুক্তির নির্দেশ দিয়ে জানায় পুলিশ উদার মত প্রকাশ করতে বাধা দিয়েছে, ‘বাড়াবাড়ি’ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। দুই সদস্যবিশিষ্ট বেঞ্চের প্রধান বিচারপতি ইন্দিরা ব্যানার্জি বলেন, আমরা তার পোস্টের প্রকৃতি অনুমোদন করতে নাও পরি, কিন্তু তার গ্রেফতার নিয়ে উদ্বিগ্ন। এই জাতির একটি সংবিধান আছে। এভাবে স্বাধীনতাকে দমন করা যায় না।
বিস্ত মামলায় মিডিয়া ব্যক্তিত্বদের গ্রেফতারের নিন্দা করেছে ভারতের এডিটর্স গিল্ড। তাদের মতে, এই গ্রেফতারের উদ্দেশ্য হলো মিডিয়াকে ভয় দেখানো ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার শ্বাসরোধ করা। ওই নারীর দাবি সত্য বা মিথ্যা যাই হোক না কেন, তার মতামত সামাজিক মাধ্যম ও টেলিভিশনে প্রচার করার জন্য সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা করা আইনের অপব্যবহার।
মুখ্যমন্ত্রী বিস্তের মানহানি করার জন্য আরো কয়েকজন বেসামরিক নাগরিককে গ্রেফতার করা হয়েছে। দেশজুড়ে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ওপর যে দমন অভিযান চলছে, এটি তার একটি উদারহণ মাত্র।
একটি সাম্প্রতিক উদারহণ হলো: মঙ্গলবার রেলওয়ে পুলিশ উত্তর প্রদেশের শামলি জেলায় এক সাংবাদিককে প্রহার করে। ওই সাংবাদিক গিয়েছিলেন একটি রেল দুর্ঘটনা কভার করতে। পুলিশ কর্মকর্তারা তার মুখে প্রস্রাব করে দেয় বলে খবরে প্রকাশ।
চলতি বছর ১৮০টি দেশের মধ্যে সংবাদপত্রের স্বাধীনতার দিক থেকে ভারতের ১৪০-তম স্থানে থাকাটা তাই অপ্রত্যাশিত কিছু নয়।
মতপ্রকাশের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে যুদ্ধ
রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি, কৌতুক শেয়ার করার জন্য গ্রেফতারের এসব ঘটনা নাগরিকদের মধ্যে ভয়ের সৃষ্টি করেছে। গত বছরের আগস্টে উত্তর প্রদেশ পুলিশ মুসলিম ধর্মাবলম্বী ১৬ বছরের এক বালককে গ্রেফতার করে। ওই দিনই সাবেক প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারি বাজপেয়ি পরলোকগমন করেছিলেন। ওই কিশোর বাজপেয়ির প্রতি তার ক্ষোভ প্রকাশ করেছিল ফেসবুকে। বালকটির অভিযোগ ছিল, বাজপেয়ি অযোধ্যার বাবরি মসজিদ ভাঙ্গার সাথে জড়িত ছিলেন।
তার পোস্টটি ভাইরাল হয়েছিল, বিশেষ করে উগ্র হিন্দু জাতীয়তাবাদীদের মধ্যে। ফলে ছেলেটিকে ৩৯ দিন হেফাজতে থাকতে হয়। ছেলেটি জানায়, পরে তার সব অমুসলিম বন্ধু তাকে পরিহার করে। আগে সামাজিক মাধ্যমে সোচ্চার ছেলেটি এখন চুপ হয়ে গেছে। সে ও তার পরিবার অনলাইনে কোনো ধরনের মন্তব্য করছে না।
অপর রাজ্য কেরালাতেও কথা বলার স্বাধীনতার ওপর দমনপীড়নের প্রমাণ পাওয়া গেছে।
সাম্প্রতিক তথ্যে দেখা গেছে, কেরালার মুখ্যমন্ত্রী পিনারায়ি বিজায়নের বিরুদ্ধে সামাজিক মাধ্যমে সমালোচনা করার কারণে গত তিন বছরে ১১৯ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সরকারই এ তথ্য প্রকাশ করেছে।
রাজ্য সরকার বুধবার স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান কেরালা ললিত কলা একাডেমিকে অনুরোধ করেছে জনৈক কার্টুনিস্টকে সম্মানিত করার সিদ্ধান্ত পুনঃবিবেচনা করার। তিনি ধর্ষণে অভিযুক্ত বিশপ ফ্রাঙ্গো মুলাকলের ওপর একটি ক্যারিক্যাচার অঙ্কন করেছিলেন। সরকারি এই পদক্ষেপের বিরুদ্ধে খ্রিস্টান পুরোহিতদের একটি অংশ প্রতিবাদ জানিয়েছে।
কর্নাটকের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী এইচ ডি দেব গৌড়া ও তার পরিবার নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে একটি ভিডিও প্রকাশের পর ১১ জুন দুই ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়।
পশ্চিমবঙ্গে সুপ্রিম কোর্ট মে মাসে বিজেপির যুব শাখার কর্মী প্রিয়াঙ্কা শর্মাকে জামিন দিয়েছে। সামাজিক মাধ্যমে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির বিকৃত ছবি প্রকাশ করায় তার বিরুদ্ধে মানহানির মামলা দায়ের করা হয়েছে।
আইনের অপব্যবহার
আরো কয়েকটি দেশের মতো ভারতকেও অনেকে বিবেচনা করে মতপ্রকাশের ওপর যৌক্তিক বিধিনিষেধের দেশ। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কিছু গ্রেফতারে কেবল কথা বলার স্বাধীনতাই খর্ব হয়েছে বলে দেখা যাচ্ছে না সেইসাথে রাজনৈতিক এস্টাবলিশমেন্টের বিরুদ্ধে বিদ্রূপ করা বা চ্যালেঞ্জ করলেই তা বরদাস্ত করা হচ্ছে না।
সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ধারা ৫০০ ও ধারা ৫০১-এর অধীনে মামলা করা হচ্ছে। এছাড়া তথ্য প্রযুক্তি আইনের বলেও তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হচ্ছে। এখানেই শেষ নয়, আরো নানা ধারায় মামলায় ফেলে মতপ্রকাশের পথ বন্ধ করা হচ্ছে।
উত্তর প্রদেশ পুলিশ ৮ জানুয়ারি ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক প্রশান্ত কানোজিয়া; নয়ডাভিত্তি নিউজ চ্যানেল ন্যাশন লাইভের প্রধান ইশিকা সিং; ও চ্যানেলটির অন্যতম সম্পাদক অনুজ শুক্লাকে গ্রেফতার করে। ১০ জানুয়ারি পুলিশ নিউজ চ্যানেলটির আরেক সম্পাদক অনুশুল কৌশিককে গ্রেফতার করে। চারজনের বিরুদ্ধেই তারা একটি ‘আপত্তিকর বিষয়’ তথা এক বিতর্কিত নারীর ভিডিও প্রকাশ করেছেন। ওই নারী দাবি করেছেন, তিনি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী অজয় সিং বিস্তের কাছে (যোগী অদিত্যনাথ নামে পরিচিত) বিবাহের প্রস্তাব পাঠিয়েছেন।
স্থানীয় আদালত সিং ও শুক্লার জামিন দিতে অস্বীকার করলেও মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্ট উত্তর প্রদেশের পুলিশকে কানোজিয়াকে মুক্তির নির্দেশ দিয়ে জানায় পুলিশ উদার মত প্রকাশ করতে বাধা দিয়েছে, ‘বাড়াবাড়ি’ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। দুই সদস্যবিশিষ্ট বেঞ্চের প্রধান বিচারপতি ইন্দিরা ব্যানার্জি বলেন, আমরা তার পোস্টের প্রকৃতি অনুমোদন করতে নাও পরি, কিন্তু তার গ্রেফতার নিয়ে উদ্বিগ্ন। এই জাতির একটি সংবিধান আছে। এভাবে স্বাধীনতাকে দমন করা যায় না।
বিস্ত মামলায় মিডিয়া ব্যক্তিত্বদের গ্রেফতারের নিন্দা করেছে ভারতের এডিটর্স গিল্ড। তাদের মতে, এই গ্রেফতারের উদ্দেশ্য হলো মিডিয়াকে ভয় দেখানো ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার শ্বাসরোধ করা। ওই নারীর দাবি সত্য বা মিথ্যা যাই হোক না কেন, তার মতামত সামাজিক মাধ্যম ও টেলিভিশনে প্রচার করার জন্য সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা করা আইনের অপব্যবহার।
মুখ্যমন্ত্রী বিস্তের মানহানি করার জন্য আরো কয়েকজন বেসামরিক নাগরিককে গ্রেফতার করা হয়েছে। দেশজুড়ে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ওপর যে দমন অভিযান চলছে, এটি তার একটি উদারহণ মাত্র।
একটি সাম্প্রতিক উদারহণ হলো: মঙ্গলবার রেলওয়ে পুলিশ উত্তর প্রদেশের শামলি জেলায় এক সাংবাদিককে প্রহার করে। ওই সাংবাদিক গিয়েছিলেন একটি রেল দুর্ঘটনা কভার করতে। পুলিশ কর্মকর্তারা তার মুখে প্রস্রাব করে দেয় বলে খবরে প্রকাশ।
চলতি বছর ১৮০টি দেশের মধ্যে সংবাদপত্রের স্বাধীনতার দিক থেকে ভারতের ১৪০-তম স্থানে থাকাটা তাই অপ্রত্যাশিত কিছু নয়।
মতপ্রকাশের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে যুদ্ধ
রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি, কৌতুক শেয়ার করার জন্য গ্রেফতারের এসব ঘটনা নাগরিকদের মধ্যে ভয়ের সৃষ্টি করেছে। গত বছরের আগস্টে উত্তর প্রদেশ পুলিশ মুসলিম ধর্মাবলম্বী ১৬ বছরের এক বালককে গ্রেফতার করে। ওই দিনই সাবেক প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারি বাজপেয়ি পরলোকগমন করেছিলেন। ওই কিশোর বাজপেয়ির প্রতি তার ক্ষোভ প্রকাশ করেছিল ফেসবুকে। বালকটির অভিযোগ ছিল, বাজপেয়ি অযোধ্যার বাবরি মসজিদ ভাঙ্গার সাথে জড়িত ছিলেন।
তার পোস্টটি ভাইরাল হয়েছিল, বিশেষ করে উগ্র হিন্দু জাতীয়তাবাদীদের মধ্যে। ফলে ছেলেটিকে ৩৯ দিন হেফাজতে থাকতে হয়। ছেলেটি জানায়, পরে তার সব অমুসলিম বন্ধু তাকে পরিহার করে। আগে সামাজিক মাধ্যমে সোচ্চার ছেলেটি এখন চুপ হয়ে গেছে। সে ও তার পরিবার অনলাইনে কোনো ধরনের মন্তব্য করছে না।
অপর রাজ্য কেরালাতেও কথা বলার স্বাধীনতার ওপর দমনপীড়নের প্রমাণ পাওয়া গেছে।
সাম্প্রতিক তথ্যে দেখা গেছে, কেরালার মুখ্যমন্ত্রী পিনারায়ি বিজায়নের বিরুদ্ধে সামাজিক মাধ্যমে সমালোচনা করার কারণে গত তিন বছরে ১১৯ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সরকারই এ তথ্য প্রকাশ করেছে।
রাজ্য সরকার বুধবার স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান কেরালা ললিত কলা একাডেমিকে অনুরোধ করেছে জনৈক কার্টুনিস্টকে সম্মানিত করার সিদ্ধান্ত পুনঃবিবেচনা করার। তিনি ধর্ষণে অভিযুক্ত বিশপ ফ্রাঙ্গো মুলাকলের ওপর একটি ক্যারিক্যাচার অঙ্কন করেছিলেন। সরকারি এই পদক্ষেপের বিরুদ্ধে খ্রিস্টান পুরোহিতদের একটি অংশ প্রতিবাদ জানিয়েছে।
কর্নাটকের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী এইচ ডি দেব গৌড়া ও তার পরিবার নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে একটি ভিডিও প্রকাশের পর ১১ জুন দুই ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়।
পশ্চিমবঙ্গে সুপ্রিম কোর্ট মে মাসে বিজেপির যুব শাখার কর্মী প্রিয়াঙ্কা শর্মাকে জামিন দিয়েছে। সামাজিক মাধ্যমে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির বিকৃত ছবি প্রকাশ করায় তার বিরুদ্ধে মানহানির মামলা দায়ের করা হয়েছে।
আইনের অপব্যবহার
আরো কয়েকটি দেশের মতো ভারতকেও অনেকে বিবেচনা করে মতপ্রকাশের ওপর যৌক্তিক বিধিনিষেধের দেশ। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কিছু গ্রেফতারে কেবল কথা বলার স্বাধীনতাই খর্ব হয়েছে বলে দেখা যাচ্ছে না সেইসাথে রাজনৈতিক এস্টাবলিশমেন্টের বিরুদ্ধে বিদ্রূপ করা বা চ্যালেঞ্জ করলেই তা বরদাস্ত করা হচ্ছে না।
সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ধারা ৫০০ ও ধারা ৫০১-এর অধীনে মামলা করা হচ্ছে। এছাড়া তথ্য প্রযুক্তি আইনের বলেও তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হচ্ছে। এখানেই শেষ নয়, আরো নানা ধারায় মামলায় ফেলে মতপ্রকাশের পথ বন্ধ করা হচ্ছে।
No comments