দুই দলের বিতর্কে উত্তপ্ত সংসদ
জাতীয়
সংসদে সম্পূরক বাজেটের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে সরকারী দল আওয়ামী লীগ ও
বিএনপি সদস্যরা বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন। এসময় উত্তপ্ত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।
বিএনপির সদস্যরা দাবি করেন, বর্তমান সংসদের কেউ জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত নন। নির্বাচনে ৩০০ আসন লুট করা হয়েছে।
অন্যদিকে বিএনপির কঠোর সমালোচনা করে সরকার ও বিরোধী দল জাপার সদস্যরা বলেন, নির্বাচনকে বিতর্কিত করার অনেক ষড়যন্ত্র হয়েছে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কৌশলী ও উদারনীতির কারণে তাদের সেই ষড়যন্ত্র ব্যর্থ হয়ে গেছে। সংসদে শপথ নিয়ে, সকল সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করে আবার সংসদকে অবৈধ বলা বিএনপির নির্লজ্জতা ও দ্বি-চারিতা ছাড়া আর কিছুই নয়।
রোববার সংসদ অধিবেশনে ২০১৮-১৯ অর্থবছরের সম্পূরক বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে এমন উত্তপ্ত বাক-বিতন্ডায় জড়িয়ে পড়েন তারা। পরে ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বি বিএনপির ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানার সকল অসংসদীয় বক্তব্য এক্সপাঞ্জ করার ঘোষণা দেন।
সম্পূরক বাজেটের ওপর আলোচনায় অংশ নেন, সাবেক কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী, কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক, সাবেক বাণিজ্য মন্ত্রী লে. কর্ণেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান, প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, সাবেক চিফ হুইপ উপাধ্যক্ষ আবদুস শহীদ, বিরোধী দল জাতীয় পার্টির কাজী ফিরোজ রশিদ, ফখরুল ইমাম, পীর ফজলুর রহমান, ডা. রুস্তম আলী ফরাজী, গণফোরামের মোকাব্বির খান এবং বিএনপির হারুনুর রশীদ, ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা ও মোশারফ হোসেন ভুঁইয়া।
আলোচনায় অংশ নিয়ে বেগম মতিয়া চৌধুরী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অক্লান্ত পরিশ্রম ও বিশ্বনেতৃত্বের গুণেই বাংলাদেশ আজ সবদিক থেকে এগিয়ে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে মোট ৩৭ মন্ত্রণালয়ের বাজেট বৃদ্ধি, ২৫টির হ্রাস। আজ কেউ কেউ উন্নয়ন দেখে না। ওনারা চোখ থাকতেও অন্ধ। তারা পদ্মা সেতু দেখতে পারেন না, শিক্ষার হার, গড় আয়ু, মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি পেয়েছে, দেশ খাদ্য স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছে, কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পেয়েছে- এসব তারা দেখতে পারেন না। তাই এসব জ্ঞানপাপীরা কী বললো তাতে জনগণের কিছু আসে যায় না। দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবেই এটিই বাস্তবতা।
নির্বাচন কমিশনের ব্যয় বৃদ্ধি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, গত নির্বাচনকে বিতর্কিত করার অনেক ষড়যন্ত্র হয়েছে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কৌশলী ও উদারনীতির কারণে তারা সেটা পারেনি।
বিএনপির নেতাদের উদ্দেশ্যে করে তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, সংসদ অবৈধ হলে সংসদে আসলেন কেন? মুখে অবৈধ বলবেন, শপথ নেবেন, সংসদের সকল সুযোগ-সুবিধা নেবেন- এটা কেমন কথা? সংসদে গণতন্ত্রের চর্চাই ভাল। নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয়েছে বলেই সংসদে সকল বিরোধী দলও অংশ নিয়েছেন।
কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক বিএনপি নেতাদের বক্তব্যের সমালোচনা করে বলেন, আন্দোলনের নামে অগ্নিসন্ত্রাসের মাধ্যমে বিএনপি শত শত মানুষকে পুড়িয়ে পুড়িয়ে হত্যা করেছে। সারাদেশে ভয়াল নাশকতা চালিয়েছে। যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষায় বিএনপি নেতারা নানা হুমকি দিয়েছে। বিএনপি নেত্রী দুর্নীতি করেছেন, আদালতের রায়ে দন্ডিত হয়েছেন। সেখানে সরকারের কী অপরাধ? বর্তমান সরকার জনগণের ভোটে ও সমর্থন নিয়ে ক্ষমতায় রয়েছে। জনগণ থেকে আপনারা (বিএনপি) প্রত্যাখ্যাত হয়েছেন।
তিনি বলেন, বিএনপির অনেকে এখনও জিয়াকে স্বাধীনতার ঘোষণা বলতে চান। কিন্তু কট্টর বিএনপি-জামায়াত যাদের ঘাড়ে এখনও পাকিস্তানের ভূত চেপে বসে আছে, তারাও যদি বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী পড়েন, তারাও স্বীকার করতে বাধ্য হবেন স্বাধীনতার ঘোষণাসহ প্রতিটি কর্মকান্ডে রয়েছে একটিমাত্র নাম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
স্বাধীনতা দীর্ঘ আন্দোলন ও ২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণার আগে দেশের কেউই জিয়াউর রহমানের নামটি পর্যন্ত জানতো না। আমি ছাত্রলীগের একজন সক্রিয়কর্মী হিসেবে স্বাধীকার আন্দোলনের একজন কর্মী হয়েও জিয়ার নাম কখনো শুনিনি।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য লে. কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান, বাংলাদেশের যেদিকেই তাকাই চারিদিকে শুধু উন্নয়ন ও অগ্রগতি। সারাবিশ্ব প্রতিটি সেক্টরে এই উন্নয়নের কথা স্বীকার করেছেন। পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে সৎ, কর্মঠ ও পরিশ্রমী ৫ প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে শেখ হাসিনা অন্যতম। সরকারের পরিকল্পনা তৃণমুলে শতভাগ বাস্তবায়ন হয়েছে।
তিনি বলেন, গত ১০ বছরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের দেয়া বাজেট গোটা দেশের চিত্রকেই পাল্টে দিয়েছে। প্রতিটি মানুষের ঘরে ঘরে এখন বিদ্যুতের আলো। জ্ঞানভিত্তিক ও প্রযুক্তিভিত্তিক সমাজ বিএনপি বিশ্বাস করে না বলেই তারা সাবমেরিন কেবলের সঙ্গে যুক্ত হননি। বিএনপির মুখে সমালোচনা মানায় না। কারণ তাদের সময় দেশে কোনই উন্নয়ন হয়নি।
প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, সংসদে বিএনপির চরম মিথ্যাচার ও অসংসদীয় উস্কানীমূলক বক্তব্যেই প্রমাণ করে বাজেট নিয়ে তাদের অন্য কোন কথা নেই। তাদের খুন, দুর্নীতি, অগ্নিসন্ত্রাস ও দুঃশাসনের কারণেই গত নির্বাচনে দেশের জনগণ বিএনপিকে প্রত্যাখ্যান করেছে। তারা বিরোধী দলের আসনেও বসার সুযোগ পায়নি। বাংলাদেশের মানুষ অস্ত্র চোরাকারবারী, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলাকারী সন্ত্রাসী তারেক রহমানকেও প্রত্যাখ্যান করেছে।
জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, বিএনপির এক নেতা নিজেকে ঈমানদার দাবি করেছেন। যদি তাই হয় তবে শেখ হাসিনা পদ্মা সেতু করছেন, মেট্টোরেল করছেন, বড় মহাসড়কগুলো ৪ লেনে উন্নীত হচ্ছে এসব কথা সংসদে বলুন, সত্যকে সত্য বলুন। বিনা ভোটে সংসদে এসে সংসদকে অবৈধ বলা ঠিক হয়নি। আমরা সবাই নির্বাচন করে জনগণের ভোট নিয়ে এসেছি।
জাতীয় পার্টির ফখরুল ইমাম বলেন, ৭৮ ভাগ বাজেট গত বছর বাস্তবায়ন করতে পারেনি সরকার। প্রতি বছরই বাজেট বাস্তবায়নের হার কমছে। আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। ব্যাংকে টাকা নেই, সব টাকা ঋণখেলাপীদের কাছে। ২২ হাজার কোটি টাকা মুলধন ঘাটতি। দেড় লাখ কোটি টাকা ঋণখেলাপী হলে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো টিকবে কীভাবে? নির্দেশের পরও ব্যাংকের সুদের হার কমে না এতো স্পর্ধা পায় কোথায়? বিদ্যুত উৎপাদন বৃদ্ধি পেলেও এই খাতে ১০ হাজার কোটি টাকা ক্ষতি হচ্ছে। দেশের অর্থনীতি চাঙ্গা হলে ঋণখেলাপীরা টাকা ফেরত দিচ্ছেন না কেন?
বিএনপি নেতার বক্তব্যের জবাবে পীর ফজলুর রহমান বলেন, এই সংসদ অবৈধ হলে তারা (বিএনপি) আসেন কিভাবে? সংসদে থাকা আপনারা সবাই তো অবৈধ। সংসদ কখনো অবৈধ হতে পারে না, ব্যর্থতা থাকলে সেটা বিএনপির। সংসদ বৈধ বলেই তারা শপথ নিয়েছেন, কথা বলছেন। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানই বঙ্গবন্ধু হত্যা বিচার বন্ধে ইনডেমনিটি দিয়েছিলেন। কেননা বঙ্গবন্ধু হত্যার বেনিফিশিয়ারী একমাত্র বিএনপি। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা, বৃটিশ রাষ্ট্রদূতের ওপর গ্রেনেড হামলা, সাবেক অর্থমন্ত্রী কিবরিয়াকে গ্রেনেড হামলা করে হত্যা, অগ্নিসন্ত্রাস, পুড়িয়ে পুড়িয়ে মানুষ হত্যার কথা কি বিএনপি নেতারা ভুলে গেছেন? আগে আয়নায় নিজের চেহারা দেখে পরে কথা বলুন।
গণফোরামের মোকাব্বির খান বলেন, সাধারণ মানুষ নয়, কয়েকটি স্বার্থান্বেসী ও ব্যবসায়ী মহলের দিকে তাকিয়ে বাজেট বরাদ্দ করা হয়েছে। সরকারের নানা পর্যায়ে দুর্নীতি হচ্ছে। তাই সরকারের ব্যয় সঠিক ও নিশ্চিত করতে হবে। রাজনৈতিক মহলের সঙ্গে উচ্চ মূল্যে চুক্তির কারণে বিদ্যুতখাতে ১০ হাজার কোটি টাকার ওপর ক্ষতি হচ্ছে। স্মার্ট বাজেটের নামে গরিবকে আরো গরিব, ধনীকে আরো ধনী করার সুযোগ দেয়া হয়েছে।
এরআগে বিএনপি সংসদ সদস্য ও দলের যুগ্ম মহাসচিব হারুনুর রশীদ বলেন, বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া আজ সরকারের রাজনৈতিক হয়রানির শিকার। তাকে জামিন দেয়া হচ্ছে না। উচ্চ ও নিন্ম আদালত কোনটাই স্বাধীন নয়।
তিনি বলেন, গত ১০ বছরে কত লাখ মেট্রিক টন চাল, গম ও ডাল আমদানী করা হচ্ছে আমরা তার হিসাব চাই। তাই দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ এটি ঠিক নয়।
তিনি বলেন, আমি সংসদ নেতাকে আহ্বান জানাচ্ছি, আশা করছি দেশে সুশাসন ফিরে আনার জন্য সংসদ নেতা প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করবেন। তিনি জাতীয় নেতৃবৃন্দকে সংলাপের আহ্বান জানিয়ে দেশে একটি আবহাওয়া তৈরি করবেন সুবাতাস বয়ে আনবেন।
বক্তৃতার শুরুতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকান্ডকে জাতীয় ট্রাজেডি আখ্যায়িত করে বিএনপি’র সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদ বলেন, সংসদ নেতা আপনি ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট পরিবারের সদস্যদের হারিয়েছেন। এটা নিঃসন্দেহে বেদনার। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের হত্যাকান্ড দেশের রাজনীতির ইতিহাসে জাতীয় ট্রাজেডি। আর ইন্ডেমনিটি অধ্যাদেশ বিএনপি দেয়নি। দিয়েছে আওয়ামী লীগের একটি অংশ। খন্দকার মোশতাক ক্ষমতায় থাকাকালে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করে।
বিএনপি’র প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান সম্পর্কে হারুনুর রশীদ বলেন, জিয়াউর রহমান দেশে যে প্রক্রিয়াতেই ক্ষমতায় আসুক না কেনো ক্ষমতায় আসার পর উনি চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে দেশে গণতন্ত্র ফিরে এনেছিলেন। এখন সেই গণতন্ত্র অনুপস্থিত।
বরাদ্দকৃত অর্থের চেয়ে বেশি খরচ করায় নির্বাচন কমিশনের সমালোচনা করে বিএনপি দলীয় এই সংসদ সদস্য বলেন, এবার জাতীয় নির্বাচন হয়েছে। হ্যাঁ নির্বাচন করেছেন স্বাভাবিকভাবেই খরচ বাড়তে পারে। প্রশ্ন হচ্ছে নির্বাচন করতে যেয়ে কোনো নির্বাচনের বৈধতা অর্জন করতে পেরেছেন? এই নির্বাচন কমিশন অযোগ্য ব্যর্থ নির্বাচন কমিশন। এই নির্বাচন কমিশনের নির্বাচন জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করতে পেরেছেন?
কাজেই তারা যে টাকা খরচ করেছে সেটা সম্পূর্ণ অপচয় করা হয়েছে। চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলব এই টাকা অপচয় করা হয়েছে। তাদের দ্রুত পদত্যাগ করা উচিত। আর বর্তমান সংসদে আমরা ৬ জন (বিএনপি) প্রবেশ করলেও এই সংসদ বৈধতা পাবে না। তাই জাতীয় আলোচনার মাধ্যমে দেশে একটি সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক সুবাতাস আসবে এমন আশা করি।
বিএনপির সংরক্ষিত সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা বিএনপি’র প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানকে স্বাধীনতার ঘোষক এবং সংসদের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন করায় আবারও উত্তপ্ত হয়ে উঠে সংসদ অধিবেশন। নির্ধারিত দশ মিনিটের বক্তৃতায় তিন দফায় বাধার সন্মুখিন হন বিএনপি এই সংসদ সদস্য।
তিনি বলেন, এই সংসদের কেউ বলতে পারবে জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত? কেউ বলতে পারবেন না। এই কথা বলার সঙ্গে সঙ্গে সরকারি দলের সদস্যরা হই চই করতে থাকেন।
এক পর্যায়ে ডেপুটি স্পিকার তার বক্তব্য থামিয়ে বলেন, আপনি বাজেটের বাইরে এমন কোনো কথা বলবেন না যাতে সংসদ উত্তপ্ত হয়।
ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা বলেন, এই সংসদে আসার আগে সংসদ নেতা বলেছিলেন আমাদের কথা বলতে দেবেন। কিন্তু আমার প্রথম বক্তৃতার দুই মিনিটের এক মিনিটও শান্তিমত কথা বলতে পারিনি। একই ঘটনা আজকেও। কথা শুরু করার ৩৬ সেকেন্ডের মাথায় তার বক্তৃতা থামিয়ে কথা বলেন ডেপুটি স্পিকার মো. ফজলে রাব্বী মিয়া।
তিনি বলেন, এমন কথা বলবেন না যাতে বিরোধী পক্ষ উত্তেজিত হয়। পুনরায় বক্তব্য শুরু করে বলেন আমরা কথা বলতে পারছি না। কোন গণতন্ত্রের কথা বলছি। আমি আমার দলের কথা বলব, তারা তাদের দলের কথা বলবে। আমি দাঁড়াবার সঙ্গে সঙ্গে পুরো সংসদ যদি উত্তেজিত হয়ে যায়। তাহলে কিভাবে কথা বলব। পুরো দশ মিনিটের বক্তৃতায় কয়েক সেকেন্ড শুধু সম্পূরক বাজেটের ওপর আলোচনা করেন।
তার সেই আলোচনায় বলেন, ২০১০-১১ অর্থ বছর থেকে এ পর্যন্ত বাজেট বাস্তবায়ন হয়েছে ৭৬ শতাংশ। সরকারের সক্ষমতা দিন দিন কমছে।
নির্বাচন কমিশনে ব্যয় বাড়ানোয় সমালোচনা করে ব্যারিস্টার ফারহানা বলেন, নির্বাচন কমিশনের ব্যয় বাড়ানো হয়েছে। কি নির্বাচন তারা করেছে? আমার একটা কথায় পুরো সংসদ উত্তপ্ত। কলামের পর কলাম লেখা হয়। এই সংসদে যারা আছেন তারা আল্লাহকে হাজির নাজির করে বলুক তারা জনগণের প্রত্যেক্ষ ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন? তারা নিজের বিবেকের কাছে প্রশ্ন করুক সবাই উত্তর পেয়ে যাবেন। বক্তৃতার ৪ মিনিট ৫৬ সেকেন্ডে আবারও বাধা প্রদান করা হয়। এভাবেই তার ১০ মিনিটের বক্তৃতা শেষ করেন।
পরে ডেপুটি স্পিকার তাকে উদ্দেশ্যে বলেন, আপনি বাজেটের বাইরে ও সংসদীয় ভাষার বাইরে যে কথাগুলো বলেছেন তার সবকথা সংসদীয় প্রসিডিউর থেকে এক্সপাঞ্জ করা হল। এই কথা বলার পর বিএনপি’র সবাই অধিবেশন থেবে বেরিয়ে যান। পরে অবশ্য আবার অধিবেশনে ফেরেন।
বিএনপির সদস্যরা দাবি করেন, বর্তমান সংসদের কেউ জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত নন। নির্বাচনে ৩০০ আসন লুট করা হয়েছে।
অন্যদিকে বিএনপির কঠোর সমালোচনা করে সরকার ও বিরোধী দল জাপার সদস্যরা বলেন, নির্বাচনকে বিতর্কিত করার অনেক ষড়যন্ত্র হয়েছে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কৌশলী ও উদারনীতির কারণে তাদের সেই ষড়যন্ত্র ব্যর্থ হয়ে গেছে। সংসদে শপথ নিয়ে, সকল সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করে আবার সংসদকে অবৈধ বলা বিএনপির নির্লজ্জতা ও দ্বি-চারিতা ছাড়া আর কিছুই নয়।
রোববার সংসদ অধিবেশনে ২০১৮-১৯ অর্থবছরের সম্পূরক বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে এমন উত্তপ্ত বাক-বিতন্ডায় জড়িয়ে পড়েন তারা। পরে ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বি বিএনপির ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানার সকল অসংসদীয় বক্তব্য এক্সপাঞ্জ করার ঘোষণা দেন।
সম্পূরক বাজেটের ওপর আলোচনায় অংশ নেন, সাবেক কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী, কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক, সাবেক বাণিজ্য মন্ত্রী লে. কর্ণেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান, প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, সাবেক চিফ হুইপ উপাধ্যক্ষ আবদুস শহীদ, বিরোধী দল জাতীয় পার্টির কাজী ফিরোজ রশিদ, ফখরুল ইমাম, পীর ফজলুর রহমান, ডা. রুস্তম আলী ফরাজী, গণফোরামের মোকাব্বির খান এবং বিএনপির হারুনুর রশীদ, ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা ও মোশারফ হোসেন ভুঁইয়া।
আলোচনায় অংশ নিয়ে বেগম মতিয়া চৌধুরী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অক্লান্ত পরিশ্রম ও বিশ্বনেতৃত্বের গুণেই বাংলাদেশ আজ সবদিক থেকে এগিয়ে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে মোট ৩৭ মন্ত্রণালয়ের বাজেট বৃদ্ধি, ২৫টির হ্রাস। আজ কেউ কেউ উন্নয়ন দেখে না। ওনারা চোখ থাকতেও অন্ধ। তারা পদ্মা সেতু দেখতে পারেন না, শিক্ষার হার, গড় আয়ু, মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি পেয়েছে, দেশ খাদ্য স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছে, কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পেয়েছে- এসব তারা দেখতে পারেন না। তাই এসব জ্ঞানপাপীরা কী বললো তাতে জনগণের কিছু আসে যায় না। দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবেই এটিই বাস্তবতা।
নির্বাচন কমিশনের ব্যয় বৃদ্ধি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, গত নির্বাচনকে বিতর্কিত করার অনেক ষড়যন্ত্র হয়েছে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কৌশলী ও উদারনীতির কারণে তারা সেটা পারেনি।
বিএনপির নেতাদের উদ্দেশ্যে করে তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, সংসদ অবৈধ হলে সংসদে আসলেন কেন? মুখে অবৈধ বলবেন, শপথ নেবেন, সংসদের সকল সুযোগ-সুবিধা নেবেন- এটা কেমন কথা? সংসদে গণতন্ত্রের চর্চাই ভাল। নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয়েছে বলেই সংসদে সকল বিরোধী দলও অংশ নিয়েছেন।
কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক বিএনপি নেতাদের বক্তব্যের সমালোচনা করে বলেন, আন্দোলনের নামে অগ্নিসন্ত্রাসের মাধ্যমে বিএনপি শত শত মানুষকে পুড়িয়ে পুড়িয়ে হত্যা করেছে। সারাদেশে ভয়াল নাশকতা চালিয়েছে। যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষায় বিএনপি নেতারা নানা হুমকি দিয়েছে। বিএনপি নেত্রী দুর্নীতি করেছেন, আদালতের রায়ে দন্ডিত হয়েছেন। সেখানে সরকারের কী অপরাধ? বর্তমান সরকার জনগণের ভোটে ও সমর্থন নিয়ে ক্ষমতায় রয়েছে। জনগণ থেকে আপনারা (বিএনপি) প্রত্যাখ্যাত হয়েছেন।
তিনি বলেন, বিএনপির অনেকে এখনও জিয়াকে স্বাধীনতার ঘোষণা বলতে চান। কিন্তু কট্টর বিএনপি-জামায়াত যাদের ঘাড়ে এখনও পাকিস্তানের ভূত চেপে বসে আছে, তারাও যদি বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী পড়েন, তারাও স্বীকার করতে বাধ্য হবেন স্বাধীনতার ঘোষণাসহ প্রতিটি কর্মকান্ডে রয়েছে একটিমাত্র নাম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
স্বাধীনতা দীর্ঘ আন্দোলন ও ২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণার আগে দেশের কেউই জিয়াউর রহমানের নামটি পর্যন্ত জানতো না। আমি ছাত্রলীগের একজন সক্রিয়কর্মী হিসেবে স্বাধীকার আন্দোলনের একজন কর্মী হয়েও জিয়ার নাম কখনো শুনিনি।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য লে. কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান, বাংলাদেশের যেদিকেই তাকাই চারিদিকে শুধু উন্নয়ন ও অগ্রগতি। সারাবিশ্ব প্রতিটি সেক্টরে এই উন্নয়নের কথা স্বীকার করেছেন। পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে সৎ, কর্মঠ ও পরিশ্রমী ৫ প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে শেখ হাসিনা অন্যতম। সরকারের পরিকল্পনা তৃণমুলে শতভাগ বাস্তবায়ন হয়েছে।
তিনি বলেন, গত ১০ বছরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের দেয়া বাজেট গোটা দেশের চিত্রকেই পাল্টে দিয়েছে। প্রতিটি মানুষের ঘরে ঘরে এখন বিদ্যুতের আলো। জ্ঞানভিত্তিক ও প্রযুক্তিভিত্তিক সমাজ বিএনপি বিশ্বাস করে না বলেই তারা সাবমেরিন কেবলের সঙ্গে যুক্ত হননি। বিএনপির মুখে সমালোচনা মানায় না। কারণ তাদের সময় দেশে কোনই উন্নয়ন হয়নি।
প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, সংসদে বিএনপির চরম মিথ্যাচার ও অসংসদীয় উস্কানীমূলক বক্তব্যেই প্রমাণ করে বাজেট নিয়ে তাদের অন্য কোন কথা নেই। তাদের খুন, দুর্নীতি, অগ্নিসন্ত্রাস ও দুঃশাসনের কারণেই গত নির্বাচনে দেশের জনগণ বিএনপিকে প্রত্যাখ্যান করেছে। তারা বিরোধী দলের আসনেও বসার সুযোগ পায়নি। বাংলাদেশের মানুষ অস্ত্র চোরাকারবারী, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলাকারী সন্ত্রাসী তারেক রহমানকেও প্রত্যাখ্যান করেছে।
জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, বিএনপির এক নেতা নিজেকে ঈমানদার দাবি করেছেন। যদি তাই হয় তবে শেখ হাসিনা পদ্মা সেতু করছেন, মেট্টোরেল করছেন, বড় মহাসড়কগুলো ৪ লেনে উন্নীত হচ্ছে এসব কথা সংসদে বলুন, সত্যকে সত্য বলুন। বিনা ভোটে সংসদে এসে সংসদকে অবৈধ বলা ঠিক হয়নি। আমরা সবাই নির্বাচন করে জনগণের ভোট নিয়ে এসেছি।
জাতীয় পার্টির ফখরুল ইমাম বলেন, ৭৮ ভাগ বাজেট গত বছর বাস্তবায়ন করতে পারেনি সরকার। প্রতি বছরই বাজেট বাস্তবায়নের হার কমছে। আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। ব্যাংকে টাকা নেই, সব টাকা ঋণখেলাপীদের কাছে। ২২ হাজার কোটি টাকা মুলধন ঘাটতি। দেড় লাখ কোটি টাকা ঋণখেলাপী হলে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো টিকবে কীভাবে? নির্দেশের পরও ব্যাংকের সুদের হার কমে না এতো স্পর্ধা পায় কোথায়? বিদ্যুত উৎপাদন বৃদ্ধি পেলেও এই খাতে ১০ হাজার কোটি টাকা ক্ষতি হচ্ছে। দেশের অর্থনীতি চাঙ্গা হলে ঋণখেলাপীরা টাকা ফেরত দিচ্ছেন না কেন?
বিএনপি নেতার বক্তব্যের জবাবে পীর ফজলুর রহমান বলেন, এই সংসদ অবৈধ হলে তারা (বিএনপি) আসেন কিভাবে? সংসদে থাকা আপনারা সবাই তো অবৈধ। সংসদ কখনো অবৈধ হতে পারে না, ব্যর্থতা থাকলে সেটা বিএনপির। সংসদ বৈধ বলেই তারা শপথ নিয়েছেন, কথা বলছেন। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানই বঙ্গবন্ধু হত্যা বিচার বন্ধে ইনডেমনিটি দিয়েছিলেন। কেননা বঙ্গবন্ধু হত্যার বেনিফিশিয়ারী একমাত্র বিএনপি। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা, বৃটিশ রাষ্ট্রদূতের ওপর গ্রেনেড হামলা, সাবেক অর্থমন্ত্রী কিবরিয়াকে গ্রেনেড হামলা করে হত্যা, অগ্নিসন্ত্রাস, পুড়িয়ে পুড়িয়ে মানুষ হত্যার কথা কি বিএনপি নেতারা ভুলে গেছেন? আগে আয়নায় নিজের চেহারা দেখে পরে কথা বলুন।
গণফোরামের মোকাব্বির খান বলেন, সাধারণ মানুষ নয়, কয়েকটি স্বার্থান্বেসী ও ব্যবসায়ী মহলের দিকে তাকিয়ে বাজেট বরাদ্দ করা হয়েছে। সরকারের নানা পর্যায়ে দুর্নীতি হচ্ছে। তাই সরকারের ব্যয় সঠিক ও নিশ্চিত করতে হবে। রাজনৈতিক মহলের সঙ্গে উচ্চ মূল্যে চুক্তির কারণে বিদ্যুতখাতে ১০ হাজার কোটি টাকার ওপর ক্ষতি হচ্ছে। স্মার্ট বাজেটের নামে গরিবকে আরো গরিব, ধনীকে আরো ধনী করার সুযোগ দেয়া হয়েছে।
এরআগে বিএনপি সংসদ সদস্য ও দলের যুগ্ম মহাসচিব হারুনুর রশীদ বলেন, বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া আজ সরকারের রাজনৈতিক হয়রানির শিকার। তাকে জামিন দেয়া হচ্ছে না। উচ্চ ও নিন্ম আদালত কোনটাই স্বাধীন নয়।
তিনি বলেন, গত ১০ বছরে কত লাখ মেট্রিক টন চাল, গম ও ডাল আমদানী করা হচ্ছে আমরা তার হিসাব চাই। তাই দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ এটি ঠিক নয়।
তিনি বলেন, আমি সংসদ নেতাকে আহ্বান জানাচ্ছি, আশা করছি দেশে সুশাসন ফিরে আনার জন্য সংসদ নেতা প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করবেন। তিনি জাতীয় নেতৃবৃন্দকে সংলাপের আহ্বান জানিয়ে দেশে একটি আবহাওয়া তৈরি করবেন সুবাতাস বয়ে আনবেন।
বক্তৃতার শুরুতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকান্ডকে জাতীয় ট্রাজেডি আখ্যায়িত করে বিএনপি’র সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদ বলেন, সংসদ নেতা আপনি ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট পরিবারের সদস্যদের হারিয়েছেন। এটা নিঃসন্দেহে বেদনার। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের হত্যাকান্ড দেশের রাজনীতির ইতিহাসে জাতীয় ট্রাজেডি। আর ইন্ডেমনিটি অধ্যাদেশ বিএনপি দেয়নি। দিয়েছে আওয়ামী লীগের একটি অংশ। খন্দকার মোশতাক ক্ষমতায় থাকাকালে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করে।
বিএনপি’র প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান সম্পর্কে হারুনুর রশীদ বলেন, জিয়াউর রহমান দেশে যে প্রক্রিয়াতেই ক্ষমতায় আসুক না কেনো ক্ষমতায় আসার পর উনি চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে দেশে গণতন্ত্র ফিরে এনেছিলেন। এখন সেই গণতন্ত্র অনুপস্থিত।
বরাদ্দকৃত অর্থের চেয়ে বেশি খরচ করায় নির্বাচন কমিশনের সমালোচনা করে বিএনপি দলীয় এই সংসদ সদস্য বলেন, এবার জাতীয় নির্বাচন হয়েছে। হ্যাঁ নির্বাচন করেছেন স্বাভাবিকভাবেই খরচ বাড়তে পারে। প্রশ্ন হচ্ছে নির্বাচন করতে যেয়ে কোনো নির্বাচনের বৈধতা অর্জন করতে পেরেছেন? এই নির্বাচন কমিশন অযোগ্য ব্যর্থ নির্বাচন কমিশন। এই নির্বাচন কমিশনের নির্বাচন জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করতে পেরেছেন?
কাজেই তারা যে টাকা খরচ করেছে সেটা সম্পূর্ণ অপচয় করা হয়েছে। চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলব এই টাকা অপচয় করা হয়েছে। তাদের দ্রুত পদত্যাগ করা উচিত। আর বর্তমান সংসদে আমরা ৬ জন (বিএনপি) প্রবেশ করলেও এই সংসদ বৈধতা পাবে না। তাই জাতীয় আলোচনার মাধ্যমে দেশে একটি সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক সুবাতাস আসবে এমন আশা করি।
বিএনপির সংরক্ষিত সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা বিএনপি’র প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানকে স্বাধীনতার ঘোষক এবং সংসদের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন করায় আবারও উত্তপ্ত হয়ে উঠে সংসদ অধিবেশন। নির্ধারিত দশ মিনিটের বক্তৃতায় তিন দফায় বাধার সন্মুখিন হন বিএনপি এই সংসদ সদস্য।
তিনি বলেন, এই সংসদের কেউ বলতে পারবে জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত? কেউ বলতে পারবেন না। এই কথা বলার সঙ্গে সঙ্গে সরকারি দলের সদস্যরা হই চই করতে থাকেন।
এক পর্যায়ে ডেপুটি স্পিকার তার বক্তব্য থামিয়ে বলেন, আপনি বাজেটের বাইরে এমন কোনো কথা বলবেন না যাতে সংসদ উত্তপ্ত হয়।
ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা বলেন, এই সংসদে আসার আগে সংসদ নেতা বলেছিলেন আমাদের কথা বলতে দেবেন। কিন্তু আমার প্রথম বক্তৃতার দুই মিনিটের এক মিনিটও শান্তিমত কথা বলতে পারিনি। একই ঘটনা আজকেও। কথা শুরু করার ৩৬ সেকেন্ডের মাথায় তার বক্তৃতা থামিয়ে কথা বলেন ডেপুটি স্পিকার মো. ফজলে রাব্বী মিয়া।
তিনি বলেন, এমন কথা বলবেন না যাতে বিরোধী পক্ষ উত্তেজিত হয়। পুনরায় বক্তব্য শুরু করে বলেন আমরা কথা বলতে পারছি না। কোন গণতন্ত্রের কথা বলছি। আমি আমার দলের কথা বলব, তারা তাদের দলের কথা বলবে। আমি দাঁড়াবার সঙ্গে সঙ্গে পুরো সংসদ যদি উত্তেজিত হয়ে যায়। তাহলে কিভাবে কথা বলব। পুরো দশ মিনিটের বক্তৃতায় কয়েক সেকেন্ড শুধু সম্পূরক বাজেটের ওপর আলোচনা করেন।
তার সেই আলোচনায় বলেন, ২০১০-১১ অর্থ বছর থেকে এ পর্যন্ত বাজেট বাস্তবায়ন হয়েছে ৭৬ শতাংশ। সরকারের সক্ষমতা দিন দিন কমছে।
নির্বাচন কমিশনে ব্যয় বাড়ানোয় সমালোচনা করে ব্যারিস্টার ফারহানা বলেন, নির্বাচন কমিশনের ব্যয় বাড়ানো হয়েছে। কি নির্বাচন তারা করেছে? আমার একটা কথায় পুরো সংসদ উত্তপ্ত। কলামের পর কলাম লেখা হয়। এই সংসদে যারা আছেন তারা আল্লাহকে হাজির নাজির করে বলুক তারা জনগণের প্রত্যেক্ষ ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন? তারা নিজের বিবেকের কাছে প্রশ্ন করুক সবাই উত্তর পেয়ে যাবেন। বক্তৃতার ৪ মিনিট ৫৬ সেকেন্ডে আবারও বাধা প্রদান করা হয়। এভাবেই তার ১০ মিনিটের বক্তৃতা শেষ করেন।
পরে ডেপুটি স্পিকার তাকে উদ্দেশ্যে বলেন, আপনি বাজেটের বাইরে ও সংসদীয় ভাষার বাইরে যে কথাগুলো বলেছেন তার সবকথা সংসদীয় প্রসিডিউর থেকে এক্সপাঞ্জ করা হল। এই কথা বলার পর বিএনপি’র সবাই অধিবেশন থেবে বেরিয়ে যান। পরে অবশ্য আবার অধিবেশনে ফেরেন।
No comments