কবিতা by কবি চাহিবা মাত্র

মাকিদ হায়দার দাবি দাওয়ার মধ্যে একপাটি জুতা পাইলেই আমার হইবে।
চেয়ার টেবিলের প্রতি আমার লোভ নাই
এমনকি কোন প্রকার
বিত্ত বৈভবের।

শুধু মাত্র একপাটি জুতা পাইলেই
সকালে নিজের গালে,
বিকালে স্ত্রীর পিঠে,
মধ্যরাতে নিজের কপালে,
ঠেকাইয়া বলিতাম,
পাদুকা আমার
তুমি দীর্ঘজীবী হও।

ইতোমধ্যে দাবি আদায়ের লক্ষ্যে
শুইয়া বসিয়া যাহারা সময়
কাটাইয়াছিলেন মহান রাজপথে,
তাহাদের কেউ কেউ
আজকাল স্বর্ণালঙ্কারের পালঙ্কে বসিয়া
বলাবলি করিতেছেন, সরল
কবিরা যাহা খুশি তাহা লইয়া
পদ্য রচনা করিতে পারেন।

শুধু পারেন না
আজকাল রাজপথে যাহারা অকারণে ঢেঁকুর তুলিতেছে
তাহাদের লইয়া কিছু লিখিতে।

আমরা যাহারা স্বর্ণালঙ্কারের পালঙ্কের
অনিশ্চিত বাসিন্দা
তাহাদের প্রত্যেকেরই মনে রাখা প্রয়োজন,
কবি-চাহিবা মাত্র
এক পাটি জুতা
যেন
তাহাকে দেওয়া হয়।

ভূত ভবিষ্যতে সেই জুতা কাহার কণ্ঠে ঝুলিবে
তাহা কবিরাই ভাল করিয়া জানেন।


যুদ্ধাপরাধীদের ঘৃণা
রবীন্দ্র গোপ
ঘৃণা শব্দটিকে কতবেশি ঘৃণায় ভরে দেয়া যায়
ওটাকে একটা সাগর বানিয়ে বাঙালীর থুথু মূত্র আর
ত্যাগ করা সকল বর্জ্য নিক্ষেপ করে ভরে দেয়া যায়,
নাকি পৃথিবীর সমান একটা নরক বানিয়ে ওটাতে জ্বালিয়ে আগুন
ওই নরপিশাচ-একাত্তরের ঘাতক, ধর্ষণকারী যুদ্ধাপরাধী
কিলবিল পোকাখেকো শকুনদের পুড়িয়ে মারা যায়!

তাহলে তো বর্বর পশুদের মুরগির গ্রীলের মতো দেখাবে
পোড়া শরীর থেকে টপটপ করে পাপের চর্বি গলে গলে পড়বে
আগুন লাগালে শুরু করবে মৃত্যুনাচ, তখন মনে পড়বে
একাত্তরে গাছের ডালে হাত পা বেঁধে-ঝুলিয়ে
আগুন দিয়েছিল জীবন্ত মানুষের শরীরে, আর যুবতীর
ফুটন্ত শরীর থেকে ছিঁড়ে নিয়েছিল তাজা গোলাপের ঘ্রাণ!

মনে পড়বে জবাই করা মুরগির মতো জীবন্ত মানুষগুলোকে
ওরা কিভাবে হত্যা করেছিল, আগুন আগুন! রক্ত রক্ত! চিৎকার
শ্যামল সবুজ গ্রাম দাউ দাউ আগুনে পুড়ে ছারখার হয়ে যায়।
তবু আলবদর, রাজাকার, আলশাম্্স ওদের উল্লাস থামেনি সেদিন,
নীল আকাশের বুকে রক্ত লাল মেঘ জমেছিল ঈশান কোণে
ওরা থামেনি শয়তানের পুত্রগণ নেকড়ের বংশধর-পাকি-জারজেরা!

আমরা যুদ্ধাপরাধীর বিচার চাই-ওদের জন্যে আজ ফাঁসির রজ্জু প্রস্তুত
আজ প্রতিটি বাঙালী চায় বাঘের খাঁচায় ওদের নিক্ষেপ করে
বুভুক্ষু বাঘ কিংবা নেকড়েপালের সামনে ওদের ছেড়ে দিতে
টুকরো টুকরো করে ওদের তাজা মাংস খেয়ে আনন্দে লাফাবে বনের পশুরা।
ঘৃণা শব্দটিকে আরও কোন তীব্রতায় আরও বেশি ঘৃণা করা যায় কিনা
বাঙালীর সকল গ্রাম আজ তৈরি ওসব হিংস্র বর্বর পশুদের বিচার দাবিতে।


দেশপ্রেম বিষয়ক সেমিনার
থেকে ফিরে
মোহাম্মদ নূরুল হক
এভাবে তাকাও যদি আত্মার ভেতর শুনি পতনের ডাক! ক্ষুধার্ত বাঘগুলোর করুণ মুখের দিকে তাকাতে তাকাতে, নিজেকে খুব একাকী মনে হয়, মনে হয় আমিও হরিণ। হরপ্পার নদীজুড়ে শুরু হলে সূর্যের রোদনÑচিৎ হয়ে শুয়ে থাকি; দৃষ্টিজুড়ে ছবি আঁকে চর্যার আকাশ। হরিণ ও বাঘ বিষয়ক সেমিনারে শিকারিরা ঘৃণিত তস্কর। আমাদের রাষ্ট্রযন্ত্র ভাল চেনে শেকলের টান; আমি গেলে উড়ে উড়ে দূর গ্রহলোকেÑসংসদে বিল ওঠে; মাঝরাতে ডেকে ওঠে প্রাচীন তক্ষক! তবু কেন ভালবাসি পঁচা ডাল রেশনের চাল? ঘুমন্ত রাজকন্যার চোখে স্বপ্ন নামে পঙ্গপালের মতন। আমাদের ঘুম তাই চলে যায় স্বেচ্ছা নির্বাসনে। ফুঁসে ওঠে জনতার ঢল। এদিকে সমুদ্রজুড়ে হাঙরের স্রোত মানুষের রক্ত ভালবাসে। লখিন্দর পুড়ে গেলে মনসার ক্রোধের আগুনেÑবিশ্বায়নে ভেসে যায় আমাদের প্রেম। সেমিনারে ঝড় তোলে তুমুল তার্কিকÑতুমি কেন ঈষানের ভাষা ভুলে ডাক নামে ডাকো?

No comments

Powered by Blogger.