যা নিয়ে আছি- দেশকে ভালোবাসার শিক্ষা

শিশির ভট্টাচার্য্য, চিত্রশিল্পী। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের চিত্রকলা বিভাগে শিক্ষকতা করছেন  শিল্পভাষার ঐক্যমিল
পড়ার ক্ষেত্রে হালকা হিউমারাস বই আমার প্রিয়। এর বাইরে দর্শনের বইয়ের প্রতি আগ্রহ আছে।
এখন চিত্রকলা-সংক্রান্ত বেশ কয়েকটি বই একসঙ্গে পড়ছি। এর মধ্যে অন্যতম হলো প্রিহিস্টোরিজ অব দ্য ফিউচার: দ্য প্রিমিটিভিস্ট প্রজেক্ট অ্যান্ড দ্য কালচার অব মর্ডানিজম। বারকান ও বুশ সম্পাদিত এ বইয়ের বিষয় আদিমকালের শিল্পকলার সঙ্গে আধুনিকতার মিশ্রণ নিয়ে। এ ছাড়া পড়ছি চিত্রশিল্পী রেইন হার্ডের আর্ট অ্যাজ আর্ট, জোসেফ ক্যাম্বেলের ক্রিয়েটিভ মিথলজি দ্য মাস্ক অব গড ও জন বার্জারের একটি বই। বইগুলো পড়তে পড়তে মনে হয়েছে, মানুষের নানা সংস্কৃতি ও ভাষা থাকলেও ভিস্যুয়াল ল্যাঙ্গুয়েজ ও শিল্পভাষার কোনো বিশেষ এক জায়গায় প্রত্যেকের মধ্যে চমৎকার ঐক্যমিল আছে।

পুরোনো যুগের গান
আমার গান শোনা নির্ভর করে মুডের ওপর। বিগত শতকের পঞ্চাশ ও ষাটের দশকের গান ভালো লাগে। মায়ের মুখে এই গানগুলো শুনতে শুনতে বড় হয়েছি। এর সঙ্গে আমার স্মৃতি জড়িত। প্রিয় শিল্পী হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, মান্না দে, হৈমন্তী শুক্লাসহ অনেকে। এ ছাড়া রবীন্দ্রসংগীত—‘তুই ফেলে এসেছিস কারে মন মন রে আমার’, ‘মেঘ বলেছে যাব যাব’ দারুণভাবে টানে আমাকে। আর দলছুটের সঞ্জীব চৌধুরীর গানের কাছে বারবার ফিরে আসতে হয় মুগ্ধতার কারণেই।

সুবর্ণরেখা, কীত্তনখোলা
চিত্রকলায় আমি যা করতে চেয়েও পারি না, চলচ্চিত্রের মধ্যে যদি সে রকম কিছু মূর্ত হয়ে ওঠে, ভালো লাগে সেই ছবিগুলো। ঋত্বিক ঘটকের সুবর্ণরেখা এ জন্যই ভালো লাগে। আসলে যে ছবির সিনেমাটোগ্রাফি ভালো এবং কাহিনির সঙ্গে শট বিভাজনের সামঞ্জস্য রয়েছে—এমন চলচ্চিত্রের প্রতি আমার পক্ষপাত বেশি। আর মঞ্চনাটকের মধ্যে ঢাকা থিয়েটারের ফণীমনসা, কীত্তনখোলা, নিমজ্জন ভালো লেগেছে। তা ছাড়া আশীষ খন্দকারের পরিবেশ থিয়েটারের মধ্যেও খুঁজে পেয়েছি বৈচিত্র্য ও শিল্পরস।

মানবতার চিত্রকলা
নিজে আঁকাআঁকির সঙ্গে যুক্ত, তাই চিত্রকলা তো আমার জীবনযাপনের সঙ্গে অবিচ্ছেদ্য। আলাদা করে কোনো শিল্পীর নাম না নিয়েও বলতে পারি, মানবতাকে উপজীব্য করে এপিকধর্মী যেসব চিত্র, সেগুলোর সামনে দাঁড়ালে মনে অন্য রকম এক বোধ তৈরি হয়। সহজ-সরল কিন্তু গভীর দ্যোতনাযুক্ত ছবিই আমার প্রিয়।

মানুষ দেখি
ভ্রমণ আমি খুব উপভোগ করি। উপভোগের কারণ এই যে দেশ-বিদেশে ভ্রমণ করলে নানা রকম মানুষকে দেখতে পাওয়া যায়। স্থানে স্থানে বিচিত্র সংস্কৃতির হরেক মানুষের বর্ণিল রসবোধ—ভ্রমণে এসব দারুণ ভালো লাগে। দীর্ঘ রেলভ্রমণ আমার প্রিয়।

এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ
বাংলাদেশ একসময় খুব সমৃদ্ধশালী ছিল। এখন দিন বদলেছে। তবে আমি স্বপ্ন দেখি, আমাদের জনসংখ্যা একদিন জনশক্তিতে পরিণত হবে। সবার মধ্যে দেশকে ভালোবাসার শিক্ষা তৈরি হবে—এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ।
 সাক্ষাৎকার গ্রহণ: আলতাফ শাহনেওয়াজ

No comments

Powered by Blogger.