ইজতেমায় যৌতুকহীন বিয়ে by মাহমুদা নওরীন

আদিকাল থেকে মেয়েরা নির্যাতিত হয়ে আসছে বিভিন্নভাবে। ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায়, কোনো এক যুগে কন্যাসন্তান জন্মগ্রহণ করলে তাকে জীবন্ত মাটিতে পুঁতে ফেলা হতো। উপমহাদেশে এক সময় ছিল সতীদাহ প্রথা। স্বামীর মৃত্যু হলে স্ত্রীকে একই চিতায় দাহ করা হতো।
আধুনিক যুগের মেয়েরা যৌতুকসহ নানা নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। যৌতুক হচ্ছে সমাজের একটি সংক্রামক ব্যাধি। অন্যায়, অত্যাচার, জুলুমবাজ ও দুর্বল রুচিসম্পন্ন পরিবারের পাত্র অথবা পাত্রপক্ষ বিয়ের সময় পাত্রীপক্ষের কাছে অন্যায়ভাবে আসবাবপত্র, জিনিসপত্র, শাড়ি, স্বর্ণালঙ্কার ও মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করে থাকে, তাকেই সাধারণত যৌতুক বলে।
বর্তমানে যৌতুক ছাড়া বিয়ের উদাহরণ কম। অথচ যৌতুক নেওয়া ধর্মীয়-সামাজিক সব দৃষ্টিকোণ থেকেই নিষেধ। ইসলামেও যৌতুক হারাম। তবে সমাজে যৌতুকলোভী পুরুষ যেমন আছে, আছে উল্টোটিও। যারা যৌতুক নেন না, উপরন্তু দ্রুত মোহর আদায়ে সচেষ্ট। বিশ্ব ইজতেমা প্রতি বছর এমনই কিছু বিয়ে উপহার দেয়, যা যৌতুকমুক্ত।
নিয়ম অনুযায়ী ইজতেমার দ্বিতীয় দিন শনিবার আসরের নামাজের আগে যৌতুকবিহীন সুন্নতি বিয়ে অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। ইজতেমায় বিয়ের জন্য আগে থেকেই অভিভাবকরা পাত্র-পাত্রীদের নাম তালিকাভুক্ত করান। কনের সম্মতিতে বর ও উভয়পক্ষের লোকজনের উপস্থিতিতে এই বিয়ে সম্পন্ন হয়। বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা শেষে বয়ান মঞ্চ থেকে মোনাজাতের মাধ্যমে নবদম্পতিদের সুখ-সমৃদ্ধি কামনা করে বিশেষ নসিহত ও দোয়া করা হয়। বিয়ে শেষে মঞ্চের আশপাশের মুসলি্লদের মাঝে খোরমা-খেজুর বিতরণ করা হয়। ইজতেমার মাঠের বিয়েতে সাধারণত মোহরানা ধার্য করা হয় 'মোহরে ফাতেমি'র পরিমাণ অনুযায়ী। সে হিসাবে মোহরানার পরিমাণ ধরা হয় ১৩০ তোলা রুপা। যার বর্তমান মূল্যমান প্রায় ১ লাখ ৯৭ হাজার টাকার মতো।
এবারের ইজতেমার প্রথম পর্বে ৯৮ জনের বিয়ে সম্পন্ন হয়েছে। এছাড়া ২০১১ সালে উভয় পর্বে ২৩৪, ২০১০ সালের দুই পর্বে ২৫৩ এবং ২০০৯ সালে ৯০ জন বর-কনে ইজতেমার মাঠে বিয়েতে অংশ নেন। এর আগে ২০০৮ সালে ১০৭, ২০০৭ সালে এ সংখ্যা ছিল ১১৭ জনের। দিন দিন ইজতেমার মাঠে এই বিয়ের সংখ্যা বাড়ছে। এবারও অনেকেই এ বিয়েতে অংশ নেবেন। যৌতুকহীন এ বিয়ের দম্পতিদের জন্য রইল লাখ লাখ মানুষের দোয়া, আশীর্বাদের পাশাপাশি আমাদেরও দোয়া ও শুভেচ্ছা।

No comments

Powered by Blogger.