বিচিত্রিতা- এখনো আছে নিনজা
জাপানের সম্রাট বা শাসকদের ইতিহাস বর্ণনা করতে গেলে সামুরাই, শোগান, নিনজা—এই বীরদের বর্ণনা প্রসঙ্গক্রমেই এসে যায়।
মধ্যযুগে জাপান ছিল বিরোধ আর সংঘাতে ভরা।
মধ্যযুগে জাপান ছিল বিরোধ আর সংঘাতে ভরা।
ওই সময় বিশেষ শারীরিক দক্ষতার অধিকারী কূটকৌশলদীপ্ত নিনজারা শাসকদের গুপ্তচর হয়ে কাজ করত। ছদ্মবেশে শত্রুর ডেরায় হানা দিয়ে তারা নিঃশব্দে ঘটিয়ে আসত গুপ্তহত্যার মতো গুরুতর ঘটনা।
কথিত আছে, সামুরাই বীরেরা গুপ্তচরবৃত্তির জন্য নিনজাদের ভাড়া করতেন। নিনজাদের বেশভূষা আর চালচলন ছিল রহস্যময়। চোখ দুটো বাদ দিয়ে তাদের প্রায় পুরো শরীর বিশেষ পোশাকে ঢাকা থাকত। তারা বিশেষ মার্শাল আর্ট জানত, যা শারীরিকভাবে প্রতিপক্ষকে কুপোকাত করতে খুব কার্যকর। এ ছাড়া নিনজারা ধারাল ও তীক্ষ্ন কিছু ধাতব অস্ত্র বয়ে বেড়াত, যেগুলো ব্যবহারে বিশেষ দক্ষতার প্রয়োজন। নীরবে-নিভৃতে অনেকটা ছায়ার মতো বিচরণ করত তারা। সুযোগ বুঝে অতর্কিতে ঝাঁপিয়ে পড়ত শত্রুর ওপর। ‘শুরিকেন’ বলে তারকা আকৃতির একটা ধারালো অস্ত্র ব্যবহার করত নিনজারা। এটি ছুড়ে মারা হতো। আরও ছিল ‘ফুকিয়া’ বলে পরিচিত ব্লোপাইপ। ফুঁ দিয়ে ব্যবহার করা হতো এই অস্ত্র। এটি শব্দহীন হলেও খুব মারাত্মক। এ ছাড়া আরও কিছু নিজস্ব অস্ত্র ছিল তাদের। এসব অস্ত্র ব্যবহারে বিশেষ প্রশিক্ষণের প্রয়োজন হতো।
ঝানু তলোয়ারবাজ হিসেবেও নিনজাদের খ্যাতি রয়েছে। বিশেষভাবে তৈরি তাদের এই তলোয়ার কেবল প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে নয়, পাথুরে দেয়াল বেয়ে লুকিয়ে শত্রুর প্রাসাদে প্রবেশের ক্ষেত্রেও এটি কাজে লেগেছে।
নিনজাদের বেশির ভাগ কর্মকাণ্ড ছিল গোপন। কাজেই তাদের ব্যাপারে বিস্তারিত জানার মতো তথ্য-উপাত্ত পাওয়া গেছে খুব সামান্য। এ কারণে নিনজাদের নিয়ে কল্পকাহিনি ডালপালা বেশি ছড়িয়েছে। তাদের নিয়ে লেখা হয়েছে অনেক গল্প, উপন্যাস। নির্মাণ করা হয়েছে অনেক চলচ্চিত্র। এর মধ্যে টিনেজ মিউট্যান্ট নিনজা টার্টলস কার্টুন ছবি ও পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র হিসেবে বিশ্বের কোটি কোটি দর্শক মাত করেছে। আরও যেসব দর্শক-নন্দিত নিনজা ছবি রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে: এন্টার দ্য নিনজা, নিনজা স্ক্রল, আজুমি, ইজো, আমেরিকান নিনজা, কিল বিল, রিভেঞ্জ অব দ্য নিনজা।
এন্টার দ্য নিনজা ও আমেরিকান নিনজার মতো হলিউডি ছবিগুলোতে নিনজাকে অতিমানবীয় ভাবমূর্তিতে তুলে ধরা হয়েছে। এসব ছবিতে দেখা গেছে, একজন সুদক্ষ নিনজা পানির ওপর দিয়ে দৌড়াতে পারে বা চোখের পলকে অদৃশ্য হয়ে যেতে পারে।
নিনজারা এমন পোশাক পরত, যা অন্ধকারে পুরোপুরি আড়াল করে রাখত তাদের। এ জন্য গাঢ় নেভি-ব্লু পোশাক বেশি পরত তারা। একই সঙ্গে কালো পোশাকও পরত। নিনজাদের অদৃশ্য হয়ে যাওয়ার তথ্যে কেউ সায় দেননি। তবে কিছু বিশেষজ্ঞের মতে, শত্রুকে বিভ্রান্ত করতে চট করে ধোঁয়ার বোমা মেরে ঘোলাটে পরিবেশে তৈরি করে তারা পালিয়ে যেতে পারত।
জাপানে নিনজাদের ঐতিহ্যবাহী কলাকৌশল এখনো হাতে গোনা যে কজন লালন করছেন, তাঁদেরই একজন কাওয়াকামি। বান পরিবারের একুশতম প্রধান তিনি। ‘জাপানের শেষ নিনজা’ বলে পরিচিত ব্যক্তিদের একজন কাওয়াকামি মূলত প্রকৌশলী। এখন দেশের অন্য দশজন ব্যবসায়ীর মতো দিন কাটাচ্ছেন। তবে তাঁর নিনজা-চর্চার দিকটি তুলে ধরলে বোঝা যায়, সাধারণের মধ্যেও একটু আলাদা তিনি।
সেই ছয় বছর বয়স থেকে নিনজার কলাকৌশলে কাওয়াকামির তালিম নেওয়া শুরু। গুরু মাসাজো ইশিদা। প্রশিক্ষণের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতে গিয়ে হাসতে হাসতে তিনি বলেন, ‘গুরু আমাকে প্রথমে নিঃশব্দে হাঁটতে ও অন্যের বাড়িতে চুপিসারে ঢুকে পড়ার তালিম দিয়েছে। আমার কাছে তখন মনে হয়েছে যে তিনি আমাকে চুরিবিদ্যা শেখাচ্ছেন।’
শরিফুল ইসলাম ভূঁইয়া
সূত্র: বিবিসি অনলাইন।
কথিত আছে, সামুরাই বীরেরা গুপ্তচরবৃত্তির জন্য নিনজাদের ভাড়া করতেন। নিনজাদের বেশভূষা আর চালচলন ছিল রহস্যময়। চোখ দুটো বাদ দিয়ে তাদের প্রায় পুরো শরীর বিশেষ পোশাকে ঢাকা থাকত। তারা বিশেষ মার্শাল আর্ট জানত, যা শারীরিকভাবে প্রতিপক্ষকে কুপোকাত করতে খুব কার্যকর। এ ছাড়া নিনজারা ধারাল ও তীক্ষ্ন কিছু ধাতব অস্ত্র বয়ে বেড়াত, যেগুলো ব্যবহারে বিশেষ দক্ষতার প্রয়োজন। নীরবে-নিভৃতে অনেকটা ছায়ার মতো বিচরণ করত তারা। সুযোগ বুঝে অতর্কিতে ঝাঁপিয়ে পড়ত শত্রুর ওপর। ‘শুরিকেন’ বলে তারকা আকৃতির একটা ধারালো অস্ত্র ব্যবহার করত নিনজারা। এটি ছুড়ে মারা হতো। আরও ছিল ‘ফুকিয়া’ বলে পরিচিত ব্লোপাইপ। ফুঁ দিয়ে ব্যবহার করা হতো এই অস্ত্র। এটি শব্দহীন হলেও খুব মারাত্মক। এ ছাড়া আরও কিছু নিজস্ব অস্ত্র ছিল তাদের। এসব অস্ত্র ব্যবহারে বিশেষ প্রশিক্ষণের প্রয়োজন হতো।
ঝানু তলোয়ারবাজ হিসেবেও নিনজাদের খ্যাতি রয়েছে। বিশেষভাবে তৈরি তাদের এই তলোয়ার কেবল প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে নয়, পাথুরে দেয়াল বেয়ে লুকিয়ে শত্রুর প্রাসাদে প্রবেশের ক্ষেত্রেও এটি কাজে লেগেছে।
নিনজাদের বেশির ভাগ কর্মকাণ্ড ছিল গোপন। কাজেই তাদের ব্যাপারে বিস্তারিত জানার মতো তথ্য-উপাত্ত পাওয়া গেছে খুব সামান্য। এ কারণে নিনজাদের নিয়ে কল্পকাহিনি ডালপালা বেশি ছড়িয়েছে। তাদের নিয়ে লেখা হয়েছে অনেক গল্প, উপন্যাস। নির্মাণ করা হয়েছে অনেক চলচ্চিত্র। এর মধ্যে টিনেজ মিউট্যান্ট নিনজা টার্টলস কার্টুন ছবি ও পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র হিসেবে বিশ্বের কোটি কোটি দর্শক মাত করেছে। আরও যেসব দর্শক-নন্দিত নিনজা ছবি রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে: এন্টার দ্য নিনজা, নিনজা স্ক্রল, আজুমি, ইজো, আমেরিকান নিনজা, কিল বিল, রিভেঞ্জ অব দ্য নিনজা।
এন্টার দ্য নিনজা ও আমেরিকান নিনজার মতো হলিউডি ছবিগুলোতে নিনজাকে অতিমানবীয় ভাবমূর্তিতে তুলে ধরা হয়েছে। এসব ছবিতে দেখা গেছে, একজন সুদক্ষ নিনজা পানির ওপর দিয়ে দৌড়াতে পারে বা চোখের পলকে অদৃশ্য হয়ে যেতে পারে।
নিনজারা এমন পোশাক পরত, যা অন্ধকারে পুরোপুরি আড়াল করে রাখত তাদের। এ জন্য গাঢ় নেভি-ব্লু পোশাক বেশি পরত তারা। একই সঙ্গে কালো পোশাকও পরত। নিনজাদের অদৃশ্য হয়ে যাওয়ার তথ্যে কেউ সায় দেননি। তবে কিছু বিশেষজ্ঞের মতে, শত্রুকে বিভ্রান্ত করতে চট করে ধোঁয়ার বোমা মেরে ঘোলাটে পরিবেশে তৈরি করে তারা পালিয়ে যেতে পারত।
জাপানে নিনজাদের ঐতিহ্যবাহী কলাকৌশল এখনো হাতে গোনা যে কজন লালন করছেন, তাঁদেরই একজন কাওয়াকামি। বান পরিবারের একুশতম প্রধান তিনি। ‘জাপানের শেষ নিনজা’ বলে পরিচিত ব্যক্তিদের একজন কাওয়াকামি মূলত প্রকৌশলী। এখন দেশের অন্য দশজন ব্যবসায়ীর মতো দিন কাটাচ্ছেন। তবে তাঁর নিনজা-চর্চার দিকটি তুলে ধরলে বোঝা যায়, সাধারণের মধ্যেও একটু আলাদা তিনি।
সেই ছয় বছর বয়স থেকে নিনজার কলাকৌশলে কাওয়াকামির তালিম নেওয়া শুরু। গুরু মাসাজো ইশিদা। প্রশিক্ষণের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতে গিয়ে হাসতে হাসতে তিনি বলেন, ‘গুরু আমাকে প্রথমে নিঃশব্দে হাঁটতে ও অন্যের বাড়িতে চুপিসারে ঢুকে পড়ার তালিম দিয়েছে। আমার কাছে তখন মনে হয়েছে যে তিনি আমাকে চুরিবিদ্যা শেখাচ্ছেন।’
শরিফুল ইসলাম ভূঁইয়া
সূত্র: বিবিসি অনলাইন।
No comments