পবিত্র কোরআনের আলো-ন্যায় ও শান্তির জন্য যুদ্ধ ফরজ করা হয়েছে
২১৫. ইয়াছআলূনাকা মা-যা- ইউনফিক্বূন; ক্বুল মা- আনফাক্বতুম মিন খাইরিন ফালিলওয়া-লিদাইনি ওয়ালআক্বরাবীনা ওয়ালইয়াতা-মা- ওয়ালমাছা-কীনা ওয়াবনিছ্ ছাবীল; ওয়ামা- তাফআ'লূ মিন খাইরিন ফাইন্নাল্লা-হা বিহী আ'লিম।
২১৬. কুতিবা আ'লাইকুমুল কি্বতা-লু ওয়া হুয়া কুরহুন লাকুম; ওয়া আ'ছা- আনতাকরাহূ শাইআওঁয়া হুয়া খাইরুল্লাকুম; ওয়া আ'ছা- আনতুহিব্বু- শাইয়াঁও ওয়া হুয়া শার্রুল্লাকুম; ওয়াল্লা-হু ইয়া'লামু ওয়া আনতুম লা-তা'লামূন। [সুরা বাকারা, আয়াত : ২১৫-২১৬]
অনুবাদ : ২১৫. তারা আপনার কাছে জানতে চাইবে তারা কোন কোন খাতে খরচ করবে। আপনি তাদের বলে দিন, যা কিছু তোমরা খরচ করবে তোমাদের মা-বাবার জন্য, নিকটাত্মীয়দের জন্য, এতিম, মিসকিন ও অভাবগ্রস্ত মুসাফিরের জন্য সে সবই ভালো। আর যত ভালো কাজ তোমরা করবে আল্লাহ তায়ালা তা অবশ্যই জানতে পারেন।
২১৬. তোমাদের ওপর যুদ্ধ ফরজ করা হয়েছে, (ন্যায় প্রতিষ্ঠা ও অন্যায় নির্মূল করার জন্য) আর এটা তোমাদের জন্য একটা অপ্রিয় কাজ; জেনে রেখো, এমন কিছু কাজ আছে যা আপাতত তোমাদের পছন্দ হয় না, কিন্তু এটাই তোমাদের জন্য মঙ্গলের আর এটাও জেনে রেখো, এমন কিছু কাজ আছে যা তোমাদের খুব পছন্দ অথচ এটা তোমাদের অমঙ্গলের। আল্লাহ সবচেয়ে ভালো জানেন, তোমরা অনেক কিছু জানো না।
ব্যাখ্যা : ২১৫ নম্বর আয়াতটির শানেনুজুল এ রকম : আমর ইবনুল জামুহ নামক এক সাহাবি রাসুল (সা.)-এর কাছে এসে জিজ্ঞেস করলেন, 'আমরা আমাদের ধন-সম্পদ কিরূপ ক্ষেত্রে খরচ করব বা দান-খয়রাত করব?' এর উত্তরে এ আয়াতটি নাজিল হয়। এই আয়াতে সাধারণভাবে ধন-সম্পদ খরচ করা বা নফল দান-খয়রাতের কথা বলা হয়েছে। এখানে জাকাত বা কোনো ধরনের ছাদকায়ে-ওয়াজিবের কথা বলা হয়নি। জাকাত বা অন্যান্য ছাদকায়ে-ওয়াজিব মা-বাবাকে দেওয়া যায় না। উপরন্তু এখানে মা-বাবা ও নিকটাত্মীয় ছাড়া অন্য যে কয়েক ধরনের মানুষের কথা বলা হয়েছে তারা হলো এতিম, মিসকিন এবং অভাবগ্রস্ত মুসাফির। এদের ব্যাপারেও শুধু জাকাত বা ওয়াজিব সাদকা আদায় করে দিয়েই যথেষ্ট দেওয়া হয়েছে বলে মনে করা ঠিক নয়। এ আয়াতের মাধ্যমে তাদের ঐচ্ছিকভাবে অর্থসম্পদ দান করার জন্য সম্পদশালীদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আর মা-বাবা ও নিকটাত্মীয়দের যে ধন-সম্পদ দেওয়ার কথা বলা হয়েছে, সেটা যেমন জাকাত বা সাদকা হতে পারবে না, তেমনি এটা করুণার দানও নয়। এটা সম্পদের উত্তম ব্যবহারের জায়গা।
২১৬ নম্বর আয়াতে যুদ্ধ ফরজ হওয়ার কথা বলা হয়েছে। দৃশ্যত যুদ্ধ কোনো ভালো কাজ নয় এবং যুদ্ধ বাধানো পৃথিবীতে সবচেয়ে খারাপ কাজ। কিন্তু এখানে যে যুদ্ধের কথা বলা হয়েছে, তা হলো ন্যায় ও শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য যুদ্ধ। সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য মিথ্যার বিরুদ্ধে যুদ্ধ। যুদ্ধ ফরজ হওয়ার এই নির্দেশ ব্যাখ্যা করতে হলে তৎকালীন পরিস্থিতি ও পরিবেশ সঠিকভাবে বিবেচনায় আনতে হবে। মক্কা ও মদিনায় তখন যুদ্ধের পরিবেশ বিরাজ করছিল। এই যুদ্ধাবস্থা আল্লাহর রাসুল বা মুসলমানরা তৈরি করেননি। রাসুল (সা.) মক্কার কোরাইশদের সত্যের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন এবং মিথ্যা পরিহার করার কথা বলেছিলেন। কিন্তু তাদের মধ্য থেকে অতি অল্পসংখ্যক মানুষ ছাড়া অন্যরা তা মানতে চায়নি। শুধু তা-ই নয়, তারা রাসুল (সা.) এবং তাঁর সঙ্গীদের হত্যা করে ইসলামের সত্যকে নির্মূল করতে চেয়েছিল। এই পরিস্থিতিতে সেখানে যুদ্ধাবস্থা সৃষ্টি হয়। কাফেররা মুসলমানদের ওপর কয়েক দফা আক্রমণ চালায় এবং যুদ্ধ হয়। কাফেররা কোনো অবস্থাতেই মুসলমানদের নির্মূল করার স্পৃহা থেকে নিবৃত্ত হয়নি। এই অবস্থায়ই এই আয়াত নাজিল হয়েছে এবং মুসলমানদের জন্য যুদ্ধ করা ফরজ বলে ঘোষণা করা হয়েছে। এই আয়াতে এটাও বলা হয়েছে যে দৃশ্যত তোমাদের পছন্দ হয় না এমন কাজেও মঙ্গল রয়েছে এবং পছন্দ হয় এমন কাজেও অমঙ্গল রয়েছে।
গ্রন্থনা : মাওলানা হোসেন আলী
অনুবাদ : ২১৫. তারা আপনার কাছে জানতে চাইবে তারা কোন কোন খাতে খরচ করবে। আপনি তাদের বলে দিন, যা কিছু তোমরা খরচ করবে তোমাদের মা-বাবার জন্য, নিকটাত্মীয়দের জন্য, এতিম, মিসকিন ও অভাবগ্রস্ত মুসাফিরের জন্য সে সবই ভালো। আর যত ভালো কাজ তোমরা করবে আল্লাহ তায়ালা তা অবশ্যই জানতে পারেন।
২১৬. তোমাদের ওপর যুদ্ধ ফরজ করা হয়েছে, (ন্যায় প্রতিষ্ঠা ও অন্যায় নির্মূল করার জন্য) আর এটা তোমাদের জন্য একটা অপ্রিয় কাজ; জেনে রেখো, এমন কিছু কাজ আছে যা আপাতত তোমাদের পছন্দ হয় না, কিন্তু এটাই তোমাদের জন্য মঙ্গলের আর এটাও জেনে রেখো, এমন কিছু কাজ আছে যা তোমাদের খুব পছন্দ অথচ এটা তোমাদের অমঙ্গলের। আল্লাহ সবচেয়ে ভালো জানেন, তোমরা অনেক কিছু জানো না।
ব্যাখ্যা : ২১৫ নম্বর আয়াতটির শানেনুজুল এ রকম : আমর ইবনুল জামুহ নামক এক সাহাবি রাসুল (সা.)-এর কাছে এসে জিজ্ঞেস করলেন, 'আমরা আমাদের ধন-সম্পদ কিরূপ ক্ষেত্রে খরচ করব বা দান-খয়রাত করব?' এর উত্তরে এ আয়াতটি নাজিল হয়। এই আয়াতে সাধারণভাবে ধন-সম্পদ খরচ করা বা নফল দান-খয়রাতের কথা বলা হয়েছে। এখানে জাকাত বা কোনো ধরনের ছাদকায়ে-ওয়াজিবের কথা বলা হয়নি। জাকাত বা অন্যান্য ছাদকায়ে-ওয়াজিব মা-বাবাকে দেওয়া যায় না। উপরন্তু এখানে মা-বাবা ও নিকটাত্মীয় ছাড়া অন্য যে কয়েক ধরনের মানুষের কথা বলা হয়েছে তারা হলো এতিম, মিসকিন এবং অভাবগ্রস্ত মুসাফির। এদের ব্যাপারেও শুধু জাকাত বা ওয়াজিব সাদকা আদায় করে দিয়েই যথেষ্ট দেওয়া হয়েছে বলে মনে করা ঠিক নয়। এ আয়াতের মাধ্যমে তাদের ঐচ্ছিকভাবে অর্থসম্পদ দান করার জন্য সম্পদশালীদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আর মা-বাবা ও নিকটাত্মীয়দের যে ধন-সম্পদ দেওয়ার কথা বলা হয়েছে, সেটা যেমন জাকাত বা সাদকা হতে পারবে না, তেমনি এটা করুণার দানও নয়। এটা সম্পদের উত্তম ব্যবহারের জায়গা।
২১৬ নম্বর আয়াতে যুদ্ধ ফরজ হওয়ার কথা বলা হয়েছে। দৃশ্যত যুদ্ধ কোনো ভালো কাজ নয় এবং যুদ্ধ বাধানো পৃথিবীতে সবচেয়ে খারাপ কাজ। কিন্তু এখানে যে যুদ্ধের কথা বলা হয়েছে, তা হলো ন্যায় ও শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য যুদ্ধ। সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য মিথ্যার বিরুদ্ধে যুদ্ধ। যুদ্ধ ফরজ হওয়ার এই নির্দেশ ব্যাখ্যা করতে হলে তৎকালীন পরিস্থিতি ও পরিবেশ সঠিকভাবে বিবেচনায় আনতে হবে। মক্কা ও মদিনায় তখন যুদ্ধের পরিবেশ বিরাজ করছিল। এই যুদ্ধাবস্থা আল্লাহর রাসুল বা মুসলমানরা তৈরি করেননি। রাসুল (সা.) মক্কার কোরাইশদের সত্যের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন এবং মিথ্যা পরিহার করার কথা বলেছিলেন। কিন্তু তাদের মধ্য থেকে অতি অল্পসংখ্যক মানুষ ছাড়া অন্যরা তা মানতে চায়নি। শুধু তা-ই নয়, তারা রাসুল (সা.) এবং তাঁর সঙ্গীদের হত্যা করে ইসলামের সত্যকে নির্মূল করতে চেয়েছিল। এই পরিস্থিতিতে সেখানে যুদ্ধাবস্থা সৃষ্টি হয়। কাফেররা মুসলমানদের ওপর কয়েক দফা আক্রমণ চালায় এবং যুদ্ধ হয়। কাফেররা কোনো অবস্থাতেই মুসলমানদের নির্মূল করার স্পৃহা থেকে নিবৃত্ত হয়নি। এই অবস্থায়ই এই আয়াত নাজিল হয়েছে এবং মুসলমানদের জন্য যুদ্ধ করা ফরজ বলে ঘোষণা করা হয়েছে। এই আয়াতে এটাও বলা হয়েছে যে দৃশ্যত তোমাদের পছন্দ হয় না এমন কাজেও মঙ্গল রয়েছে এবং পছন্দ হয় এমন কাজেও অমঙ্গল রয়েছে।
গ্রন্থনা : মাওলানা হোসেন আলী
No comments