মূল্যবোধের অবক্ষয় by ডা. ওয়াহিদ নবী

সামাজিক মূল্যবোধ অনেক উপাদানের সমষ্টি। বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থায় অনেকেই বলে থাকেন যে আমাদের মূল্যবোধের অবক্ষয় ঘটেছে এবং ঘটছে। সাধারণত এই হা-হুতাশগুলো করা হয় কোনো বিশেষ ঘটনাকে কেন্দ্র করে।
সমাজের বিভিন্ন উপাদান বিবেচনা করে সম্ভাব্য সামাজিক অবক্ষয় সম্পর্কে গভীরভাবে আলোচনা করবেন সমাজবিজ্ঞানীরা এবং সেসব আলোচনা থেকে আমরা অনেক কিছু শিখব। অবক্ষয় ঘটেছে এমন বিশ্বাসের সঙ্গে যে চিন্তাটি আমাদের মনে চলে আসতে পারে, তা হচ্ছে নৈরাশ্য। অবক্ষয় ঘটেছে এমন কথা যাঁরা বলেন, তাঁদের প্রায় সবাই বলেন যে 'এ দেশের কোনো ভবিষ্যৎ নেই।' এমন কথা অনেকের কাছে শুনেছি, যাঁরা অনেক আশা নিয়ে নিজের কর্তব্য পালন করেছেন। নৈরাশ্যের হাত থেকে নিজেদের বাঁচানো গুরুত্বপূর্ণ ও জরুরি হয়ে পড়েছে।
সংবাদমাধ্যমে মানুষ খুনের খবর প্রায়ই পাওয়া যায়। এর মধ্যে রাজনৈতিক খুনের খবর থাকে বেশ। আওয়ামী লীগ অভিযোগ করে, ২০০১ থেকে শুরু করে পাঁচ বছরের শাসনকালে বিএনপি ৩০ হাজার আওয়ামী লীগ কর্মীকে খুন করেছে। আবার বিএনপি দাবি করে, আওয়ামী লীগের বিগত শাসনামলে তারা বিএনপির ২০ হাজার কর্মীকে মেরে ফেলেছে। তাহলে দেখা যাচ্ছে, আমাদের দেশে ১০ বছরে ৫০ হাজার রাজনৈতিক কর্মী খুন হয়েছেন। দুটি গণতান্ত্রিক সরকারের আমলে প্রতিবছর পাঁচ হাজার কর্মী খুন হওয়াটা অবশ্যই ভয়াবহ। আমাদের দেশের অন্য যেকোনো ১০ বছরের সঙ্গে তুলনা করলে এ কথা স্বীকার করতেই হবে, রাজনৈতিক হত্যার ব্যাপারে সামাজিক অবক্ষয় ঘটেছে। স্বভাবতই প্রশ্ন ওঠে_দুটি রাজনৈতিক দলের দেওয়া পরিসংখ্যান কতটা বিশ্বাসযোগ্য। মার্ক টোয়েন বলেছিলেন, 'মিথ্যা, ডাহা মিথ্যা এসব পরিসংখ্যান।' পরিসংখ্যান নিয়ে এমন বিদ্রূপ ও রসিকতা অনেকেই করেছেন। বিশ্বাসযোগ্য পরিসংখ্যান না থাকলে কোনো তথ্যের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠবেই। তাই বিশ্বাসযোগ্য পরিসংখ্যান না থাকলে দলীয় পরিসংখ্যান আমরা হয়তো গ্রহণ করব না। কিন্তু উপায় কী?
এসব কারণেই আমাদের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর বিশ্বাসযোগ্য পরিসংখ্যান থাকা উচিত। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পরিসংখ্যান বিভাগ এ ব্যাপারে আরো সচেতন হবে আশা করি। এ ব্যাপারে সরকার সাহায্য করবে বলেও আমরা আশা করি। খুনের ব্যাপারটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কোনো পরিসংখ্যান বিশ্বাসযোগ্য করতে গেলে উৎস ও প্রক্রিয়া জানানো উচিত। খুনের পরিসংখ্যান প্রতিষ্ঠিত করতে গেলে শুরুতে থানাগুলোর খুনের এজাহারগুলোর সংখ্যা জানতে হবে। সব জেলার সংখ্যা একত্রিত করে জাতীয় পরিসংখ্যান প্রকাশ করা যেতে পারে। এটি হবে স্থূল পরিসংখ্যান। আবার এমন অভিযোগও উঠেছে, মানুষ কোথায় যাবে বিচারের জন্য? কবিগুরুর ভাষায়_'কার দ্বারে দাঁড়াইবে বিচারের আশায়?' আদালত থেকে বেরিয়েই সাংবাদিকদের সামনে বিচারপতির বিরুদ্ধে বিষোদগার অন্য কোনো দেশে দেখা যায় না।
মাদকদ্রব্যের ব্যবহার একটি মানুষকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যায়। এসব কারণে প্রায় ধ্বংসপ্রাপ্ত মানুষদের হাতে সমাজ নানাভাবে ভোগে। অপরাধমূলক কাজ বেড়ে যায়। সরকার ও সমাজের আরো সজাগ হওয়া উচিত এ ব্যাপারে। ব্যক্তি, পরিবার ও দলের স্বার্থ অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু জাতি এসবের ঊধর্ে্ব। আদর্শ অত্যন্ত নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করতে হয় রাজনীতিতে। রাজনীতি সঠিক না হলে রাষ্ট্রের অন্য কোনো কিছুর ঠিক হওয়ার সম্ভাবনা নেই। দলের টিকিটে নির্বাচিত হলেও নির্বাচিতরা সবার প্রতিনিধি_এটা বুঝতে কেন জানি না আমাদের দেরি হচ্ছে।
লেখক : লন্ডন প্রবাসী চিকিৎসক

No comments

Powered by Blogger.