শ্রদ্ধাঞ্জলি-মানুষ তাঁকে স্মরণ করবে যুগ যুগ by রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা

সুচিত্রাদির কথা ভাবলেই চোখে ভাসে তাঁর ওই দীপ্ত ভঙ্গিতে অসাধারণ গায়কি ঢং। শুদ্ধ ও জোরালো উচ্চারণে তিনি গাইতেন রবীন্দ্রনাথের স্বদেশ পর্যায়ের গানগুলো। রবীন্দ্রনাথের কাব্য পর্যায়ের গানেও আছে তাঁর বিশেষ মহিমা।
কী অসাধারণ গায়কি! 'কৃষ্ণকলি আমি তারেই বলি,/ আর যা বলে বলুক অন্য লোকে।/ দেখেছিলেম ময়নাপাড়ার মাঠে/ কালো মেয়ের কালো হরিণ চোখ।' সুচিত্রা মিত্রের কণ্ঠে এই গানটির কথা কখনো ভোলার নয়। তাঁর মতো ওই রকম দীপ্ত ভঙ্গিতে এই গান আর কেউ গাইবে না, গাইতে পারবে না।
সুচিত্রাদির সঙ্গে ছিল আমার ঘনিষ্ঠ জানাশোনা। অনেকবার তাঁর সঙ্গে গেয়েছি একই মঞ্চে। কলকাতার এইচএমভি থেকে তাঁর পরিচালনায় বের হয় আমার গানের রেকর্ড। তিনি আমাকে খুব স্নেহ করতেন, ভালোবাসতেন।
সত্তরের দশকের মাঝামাঝি শিল্পী কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন স্বমহিমায় রবীন্দ্রসংগীতের সম্রাজ্ঞীর আসনে অধিষ্ঠিত, তখন আমি সংগীত ভবনের ছাত্রী হলাম। মোহরদির (কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায়) হাত ধরেই অনেকের সঙ্গে পরিচয় হয়। অনেক গুণী শিল্পীর সানি্নধ্যে আসার সুযোগ হয়।
আমার গুরু মোহরদি। রবীন্দ্রসংগীতের খুঁটিনাটি সব কিছুই আমি শিখেছি তাঁর কাছে। তার পরও অনেকের কাছে আমি উৎসাহ পেয়েছি। তাঁদের মধ্যে অন্যতম সুচিত্রা মিত্র।
রবীন্দ্রসংগীতের প্রতি ছোটবেলা থেকেই সুচিত্রা মিত্রের ঝোঁক ছিল। তাঁর প্রথম সংগীতগুরু ছিলেন পংকজ কুমার মলি্লক। তিনি কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরেরও সাহচর্য লাভ করেছিলেন। সুচিত্রা মিত্র তাঁর দীপ্ত গায়কিতে, ভঙ্গিতে, জোরালো উচ্চারণে তৈরি করেছেন রবীন্দ্রসংগীতের একটা নিজস্ব বলয়। সুচিত্রাদি নেই, এ বড় কঠিন সত্য। এর চেয়ে বড় সত্য হলো মানুষ যুগ যুগ ধরে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবে সুচিত্রা মিত্রের গান।

No comments

Powered by Blogger.