তায়েবী হত্যাকাণ্ড- যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি ১৪ মাস হাসপাতালে by কামরুল হাসান
খুনের মামলার যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি এক বছর আড়াই মাস (৪৪০ দিন) ধরে হাসপাতালে। আত্মসমর্পণের পর দুই দফায় মাত্র তিন দিন কারাগারে ছিলেন তিনি। তাঁর কোনো জটিল রোগের কথা জানা যায়নি। কাগজপত্রে লেখা, ‘পিঠে ব্যথা’।
ইয়াসিন রহমান ওরফে টিটো নামের এই ভিআইপি ‘রোগী’ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কেবিনে আরাম-আয়েশে আছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তাঁকে গুরুত্বপূর্ণ বন্দীর (ডিভিশন) মর্যাদাও দিয়েছে। ইয়াসিন চট্টগ্রামের বিশিষ্ট শিল্পপতি ও কেডিএস গ্রুপের মালিক খলিলুর রহমানের ছেলে। বহুল আলোচিত জিবরান তায়েবী হত্যা মামলায় তাঁকে যাবজ্জীবন সাজা দিয়েছেন হাইকোর্ট। ১৯৯৯ সালের ৯ জুন এ হত্যাকাণ্ড ঘটে।
শিল্পপতির পুত্রের এভাবে মাসের পর মাস হাসপাতালে অবস্থানের ঘটনা নিয়ে বিব্রত চিকিৎসক ও কারা প্রশাসন। বন্দীকে কারাগারে ফেরত পাঠাতে দফায় দফায় চিঠিও দিয়েছে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাঁকে ছাড়ছে না। কারণ জানতে চাইলে চিকিৎসক ও কারা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের একই জবাব, ‘সবই তো বোঝেন, প্রশ্ন করে বিব্রত করেন কেন?’
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শহিদুল গনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘এটি সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকের বিষয়, আমার বিষয় নয়। রোগীর চিকিৎসা করেন চিকিৎসক, পরিচালক নন।’
হাসপাতালে চিকিৎসা-সংশ্লিষ্ট কাগজপত্রে ইয়াসিনের রোগ লেখা আছে ‘পিঠ ব্যথা’। এ রোগের ‘চিকিৎসা’ চলছে এক বছর আড়াই মাস ধরে। গতকাল সকালে হাসপাতাল গেলে দেখা যায়, তাঁর কেবিনের সামনে দুই কারারক্ষী দাঁড়িয়ে আছেন। সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে কথা বলতে চাইলে ভেতর থেকে দ্রুত আলো নিভিয়ে দেওয়া হয়। পাশের কেবিন থেকে একজন বের হয়ে এসে বলেন, ‘উনি যে বন্দী, তা বোঝার উপায় নেই। একটু কেবিনের ভেতরে ঢুকে দেখেন, কী নেই—ল্যাপটপ, ফোন সবই আছে। রাতে বন্ধুদের নিয়ে আড্ডাও জমান। বড়লোক বাবা আছে, সবকিছু ম্যানেজ করছেন।’
ইয়াসিনের বাবা খলিলুর রহমানের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি পরে কথা বলতে বলে ফোন কেটে দেন।
পাঁচতলার ওয়ার্ডে দায়িত্বরত সেবিকার কাছে জানতে চাইলে তিনি কোনো কথা বলতে চাননি। আরেকজন সেবিকা জানান, নিউরোসার্জারি বিভাগের প্রধান কামাল উদ্দিনের অধীনে তিনি চিকিৎসাধীন। কামাল উদ্দিন ও বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আনিসুল ইসলাম খান তাঁকে চিকিৎসা দেন।
আনিসুল ইসলাম খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘এ নিয়ে কী আর বলব? সবই তো বোঝেন। তবে ছেলেটার পিঠে ব্যথার কিছু আলামত আছে। আমি ও কামাল ভাই তাঁকে অপারেশনের পরামর্শ দিয়েছি। কিন্তু তারা করি, করব বলে কোনো সিদ্ধান্ত দিচ্ছে না। আমরা আর কী করব বলুন?’
তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন চিকিৎসক বলেন, তিনি প্রথম থেকেই সুস্থ ছিলেন। যেহেতু হাসপাতালে আছেন, তাই চিকিৎসকেরা তাঁকে দেখছেন।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, কিছুদিন আগে চিকিৎসকেরা তাঁকে ছাড়পত্র দিতে চেয়েছিলেন। এ সময় আদালত থেকে চিকিৎসার জন্য আদেশ এনে তাঁকে ঢাকায় বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে নেওয়া হয়। কারাগারের নথিতে দেখা যায়, গত বছরের ৩ এপ্রিল চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে নেওয়া হয় তাঁকে। চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় নেওয়ার পর কারাগারের ভেতরে না নিয়ে ওই দিনই কারা ফটক থেকে তাঁকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে কিছুদিন থাকার পর ৩০ মে তাঁকে আবার চট্টগ্রামে নেওয়া হয়।
যোগাযোগ করা হলে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে নিউরোসার্জারি বিভাগের অধ্যাপক এ টি এম মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘রোগী পিঠের ব্যথার কথা বলেছিলেন। আমরা তাঁকে অপারেশন করার পরামর্শ দিয়েছিলাম। কিন্তু তিনি রাজি না হয়ে চলে গেছেন।’
তবে হাসপাতাল সূত্র জানিয়েছে, ইয়াসিনকে ছয় মাস হাসপাতালে রাখার তৎপরতা শুরু হয়েছিল। কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রাজি হয়নি।
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম কারাগারের জ্যেষ্ঠ তত্ত্বাবধায়ক মো. ছগীর মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘এভাবে কেবিনে বন্দী রেখে চিকিৎসার বিধান নেই। আমি নিজে হাসপাতালের পরিচালকের সঙ্গে দেখা করে তাঁকে ছাড়পত্র দিতে বলেছি। তা ছাড়া দীর্ঘদিন বন্দীকে বাইরে রাখা নিরাপত্তার জন্যও হুমকি। আমি এ ব্যাপারে কয়েক দফা চিঠিও দিয়েছি। কিন্তু হাসপাতাল না ছাড়লে আমি কী করব?’
কারা সূত্র জানায়, কারাগারে নেওয়ার পর থেকেই ইয়াসিনকে হাসপাতালে রাখার ব্যাপারে বিভিন্ন মহল থেকে তদবির আসতে থাকে। শেষ পর্যন্ত প্রথমে দুই দিন তাঁকে কারাগারের হাসপাতালে রাখা হয়। এরপর পাঠানো হয় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে তাঁর জন্য কেবিন বরাদ্দের ব্যবস্থাও করা হয়। সেই থেকে দীর্ঘদিন তিনি পাঁচতলার ২৯ নম্বর ওয়ার্ডের ২২ নম্বর কেবিনে ছিলেন। মাঝে দুটি কেবিন বদল করা হয়েছে। এখন আছেন পাঁচতলার ১৭ নম্বরে কেবিনে।
কারাগারে থাকা নথিপত্রে দেখা গেছে, খুনের মামলার যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি ইয়াসিন এখন ডিভিশন পাওয়া বন্দী। কারাবিধি অনুসারে আদালত ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সমন্বয় করে বন্দীদের ডিভিশন নির্ধারণ করতে পারে। সেই সুযোগ নিয়ে তিনি ডিভিশনের জন্য আবেদন করেন চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালতে। হাকিম মুজিবুর রহমান ২০১১ সালের ১৯ অক্টোবর তাঁকে ডিভিশন দেওয়ার পক্ষে মত দেন। এরপর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গত বছরের ৩০ অক্টোবর থেকে তাঁর ডিভিশন কার্যকর করেন।
ফিরে দেখা: ১৯৯৯ সালের ৯ জুন চট্টগ্রামের আগ্রাবাদের কার্যালয় থেকে খুলশীর বাসায় ফেরার পথে জাহাজ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান সেন্ট্রান্স মেরিটাইম (বিডি) লিমিটেডের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তা টি এ খানের একমাত্র ছেলে জিবরান তায়েবি খুন হন। পাঁচ মাস তদন্তের পর ওই বছরের ২২ নভেম্বর সিআইডি চট্টগ্রাম অঞ্চলের এএসপি কাদের খান শিল্পপতির পুত্রসহ আটজনকে আসামি করে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দাখিল করেন।
অভিযোগপত্রে বলা হয়, আরেক শিল্পপতির মেয়ের সঙ্গে ইয়াসিন রহমান ও ভারতীয় নাগরিক জিবরানের ত্রিকোণ প্রেমের কারণে এ হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়। ইয়াসিন ঈর্ষান্বিত হয়ে ভাড়া করা খুনি দিয়ে জিবরানকে হত্যা করেন। চট্টগ্রামের পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকতে তাঁর উপস্থিতিতে খুনের পরিকল্পনা করা হয়।
রায়: ২০০২ সালের ১২ আগস্ট চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক ফজলুল করিম এ মামলার প্রধান আসামি ইয়াসিন রহমানকে বেকসুর খালাস দিয়ে অন্য ছয়জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেন। রাষ্ট্রপক্ষ এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করলে উচ্চ আদালত ২০০৭ সালের ২৮ মার্চ ইয়াসিন রহমানকে যাবজ্জীবন সাজা দিয়ে মামলার আরেক আসামি মোহাম্মদ ছিদ্দিককে বেকসুর খালাস দেন।
১২ বছর আত্মগোপনে: হত্যাকাণ্ডের পর থেকে হাইকোর্টের রায় ঘোষণা পর্যন্ত প্রায় ১২ বছর আত্মগোপনে ছিলেন ইয়াসিন। এরপর ২০১১ সালের ১০ অক্টোবর চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম এস এম মজিবুর রহমানের আদালতে আত্মসমর্পণ করলে বিচারক তাঁকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হলে গত বছরের ১ আগস্ট সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ইয়াসিনের আবেদন খারিজ করে দিয়ে হাইকোর্টের রায় বহাল রাখেন।
শিল্পপতির পুত্রের এভাবে মাসের পর মাস হাসপাতালে অবস্থানের ঘটনা নিয়ে বিব্রত চিকিৎসক ও কারা প্রশাসন। বন্দীকে কারাগারে ফেরত পাঠাতে দফায় দফায় চিঠিও দিয়েছে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাঁকে ছাড়ছে না। কারণ জানতে চাইলে চিকিৎসক ও কারা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের একই জবাব, ‘সবই তো বোঝেন, প্রশ্ন করে বিব্রত করেন কেন?’
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শহিদুল গনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘এটি সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকের বিষয়, আমার বিষয় নয়। রোগীর চিকিৎসা করেন চিকিৎসক, পরিচালক নন।’
হাসপাতালে চিকিৎসা-সংশ্লিষ্ট কাগজপত্রে ইয়াসিনের রোগ লেখা আছে ‘পিঠ ব্যথা’। এ রোগের ‘চিকিৎসা’ চলছে এক বছর আড়াই মাস ধরে। গতকাল সকালে হাসপাতাল গেলে দেখা যায়, তাঁর কেবিনের সামনে দুই কারারক্ষী দাঁড়িয়ে আছেন। সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে কথা বলতে চাইলে ভেতর থেকে দ্রুত আলো নিভিয়ে দেওয়া হয়। পাশের কেবিন থেকে একজন বের হয়ে এসে বলেন, ‘উনি যে বন্দী, তা বোঝার উপায় নেই। একটু কেবিনের ভেতরে ঢুকে দেখেন, কী নেই—ল্যাপটপ, ফোন সবই আছে। রাতে বন্ধুদের নিয়ে আড্ডাও জমান। বড়লোক বাবা আছে, সবকিছু ম্যানেজ করছেন।’
ইয়াসিনের বাবা খলিলুর রহমানের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি পরে কথা বলতে বলে ফোন কেটে দেন।
পাঁচতলার ওয়ার্ডে দায়িত্বরত সেবিকার কাছে জানতে চাইলে তিনি কোনো কথা বলতে চাননি। আরেকজন সেবিকা জানান, নিউরোসার্জারি বিভাগের প্রধান কামাল উদ্দিনের অধীনে তিনি চিকিৎসাধীন। কামাল উদ্দিন ও বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আনিসুল ইসলাম খান তাঁকে চিকিৎসা দেন।
আনিসুল ইসলাম খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘এ নিয়ে কী আর বলব? সবই তো বোঝেন। তবে ছেলেটার পিঠে ব্যথার কিছু আলামত আছে। আমি ও কামাল ভাই তাঁকে অপারেশনের পরামর্শ দিয়েছি। কিন্তু তারা করি, করব বলে কোনো সিদ্ধান্ত দিচ্ছে না। আমরা আর কী করব বলুন?’
তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন চিকিৎসক বলেন, তিনি প্রথম থেকেই সুস্থ ছিলেন। যেহেতু হাসপাতালে আছেন, তাই চিকিৎসকেরা তাঁকে দেখছেন।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, কিছুদিন আগে চিকিৎসকেরা তাঁকে ছাড়পত্র দিতে চেয়েছিলেন। এ সময় আদালত থেকে চিকিৎসার জন্য আদেশ এনে তাঁকে ঢাকায় বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে নেওয়া হয়। কারাগারের নথিতে দেখা যায়, গত বছরের ৩ এপ্রিল চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে নেওয়া হয় তাঁকে। চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় নেওয়ার পর কারাগারের ভেতরে না নিয়ে ওই দিনই কারা ফটক থেকে তাঁকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে কিছুদিন থাকার পর ৩০ মে তাঁকে আবার চট্টগ্রামে নেওয়া হয়।
যোগাযোগ করা হলে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে নিউরোসার্জারি বিভাগের অধ্যাপক এ টি এম মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘রোগী পিঠের ব্যথার কথা বলেছিলেন। আমরা তাঁকে অপারেশন করার পরামর্শ দিয়েছিলাম। কিন্তু তিনি রাজি না হয়ে চলে গেছেন।’
তবে হাসপাতাল সূত্র জানিয়েছে, ইয়াসিনকে ছয় মাস হাসপাতালে রাখার তৎপরতা শুরু হয়েছিল। কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রাজি হয়নি।
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম কারাগারের জ্যেষ্ঠ তত্ত্বাবধায়ক মো. ছগীর মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘এভাবে কেবিনে বন্দী রেখে চিকিৎসার বিধান নেই। আমি নিজে হাসপাতালের পরিচালকের সঙ্গে দেখা করে তাঁকে ছাড়পত্র দিতে বলেছি। তা ছাড়া দীর্ঘদিন বন্দীকে বাইরে রাখা নিরাপত্তার জন্যও হুমকি। আমি এ ব্যাপারে কয়েক দফা চিঠিও দিয়েছি। কিন্তু হাসপাতাল না ছাড়লে আমি কী করব?’
কারা সূত্র জানায়, কারাগারে নেওয়ার পর থেকেই ইয়াসিনকে হাসপাতালে রাখার ব্যাপারে বিভিন্ন মহল থেকে তদবির আসতে থাকে। শেষ পর্যন্ত প্রথমে দুই দিন তাঁকে কারাগারের হাসপাতালে রাখা হয়। এরপর পাঠানো হয় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে তাঁর জন্য কেবিন বরাদ্দের ব্যবস্থাও করা হয়। সেই থেকে দীর্ঘদিন তিনি পাঁচতলার ২৯ নম্বর ওয়ার্ডের ২২ নম্বর কেবিনে ছিলেন। মাঝে দুটি কেবিন বদল করা হয়েছে। এখন আছেন পাঁচতলার ১৭ নম্বরে কেবিনে।
কারাগারে থাকা নথিপত্রে দেখা গেছে, খুনের মামলার যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি ইয়াসিন এখন ডিভিশন পাওয়া বন্দী। কারাবিধি অনুসারে আদালত ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সমন্বয় করে বন্দীদের ডিভিশন নির্ধারণ করতে পারে। সেই সুযোগ নিয়ে তিনি ডিভিশনের জন্য আবেদন করেন চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালতে। হাকিম মুজিবুর রহমান ২০১১ সালের ১৯ অক্টোবর তাঁকে ডিভিশন দেওয়ার পক্ষে মত দেন। এরপর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গত বছরের ৩০ অক্টোবর থেকে তাঁর ডিভিশন কার্যকর করেন।
ফিরে দেখা: ১৯৯৯ সালের ৯ জুন চট্টগ্রামের আগ্রাবাদের কার্যালয় থেকে খুলশীর বাসায় ফেরার পথে জাহাজ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান সেন্ট্রান্স মেরিটাইম (বিডি) লিমিটেডের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তা টি এ খানের একমাত্র ছেলে জিবরান তায়েবি খুন হন। পাঁচ মাস তদন্তের পর ওই বছরের ২২ নভেম্বর সিআইডি চট্টগ্রাম অঞ্চলের এএসপি কাদের খান শিল্পপতির পুত্রসহ আটজনকে আসামি করে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দাখিল করেন।
অভিযোগপত্রে বলা হয়, আরেক শিল্পপতির মেয়ের সঙ্গে ইয়াসিন রহমান ও ভারতীয় নাগরিক জিবরানের ত্রিকোণ প্রেমের কারণে এ হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়। ইয়াসিন ঈর্ষান্বিত হয়ে ভাড়া করা খুনি দিয়ে জিবরানকে হত্যা করেন। চট্টগ্রামের পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকতে তাঁর উপস্থিতিতে খুনের পরিকল্পনা করা হয়।
রায়: ২০০২ সালের ১২ আগস্ট চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক ফজলুল করিম এ মামলার প্রধান আসামি ইয়াসিন রহমানকে বেকসুর খালাস দিয়ে অন্য ছয়জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেন। রাষ্ট্রপক্ষ এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করলে উচ্চ আদালত ২০০৭ সালের ২৮ মার্চ ইয়াসিন রহমানকে যাবজ্জীবন সাজা দিয়ে মামলার আরেক আসামি মোহাম্মদ ছিদ্দিককে বেকসুর খালাস দেন।
১২ বছর আত্মগোপনে: হত্যাকাণ্ডের পর থেকে হাইকোর্টের রায় ঘোষণা পর্যন্ত প্রায় ১২ বছর আত্মগোপনে ছিলেন ইয়াসিন। এরপর ২০১১ সালের ১০ অক্টোবর চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম এস এম মজিবুর রহমানের আদালতে আত্মসমর্পণ করলে বিচারক তাঁকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হলে গত বছরের ১ আগস্ট সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ইয়াসিনের আবেদন খারিজ করে দিয়ে হাইকোর্টের রায় বহাল রাখেন।
No comments