প্রকাশনা শিল্প-বইমেলা নিয়ে চাই নতুন পরিকল্পনা by রবীন আহসান
প্রতি বছরের মতো এবারও ফেব্রুয়ারি মাসজুড়ে একুশে বইমেলার আয়োজন করবে বাংলা একাডেমী। এক সময় লেখক হিসেবে বাংলা একাডেমীর বইমেলায় অংশগ্রহণ ছিল। ১৫ বছর ধরে প্রকাশক হয়ে একুশের বইমেলায় অংশ নিচ্ছি।
শ্রদ্ধেয় প্রকাশক চিত্তরঞ্জন সাহার হাত ধরে বেড়ে ওঠা একুশের বইমেলা এখনও এদেশের পাঠক-লেখক-প্রকাশকের প্রধান আশ্রয়। মাসজুড়ে একুশে বইমেলা ছাড়া বাংলাদেশে প্রকাশিত সৃজনশীল-মননশীল বইয়ের বিপণন ও বিক্রির তেমন কোনো ব্যবস্থা নেই বললেই চলে। আমাদের গণমাধ্যমও একুশের বইমেলা ছাড়া বছরের ১১ মাসে বই, লেখক, প্রকাশনা নিয়ে পাঠকদের মতামত তুলে ধরে না। দেশের অধিকাংশ দৈনিকের সাহিত্য পাতায় বইয়ের আলোচনা-সমালোচনা থাকে না। ফলে একুশের বইমেলায় দেশের তাবৎ গণমাধ্যমের ঝাঁপিয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে ১১ মাস বইবিমুখ পাঠকও তার প্রিয় বইটির সন্ধানে জড়ো হতে থাকে একুশের বইমেলায়। ভাষা আন্দোলনের চেতনায় গড়ে ওঠা একুশের বইমেলার বয়স আর বাংলাদেশের বয়স সমান। একুশের বইমেলার বয়স বাড়লেও এই মেলার শ্রীবৃদ্ধি বাড়েনি। বাংলা একাডেমীর সামান্য প্রাঙ্গণে এই বিশাল বইমেলার আয়োজনের ফলে বইমেলায় ক্রেতা-পাঠক-লেখকরা চাইলেও আর আগের মতো স্বাভাবিকভাবে প্রবেশ করতে পারেন না।
ক্ষমতাসীন, সুশীল সমাজের কারোই এ বিষয়ে মাথাব্যথা নেই। ৬ ফুট ল্প ৬ ফুট এত ছোট বইয়ের স্টল হতে পারে, এটা বাংলাদেশেই সম্ভব। ভারতের আগরতলার বইমেলাও আমাদের চেয়ে অনেক সুন্দর হয়। আমাদের পাঠকের বই দেখার যেমন সুযোগ নেই। তেমনি প্রকাশকের সুযোগ নেই তার প্রিয় বইগুলো সুন্দর করে পাঠকের জন্য সাজাবার। ভিড়ের সময় শিশু-নারী-বৃদ্ধদের জন্য একুশের বইমেলা হয়ে উঠছে নরক যন্ত্রণা। আমার জানা মতে গত ১০ বছরে একুশের বইমেলায় শিশুসাহিত্যের বইয়ের বিক্রির হার কমেছে। সবচেয়ে ব্যয়বহুল শিশুদের বই ছাপা। শিশুদের বই বিক্রি কম হচ্ছে বলে প্রকাশকরাও আর শিশুসাহিত্যের বই ছাপতে আগ্রহী হচ্ছেন না। এই পরিস্থিতি চলতে থাকলে আগামীতে নতুন প্রজন্মের মধ্যে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
আমি জেনেছি বাংলা একাডেমীর চার দেয়ালের বাইরে এবার একুশের বইমেলা আয়োজনের উদ্যোগ নেই। শুনে ভালো লাগল। তবে ছোট স্টলগুলো অন্তত ১০ ফুট করা দরকার। যে দেশে বইমেলারই কোনো সৌন্দর্য নেই সেখানে রুচিবান মানুষ, ভালো সাহিত্য, একটি সুন্দর গণতান্ত্রিক সমাজের স্বপ্ন দেখা দুরূহ ব্যাপার। তার পরও একুশে বইমেলা নিয়ে আমার কয়েকটি প্রস্তাব সরকার, সুশীল সমাজ ও আয়োজক প্রতিষ্ঠান বাংলা একাডেমীর কাছে তুলে ধরছি।
১. বাংলা একাডেমী চত্বরে এবারের বইমেলা হলে একাডেমী চত্বরে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ও মাসব্যাপী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের জন্য যে বিশাল প্যান্ডেল বানানো হয়, তা যেন এবার না বানানো হয়। উদ্বোধনী অনুষ্ঠান বাংলা একাডেমীর নবনির্মিত মিলনায়তনে করা হোক এবং মাসব্যাপী সাহিত্য আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ওই মিলনায়তনের মধ্যে করা হোক। একুশে বইমেলায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের জন্য যে জায়গাটি ব্যবহার করা হয়, সেখানে কম করে হলেও ৫০টি প্রকাশনা সংস্থার স্টল হবে। ৪০ বছর পর গান শুনিয়ে বইমেলায় ভিড় বাড়ানোর দরকার নেই। বইয়ের জন্য যে পাঠকদের প্রেম আছে, তারা যেন নির্বিঘ্নে বইমেলায় আসতে পারেন সেই ব্যবস্থা থাকা জরুরি বলে আমি মনে করি।
২. শিশু-কিশোর-নারী-বৃদ্ধদের জন্য একটি আলাদা গেট ও লাইনের ব্যবস্থা এবং শিশুদের বইয়ের নির্দিষ্ট স্থান ও তার আকর্ষণীয় ডেকোরেশন থাকা দরকার। আয়োজিত সংস্থা শিশু-কিশোর চত্বরের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে নিজেরাই পদক্ষেপ নিলে ভালো হয়। কারণ আমাদের প্রিয় বইমেলা দিন দিন রঙহীন ধূসর হয়ে উঠছে।
একুশের বইমেলার আলোচ্যসূচিতে বই প্রকাশনা সংস্থা, বইয়ের ভবিষ্যৎ, ডিজিটাল বইয়ের সম্ভাবনা এসব বিষয়ে উঠে আসা দরকার। বাংলা একাডেমীর গত ১০ বছরের বইমেলার আলোচ্যসূচিতে এ বিষয়গুলো উপেক্ষিত হয়ে আসছে। আলোচনার বিষয় হতে পারে গত বছরের সেরা কিছু বই। নতুন বছরে ভালো বই ও লেখকদের নিয়ে অনুষ্ঠান করলে পাঠক উপকৃত হবে।
গণমাধ্যম : দেশে প্রায় ২৫টির মতো বেসরকারি টিভি চ্যানেল রয়েছে। বিটিভিসহ অন্য চ্যানেলগুলোকে বইমেলায় সরাসরি সম্প্রচারের জন্য বাংলা একাডেমীর ভবনের মধ্যে ছোট ছোট স্টুডিও করার সুযোগ দিলে বইমেলার রাস্তাগুলো অযাচিত ভিড়ের হাত থেকে রক্ষা পাবে। টেলিভিশন ক্যামেরা দেখলেই এক ধরনের মানুষ বাঁদর নাচ দেখার জন্য ভিড় করে আশপাশে। যা বইমেলার স্বাভাবিক পরিবেশ নষ্ট করছে সাম্প্রতিক সময়ে।
প্রকাশনা সংস্থা বাছাই ও স্টল বরাদ্দে আয়োজক সংস্থাকে আরও কঠোর ও মনোযোগী হওয়া দরকার। সারাবছর প্রকাশনা সংস্থার খবর নেই, ভালো বই নেই, পাইরেট বই, নিম্নমানের বইয়ের প্রকাশনা সংস্থাও ৩ ইউনিট স্টল পাচ্ছে। এ অনিয়ম ঠেকানো গেলে বাংলা একাডেমীর চত্বরের ভেতরেই গোছানো বইমেলা আয়োজন সম্ভব। রেকর্ড পরিমাণ বই প্রকাশের চেয়ে প্রকাশকদের ভালো মানের ৪-৫টি বই প্রতি বছর প্রকাশে উদ্বুদ্ধ করা দরকার। প্রতি বছর ২০টি বই প্রকাশ করতে হবে_ এই চাওয়া থেকে বাংলা একাডেমীকে সরে আসতে হবে। প্রতি বছর একুশে বইমেলায় প্রায় ৩ হাজার নতুন বই প্রকাশের রেকর্ড না গড়ে আমরা যেন ৫০০ ভালো মানের বইয়ের প্রত্যাশা করি।
বাংলা একাডেমীর প্রাঙ্গণের সামনের রাস্তায় কোনো স্টল বরাদ্দ না দেওয়ার জন্য কর্তৃপক্ষকে আহ্বান জানাই। রাস্তার পাশের স্টলগুলোতে ভারতীয় পাইরেট বইয়ে সয়লাব হয়ে থাকে। পাঠক মূল বইমেলায় ঢোকার আগেই এই বই কিনে বাড়ি ফেরে। ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেন বাংলা একাডেমীর মহাপরিচালক থাকার সময় রাস্তা থেকে বারোয়ারি বইমেলা তুলে দেন। প্রায় ১০ বছর পর্যন্ত এ অবস্থা চলতে থাকলেও ৪ বছর ধরে রাস্তায় আবারও বারোয়ারি বইমেলা ফিরে আসায় মূল বইমেলা বা প্রকৃত প্রকাশকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন আশঙ্কাজনক হারে। পাইরেট বই ও এ জাতীয় বইয়ের প্রকাশনা সংস্থাকে বাংলা একাডেমীর বইমেলা থেকে দূরে রাখতে হবে। সৃজনশীল মননশীল নতুন প্রকাশনা সংস্থাগুলোকে লিটল ম্যাগাজিন চত্বরে ছোট আকারের স্টল বরাদ্দ দিয়ে তাদের বেড়ে ওঠার সুযোগ দিতে হবে। যাতে তারা আগামী দিনের ভালো প্রকাশক হয়ে উঠতে পারে। একুশের বইমেলায় আমাদের প্রয়োজন মেধাবী তরুণ লেখক এবং বিভিন্ন বিষয়ের ওপর বই। শুধু কবিতা, ছোটগল্প বা উপন্যাস নয়, বিষয় বৈচিত্র্যময় দেশের সৃজনশীল প্রকাশনা সংস্থাগুলোর কোনো শক্তিশালী সংগঠন না থাকায় প্রকাশনা বিষয়ক তথ্য যাচাই-বাছাই করার সুযোগ নেই। তেমনি একটি যুগোপযোগী ভালো বইমেলার আয়োজন করা সম্ভব হচ্ছে না।
একুশে বইমেলা শুরু হওয়ার পর দেশের লেখক-প্রকাশক-পাঠকদের নানাবিধ সমালোচনা গণমাধ্যমে শুরু হলেও বইমেলার আগে এসব সমস্যার সমাধান না হওয়ায় প্রতি বছর নিত্যনতুন বাধা-প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হচ্ছে এই মেলায়। তাই একুশে বইমেলা শুরু হওয়ার আগেই এ বিষয়গুলোর প্রতি নজর দেওয়া প্রয়োজন বলে আমি মনে করি।
রবীন আহসান : ছড়াকার ও প্রকাশক
ক্ষমতাসীন, সুশীল সমাজের কারোই এ বিষয়ে মাথাব্যথা নেই। ৬ ফুট ল্প ৬ ফুট এত ছোট বইয়ের স্টল হতে পারে, এটা বাংলাদেশেই সম্ভব। ভারতের আগরতলার বইমেলাও আমাদের চেয়ে অনেক সুন্দর হয়। আমাদের পাঠকের বই দেখার যেমন সুযোগ নেই। তেমনি প্রকাশকের সুযোগ নেই তার প্রিয় বইগুলো সুন্দর করে পাঠকের জন্য সাজাবার। ভিড়ের সময় শিশু-নারী-বৃদ্ধদের জন্য একুশের বইমেলা হয়ে উঠছে নরক যন্ত্রণা। আমার জানা মতে গত ১০ বছরে একুশের বইমেলায় শিশুসাহিত্যের বইয়ের বিক্রির হার কমেছে। সবচেয়ে ব্যয়বহুল শিশুদের বই ছাপা। শিশুদের বই বিক্রি কম হচ্ছে বলে প্রকাশকরাও আর শিশুসাহিত্যের বই ছাপতে আগ্রহী হচ্ছেন না। এই পরিস্থিতি চলতে থাকলে আগামীতে নতুন প্রজন্মের মধ্যে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
আমি জেনেছি বাংলা একাডেমীর চার দেয়ালের বাইরে এবার একুশের বইমেলা আয়োজনের উদ্যোগ নেই। শুনে ভালো লাগল। তবে ছোট স্টলগুলো অন্তত ১০ ফুট করা দরকার। যে দেশে বইমেলারই কোনো সৌন্দর্য নেই সেখানে রুচিবান মানুষ, ভালো সাহিত্য, একটি সুন্দর গণতান্ত্রিক সমাজের স্বপ্ন দেখা দুরূহ ব্যাপার। তার পরও একুশে বইমেলা নিয়ে আমার কয়েকটি প্রস্তাব সরকার, সুশীল সমাজ ও আয়োজক প্রতিষ্ঠান বাংলা একাডেমীর কাছে তুলে ধরছি।
১. বাংলা একাডেমী চত্বরে এবারের বইমেলা হলে একাডেমী চত্বরে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ও মাসব্যাপী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের জন্য যে বিশাল প্যান্ডেল বানানো হয়, তা যেন এবার না বানানো হয়। উদ্বোধনী অনুষ্ঠান বাংলা একাডেমীর নবনির্মিত মিলনায়তনে করা হোক এবং মাসব্যাপী সাহিত্য আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ওই মিলনায়তনের মধ্যে করা হোক। একুশে বইমেলায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের জন্য যে জায়গাটি ব্যবহার করা হয়, সেখানে কম করে হলেও ৫০টি প্রকাশনা সংস্থার স্টল হবে। ৪০ বছর পর গান শুনিয়ে বইমেলায় ভিড় বাড়ানোর দরকার নেই। বইয়ের জন্য যে পাঠকদের প্রেম আছে, তারা যেন নির্বিঘ্নে বইমেলায় আসতে পারেন সেই ব্যবস্থা থাকা জরুরি বলে আমি মনে করি।
২. শিশু-কিশোর-নারী-বৃদ্ধদের জন্য একটি আলাদা গেট ও লাইনের ব্যবস্থা এবং শিশুদের বইয়ের নির্দিষ্ট স্থান ও তার আকর্ষণীয় ডেকোরেশন থাকা দরকার। আয়োজিত সংস্থা শিশু-কিশোর চত্বরের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে নিজেরাই পদক্ষেপ নিলে ভালো হয়। কারণ আমাদের প্রিয় বইমেলা দিন দিন রঙহীন ধূসর হয়ে উঠছে।
একুশের বইমেলার আলোচ্যসূচিতে বই প্রকাশনা সংস্থা, বইয়ের ভবিষ্যৎ, ডিজিটাল বইয়ের সম্ভাবনা এসব বিষয়ে উঠে আসা দরকার। বাংলা একাডেমীর গত ১০ বছরের বইমেলার আলোচ্যসূচিতে এ বিষয়গুলো উপেক্ষিত হয়ে আসছে। আলোচনার বিষয় হতে পারে গত বছরের সেরা কিছু বই। নতুন বছরে ভালো বই ও লেখকদের নিয়ে অনুষ্ঠান করলে পাঠক উপকৃত হবে।
গণমাধ্যম : দেশে প্রায় ২৫টির মতো বেসরকারি টিভি চ্যানেল রয়েছে। বিটিভিসহ অন্য চ্যানেলগুলোকে বইমেলায় সরাসরি সম্প্রচারের জন্য বাংলা একাডেমীর ভবনের মধ্যে ছোট ছোট স্টুডিও করার সুযোগ দিলে বইমেলার রাস্তাগুলো অযাচিত ভিড়ের হাত থেকে রক্ষা পাবে। টেলিভিশন ক্যামেরা দেখলেই এক ধরনের মানুষ বাঁদর নাচ দেখার জন্য ভিড় করে আশপাশে। যা বইমেলার স্বাভাবিক পরিবেশ নষ্ট করছে সাম্প্রতিক সময়ে।
প্রকাশনা সংস্থা বাছাই ও স্টল বরাদ্দে আয়োজক সংস্থাকে আরও কঠোর ও মনোযোগী হওয়া দরকার। সারাবছর প্রকাশনা সংস্থার খবর নেই, ভালো বই নেই, পাইরেট বই, নিম্নমানের বইয়ের প্রকাশনা সংস্থাও ৩ ইউনিট স্টল পাচ্ছে। এ অনিয়ম ঠেকানো গেলে বাংলা একাডেমীর চত্বরের ভেতরেই গোছানো বইমেলা আয়োজন সম্ভব। রেকর্ড পরিমাণ বই প্রকাশের চেয়ে প্রকাশকদের ভালো মানের ৪-৫টি বই প্রতি বছর প্রকাশে উদ্বুদ্ধ করা দরকার। প্রতি বছর ২০টি বই প্রকাশ করতে হবে_ এই চাওয়া থেকে বাংলা একাডেমীকে সরে আসতে হবে। প্রতি বছর একুশে বইমেলায় প্রায় ৩ হাজার নতুন বই প্রকাশের রেকর্ড না গড়ে আমরা যেন ৫০০ ভালো মানের বইয়ের প্রত্যাশা করি।
বাংলা একাডেমীর প্রাঙ্গণের সামনের রাস্তায় কোনো স্টল বরাদ্দ না দেওয়ার জন্য কর্তৃপক্ষকে আহ্বান জানাই। রাস্তার পাশের স্টলগুলোতে ভারতীয় পাইরেট বইয়ে সয়লাব হয়ে থাকে। পাঠক মূল বইমেলায় ঢোকার আগেই এই বই কিনে বাড়ি ফেরে। ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেন বাংলা একাডেমীর মহাপরিচালক থাকার সময় রাস্তা থেকে বারোয়ারি বইমেলা তুলে দেন। প্রায় ১০ বছর পর্যন্ত এ অবস্থা চলতে থাকলেও ৪ বছর ধরে রাস্তায় আবারও বারোয়ারি বইমেলা ফিরে আসায় মূল বইমেলা বা প্রকৃত প্রকাশকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন আশঙ্কাজনক হারে। পাইরেট বই ও এ জাতীয় বইয়ের প্রকাশনা সংস্থাকে বাংলা একাডেমীর বইমেলা থেকে দূরে রাখতে হবে। সৃজনশীল মননশীল নতুন প্রকাশনা সংস্থাগুলোকে লিটল ম্যাগাজিন চত্বরে ছোট আকারের স্টল বরাদ্দ দিয়ে তাদের বেড়ে ওঠার সুযোগ দিতে হবে। যাতে তারা আগামী দিনের ভালো প্রকাশক হয়ে উঠতে পারে। একুশের বইমেলায় আমাদের প্রয়োজন মেধাবী তরুণ লেখক এবং বিভিন্ন বিষয়ের ওপর বই। শুধু কবিতা, ছোটগল্প বা উপন্যাস নয়, বিষয় বৈচিত্র্যময় দেশের সৃজনশীল প্রকাশনা সংস্থাগুলোর কোনো শক্তিশালী সংগঠন না থাকায় প্রকাশনা বিষয়ক তথ্য যাচাই-বাছাই করার সুযোগ নেই। তেমনি একটি যুগোপযোগী ভালো বইমেলার আয়োজন করা সম্ভব হচ্ছে না।
একুশে বইমেলা শুরু হওয়ার পর দেশের লেখক-প্রকাশক-পাঠকদের নানাবিধ সমালোচনা গণমাধ্যমে শুরু হলেও বইমেলার আগে এসব সমস্যার সমাধান না হওয়ায় প্রতি বছর নিত্যনতুন বাধা-প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হচ্ছে এই মেলায়। তাই একুশে বইমেলা শুরু হওয়ার আগেই এ বিষয়গুলোর প্রতি নজর দেওয়া প্রয়োজন বলে আমি মনে করি।
রবীন আহসান : ছড়াকার ও প্রকাশক
No comments