হাস্যকর কাণ্ডকীর্তির এক উদ্বোধনী অনুষ্ঠান
গতবারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানকে ছাড়ানো যাবে বলে ভাবা যায়নি। ভাবনাটা একটু কষ্টকর বৈ কি! এতটাই 'জঘন্য' ছিল বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) উদ্বোধনী আসরের উদ্বোধন।
কিন্তু কাল দ্বিতীয় আসরের পর্দা উন্মোচন দেখার পর সেটিকেও এখন মনে হতে পারে বেইজিং অলিম্পিকের উদ্বোধন! বুঝে নিন তাহলে এবারের অবস্থাটা!
গতবার তবু অংশগ্রহণকারী সব দল নিজেদের পতাকা নিয়ে নিজস্ব আবহ সংগীত বাজিয়ে মাঠ প্রদক্ষিণ করেছিল। যত হাস্যকরই হোক, ছিল এক 'থিম সং'। আতশবাজির খেলা ক্ষণিকের জন্য হলেও ছড়িয়েছিল মুগ্ধতার পরশ। কাল এসবের বালাই নেই। সাত দলের মধ্যে কাউকেই আগে থেকে কিছু বলা হয়নি। মাঠে তাই ছাড়া ছাড়া উপস্থিতি থাকলেও দর্শকদের সামনে আসেননি ক্রিকেটাররা। থিম সংয়ের বালাই নেই। আর আতশবাজির নামে মিনিট পাঁচেক যা হলো, সেটি দেখিয়ে হয়তো আশির দশকে দর্শকদের হাততালি কুড়ানো যেত। এই যুগে নয়।
দর্শক? তাদের সঙ্গে তো প্রতারণা হয়েছে নানাভাবে। প্রথমত, উচ্চমূল্যের টিকিট কেটে অল্প কিছু লোক মাঠে এসেছিল। পরে যখন গ্যালারির ফাঁক ভরতে স্টেডিয়ামের গেটগুলো উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়, তখন শুরুতে আসা দর্শকরা নিজেদের প্রতারিত ভাবতেই পারে। একই উপলব্ধি হতে পারে, বেশির ভাগ শিল্পী যখন রেকর্ড করা গানের সঙ্গে 'লিপ সিং' করে দায় সারেন। কিংবা নামি-দামি যেসব শিল্পীর কথা বলে টিকিট বিক্রি হয়েছে, তাঁদের কারো কারো টিকির দেখাও মেলে না। আর সামগ্রিক অর্থে অনুষ্ঠানের মান হতাশাজনকের চেয়েও বেশি। বিভিন্ন দিবস উপলক্ষে পাড়ায় পাড়ায় যে বিচিত্রানুষ্ঠান হয়, তাও এর চেয়ে মন্দ নয়।
অমন অনুষ্ঠানে তবু কখনো মঞ্চ খালি পড়ে থাকে না। কাল তো শিল্পী সংকটে বিপিএলের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মাঝপথে ঘণ্টাখানেকেরও বেশি সময় ছিল শূন্য মঞ্চ। এমন বিব্রতকর অবস্থায় পাড়ার সংগঠনগুলোও কখনো পড়ে না!
অথচ আশার ফানুস কম ওড়ানো হয়নি এই অনুষ্ঠানকে ঘিরে। চোখধাঁধানো, জমকালো আয়োজনের সব বন্দোবস্ত নাকি পাকা। এতটাই যে, রাষ্ট্রপতির আসার কারণে অনুষ্ঠানের সময় কমাতে হওয়ায় চীনা অ্যাক্রোবেটদের প্রদর্শনীটি বাদ দেওয়ার ঘোষণা আসে। অর্থাৎ অন্যান্য অংশ এর চেয়েও চিত্তাকর্ষক! কিসের কী? মূল অনুষ্ঠান শুরুর আগে একটি প্রি-শো করার কথা ছিল। ফাঁকা গ্যালারির কারণে সেই প্রয়োজনীয়তা (!) বোধ হয় বোধ করেননি আয়োজকরা। ৫টার অনুষ্ঠান শুরু হয় সাড়ে ৬টা পেরিয়ে। রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান বিপিএলের দ্বিতীয় আসরের উদ্বোধন ঘোষণার পর হয় সেই আতশবাজি। ২০১০ সালের এসএ গেমস কিংবা ২০১১ বিশ্বকাপ ক্রিকেটের সঙ্গে তুলনাই চলে না এর, বড়জোর মহররমের সময় পুরনো ঢাকার পটকাবাজির সঙ্গে তা তুল্য। রুনা লায়লা এসে দুটো গানে ঠোঁট মিলিয়ে গেলেন চলে। মমতাজ করলেন গোটা তিনেক গান। বিপিএলের সাতটি দলের আঞ্চলিক এক টুকরো ঐতিহ্যের উপস্থাপনা হলো এরপর। আর এসব কিছুর মাঝে মাঝে নানান কাণ্ডকীর্তি তো হয়েছেই। এমনকি অকারণে হঠাৎ জাতীয় সংগীত বেজে উঠেছে পর্যন্ত!
ওই পর্যন্ত তবু ভালো। রাত ৮টা থেকে ৯টা ৫ মিনিট পর্যন্ত যা হয়েছে, সেই রঙ্গ অভূতপূর্ব। সবাই অপেক্ষায়, কিন্তু রঙ্গমঞ্চ শূন্য। কোনো শিল্পী নেই যে! বলিউডের নায়িকা জ্যাকুলিন ফার্র্নান্দেজ, 'শিলা কি জওয়ানি'র গায়িকা সুনিধি চৌহান, পাকিস্তানের আতিফ আসলাম- কারো দেখা নেই। দর্শকদের বেশির ভাগ নিতান্তই 'ফাও' এসেছিলেন বলে। সবাইকে যদি চড়া মূল্যের টিকিট কাটতে হতো, তাহলে অতটা ধৈর্য তারা দেখাত না নিশ্চিতভাবে। অনর্থ ঘটে যাওয়ার আশঙ্কা ছিল প্রবলভাবে।
ওই বিরতির পর নগরবাউল জেমস গান শুরু করলে অবশেষে একটু উল্লাস করার সুযোগ পায় দর্শকরা। পুরো অনুষ্ঠানের হাইলাইটস ওই মিনিট চল্লিশেক। প্রাণ খুলে তা উপভোগ করেছে দর্শকরা। জ্যাকুলিন ফার্নান্দেজের পারফরম্যান্স একেবারেই প্রত্যাশার সমানুপাতিক নয়। ফ্লপ অনুষ্ঠানের ডাহা ফেল করা ছাত্রীই হয়ে রইলেন এই বলিউড সুন্দরী। এরপর সুইডেন থেকে আসা দলটি মঞ্চে যে কী করল, বোঝা মুশকিল। ক্রিকেট তো বটেই, বাংলাদেশের কোনো অনুষ্ঠানের সঙ্গেই সেটি যায় না। দর্শকদের কাছে অবোধ্য ওই শারীরিক কসরত পর্ব। স্বল্পবসনাদের দিয়ে এই আয়োজনে হয়তো দর্শকদের সুড়সুড়ি দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল। শেষ পর্যন্ত তা পরিণত বিরক্তিতে। সুনিধি চৌহান আর আসেননি। তবে শেষ আকর্ষণ হিসেবে পৌনে ১১টায় মঞ্চে উঠে পাকিস্তানি গায়ক আতিফ আসলামও মাতাতে পারলেন কই!
সার্চ লাইটের তীব্র আলোকরশ্মিতে কাল স্টেডিয়ামের কিছু কিছু জায়গা ছিল আলোকিত। তাতে যেন বেশির ভাগ জায়গায় অন্ধকার জমাট বেঁধেছে আরো বেশি করে। বিপিএলের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানটিতেও ছিল এর প্রতিফলন। সেখানে আলোককণার উজ্জ্বলতার চেয়ে অন্ধকারের গভীরতা বেশি। হাজার গুণ বেশি।
আশঙ্কাটা এখানেই! আজ থেকে শুরু হওয়া মাঠের ক্রিকেটও না এর সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলে...।
গতবার তবু অংশগ্রহণকারী সব দল নিজেদের পতাকা নিয়ে নিজস্ব আবহ সংগীত বাজিয়ে মাঠ প্রদক্ষিণ করেছিল। যত হাস্যকরই হোক, ছিল এক 'থিম সং'। আতশবাজির খেলা ক্ষণিকের জন্য হলেও ছড়িয়েছিল মুগ্ধতার পরশ। কাল এসবের বালাই নেই। সাত দলের মধ্যে কাউকেই আগে থেকে কিছু বলা হয়নি। মাঠে তাই ছাড়া ছাড়া উপস্থিতি থাকলেও দর্শকদের সামনে আসেননি ক্রিকেটাররা। থিম সংয়ের বালাই নেই। আর আতশবাজির নামে মিনিট পাঁচেক যা হলো, সেটি দেখিয়ে হয়তো আশির দশকে দর্শকদের হাততালি কুড়ানো যেত। এই যুগে নয়।
দর্শক? তাদের সঙ্গে তো প্রতারণা হয়েছে নানাভাবে। প্রথমত, উচ্চমূল্যের টিকিট কেটে অল্প কিছু লোক মাঠে এসেছিল। পরে যখন গ্যালারির ফাঁক ভরতে স্টেডিয়ামের গেটগুলো উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়, তখন শুরুতে আসা দর্শকরা নিজেদের প্রতারিত ভাবতেই পারে। একই উপলব্ধি হতে পারে, বেশির ভাগ শিল্পী যখন রেকর্ড করা গানের সঙ্গে 'লিপ সিং' করে দায় সারেন। কিংবা নামি-দামি যেসব শিল্পীর কথা বলে টিকিট বিক্রি হয়েছে, তাঁদের কারো কারো টিকির দেখাও মেলে না। আর সামগ্রিক অর্থে অনুষ্ঠানের মান হতাশাজনকের চেয়েও বেশি। বিভিন্ন দিবস উপলক্ষে পাড়ায় পাড়ায় যে বিচিত্রানুষ্ঠান হয়, তাও এর চেয়ে মন্দ নয়।
অমন অনুষ্ঠানে তবু কখনো মঞ্চ খালি পড়ে থাকে না। কাল তো শিল্পী সংকটে বিপিএলের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মাঝপথে ঘণ্টাখানেকেরও বেশি সময় ছিল শূন্য মঞ্চ। এমন বিব্রতকর অবস্থায় পাড়ার সংগঠনগুলোও কখনো পড়ে না!
অথচ আশার ফানুস কম ওড়ানো হয়নি এই অনুষ্ঠানকে ঘিরে। চোখধাঁধানো, জমকালো আয়োজনের সব বন্দোবস্ত নাকি পাকা। এতটাই যে, রাষ্ট্রপতির আসার কারণে অনুষ্ঠানের সময় কমাতে হওয়ায় চীনা অ্যাক্রোবেটদের প্রদর্শনীটি বাদ দেওয়ার ঘোষণা আসে। অর্থাৎ অন্যান্য অংশ এর চেয়েও চিত্তাকর্ষক! কিসের কী? মূল অনুষ্ঠান শুরুর আগে একটি প্রি-শো করার কথা ছিল। ফাঁকা গ্যালারির কারণে সেই প্রয়োজনীয়তা (!) বোধ হয় বোধ করেননি আয়োজকরা। ৫টার অনুষ্ঠান শুরু হয় সাড়ে ৬টা পেরিয়ে। রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান বিপিএলের দ্বিতীয় আসরের উদ্বোধন ঘোষণার পর হয় সেই আতশবাজি। ২০১০ সালের এসএ গেমস কিংবা ২০১১ বিশ্বকাপ ক্রিকেটের সঙ্গে তুলনাই চলে না এর, বড়জোর মহররমের সময় পুরনো ঢাকার পটকাবাজির সঙ্গে তা তুল্য। রুনা লায়লা এসে দুটো গানে ঠোঁট মিলিয়ে গেলেন চলে। মমতাজ করলেন গোটা তিনেক গান। বিপিএলের সাতটি দলের আঞ্চলিক এক টুকরো ঐতিহ্যের উপস্থাপনা হলো এরপর। আর এসব কিছুর মাঝে মাঝে নানান কাণ্ডকীর্তি তো হয়েছেই। এমনকি অকারণে হঠাৎ জাতীয় সংগীত বেজে উঠেছে পর্যন্ত!
ওই পর্যন্ত তবু ভালো। রাত ৮টা থেকে ৯টা ৫ মিনিট পর্যন্ত যা হয়েছে, সেই রঙ্গ অভূতপূর্ব। সবাই অপেক্ষায়, কিন্তু রঙ্গমঞ্চ শূন্য। কোনো শিল্পী নেই যে! বলিউডের নায়িকা জ্যাকুলিন ফার্র্নান্দেজ, 'শিলা কি জওয়ানি'র গায়িকা সুনিধি চৌহান, পাকিস্তানের আতিফ আসলাম- কারো দেখা নেই। দর্শকদের বেশির ভাগ নিতান্তই 'ফাও' এসেছিলেন বলে। সবাইকে যদি চড়া মূল্যের টিকিট কাটতে হতো, তাহলে অতটা ধৈর্য তারা দেখাত না নিশ্চিতভাবে। অনর্থ ঘটে যাওয়ার আশঙ্কা ছিল প্রবলভাবে।
ওই বিরতির পর নগরবাউল জেমস গান শুরু করলে অবশেষে একটু উল্লাস করার সুযোগ পায় দর্শকরা। পুরো অনুষ্ঠানের হাইলাইটস ওই মিনিট চল্লিশেক। প্রাণ খুলে তা উপভোগ করেছে দর্শকরা। জ্যাকুলিন ফার্নান্দেজের পারফরম্যান্স একেবারেই প্রত্যাশার সমানুপাতিক নয়। ফ্লপ অনুষ্ঠানের ডাহা ফেল করা ছাত্রীই হয়ে রইলেন এই বলিউড সুন্দরী। এরপর সুইডেন থেকে আসা দলটি মঞ্চে যে কী করল, বোঝা মুশকিল। ক্রিকেট তো বটেই, বাংলাদেশের কোনো অনুষ্ঠানের সঙ্গেই সেটি যায় না। দর্শকদের কাছে অবোধ্য ওই শারীরিক কসরত পর্ব। স্বল্পবসনাদের দিয়ে এই আয়োজনে হয়তো দর্শকদের সুড়সুড়ি দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল। শেষ পর্যন্ত তা পরিণত বিরক্তিতে। সুনিধি চৌহান আর আসেননি। তবে শেষ আকর্ষণ হিসেবে পৌনে ১১টায় মঞ্চে উঠে পাকিস্তানি গায়ক আতিফ আসলামও মাতাতে পারলেন কই!
সার্চ লাইটের তীব্র আলোকরশ্মিতে কাল স্টেডিয়ামের কিছু কিছু জায়গা ছিল আলোকিত। তাতে যেন বেশির ভাগ জায়গায় অন্ধকার জমাট বেঁধেছে আরো বেশি করে। বিপিএলের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানটিতেও ছিল এর প্রতিফলন। সেখানে আলোককণার উজ্জ্বলতার চেয়ে অন্ধকারের গভীরতা বেশি। হাজার গুণ বেশি।
আশঙ্কাটা এখানেই! আজ থেকে শুরু হওয়া মাঠের ক্রিকেটও না এর সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলে...।
No comments