বিদেশে জিম্মি বাংলাদেশি-উদ্ধার করুন, সতর্ক হোন

মধ্যপ্রাচ্যে কর্মরত বাংলাদেশি নাগরিকদের কৌশলে ইরান ও পাকিস্তানে নিয়ে জিম্মি করছে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী চক্র। বৃহস্পতিবারের সমকালে প্রকাশিত এ সংক্রান্ত সংবাদটি আমাদের উদ্বিগ্ন না করে পারে না।
শুধু আর্থিক সচ্ছলতা আনতে অনেক প্রতিবন্ধকতা এড়িয়ে বিদেশে গিয়ে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে পরিশ্রম করা এসব মানুষ এভাবে অপহরণকারীদের খপ্পরে পড়বে_ তা মেনে নেওয়া কঠিন। সমকালের ওই প্রতিবেদনসূত্রে জানা যাচ্ছে, ইতিমধ্যে ইরান ও পাকিস্তানের বিভিন্ন 'বন্দি ক্যাম্প' থেকে মোটা অঙ্কের মুক্তিপণ দিয়ে ফিরে এসেছেন ৩৩ বাংলাদেশি। প্রবাসে গিয়ে আয় করা দূরে থাক, প্রাণ বাঁচাতে কাউকে কাউকে দেশের ভিটেমাটি বিক্রি করতে হয়েছে। ফিরে আসা ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, ওই দুই দেশে এখনও জিম্মি অর্ধশত বাংলাদেশি। তাদের বেশিরভাগই বৃহত্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলের। সারাদেশে খোঁজ নেওয়া হলে এ সংখ্যা আরও বাড়বে, আশঙ্কা করি। সরকারের উচিত হবে বিষয়টি নিয়ে জাতীয়ভাবে খোঁজ-খবর করা। এটা কিছুটা স্বস্তিকর যে, জিম্মিদের উদ্ধারে ইন্টারপোলের সহায়তা চেয়েছে বাংলাদেশ পুলিশ। আমরা মনে করি, একই সঙ্গে পাকিস্তান ও ইরানের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় আলোচনা করাও জরুরি। তাহলে উদ্ধার কাজ সহজ হবে। দেশ দুটিকে বোঝানো প্রয়োজন যে, এ ধরনের অপহরণকারী গোষ্ঠীর অবস্থান তাদের অভ্যন্তরীণ আইন-শৃঙ্খলার জন্যও বিপজ্জনক। এ ক্ষেত্রে দীর্ঘসূত্রতা কাম্য নয়। দেশের নাগরিক বিদেশে জিম্মি হয়ে কতদিন থাকবে? যারা জনশক্তি হিসেবে প্রবাসে যেতে চান, তাদের সতর্কতাও গুরুত্বপূর্ণ। সমকালে প্রকাশিত প্রতিবেদনে যে ক'জন জিম্মির অভিজ্ঞতা বর্ণিত হয়েছে, তাতে দেখা যাচ্ছে বেশি আয়ের প্রলোভনে বেআইনিভাবে অন্য দেশে গিয়েই তারা বিপদে পড়েছেন। অথচ নিয়ম অনুযায়ী তারা যে দেশের কর্ম অনুমতি পেয়েছেন, সেখানেই অবস্থান করার কথা। বিদেশ গমনে ইচ্ছুক নাগরিকদের কাছে যেমন; তেমনি বিদেশে কর্মরতদের মধ্যে এ বিষয়ে সচেতনতামূলক কর্মসূচি নেওয়া প্রয়োজন। সরকারের পাশাপাশি জনশক্তি ও প্রবাসী অধিকার বিষয়ে কর্মরত বেসরকারি সংগঠনগুলোও এ ব্যাপারে এগিয়ে আসতে পারে। মনে রাখা জরুরি, বিদেশে জিম্মি বাংলাদেশিদের উদ্ধার কেবল জনশক্তির বাজার নির্বিঘ্ন রাখার জন্যই নয়, নাগরিক নিরাপত্তার প্রশ্নেও জরুরি। এ ব্যাপারে সবাই এগিয়ে আসবেন বলে প্রত্যাশা।

No comments

Powered by Blogger.