মানুষের তৈরি বৃষ্টি মরুর বুকে by তাপস দত্ত

মরুতেও ফসল ফলবে, গ্রীষ্মের তপ্ত দুপুরেও আকাশের কোণে ঘনিয়ে ওঠা মেঘ থেকে ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি নামবে। সুপেয় পানির স্রোত বয়ে যাবে উঁচুনিচু বালিয়াড়ির ওপর দিয়ে।
শুনলে কী রকম স্বপ্নের মতো মনে হয়! এমনই এক স্বর্গস্বপ্নের গোপন প্রকল্প নিয়ে আবুধাবির একটি এলাকাকে মরূদ্যান করার মহাপরিকল্পনা হাতে নিয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাত। দেশটির প্রেসিডেন্টের নিয়োগ করা সুইস কম্পানি 'দ্য মেট্রো সিস্টেম ইন্টারন্যাশনাল'-এর বিজ্ঞানীরা ইতিমধ্যে এ প্রকল্পে সাফল্যের ছোঁয়া পেয়েছেন। গ্রীষ্মে এ দেশের মরুতে বৃষ্টির ছিটেফোঁটাও থাকে না। অথচ গত জুলাই ও আগস্টে এ কম্পানির গবেষকরা আবুধাবির বালিয়াড়িতে ৫২ বার বৃষ্টিপাত ঘটিয়েছেন। এসব বৃষ্টিপাত মানুষের তৈরি হলেও পুরো প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হয় প্রকৃতির সাহায্য নিয়েই।
দ্য মেট্রো সিস্টেমের বিজ্ঞানীরা এ বৃষ্টিপাত ঘটাতে বিশেষ প্রক্রিয়ায় মেঘ সৃষ্টি করেছেন। তাঁরা মরুভূমির ভেতরে 'আয়নাইজার' নামে এক প্রকার যন্ত্র বসিয়েছেন। এই আয়নাইজার হলো পদার্থের অন্তঃস্থ কণিকা 'ইলেকট্রন' তৈরির যন্ত্র। আয়নাইজার থেকে ঋণাত্মক আধানের এই ইলেকট্রন কণার স্রোত বের হয়ে মরু আবহাওয়ামণ্ডলে ঘুরে বেড়ায়। স্বভাবধর্ম অনুযায়ী এ সময় এসব আয়ন মরুভূমি থেকে অতিক্ষুদ্র বিন্দু ধূলিকণার ওপর ভর করে। এ ধরনের ধূলিকণা সব সময়ই মরু এলাকাজুড়ে বিরাজ করে। সূর্যের আলো থেকে তাপ মরুতে জমা হওয়ার পর তা মরুর বায়ুকে উত্তপ্ত করে। এভাবে বাতাসের তাপমাত্রা হ্রাস-বৃদ্ধির মাধ্যমে এসব 'আয়নকণা' ওপরের দিকে সঞ্চালিত হতে থাকে। একসময় এসব কণা এমন একটি উচ্চতায় পেঁৗছে যায় যখন বাতাসে ভেসে বেড়ানো জলকণাকে এটি আকর্ষণ করে। আর এভাবেই তৈরি হয় মেঘ সৃষ্টির আঁতুড়ঘর। বাতাসে সে সময় পর্যাপ্ত আর্দ্রতা থাকলে খুব সহজেই মেঘ ঘনীভূত হয়।
বিজ্ঞানীরা খুব বৃহৎ আকারের আয়নাইজার ব্যবহার করেছেন, যা দেখতে অনেকটা লাইটপোস্টের বাতির ঢাকনার মতো। গত বছর জুনে মেট্রো সিস্টেম কম্পানি এসব আয়ন ছাড়তে পাঁচটি জায়গা বেছে নেন। প্রতিটি জায়গায় ২০টি আয়নাইজার বসানো হয়, যা থেকে কয়েক লাখ কোটিসংখ্যক আয়ন নির্গত হয়। গ্রীষ্মের চারটি মাসজুড়ে যখন সংশ্লিষ্ট বায়ুমণ্ডলে কমপক্ষে ৩০ শতাংশ আর্দ্রতা বিরাজ করে, তখন এ আয়নাইজার চালু করা হয়। যেখানে দেশটির আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা প্রতিবছরই এ চার মাসে বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা শূন্য বলে পূর্বাভাস দেন, সেখানে গত বছর এ প্রকল্পের মাধ্যমে ৫২ বার বৃষ্টি নামানো হয়েছে। ম্যাঙ্ প্লাংক ইনস্টিটিউট ফর মেটিয়োরোলজি নামের প্রতিষ্ঠান এ প্রকল্প তত্ত্বাবধান করছে। সূত্র : টেলিগ্রাফ, দ্য মেইল।

No comments

Powered by Blogger.