বাংলাদেশই সেরা- ০ আফগানিস্তানকে গোলবন্যায় ভাসিয়ে দৰিণ এশিয়ায় ফুটবল চ্যাম্পিয়ান স্বাগতিকরা- ০ স্বর্ণজয়- ০ প্রথম এ্যাসাইনমেন্টেই সফল কোচ দর্দভিচ, বাজিমাত- ০ দেশজুড়ে আনন্দের বন্যা by মিথুন আশরাফ

 আফগানিস্তানকে নাজেহাল করে ১১তম এসএ গেমসে স্বর্ণ জিতল বাংলাদেশ। রেফারির শেষ বাঁশি বাজতেই ফুটবলারদের উদ্দেশে দৌড়ে গেলেন কোচ দর্দভিচ। জয়ের আনন্দে মাতোয়ারা হয়ে গেলেন। প্রত্যেক ফুটবলারের কপালে চুমু খেলেন।
বিশেষ করে মিশু, এনামুল, কোমল ও সবুজকে জড়িয়ে ধরলেন। এ চার ফুটবলারের গোলেই যে আফগানিস্তানকে ৪-০ গোলে নাকানিচুবানি খাওয়ায় স্বাগতিকরা। শিরোপানির্ধারণী ম্যাচ জেতে। চ্যাম্পিয়ন হয়। প্রত্যাশা মতো আমিনুলরাও শেষপর্যন্ত বাংলাদেশকে স্বর্ণ উপহার দেন। ম্যাচের প্রথমার্ধে মিশু, এনামুল এবং দ্বিতীয়ার্ধে কোমল ও সবুজ একটি করে গোল করেন।
১৯৯৯ সালে কাঠমন্ডু সাফ গেমসে বাংলাদেশ আলফাজ আহমেদের একমাত্র গোলে স্বাগতিক নেপালকে হারিয়েছিল। ফুটবল থেকে সেই যে প্রথম স্বর্ণ পায় বাংলাদেশ, এর পর দু'টি আসর চলে যায়। কিন্তু কোন আসরেই বাংলাদেশ ফাইনালে ওঠার কৃতিত্ব দেখাতে পারেনি। স্বর্ণের হাতছানি দেখা দেয়নি। না পেরেছে ইসলামাবাদে, না সর্বশেষ কলম্বো সাফ গেমসে। এবার দুই আসর পর নিজ দেশের আসরে সেই স্বাদ পূর্ণ হলো। আফগানিসত্মানের ফুটবলারদের নিজেদের মতা দেখিয়েই মাঠ ছাড়লেন আমিনুল, এনামুলরা। প্রথম এ্যাসাইনমেন্টেই বাংলাদেশ কোচ দর্দভিচও শতভাগ সাফল্য পেয়ে গেলেন।
বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে সন্ধ্যায় শুরম্ন হওয়া এ ম্যাচে সবার আত্মবিশ্বাস ছিল, ম্যাচ বাংলাদেশই জিতবে। গ্রম্নপপর্বে আফগানিসত্মান যতই ভাল খেলুক। শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে বাংলাদেশের কাছে পাত্তাই পাবে না আফগানরা। ঠিক তেমনটিই ঘটেছে। ম্যাচের ১৭ মিনিটেই প্রথম গোল পায় স্বাগতিকরা। এ সময় মাঝমাঠে নাসির থেকে পাস পান মামুন। আবার মামুন পাস দেন নাসিরের উদ্দেশে। নাসির বল নিয়ে ডি-বক্সে প্রবেশ করতে গেলেই ফাউল করেন আফগান রণদুর্গের ফুটবলাররা। রেফারি ফাউলের নির্দেশ দেন। ফ্রি কিক নেন ওয়ালী ফয়সাল। সেই ফ্রিকিক থেকে বলটি মাথার ছোঁয়ায় জালে জড়ান আতিকুর রহমান মিশু (১-০)। বাংলাদেশ প্রথম গোলের স্বাদ পায়। এগিয়ে যায়।
এর পর ৩৩ মিনিটে শাকিলের ক্রস থেকে মাথার ছোঁয়ায় এনামুল হক গোল করেন (২-০) । আগেরদিন এনামুল হক বলেছিলেন, 'বাংলাদেশের জয়ে অবদান রাখতে চাই। গোল করতে চাই।' নিজের কথা অরে অরে পালন করেছেন এনামুল। বাংলাদেশ ম্যাচও জিতেছে। সেই ম্যাচ জয়ে একটি গোল করে নিজে ম্যাচ জয়ের নায়কও বনেছেন। ম্যাচের বিরতির সময় হঠাৎ করেই প্রেস বক্সের রিফ্রেশ রম্নমে আসেন এনামুল। একেবারে স্বল্পসময়ের সুযোগে তাকে জিজ্ঞেস করা হলো, কি শেষপর্যনত্ম গোল করেই ানত্ম হলেন? উত্তরে বললেন, 'হঁ্যা, মাত্র এক গোল করলাম। আশা করি দল জিতবে। চেষ্টা করব আরেকটি গোল করতে।' আরেকটি গোল করতে পারেননি এনামুল। তবে ম্যাচে গোলের ব্যবধান অনেক বাড়িয়েছেন আবদুল বাতেন কোমল ও তৌহিদুল আলম সবুজ। ম্যাচের ৬৯ মিনিটে আবদুল বাতেন কোমল ডি-বক্সে রণদুর্গের ফুটবলারদের কাটিয়ে বল জালে জড়ান (৩-০)। আর শেষমুহূর্তে ৮৭ মিনিটে তৌহিদুল আলম সবুজ পায়ের ছোঁয়ায় গোল করেন (৪-০)।
১৫ হাজারেরও বেশি দর্শক মন ভরে খেলা দেখে। আনন্দ নিয়ে মাঠও ছাড়ে। সাফ ফুটবলে যা করতে পারেনি বাংলাদেশ। সোমবার তা পেরেছে। তাই ম্যাচ শেষে ফুটবলাররাও দর্শকদের উদ্দেশে জাতীয় পতাকা নিয়ে হাত নাড়িয়ে সম্ভাষণ জানান। দর্দভিচ বলেন, 'বিশ্বাস ছিল ছেলেরা কিছু একটা করে দেখাবে। স্বর্ণ জিতেই মাঠ ছাড়বে। ছেড়েছে। আমি অনেক আনন্দিত।' অধিনায়ক আমিনুল বলেছেন, 'আমি আপস্নুত। শেষপর্যনত্ম জিতেছি। স্বর্ণ উপহার দিয়েছি দেশকে। এর চেয়ে বড় আনন্দের আর কি হতে পারে। আমি অনেক খুশি। ফুটবলাররাও অসাধারণ খেলেছেন। দলের জয়ে তাদের অবদান অনস্বীকার্য।'
ফাইনালে এ ম্যাচ জয়ে পুরম্নষ ফুটবলে পদকের তালিকাও নিশ্চিত হয়ে গেল। বাংলাদেশ স্বর্ণ জিতল। আফগানিসত্মান রৌপ্য। আর আগেরদিন ব্রোঞ্জ নির্ধারণী ম্যাচে টাইব্রেকারে ৩-১ গোলে ভারতকে হারিয়ে ব্রোঞ্জ জিতে মালদ্বীপ।

বাংলাদেশ দল : আমিনুল হক (গোলরক), নাসিরম্নল ইসলাম নাসির, ওয়ালী ফয়সাল, মিন্টু শেখ, রেজাউল করিম, আতিকুর রহমান মিশু, ইউসুফ, মামুনুল ইসলাম মামুন, এনামুল হক, জাহিদ হাসান এমিলি, শাকিল আহমেদ।

আফগানিসত্মান দল : বেলাল আরজু, বশির আহমেদ (গোলরক), তুরিলাই হাকিমি, ফয়সাল শেখ, জহিব ইসলাম, মুকাদ্দার কাজিজাদা, মাসিহুলস্না বারাকজিয়া, হাসমাতুলস্নাহ হোসাইন, ফকির হোসেন, জাকারিয়া রেজাই, ওয়াহিদ নাদিম।

No comments

Powered by Blogger.