সুচিত্রা মিত্রের জীবনাবসান by সুব্রত আচার্য্য
জীবনভর তিনি গেয়েছেন রবীন্দ্রনাথের গান। তৈরি করেছেন অসংখ্য শিল্পী। ১৯৭১-এ তাঁর কণ্ঠে গাওয়া 'আমার সোনার বাংলা/আমি তোমায় ভালোবাসি' শক্তি আর প্রেরণা জুগিয়েছে বাঙালি মুক্তিযোদ্ধাদের।
রবীন্দ্রনাথের প্রতি ভক্তি আর বাংলা গানের সঙ্গে প্রেমের বাঁধন ছিঁড়ে চলে গেলেন বরেণ্য শিল্পী সুচিত্রা মিত্র। গতকাল দুপুরে দক্ষিণ কলকাতার গড়িয়াহাট ডোভারলেনে নিজের বাড়িতে শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।
পরিবারের সদস্যরা জানান, সুচিত্রা মিত্র দীর্ঘদিন বার্ধক্যজনিত নানা রোগে ভুগছিলেন। গতকাল দুপুর দেড়টায় (স্থানীয় সময়) খেতে বসার পর তাঁর হার্ট অ্যাটাক হয়। মৃত্যুর সময় তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৬ বছর।
সুচিত্রা মিত্র ১৯২৪ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন। প্রথম গানের তালিম নেন পঙ্কজ কুমার মলি্লকের কাছে। সাহিত্যিক বাবা শৈলজা শঙ্কর মুখোপাধ্যায় ছিলেন ঠাকুর পরিবারের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠজন। সেই সুবাদে ছোটবেলাতেই রবীন্দ্রনাথের সংস্পর্শে আসার সুযোগ হয় সুচিত্রার। ১৯৪১ সালে শান্তিনিকেতনের স্কলারশিপ পান। পরবর্তী সময়ে রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের রবীন্দ্রসঙ্গীত বিভাগের প্রধান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। দীর্ঘ কর্মজীবনে চলচ্চিত্রের বহু গানে কণ্ঠ দিয়েছেন এই শিল্পী। এমনকি অভিনয়ও করেছেন ঋতুপর্ণা ঘোষ পরিচালিত 'দহন' নামের একটি ছবিতে।
সঙ্গীতে অসামান্য অবদানের জন্য ভারত সরকারে শ্রেষ্ঠ স্বীকৃতি 'পদ্মশ্রী' এবং বিশ্বভারতীর 'দেশকোত্তম' পুরস্কারে ভূষিত হন সুচিত্রা মিত্র। এ ছাড়া কলকাতা, বর্ধমান এবং যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানসূচক ডি-লিট ডিগ্রিসহ বহু পুরস্কার অর্জন করেন এই শিল্পী। ১৯৮৬ সালে সঙ্গীত-নাটকের একাডেমী পুরস্কার পান এবং ২০০১ সালে কলকাতার শেরিফ নিযুক্ত হন। জীবনভর গান গাওয়ার পাশাপাশি রবীতীর্থ নামের এক সাংস্কৃতিক সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন তিনি। রবীন্দ্রসঙ্গীত বিষয়ে বেশ কয়েকটি বইও তিনি লিখেছেন।
সুচিত্রা মিত্রের মৃত্যুর খবরে গতকাল পশ্চিমবঙ্গের শিল্পী মহলে শোকের ছায়া নেমে আসে। মান্ন দে, দ্বিজেন মুখোপাধ্যায়, ইন্দ্রাণী সেন, শ্রীকান্ত আচার্য্য, সৈকত মিত্র, সুমিত্রা সেনসহ খ্যাতিমান শিল্পীরা গভীর শোক প্রকাশ করেন।
মান্না দে বলেন, 'সুচিত্রা বয়সে আমার থেকে পাঁচ বছরের ছোট। ওর চলে যাওয়া মানে বড় ক্ষতি হয়ে গেল। সুচিত্রার মতো শিল্পীর জন্ম হয় হাজার বছর পর পর।'
বষীর্য়ান শিল্পী দ্বিজেন মুখোপাধ্যায় বলেনে, 'রবীন্দ্রসঙ্গীতের আকাশ থেকে একটি উজ্জ্বল নক্ষত্রের পতন ঘটল।'
ইন্দ্রাণী সেন বলেন, সুচিত্রা মিত্রকে তিনি মায়ের মতো শ্রদ্ধা করতেন। ছেলেবেলা থেকে সুচিত্রার গান শুনে বড় হওয়ার কথা জানিয়েছেন শ্রীকান্ত আচার্য্য। সৈকত মিত্র বলেন, সুচিত্রা মিত্র ছিলেন রবীন্দ্রসঙ্গীতের অভিভাবক। তাঁর মৃত্যুতে আজকের শিল্পীরা একজন অভিভাবককে হারাল। সাহিত্যিক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, এই মৃত্যুতে তিনি যেন নিজের পরিবারেরই এক সদস্যকে হারালেন।
সুচিত্রা মিত্রের মৃত্যুর খবর পেয়ে শ্রদ্ধা জানাতে তাঁর বাড়িতে ছুটে যান অভিনেত্রী সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, আবৃত্তিশিল্পী ব্রততী বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতার মেয়র শেভন চট্টোপাধ্যায়, শিল্পী উষা উত্থুপ।
সুচিত্রা মিত্রের জীবনাবসানে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য ও রাজ্যের বিরোধীদলীয় নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ভারতের অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখার্জিও এক শোকবার্তায় সুচিত্রা মিত্রের মৃত্যুকে 'মহাপ্রয়াণ' হিসেবে উল্লেখ করেন।
শিল্পী পরিবারের ঘনিষ্ঠজন রমলা চক্রবর্তী সাংবাদিকদের জানান, গতকাল সন্ধ্যায় সুচিত্রা মিত্রের মরদেহ পিস হেভেনে রাখা হয়। আজ সকাল ৯টায় তাঁর মরদেহ নিয়ে যাওয়া হবে জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়িতে। সেখান থেকে দুপুরে নিয়ে যাওয়া হবে রবীন্দ্রসদনে। এর পর শিল্পীর নিজের হাতে গড়া রবীন্দ্রসঙ্গীত শিক্ষাকেন্দ্র রবীতীর্থে রাখা হবে তাঁর মরদেহ। সেখানে সুচিত্রা মিত্রের প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানানোর পর কেওড়াতলা মহাশ্মশানে তাঁর শেষকৃত্য হবে।
রমলা চক্রবর্তী বলেন, 'সুচিত্রা মিত্র সাদা ফুল পছন্দ করতেন না। তিনি বহুবার বলেছেন, 'তিনি মারা যাওয়ার পর কেউ যেন তাঁর মরদেহের ওপর সাদা ফুল না দেয়। আপনাদের অনুরোধ, ফুল দিতে চাইলে আপনারা রঙিন ফুল আনবেন।'
সুচিত্রা মিত্রের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে বিবৃতি দিয়েছে বাংলাদেশের সঙ্গীত প্রতিষ্ঠান ছায়ানট।
পরিবারের সদস্যরা জানান, সুচিত্রা মিত্র দীর্ঘদিন বার্ধক্যজনিত নানা রোগে ভুগছিলেন। গতকাল দুপুর দেড়টায় (স্থানীয় সময়) খেতে বসার পর তাঁর হার্ট অ্যাটাক হয়। মৃত্যুর সময় তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৬ বছর।
সুচিত্রা মিত্র ১৯২৪ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন। প্রথম গানের তালিম নেন পঙ্কজ কুমার মলি্লকের কাছে। সাহিত্যিক বাবা শৈলজা শঙ্কর মুখোপাধ্যায় ছিলেন ঠাকুর পরিবারের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠজন। সেই সুবাদে ছোটবেলাতেই রবীন্দ্রনাথের সংস্পর্শে আসার সুযোগ হয় সুচিত্রার। ১৯৪১ সালে শান্তিনিকেতনের স্কলারশিপ পান। পরবর্তী সময়ে রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের রবীন্দ্রসঙ্গীত বিভাগের প্রধান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। দীর্ঘ কর্মজীবনে চলচ্চিত্রের বহু গানে কণ্ঠ দিয়েছেন এই শিল্পী। এমনকি অভিনয়ও করেছেন ঋতুপর্ণা ঘোষ পরিচালিত 'দহন' নামের একটি ছবিতে।
সঙ্গীতে অসামান্য অবদানের জন্য ভারত সরকারে শ্রেষ্ঠ স্বীকৃতি 'পদ্মশ্রী' এবং বিশ্বভারতীর 'দেশকোত্তম' পুরস্কারে ভূষিত হন সুচিত্রা মিত্র। এ ছাড়া কলকাতা, বর্ধমান এবং যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানসূচক ডি-লিট ডিগ্রিসহ বহু পুরস্কার অর্জন করেন এই শিল্পী। ১৯৮৬ সালে সঙ্গীত-নাটকের একাডেমী পুরস্কার পান এবং ২০০১ সালে কলকাতার শেরিফ নিযুক্ত হন। জীবনভর গান গাওয়ার পাশাপাশি রবীতীর্থ নামের এক সাংস্কৃতিক সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন তিনি। রবীন্দ্রসঙ্গীত বিষয়ে বেশ কয়েকটি বইও তিনি লিখেছেন।
সুচিত্রা মিত্রের মৃত্যুর খবরে গতকাল পশ্চিমবঙ্গের শিল্পী মহলে শোকের ছায়া নেমে আসে। মান্ন দে, দ্বিজেন মুখোপাধ্যায়, ইন্দ্রাণী সেন, শ্রীকান্ত আচার্য্য, সৈকত মিত্র, সুমিত্রা সেনসহ খ্যাতিমান শিল্পীরা গভীর শোক প্রকাশ করেন।
মান্না দে বলেন, 'সুচিত্রা বয়সে আমার থেকে পাঁচ বছরের ছোট। ওর চলে যাওয়া মানে বড় ক্ষতি হয়ে গেল। সুচিত্রার মতো শিল্পীর জন্ম হয় হাজার বছর পর পর।'
বষীর্য়ান শিল্পী দ্বিজেন মুখোপাধ্যায় বলেনে, 'রবীন্দ্রসঙ্গীতের আকাশ থেকে একটি উজ্জ্বল নক্ষত্রের পতন ঘটল।'
ইন্দ্রাণী সেন বলেন, সুচিত্রা মিত্রকে তিনি মায়ের মতো শ্রদ্ধা করতেন। ছেলেবেলা থেকে সুচিত্রার গান শুনে বড় হওয়ার কথা জানিয়েছেন শ্রীকান্ত আচার্য্য। সৈকত মিত্র বলেন, সুচিত্রা মিত্র ছিলেন রবীন্দ্রসঙ্গীতের অভিভাবক। তাঁর মৃত্যুতে আজকের শিল্পীরা একজন অভিভাবককে হারাল। সাহিত্যিক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, এই মৃত্যুতে তিনি যেন নিজের পরিবারেরই এক সদস্যকে হারালেন।
সুচিত্রা মিত্রের মৃত্যুর খবর পেয়ে শ্রদ্ধা জানাতে তাঁর বাড়িতে ছুটে যান অভিনেত্রী সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, আবৃত্তিশিল্পী ব্রততী বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতার মেয়র শেভন চট্টোপাধ্যায়, শিল্পী উষা উত্থুপ।
সুচিত্রা মিত্রের জীবনাবসানে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য ও রাজ্যের বিরোধীদলীয় নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ভারতের অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখার্জিও এক শোকবার্তায় সুচিত্রা মিত্রের মৃত্যুকে 'মহাপ্রয়াণ' হিসেবে উল্লেখ করেন।
শিল্পী পরিবারের ঘনিষ্ঠজন রমলা চক্রবর্তী সাংবাদিকদের জানান, গতকাল সন্ধ্যায় সুচিত্রা মিত্রের মরদেহ পিস হেভেনে রাখা হয়। আজ সকাল ৯টায় তাঁর মরদেহ নিয়ে যাওয়া হবে জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়িতে। সেখান থেকে দুপুরে নিয়ে যাওয়া হবে রবীন্দ্রসদনে। এর পর শিল্পীর নিজের হাতে গড়া রবীন্দ্রসঙ্গীত শিক্ষাকেন্দ্র রবীতীর্থে রাখা হবে তাঁর মরদেহ। সেখানে সুচিত্রা মিত্রের প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানানোর পর কেওড়াতলা মহাশ্মশানে তাঁর শেষকৃত্য হবে।
রমলা চক্রবর্তী বলেন, 'সুচিত্রা মিত্র সাদা ফুল পছন্দ করতেন না। তিনি বহুবার বলেছেন, 'তিনি মারা যাওয়ার পর কেউ যেন তাঁর মরদেহের ওপর সাদা ফুল না দেয়। আপনাদের অনুরোধ, ফুল দিতে চাইলে আপনারা রঙিন ফুল আনবেন।'
সুচিত্রা মিত্রের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে বিবৃতি দিয়েছে বাংলাদেশের সঙ্গীত প্রতিষ্ঠান ছায়ানট।
No comments