পৃথক তিনটি পিএসসির সুপারিশ- সচিব সভা by তপন বিশ্বাস

পৃথক তিনটি পাবলিক সার্ভিস কমিশন (পিএসসি) গঠনের সুপারিশ করেছেন সচিবগণ। এ ছাড়া সরকারের এক শ' শতাংশ শূন্য পদ পূরণ, নিরপেৰ এ্যাটর্নি সার্ভিস গঠন, প্রতি মন্ত্রণালয়ে সক্রিয় আইন সেল গঠন,
পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা গ্রহণ, সচিবালয়ে প্রবেশ পাস সচিবদের পৰে তাঁদের একানত্ম সচিব ইসু্য করাসহ বিভিন্ন সুপারিশ করা হয়েছে। সোমবার মন্ত্রিপরিষদ সভাকৰে অনুষ্ঠিত সচিব সভায় সচিবগণ এই সুপারিশ করেন। সভার শুরম্নতে তাঁরা ওয়ারেন্ট অব প্রেসিডেন্স নিয়ে আদালতের নির্দেশনায় ৰোভ প্রকাশ করেন। এরই মধ্যে আদালত তা ৬ সপ্তাহ স্থগিত করেছে এমন খবর আসায় তাঁদের মধ্যে কিছুটা স্বসত্মি ফিরে আসে।
সভায় পিএসসির কার্যক্রম নিয়ে অসনত্মোষ প্রকাশ করা হয়। সভায় বলা হয়, পিএসসির বর্তমান নিয়োগ পদ্ধতির কারণে যথাসময়ে শূন্য পদে নিয়োগ দেয়া যাচ্ছে না। বিভিন্ন কারণে কখনও কখনও কোন কোন ব্যাচের নিয়োগ দিতে ব্যাপক সময় লেগে যাচ্ছে। ২৭তম বিসিএসর নিয়োগ আজ দেয়া সম্ভব হয়নি। তাদের এই নিয়োগ প্রক্রিয়ার কারণে যথাসময়ে নিয়োগ দিতে না পারায় মন্ত্রণালয়ের কাজ-কর্ম স্থবির হচ্ছে। তাদের কার্যক্রম দেখে মনে হয়, তারা যেন সরকারকে অসহযোগিতা করছে। কর্মকর্তাদের নিয়োগ প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করতে বর্তমান পিএসসিকে ভেঙ্গে পৃথক তিনটি পিএসসি গঠন করা জরম্নরী। তিনটি পিএসসি হলো পাবলিক সার্ভিস কমিশিন (টেকনিক্যাল), পাবলিক সার্ভিস কমিশন (জেনারেল) এবং পাবলিক সার্ভিস কমিশন (এডুকেশন)।
এই তিনটি পৃথক পিএসসি গঠন করা হলে প্রথম শ্রেণীর ৰেত্রে যখন যে পর্যায়ে জনবল নিয়োগের প্রয়োজন হবে, তখন সেই পিএসসির মাধ্যমে দ্রম্নত জনবল নিয়োগ দেয়া সম্ভব হবে। এর মধ্যে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ারসহ বিভিন্ন ট্যাকনিক্যাল পর্যায়ের জনবল নিয়োগ দিতে পিএসসি (ট্যাকনিক্যাল)-এর মাধ্যমে দ্রম্নত নিয়োগ দেয়া সম্ভব হবে। এ ৰেত্রে সভায় বলা হয়, পিএসসির মাধ্যমে ডাক্তার নিয়োগ দিতে বিলম্ব হওয়ার কারণে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় এডহক ভিত্তিতে ডাক্তার নিয়োগের সিদ্ধানত্ম নিয়েছে।
সভায় সরকারের শূন্য পদের এক শ' শতাংশ পূরণের সুপারিশ করা হয়েছে। এৰেত্রে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী প্রতি পরিবারে অনত্মত একজন করে চাকরি দেয়ার যে কর্মসূচী হাতে নিয়েছেন তাতে সকল শূন্য পদ পূরণ করতে হবে। এ ৰেত্রে ২০ শতাংশ রিজার্ভের কোটা তুলে দিতে হবে। আগে এই শূন্য পদের ২০ শতাংশ পদ সংরৰণের বিধান ছিল। তারা আরও বলেছেন, পদ শূন্য হলে নিয়োগ দিতে হবে।
সভায় জানানো হয়, সরকার সিদ্ধানত্ম নিয়েছে, ২০১০ সালের মধ্যে স্বাৰরতার হার এক শ' শতাংশে উন্নীত করতে হবে। ২০১২ সালের মধ্যে দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করতে হবে। সরকারের এই সিদ্ধানত্ম বাসত্মবায়নে সচিবদের করণীয় সম্পর্কে বিসত্মারিত আলোচন করা হয়। এ ছাড়া নিরপেৰ এ্যাটর্নি সার্ভিস গঠনের বিষয়ে সচিবগণ একমত পোষণ করেছেন। তাঁরা বলেন, নিরপেৰ এবং সক্রিয় এ্যাটর্নি সার্ভিস না থাকলে সরকার নানাভাবে ৰতিগ্রসত্ম হয়। সরকারের সুবিধার্থে নিরপেৰ এ্যাটর্নি সার্ভিস গঠন করা জরম্নরী। এ ব্যাপারে ত্বরিত সিদ্ধানত্ম নেয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। এছাড়া আদালত অবমাননার বিষয়ে সুস্পষ্ট একটি নির্দেশনা থাকা দরকার। প্রত্যেক মন্ত্রণালয়ে একটি সক্রিয় আইন সেল গঠন করতে হবে।
তথ্য সচিব বলেন, সরকার তথ্য অধিকার আইন প্রণয়ন করেছে। এই আইনের আলোকে জনগণের তথ্য অধিকার নিশ্চিত করতে সকল মন্ত্রণালয়ে একজন করে কর্মকর্তা নিয়োগ দেয়া প্রয়োজন। কারও কোন তথ্যের প্রয়োজন হলে তারা এই কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করবেন। একজন সচিব বলেন, সচিবালয়ে প্রবেশের পাস সচিবদের পৰে তাঁদের একানত্ম সচিবকে পাস ইসু্য করার ৰমতা প্রদান করা প্রয়োজন। টিসিবিকে সক্রিয় করে গড়ে তোলার ব্যাপারেও সকলে একমত পোষণ করেছেন। টিসিবিকে সক্রিয় করলে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে বলে সভায় মনত্মব্য করা হয়েছে। এ ছাড়া পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা গ্রহণের সিদ্ধানত্ম নেয়া হয়েছে।
এ ব্যাপারে সভায় মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা হবে ২০১১ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যনত্ম। বিগত ২০০১ সালের পর আর পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়নি।
সচিবদের উদ্দেশে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, সরকারের উন্নয়নমূলক কাজ করার দায়িত্ব সচিবদের। এ লৰ্যে সকলকেই সতর্ক থেকে কাজ করতে হবে। কেউ কোথাও পরিদর্শনে গেলে নিজের মন্ত্রণালয় ভিন্ন অন্য কোন মন্ত্রণালয়ের কোন কাজের গাফিলতি দেখলে এবং তা যদি জাতীয় স্বার্থের কোন কাজ হয়, অবশ্যই তা সংশিস্নষ্ট সচিব বা আমাকে অবহিত করবেন।
সভা শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব সাংবাদিকের বলেন, কোন মন্ত্রণালয় কত সিদ্ধানত্ম বাসত্মবায়ন করেছে, তা নিয়ে আলোচনা করেছি। ২০০৯ সালে মন্ত্রিসভায় ৩৪৩ সিদ্ধানত্ম দেয়। এর মধ্যে ২৫৯টি বাসত্মবায়িত হয়েছে। বাসত্মবায়নের হার ৭৫ দশমিক ০৫ শতাংশ। এর মধ্যে অর্থ বিভাগ একুশের মধ্যে ২১টিই বাসত্মবায়ন করেছে। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ ৯টির মধ্যে ৯টি বাসত্মবায়ন করেছে। পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় ১৮টির মধ্যে বাসত্মবায়ন করেছে ১৪টি। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ বাসত্মবায়ন করেছে ৩৯টির মধ্যে ৩৪।
তিনি বলেন, এডিপি বাসত্মবায়নের অগ্রগতিও ভাল। ডিসেম্বরের মধ্যে ২৯ শতাংশ এডিপি বাসত্মবায়ন করা হয়েছে। আগে কখনও এই সময়ে ২২ থেকে ২৩ শতাংশের বেশি হয়নি। জুনের মধ্যে ৯৫ শতাংশ বাসত্মবায়নের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, সরকারের ভিশন ২০২১ বাসত্মবায়নের প্রতিশ্রম্নতি বাসত্মবায়নে সকলকে দায়িত্বশীল হয়ে কাজ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিবের সভাপতিত্বে সচিব সভায় মোট ৪৬ সচিব উপস্থিত ছিলেন। এর মধ্যে ২১ সচিব বক্তব্য রেখেছেন। এই ২১ সচিব হলেন পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের সচিব, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়, ডাক ও টেলিযোগাযোগ, প্রবাসী কল্যাণ, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, স্থানীয় সরকার বিভাগ, বিজ্ঞান, তথ্য ও প্রযুক্তি, বিদু্যত বিভাগ, গৃহায়ন ও গণপূর্ত, যুব ও ক্রীড়া, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, সংস্থাপন, শিৰা, তথ্য, পরিকল্পনা বিভাগ, নৌপরিবহন, অর্থ ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব।

No comments

Powered by Blogger.