শান্তিময় সমাজ গঠনে তবলিগ by মুফতি এনায়েতুল্লাহ
নবী-রাসূলদের মূল দায়িত্ব ছিল দাওয়াত এবং তবলিগ। নবুয়তের দরজা বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর নবীরা যে কাজ করতেন, সে কাজের দায়িত্ব পড়ে মুসলিম উম্মাহর ওপর। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) নির্দেশ দিয়েছেন, 'তার একটি বাক্য যদি কারও জানা থাকে, তা অন্যদের পেঁৗছে দিতে।'
হজরত রাসূলুল্লাহর (সা.) এই নির্দেশ পালন করা সব মুসলমানের জন্য জরুরি। দাওয়াত ও তবলিগের জন্য মুসলমানদের এক জামাত বিশ্বব্যাপী এ কাজটিই করছে।
তবলিগ জামাতের প্রাথমিক এবং প্রত্যক্ষ উদ্দেশ্য হলো, নিজ দেহে ইসলামী বিধান কায়েম এবং অন্যদের কাছে দ্বীনের বাণী পেঁৗছে দেওয়া। দুনিয়ার জীবনে ইমানদার মানুষ দুটি মারাত্মক শত্রুর আক্রমণে জর্জরিত। একটি ভেতরের শত্রু। যাকে বলা হয় নফস তথা মনের কামনা-বাসনা। আর বাইরের শত্রু হলো শয়তান। সে প্রাত্যহিক জীবনে পাপের বিষ নিয়ে মানুষের দেহে ও কলবে প্রবেশ করে। মানুষকে ধোঁকায় ফেলে তাকে পাপাচারে লিপ্ত করে। তবলিগ জামাতের মাধ্যমে এই বিষ দেহ-মন থেকে অপসারণ করার লক্ষ্যে মেহনতের ব্যবস্থা করা হয়।
তবলিগের বাহ্যিক কার্যক্রম পরিচালনার পাশাপাশি সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া হয় একনিষ্ঠ নিয়তের ওপর। এরপর জিকির ও ফিকির। জিকির মানে হচ্ছে, আল্লাহকে সারাক্ষণ স্মরণে রাখা। জিকিরের তাৎপর্য হচ্ছে, আল্লাহর প্রতি জবাবদিহিতার মনোভাব জাগ্রত রাখা। ফিকির হচ্ছে অব্যাহত প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়া। তবলিগ মানুষকে উদাসীনতা পরিহার করে জিকির ও ফিকিরের সঙ্গে চলার শিক্ষা দেয়। যে সর্বদা আল্লাহর স্মরণে চলে, তার দ্বারা কোনো অন্যায় হওয়া সম্ভব নয়।
তবলিগ বৈরাগ্যকে সমর্থন করে না। তবলিগ করতে হলে বাড়িঘর, চাকরি-বাকরি, ব্যবসা-বাণিজ্য ছেড়ে সব সময় শুধু মসজিদের কিংবা দাওয়াতের কাজে লিপ্ত থাকতে হবে, এমনটি নয়। বরং সব কাজ আপন আপন সময়ে করার কথা বলা হয় তবলিগে। তবেই তো সে হবে অন্যান্য মানুষ হতে পরিপূর্ণ ভিন্ন একটি মানুষ। তাই বাড়িঘর ত্যাগ করে চলে যাওয়া নয় বরং কিছুদিনের জন্য মসজিদে থেকে আত্মশুদ্ধি অর্জন ও দ্বীন শেখার কথা বলা হয়। তারা শুধু মুসলমানদের এ কথা স্মরণ করিয়ে দেয় যে, দুনিয়ার সব মুসলমান কালেমার অনুসারী। কোনো অবস্থাতেই মুসলমানের জন্য উচিত নয় কালেমার দাবিকে ভুলে যাওয়া। ভুলে গেলেও দ্রুত আবার কালেমার পতাকাতলে নিজেকে শামিল করা। জীবনের এই শৃঙ্খলাবোধ শিক্ষা দেয় তবলিগ।
তাই তো দেখা গেছে, প্রতিষ্ঠাকাল থেকে নেতৃত্ব নিয়ে তবলিগে কোনো সংকট নেই। তবলিগের সাফল্য বিশেষ কোনো নেতার ওপর নির্ভর করে না। নেতা দুর্বল কিংবা অসুস্থ হলেও তবলিগের কাজে ব্যাঘাত হয় না। এটি একটি সুশৃঙ্খল আন্দোলন বিধায় অনুসারীদের মধ্যে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার জন্য কোনো শাস্তি নেই, সমালোচনা নেই, পুরস্কার নেই, বাহবা নেই। এ শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠিত হয় সেবা, সম্মান এবং ভালোবাসার মাধ্যমে, যা তবলিগের মূলনীতির অন্যতম। তবলিগ জামাতের কেউ জামাতবদ্ধ অবস্থায় আমিরের অনুমতি ছাড়া বাইরে যেতে পারে না। কিন্তু কেউ তা লঙ্ঘন করলে তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয় না, তাকে তিরস্কার করা হয় না। বরং নিয়ম লঙ্ঘনকারীর অন্তরকে পরিবর্তন করার চেষ্টা করা হয় আলোচনা, সম্মান ও ভালোবাসার মধ্য দিয়ে।
তবলিগে যারা নতুন যোগ দেন, তাদের প্রথমেই বলে দেওয়া হয়_ দুনিয়ায় তবলিগের কাজের পরিধি হলো জমিনের নিচে এবং আসমানের ওপরে। আসমানের ওপরওয়ালার সন্তোষ হাসিল করে জমিনের নিচের জীবন অর্থাৎ মৃত্যুর পরের জীবনকে সুন্দর করাই এর মূল লক্ষ্য। তবলিগের মুরবি্বরা সাফল্যের জন্য সব সময় আল্লাহর ওপর নির্ভর করেন এবং তার সাহায্য কামনা করেন। তবলিগ জামাতে অংশগ্রহণকারীরা তাদের কাজের পুরস্কার একমাত্র আল্লাহর কাছে কামনা করেন।
এর কিছুটা নমুনা দেখা যায় ইজতেমার মাঠে। এত বড় একটি সমাবেশ অথচ এর জন্য নেই কোনো অর্থ সংস্থান। কিন্তু এ নিয়ে আয়োজকদের কোনো চিন্তা নেই। ভাবতে অবাক লাগে, কোনো ফান্ড ছাড়া সম্পূর্ণ স্বেচ্ছাশ্রমে এবং স্বপ্রণোদিত দানের ভিত্তিতে কী করে হচ্ছে সবকিছু! ১৬০ একর এলাকাজুড়ে যে বিশাল ছাউনি তৈরি হয় তিন মাস ধরে, তাতে কোনো শ্রমিক নিয়োগ করতে হয় না। শিশু থেকে বৃদ্ধ সব বয়সের লোক মাঠের কাজে যোগ দেয়। স্কুলপড়ূয়া এমন ছাত্রও রয়েছে, যে বাসায় এক গল্গাস পানি নিজে ঢেলে নেয় না, সেই কিশোরটি ইজতেমার মাঠে বাবার সঙ্গে শাবল দিয়ে মাটি খুঁড়ছে, কাঁধে বাঁশ নিয়ে হাসিমুখে হেঁটে যাচ্ছে। ইজতেমায় দেশ-বিদেশের বহু গুরুত্বপূর্ণ মানুষের আগমন ঘটে। কিন্তু কেউ নিজের পরিচয়টুকু প্রকাশ করেন না। মন্ত্রী-এমপি সবাই সমান। ইজতেমায় বয়ান হয় শুধু ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে। বয়ানে কাউকে কটাক্ষ করে কিছু বলা বা কাউকে প্রশংসা করে কিছু বলার সুযোগ নেই।
তবলিগের কাজ বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ার পেছনে যেসব কারণ রয়েছে, তার অন্যতম হলো_ গ্রহণযোগ্যতা, নিয়ম-শৃঙ্খলা রক্ষা, চেতনা জাগ্রত করা, সহনশীলতা, কর্মসূচির সর্বজনীনতা ও সাংগঠনিক কৌশল। মোট কথা, তবলিগ হলো নজিরবিহীন ভালোবাসায় নিজেকে মিটিয়ে দেওয়ার মানসিকতা অর্জনের কেন্দ্রস্থল। জীবন বদলে দেওয়ার বিপ্লবী পথ। নীরব বিপ্লব, মানুষ গড়ার বিপ্লব, জীবন গঠন করার বিপ্লব, দেশ-বিদেশে সর্বত্র চলছে এই বিপ্লব। কোথাও কোনো বাধা নেই। নেই কোনো প্রতিপক্ষ এই বিপ্লবের। জানা-অজানা অনেক দেশে দাওয়াত ও তবলিগের কাজ চলছে। বিভিন্ন ভাষায়, বিভিন্নভাবে, বিভিন্ন বর্ণের লোকদের মাঝে এ কাজ অব্যাহত। হজরত রাসূলুল্লাহর (সা.) উম্মতের এই মহৎ কাজ কিয়ামত পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে_ ইনশাল্লাহ।
muftianaet@gmail.com
তবলিগ জামাতের প্রাথমিক এবং প্রত্যক্ষ উদ্দেশ্য হলো, নিজ দেহে ইসলামী বিধান কায়েম এবং অন্যদের কাছে দ্বীনের বাণী পেঁৗছে দেওয়া। দুনিয়ার জীবনে ইমানদার মানুষ দুটি মারাত্মক শত্রুর আক্রমণে জর্জরিত। একটি ভেতরের শত্রু। যাকে বলা হয় নফস তথা মনের কামনা-বাসনা। আর বাইরের শত্রু হলো শয়তান। সে প্রাত্যহিক জীবনে পাপের বিষ নিয়ে মানুষের দেহে ও কলবে প্রবেশ করে। মানুষকে ধোঁকায় ফেলে তাকে পাপাচারে লিপ্ত করে। তবলিগ জামাতের মাধ্যমে এই বিষ দেহ-মন থেকে অপসারণ করার লক্ষ্যে মেহনতের ব্যবস্থা করা হয়।
তবলিগের বাহ্যিক কার্যক্রম পরিচালনার পাশাপাশি সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া হয় একনিষ্ঠ নিয়তের ওপর। এরপর জিকির ও ফিকির। জিকির মানে হচ্ছে, আল্লাহকে সারাক্ষণ স্মরণে রাখা। জিকিরের তাৎপর্য হচ্ছে, আল্লাহর প্রতি জবাবদিহিতার মনোভাব জাগ্রত রাখা। ফিকির হচ্ছে অব্যাহত প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়া। তবলিগ মানুষকে উদাসীনতা পরিহার করে জিকির ও ফিকিরের সঙ্গে চলার শিক্ষা দেয়। যে সর্বদা আল্লাহর স্মরণে চলে, তার দ্বারা কোনো অন্যায় হওয়া সম্ভব নয়।
তবলিগ বৈরাগ্যকে সমর্থন করে না। তবলিগ করতে হলে বাড়িঘর, চাকরি-বাকরি, ব্যবসা-বাণিজ্য ছেড়ে সব সময় শুধু মসজিদের কিংবা দাওয়াতের কাজে লিপ্ত থাকতে হবে, এমনটি নয়। বরং সব কাজ আপন আপন সময়ে করার কথা বলা হয় তবলিগে। তবেই তো সে হবে অন্যান্য মানুষ হতে পরিপূর্ণ ভিন্ন একটি মানুষ। তাই বাড়িঘর ত্যাগ করে চলে যাওয়া নয় বরং কিছুদিনের জন্য মসজিদে থেকে আত্মশুদ্ধি অর্জন ও দ্বীন শেখার কথা বলা হয়। তারা শুধু মুসলমানদের এ কথা স্মরণ করিয়ে দেয় যে, দুনিয়ার সব মুসলমান কালেমার অনুসারী। কোনো অবস্থাতেই মুসলমানের জন্য উচিত নয় কালেমার দাবিকে ভুলে যাওয়া। ভুলে গেলেও দ্রুত আবার কালেমার পতাকাতলে নিজেকে শামিল করা। জীবনের এই শৃঙ্খলাবোধ শিক্ষা দেয় তবলিগ।
তাই তো দেখা গেছে, প্রতিষ্ঠাকাল থেকে নেতৃত্ব নিয়ে তবলিগে কোনো সংকট নেই। তবলিগের সাফল্য বিশেষ কোনো নেতার ওপর নির্ভর করে না। নেতা দুর্বল কিংবা অসুস্থ হলেও তবলিগের কাজে ব্যাঘাত হয় না। এটি একটি সুশৃঙ্খল আন্দোলন বিধায় অনুসারীদের মধ্যে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার জন্য কোনো শাস্তি নেই, সমালোচনা নেই, পুরস্কার নেই, বাহবা নেই। এ শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠিত হয় সেবা, সম্মান এবং ভালোবাসার মাধ্যমে, যা তবলিগের মূলনীতির অন্যতম। তবলিগ জামাতের কেউ জামাতবদ্ধ অবস্থায় আমিরের অনুমতি ছাড়া বাইরে যেতে পারে না। কিন্তু কেউ তা লঙ্ঘন করলে তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয় না, তাকে তিরস্কার করা হয় না। বরং নিয়ম লঙ্ঘনকারীর অন্তরকে পরিবর্তন করার চেষ্টা করা হয় আলোচনা, সম্মান ও ভালোবাসার মধ্য দিয়ে।
তবলিগে যারা নতুন যোগ দেন, তাদের প্রথমেই বলে দেওয়া হয়_ দুনিয়ায় তবলিগের কাজের পরিধি হলো জমিনের নিচে এবং আসমানের ওপরে। আসমানের ওপরওয়ালার সন্তোষ হাসিল করে জমিনের নিচের জীবন অর্থাৎ মৃত্যুর পরের জীবনকে সুন্দর করাই এর মূল লক্ষ্য। তবলিগের মুরবি্বরা সাফল্যের জন্য সব সময় আল্লাহর ওপর নির্ভর করেন এবং তার সাহায্য কামনা করেন। তবলিগ জামাতে অংশগ্রহণকারীরা তাদের কাজের পুরস্কার একমাত্র আল্লাহর কাছে কামনা করেন।
এর কিছুটা নমুনা দেখা যায় ইজতেমার মাঠে। এত বড় একটি সমাবেশ অথচ এর জন্য নেই কোনো অর্থ সংস্থান। কিন্তু এ নিয়ে আয়োজকদের কোনো চিন্তা নেই। ভাবতে অবাক লাগে, কোনো ফান্ড ছাড়া সম্পূর্ণ স্বেচ্ছাশ্রমে এবং স্বপ্রণোদিত দানের ভিত্তিতে কী করে হচ্ছে সবকিছু! ১৬০ একর এলাকাজুড়ে যে বিশাল ছাউনি তৈরি হয় তিন মাস ধরে, তাতে কোনো শ্রমিক নিয়োগ করতে হয় না। শিশু থেকে বৃদ্ধ সব বয়সের লোক মাঠের কাজে যোগ দেয়। স্কুলপড়ূয়া এমন ছাত্রও রয়েছে, যে বাসায় এক গল্গাস পানি নিজে ঢেলে নেয় না, সেই কিশোরটি ইজতেমার মাঠে বাবার সঙ্গে শাবল দিয়ে মাটি খুঁড়ছে, কাঁধে বাঁশ নিয়ে হাসিমুখে হেঁটে যাচ্ছে। ইজতেমায় দেশ-বিদেশের বহু গুরুত্বপূর্ণ মানুষের আগমন ঘটে। কিন্তু কেউ নিজের পরিচয়টুকু প্রকাশ করেন না। মন্ত্রী-এমপি সবাই সমান। ইজতেমায় বয়ান হয় শুধু ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে। বয়ানে কাউকে কটাক্ষ করে কিছু বলা বা কাউকে প্রশংসা করে কিছু বলার সুযোগ নেই।
তবলিগের কাজ বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ার পেছনে যেসব কারণ রয়েছে, তার অন্যতম হলো_ গ্রহণযোগ্যতা, নিয়ম-শৃঙ্খলা রক্ষা, চেতনা জাগ্রত করা, সহনশীলতা, কর্মসূচির সর্বজনীনতা ও সাংগঠনিক কৌশল। মোট কথা, তবলিগ হলো নজিরবিহীন ভালোবাসায় নিজেকে মিটিয়ে দেওয়ার মানসিকতা অর্জনের কেন্দ্রস্থল। জীবন বদলে দেওয়ার বিপ্লবী পথ। নীরব বিপ্লব, মানুষ গড়ার বিপ্লব, জীবন গঠন করার বিপ্লব, দেশ-বিদেশে সর্বত্র চলছে এই বিপ্লব। কোথাও কোনো বাধা নেই। নেই কোনো প্রতিপক্ষ এই বিপ্লবের। জানা-অজানা অনেক দেশে দাওয়াত ও তবলিগের কাজ চলছে। বিভিন্ন ভাষায়, বিভিন্নভাবে, বিভিন্ন বর্ণের লোকদের মাঝে এ কাজ অব্যাহত। হজরত রাসূলুল্লাহর (সা.) উম্মতের এই মহৎ কাজ কিয়ামত পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে_ ইনশাল্লাহ।
muftianaet@gmail.com
No comments