বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্ব শুরু আজ

বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্ব শুরু হচ্ছে আজ শুক্রবার। ৩৩টি জেলার মুসল্লিসহ অর্ধশতাধিক দেশের বিপুলসংখ্যক মুসল্লি এতে অংশ নিচ্ছেন। টঙ্গীর তুরাগ নদের তীরে বিশ্ব মুসলিমের দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় আয়োজনটি শেষ হবে রবিবার।
ওই দিন আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে পরিসমাপ্তি ঘটবে এবারের দুই ধাপে ছয় দিনের বিশ্ব ইজতেমা।
এর আগে গত ১১ থেকে ১৩ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হয় প্রথম পর্বের ইজতেমা। বিশ্ব ইজতেমার ব্যবস্থাপনাবিষয়ক জিম্মাদার গিয়াস উদ্দিন জানান, ইতিমধ্যে দ্বিতীয় পর্বের সব প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। দেশ-বিদেশের মুসল্লিরা বুধবার বিকেল থেকেই নির্ধারিত খিত্তায় এসে অবস্থান নেওয়া শুরু করেছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার ভোর থেকে আম ও খাস বয়ান শুরু হয়েছে। বিদেশি মেহমানদের আসা অব্যাহত রয়েছে।
প্রথম পর্বের মতো এবারও ইজতেমা ময়দানসহ আশপাশের এলাকায় কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকছে। নেওয়া হয়েছে র‌্যাব-পুলিশের চার স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা। আন্তর্জাতিক নিবাসসহ পুরো ময়দানে রয়েছে কঠোর নজরদারি। নিয়োজিত রয়েছে প্রায় দশ হাজার নিরাপত্তাকর্মী।
গাজীপুরের পুলিশ সুপার আবদুল বাতেন জানান, প্রথম পর্বের আখেরি মোনাজাতের পর তিন দিনের জন্য নিরাপত্তাকর্মীদের সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল। গতকাল থেকেই তাঁরা ইজতেমায় বিশেষ দায়িত্ব পালন শুরু করেছেন। পর্যবেক্ষণ টাওয়ার, ভ্রাম্যমাণ টহল, ইজতেমায় আগতদের দেহ তল্লাশিসহ অন্যান্য কার্যক্রম চালু করা হয়েছে। দুর্ঘটনা রোধে ফায়ার সার্ভিস বিভাগ পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নিয়েছে।
টঙ্গী পৌর মেয়র অ্যাডভোকেট আজমত উল্লাহ খান জানান, বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বে আগত মুসল্লিদের জন্য সার্বিক সুবিধা আগের মতোই বহাল থাকছে। আগতদের সেবায় পানি সরবরাহ ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়েছে। পর্যাপ্ত ওজু-গোসলখানা প্রস্তুত করা হয়েছে। টয়লেট ও প্যান্ডেল পুনরায় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হয়েছে। স্বাস্থ্যসেবায় নিয়োজিত রয়েছে সরকারি-বেসরকারি প্রায় অর্ধশত চিকিৎসাকেন্দ্র। পৌরসভার নিয়ন্ত্রণকেন্দ্র সার্বক্ষণিক সেবাদানে নিয়োজিত রয়েছে।
আম ও খাস বয়ান : গতকাল ভোরেই মূল মঞ্চ থেকে আম বয়ান ও বিভিন্ন খিত্তায় খাস বয়ান শুরু হয়েছে। তাবলিগ জামাতের শীর্ষ মুরবি্বরা উর্দু ভাষায় মূল বয়ান পেশ করছেন। আগতদের জন্য বাংলা, ইংরেজি, হিন্দি, মালয়, তামিল, চৈনিকসহ দশটি ভাষায় তা তাৎক্ষণিক অনুবাদ করে শোনানো হচ্ছে। গতকাল বাদ ফজর বয়ান করেন মাওলানা শওকত হোসেন। বাদ জোহর বয়ান করেন মাওলানা ফারুক আহমাদ, বাদ আসর বয়ান করেন মাওলানা হাফেজ যোবায়ের এবং বাদ মাগরিব বয়ান করেন মাওলানা আবদুল ওয়াহাব।
দ্বিতীয় পর্বের ইজতেমায় ৩৩টি জেলার মুসল্লিরা অংশ নিচ্ছেন। তাঁদের জন্য পুরো প্যান্ডেলকে ৩৮টি খিত্তায় ভাগ করা হয়েছে। অংশগ্রহণকারী জেলাগুলো হচ্ছে- নারায়ণগঞ্জ (১ ও ২ নম্বর খিত্তা), ঢাকা আংশিক (৩ ও ৪), কক্সবাজার (৫), মানিকগঞ্জ (৬), পিরোজপুর (৭), পটুয়াখালী (৮), টাঙ্গাইল (৯), জামালপুর (১০), বরিশাল (১১), নেত্রকোনা (১২), কুমিল্লা (১৩), মেহেরপুর (১৪), ঝিনাইদহ (১৫), ময়মনসিংহ (১৬, ১৭ ও ১৮), লক্ষ্মীপুর (১৯), ব্রাহ্মণবাড়িয়া (২০), কুড়িগ্রাম (২১), নোয়াখালী (২২), নীলফামারী (২৩), ঠাকুরগাঁও (২৪), পঞ্চগড় (২৫), চাঁপাইনবাবগঞ্জ (২৬), বগুড়া (২৭), পাবনা (২৮), নওগাঁ (২৯), মুন্সীগঞ্জ (৩০ ও ৩১), মাদারীপুর (৩২), গোপালগঞ্জ (৩৩), সাতক্ষীরা (৩৪), মাগুরা (৩৫), খুলনা (৩৬), সুনামগঞ্জ (৩৭) ও মৌলভীবাজার (৩৮)।
কর্মসূচি : দ্বিতীয় পর্বের ইজতেমার কর্মসূচিতে রয়েছে- আম ও খাস বয়ান, তালিম, তাশকিল, ছয় উছুলের হাকিকাত, দরসে কুরআন, দরসে হাদিস, জিকির-আসকার, মাসলা-মাসায়েল, আমল ও যৌতুকবিহীন বিয়ে।
আখেরি মোনাজাতের পর দ্বিতীয় পর্বে কয়েক হাজার নতুন জামাত তৈরি ও চিল্লায় নাম লেখানো হবে। বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন দেশে নতুন জামাত পাঠানো হবে। দ্বিতীয় পর্বে দেশ-বিদেশের বেশ কিছু জামাত তিন চিল্লার জন্য বিভিন্ন জেলা ও দেশে পাঠানো হবে।

No comments

Powered by Blogger.