বিশ্ব ইজতেমার বয়ান by শাহীন হাসনাত

চার দিন বিরতি দিয়ে আজ শুরু হচ্ছে বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্ব। আগামী রোববার দুপুরে আখেরি মোনাজাতের মাধ্যমে এই পর্বের সমাপ্তি ঘটবে। এবারের ইজতেমায় বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানের তবলিগি মারকাজের ১৫-২০ জন শূরা সদস্য ও আলেম বয়ান করেছেন।
মূল বয়ান উর্দুতে হলেও বাংলা, ইংরেজি, আরবি, তামিল, মালয়, তুর্কি ও ফারসি ভাষায় তাৎক্ষণিক অনুবাদ করে সেসব দেশের লোকদের শোনানোর ব্যবস্থা রয়েছে। এমনকি প্রতিবন্ধীদের জন্যও সাংকেতিক ভাষায় বয়ান শোনানোর ব্যবস্থা করা হয়। এবারের বিশ্ব ইজতেমায় যারা বয়ান করেন তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকজন হলেন_ ভারতের মাওলানা জোবায়েরুল হাসান, মাওলানা আহমদ লাট, মাওলানা সাদ, মিয়াজী আজমত উল্লাহ ও মাওলানা শামীম আহমদ; পাকিস্তানের হাজি আবদুল ওয়াহাব, মাওলানা মো. এহসান, মাওলানা আবদুস সাত্তার, মাওলানা জামিল ও মাওলানা আহমদ বাটলা। এসব বয়ান বাংলায় অনুবাদ করেন বাংলাদেশের মাওলানা মাহবুবুল হক, হাফেজ মাওলানা জোবায়ের, মাওলানা নুরুল হক, মাওলানা মোহাম্মদ হোসাইন, মাওলানা রবিউল হক ও মাওলানা ওমর ফারুক। ইজতেমার মাঠে তিন দিনে কয়েক পর্বে বয়ান করা হয়। বয়ানের চুম্বকাংশ_
মাওলানা সাদ : তিনি বয়ানে পবিত্র কোরআন ও সুন্নাহর যথার্থ অনুসরণ ও অনুশীলনের ওপর গুরুত্ব আরোপ করে বলেন, দুনিয়াতে শান্তি ও আখেরাতে মুক্তি পাওয়ার এটাই একমাত্র পথ। আল্লাহতায়ালা মানবজাতিকে সৃষ্টির সেরা জীব হিসেবে অতি উচ্চ মর্যাদা দিয়ে দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন। দুনিয়া ও আখেরাতে সফলতার একমাত্র পথ ও পদ্ধতি হচ্ছে ইমান এবং আমলের মেহনত করা। তাই জীবনের সব কাজ করতে হবে আল্লাহর হুকুম ও হজরত রাসূলুল্লাহর (সা.) তরিকা মোতাবেক।
মাওলানা জোবায়েরুল হাসান : তিনি বলেন, দুনিয়ার জীবন ক্ষণস্থায়ী। আল্লাহর কাছে আমল ছাড়া দুনিয়ার জীবনের কোনো মূল্য নেই। তিনি বয়ানে আরও বলেন, দ্বীনের দাওয়াতের মাধ্যমে ইমান মজবুত হয়। ইমান মজবুত হলে আল্লাহর সঙ্গে বান্দার গভীর সম্পর্ক গড়ে ওঠে। আর এ সম্পর্ক গড়ে উঠলে দুনিয়া ও আখেরাতে সফলতা অর্জিত হয়। দাওয়াতি কাজে জানমাল খরচ করলে আল্লাহ তা আরও বাড়িয়ে দেন।
মাওলানা আহমদ লাট : তিনি তবলিগের ছয় ওসুলের মধ্যে দ্বীনের মেহনতের ওপর গুরুত্ব আরোপ করে বয়ানে বলেন, সাহাবিদের জিন্দা থাকার উদ্দেশ্য ছিল দ্বীনকে জিন্দা রাখা। শরীরের শেষ রক্তবিন্দু থাকা পর্যন্ত তারা দ্বীনের মেহনতের চিন্তা মনে পোষণ করতেন। দ্বীনের ডাক এলে যেখানে যে অবস্থায় থাকতেন_ দ্বীনের তাগাদা পূরণের জন্য তাৎক্ষণিক বেরিয়ে যেতেন। দ্বীনের জন্য জানমাল কোরবান করতে সদাপ্রস্তুত থাকতেন। দ্বীনের তাগাদা পূরণের জন্য যখনই আওয়াজ এসেছে তখনই তারা দুনিয়ার সবকিছু ছেড়ে ছুটে যেতেন।
মাওলানা আহমদ বাটলা : তার বয়ানে বলেন, আল্লাহতায়ালা আপনাকে আমাকে দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন এবং এটা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে, দুনিয়াতে যে একবার আসবে তাকে মৃত্যুবরণ করতে হবে। আল্লাহর এ সিদ্ধান্তের কোনো পরিবর্তন হবে না। কারণ তিনি কোরআনে বলে দিয়েছেন, পৃথিবীতে যতকিছু আছে তা সব কিছুই একদিন শেষ হয়ে যাবে। একমাত্র আল্লাহ চিরস্থায়ী, যার কোনো শুরু নেই আর শেষও নেই। আল্লাহ পূর্বে ছিলেন, যার পূর্বে কোনো কিছু ছিল না এবং তিনি সব কিছুর পরে থাকবেন যার পরে আর কিছুই থাকবে না। মাখলুকের শুরু আছে কিন্তু আল্লাহর কোনো শুরু নেই। প্রকাশ্যে যা কিছু হয় তা তিনি দেখতে পান আর গোপনে যা কিছু হয় তাও তিনি দেখতে পাচ্ছেন। আল্লাহর দৃষ্টির বাইরে একটা অণুও নেই। তিনি সব কিছু জানেন। তার জ্ঞানবহির্ভূত কোনো জিনিস নেই। সুতরাং, আল্লাহর কথা স্মরণে রেখে সেভাবে সবাইকে জীবন গড়তে হবে।
হাজি আবদুল ওয়াহাব : এক বয়ানে বলেন, এ দুনিয়া হচ্ছে ধোঁকার ঘর, এ দুনিয়া হচ্ছে ধোঁকার জীবন। দুনিয়ার জীবন ধোঁকার জীবন। আল্লাহ বলেছেন, তুমি এসব কিছু থেকে ফিরে আমার দিকে এস, আমাকে পেতে চেষ্টা কর, তুমি যদি আমাকে পেয়ে যাও তা হলে মনে করবে তুমি দুনিয়ার সব কিছু পেয়ে গেছ। আর যদি তুমি আমাকে হারিয়ে ফেল তাহলে মনে রেখ তুমি পৃথিবীর সবকিছু হারিয়ে ফেলেছ। তাই আল্লাহকে সন্তুষ্ট করাই আমাদের জীবনের উদ্দেশ্য হতে হবে। আল্লাহ বলছেন, তোমরা আমার দিকে ফিরে এস। তোমরা কোথায় পলায়ন করছ? তোমরা কোথায় যাচ্ছ? এস, আমার দিকে ফিরে এস। তাই আল্লাহকে সন্তুষ্ট করাই আমাদের জীবনের লক্ষ্যবস্তু হওয়া দরকার।

No comments

Powered by Blogger.