বীভৎসতার অবসান হোক

শিশুদের অঙ্গহানি ঘটিয়ে ভিক্ষাবৃত্তিতে বাধ্য করা বীভৎসতার সব চিত্রকে হার মানায়। দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমাদের এখানে সে কাজটিই হয়ে আসছে দীর্ঘদিন ধরে। একটি শিশুকে তিলে তিলে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়ে মুমূর্ষু অবস্থায় তাকে কেউ জীবিকার উপায় হিসেবে বেছে নিতে পারে_এটা ভাবতেও অবাক লাগে।
ঘৃণায়-ধিক্কারে হৃদয় দলিত-মথিত হয়। তার পরও কিছু লোক তা করছে, আর তা নিরসনে এ পর্যন্ত সমাজ বা রাষ্ট্র উল্লেখযোগ্য কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। এমনও জানা গেছে, একটি শিশুকে দিনের পর দিন পাতিলে ঢুকিয়ে রেখে বিকলাঙ্গ করা হয়। কিংবা কাউকে হয়তো হাঁটু ভেঙে অচল করে দেওয়া হয়। অনাহারে রেখে রেখে ক্লিষ্টদেহের অর্ধমৃত শিশুটিকে রাস্তায় রেখে আসা হয় মানুষের করুণা পাওয়ার জন্য। করুণার দান ভিক্ষার অর্থ লুটে নেয় সেই বর্বরতম মানুষগুলো আর সেই শিশুরা অভুক্তই থেকে যায়।
শহর-বন্দরের কিছু রাস্তায় এদের দেখা যায়। মানুষের বোধকে নাড়া দেয় এসব বিকলাঙ্গ মানুষ। আর সে কারণে টাকাটা, সিকিটা তাদের সামনে থাকা থালা-পাতিলে ছুড়ে দেয়। কিন্তু যাঁরা তাদের দু-চার টাকা এভাবে দেন, তাঁরা ভাবতেও পারেন না এসব মানুষের বিকলাঙ্গ হওয়ার পেছনের কারণগুলো কী। কালেভদ্রে এদের করুণ চিত্রগুলো প্রচারমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। প্রশাসন সাময়িকভাবে নড়েচড়ে ওঠে। তেমনই কিছু ঘটনার কথা সম্প্রতি পত্রিকার পাতায় প্রকাশিত হলে পাঠক মহলে সাড়া পড়ে যায়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট রুল জারি করেছেন রবিবার। শিশুদের অঙ্গহানি ঘটিয়ে ভিক্ষাবৃত্তিতে বাধ্য করা বন্ধে কেন কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হবে না, তার কারণ দর্শাতে বলেছেন আদালত। আদালতের এই রুলের কারণে হয়তো সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কিছুটা নড়েচড়ে উঠবে। কিন্তু এ সমস্যা সমাধানের ব্যাপারে সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি করতে না পারলে দীর্ঘস্থায়ী ফললাভের আশা থাকবে খুবই কম। এ অস্বাভাবিক কাজটির পেছনে দারিদ্র্য যেমন কাজ করে, তেমনি নীতিবোধহীন কিছু মানুষের লোভ-লালসাও এর সঙ্গে জড়িত। তাই সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি দারিদ্র্য নিরসনের পরিকল্পনাও বাস্তবায়ন করতে হবে। গত রবিবার প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে স্পষ্টভাবে আলোকপাত করেছেন। তিনিও দারিদ্র্য নিরসনকে প্রাধান্য দিয়েছেন। বলেছেন, মানুষকে স্বাবলম্বী করে তুলতে পারলে আর এ ধরনের মানসিকতা টিকে থাকবে না। বিকলাঙ্গ করে যারা ভিক্ষাবৃত্তি করে, তাদের সঙ্গে প্রশাসনেরও যোগসাজশ রয়েছে বলে খবরে জানা যায়। হাইকোর্টের রুলের সূত্র ধরে এর তদন্ত হওয়া জরুরি। একই সঙ্গে এ ধরনের কাজ যাতে আর কেউ ঘটাতে না পারে, সে ব্যাপারেও সরকারের সতর্ক থাকা অতি জরুরি।
এসব মানুষকে ভিক্ষাবৃত্তি থেকে নিবৃত্ত করা এবং তাদের সুস্থ ও স্বাবলম্বী করার জন্য সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ভবঘুরে পুনর্বাসনকেন্দ্র নিয়ে প্রকাশিত সংবাদগুলো পর্যালোচনা করলে সরকারের আন্তরিকতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়ে। অপরাধীচক্রকে নির্মূল করার পাশাপাশি সরকারের পুনর্বাসন পরিকল্পনা কার্যকর করতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.